আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ১১
লেখা- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
আমি কোনো রকমে বললাম, ‘তারপর , তারপর কি হলো?’
‘সময় শেষ শুনার পর কনস্টেবল আমাদের দুই ভাইয়ের ক্রন্দন্ রত চেহারা দেখে হয়তো বা মায়া হয়। বলে আর পাচ মিনিট এর পরে আর কোনো সময় দেয়া হবে না। কৃতজ্ঞতার চেহারায় তাকাই। ভাইকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করি এরপরে কি হয়েছিলো। কেনো তুমি আজ এখানে। কেনো তুমাকেই দোষী বলা হচ্ছে।
ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কিডনাপ করার পর তাদের এক পরিত্যাক্ত আস্তানায় নিয়ে যায়। বলে রাখি সেখানে এর আগে আমি আর কখনো যাই নি। মেয়েটাকে বেধে রেখে পেছনে একটা রুমে রেখে দেয়। আর আমরা সামনের রুমে থাকি। রুম বলতে তেমন কিছুই না। পুরোনো নোংরা টিনের ঘর। মেয়েটার হুশ ছিলো না তখন। অচেতন হয়ে পরে ছিলো। বস আসার অপেক্ষায় ছিলাম সবাই। হুট করে আমাদের দলের একজনের কাছে ফোন আসে। সে জানায় বস পরেরদিন সকালে আসবে।
কথাটা শুনে আমি বলি, সকালে আসবে মানে। মেয়েটাকে না ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা। কথাটা বসই আমাকে বলেছিলো। লোকগুলো বিশ্রি ভাবে হাসে। বিশ্রি ইংগিতে কথা বলে আমাকে জানায়, ‘তোর এত চিন্তা যখন তোর কাছেই ছেড়ে দেই? সবগুলো একসাথে হেসে আমাকে ঘিরে ধরে মুখ বেধে ফেলে। তারপর কতগুলা ইঞ্জেকশন পুশ করে আমাকে নিয়ে মেয়েটার পাশে ছেড়ে দেয়। আমি তখনো ঝাপ্সা চোখে দেখেছিলাম মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। হাত মুখ বাধা অবস্থায়।
তারপর তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে আমার পাশেই মেয়েটাকে পাই। রুম তখনও লক করা। মেয়েটার জ্ঞান ছিলো না। আমি কাপড় পরে নিয়ে মেয়েটাকে তার উড়না দিয়ে ঢেকে দেই। আলতো থাপড় দেই কিন্তু সাড়া পাই না। বাধ্য হয়ে পাজাকোলে করে বেড়িয়ে যাবার জন্য দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করি। সফলও হই। দিক বেদিক হারিয়ে হাটতে থাকি। ভেতরে অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। কেনো এই পথে পা বাড়িয়েছিলাম এসব আফসোসের মাঝেও একটা কথাই মাথায় বাজছিলো মেয়েটাকে বাচাতে হবে। কাছাকাছি একটা সরকারী হাসপাতালে নিয়ে মেয়েটাকে রেখে চলে আসি। তখন ভোর। সূর্যের আলো কেবল ফুটেছে। আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখি দেখি কিছু নার্সরা মিলে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এর আধ-ঘন্টা পরেই পুলিশের গাড়ি আর মেয়েটার বাবা মার দেখা মিলে। বুঝতে পারি হয়তো বা জানানো হয়েছে তাদের। এর পর আবার পালিয়ে যাই। আমার মাথা ঠিক নেই রায়ান। আমি পাগল হয়ে গেছি। আমার কঠিন সাজা পাওয়া প্রয়োজন কঠিন। তাদের বল না আমাকে দ্রুত যেনো ফাসি দিয়ে দেয়। আমি কি করলাম এটা রায়ান কি করলাম।‘
এসব কথা শুনে আমি যাস্ট বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাইকে কি আর কি প্রশ্ন করবো? এখানে ভাইয়ের দোষ আছে আর সেটা একটাই সে অন্যায় পথে পা বাড়িয়েছিলো। আর এই অন্যায় তার পিছু ছাড়ে নি। ভাই বার বার আমাকে বলেছে সে কোনো একটা চক্রান্তের স্বীকার। তাদের দলের লিডারের যে নাম ভাই বলেছে হাজার চেষ্টা করেও পুলিশ কিংবা আমাদের পক্ষের উকিল এর কোনো হদিস খুজে পায় নি। ভাইয়ের দোষ কতটুকু তা বাজ বিচার করতে এখনো ইচ্ছে হয়না রোদুসি । কেবল রাগে দুঃখে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে।
আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন কেবল তুতুল। ভাই আজ পর্যন্ত জানে না তার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে । যে তার মিষ্টি মিষ্টি কথায় সবার মন ভালো করে দিতে পারে। ‘
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সেদিন কি শুধু সায়ান ভাই-ই রোদুসির সাথে…’
আমার কথা শেষ হবার আগেই রায়ান বললো, ‘হ্যাঁ শুধু ভাই-ই। এটাও কনফার্ম করেছে রোদুসি। রোদুসির মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে ডেভলাপ করে। কৌর্টের সুনানির দিন রোদুসিকে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয় আদালত। সমস্ত প্রমাণ আর রোদুসির বয়ানের ভিত্তিতেই সায়ান ভাইয়ের সাত বছরের কারাদন্ড হয়। সায়ান ভাইয়ের উপর করা সমস্ত কিছু স্বীকার করে তাদের দলের বাকি লোকজন। এদের হয় পাঁচ বছর আর সাথে আরো পাঁচ বছর আর কিচু অর্থদন্ড দেয়। তাদের চরাকার্বারির কিছু প্রমাণ আমাদের পক্ষের উকিল পেশ করায়। এসব কিছুতেই জড়িত ছিলো ভাই।
ভাইয়ের সাজা শুনে রোদুসি খুশি ছিলো না। এর পরের কিছু দিন মন খারাপ করে থাকতো। বাড়িতে সায়ান ভাইয়ের কথা জানাজানির পর মা প্রচন্ড ভাবে ভেঙ্গে পরেন। বাবা আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বলেন।
‘রায়ান মেয়েটিকে এ বাড়িতে নিয়ে আয়। শুনলাম সে অন্তসত্তা! কথাটা কি সত্য?’
বাবা সায়ান ভাইয়ের সম্পর্কে সব কথাই জানতো। তবে এখানে সায়ান ভাইয়ের দোষ কতটুকু আর কি সে সম্পর্কে বাবার কতটুকু ধারণা ছিলো আমার জানা নেই। আমি অনেক বার বলার চেষ্টা করলেও বাবা আমাকে সরাসরি নিষেধ করে দেন, ‘সায়ানের নাম এই বাড়িতে কেউ যেনো উচ্চারণ না করে’
রোদুসিদের বাড়িতে বাবা মা নিজে যান তাকে নিয়ে আসার জন্য। রোদুসির মা আমার বাবা’কে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করেন। বাবা সবটাই সহ্য করে নেন। আমি সেই মুহুর্তে রোদুসিকে বিয়ের কথা বলি। বাবা আমার কথা শুনে অবাক হন। সাথে গর্ব বোধ করেন। এসব কিছুর পরেও আমি রোদুসিকে বিয়ে করবো বাবা ভাবেন নি।
ঝামেলা আরো বাড়ে। রোদুসির মা জানায় বাচ্চা টা পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই নাকি আমাদের দিয়ে দিবেন। আমাদের মত থার্ড ক্লাস মানুষের কাছে উনারা উনাদের মেয়েকে তুলে দিবেন না। আংকেল সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে রোদুসির মত নেন। রোদুসির মতামতের ভিত্তিতে সেদিনই তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।
আন্টি প্রায়ই এসে ঝামেলা করতো। জানো? তবুও মেয়েটা আমাকে ছেড়ে যেতো না। মায়ের কত শত কথাও হজম করেছে তার হিসেব নেই। আমি তাকে বুঝাতাম দুনিয়া উলটে গেলেও আমি কখনো তাকে ছেড়ে যাবো না। অথছ দেখো সে’ই চলে গেলো।
বাবা কঠিন এক সিদ্ধান্ত নেন। মৃত্যুর আগ অবদি সায়ান ভাই মুখ দর্শন করবেন না। আমি আরাল থেকে মা বাবার কথোপ কথন শুনি। সেদিন বাবার চোখে প্রথম জল দেখতে পাই। বাবা নিজেকে ব্যার্থ বাবা হিসেবে দাবী করেন। সেদিন আমি খুব অসহায় ছিলাম রোদুসি। পরিবারের বিপদের সময় কেনো আমি পাশে ছিলাম না। কেনো আমি অন্যায় আবদার করেছিলাম। বাবার ব্যবসা লসের কথা না জানলেও এটা তো জানতাম অবস্থা ভালো না তবুও কেনো নিজের ভেতরে জেগে উঠা ইচ্ছাটাকে চাপা দিতে পারলাম না!
এর পরের দিনই বাবা স্ট্রোক করেন। বাবা চলে যাওয়ার পর মা আরো বেশি ভেঙ্গে পরেন। কথাবার্তা কমিয়ে ফেলেন। সব কেমন যেনো ফাকা ফাকা লাগতো। রোদুসিও দুর্বল হয়ে পরে। কান্না কাটি করতো। বাবা স্নেহ করতো খুব রোদুসিকে। এর ভিতর ভাইয়ের সাথে আর দেখা হয় না। ভাইয়ের প্রতি ধীরে ধীরে মনের ভেতর রাগ বাড়তে থাকে। ভাই বাবার লাশ দেখার অনুমতি পেলেও আসে নি। এটাই হয়তো বা তার করা ভুলের চরম শাস্তি ছিলো।
মা রোদুসিকে কোনো রকম পছন্দ না করলেও রোদুসি যখন আট মাসের অন্তসত্তা। তখন তার হাটা চলায় বেশ অসুবিধা হত। ওকে আমি ধরে ধরে নিয়ে আসতাম যেতাম। মা একদিন আমাকে বাধা দিয়ে বলেন,
বিয়ের আগ অবদি এত কাছাকাছি না থাকায় ভালো। ‘
সেদিন প্রথম মা আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বললেন। রোদুসির সাথে ভালো আচরণ করলেন। এর পর থেকে তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হলো। আমিও খুশি হলাম।
ধীরে ধীরে ডেলিভারীর ডেইট যত এগিয়ে যেতে লাগলো রোদুসি দুর্বল হতে থাকলো। তার মনে ভয় লাগতে লাগলো। প্রতি রাতেই মা আর আমি নির্ঘুম কাটাতাম। কোনো একদিন মিস যেত না যে খারাপ স্বপ্ন দেখতো না সে। সেই কাল রাত্রির কথা রোদুসির বার বার স্মরণ হতে থাকলো।
সায়ান ভাইয়ের কোনো কিছু বাসায় দেখলেই মেজাজ খারাপ করে নিজেকে আঘাত করতো। তখন বলে বলে বুঝাতাম এসব কিছুই আমার। আগে থেকেই সায়ান ভাইয়ের সব ছবি সরিয়ে ফেললেও মায়ের রুমের ড্রয়ারে একদিন সে পেয়ে যায়। আর নিজেকে আঘাত করতে শুরু করে। পেটে আঘাত করে। পাগলের মত আচরণ করে। সেদিন তাকে কোনো ভাবে আটকাতে পারি নি। ডাক্তার বার বার নিষেধ করেছিলো এমন কোনো কিছু ঘরে রাখা যাবে না যাতে তার পুরোনো কথা স্মরণে আসে। সেদিনই রোদুসির ওয়াটার ফল শুরু হয়। দৌড়ে ছুটে যাই হাসপাতাল।
নরমাল ভাবে তুতুল পৃথিবীতে আসলেও রোদুসির প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। সে আমার এই হাত ধরে শেষ একটা কথাই বলেছিলো রোদুসি, তুতুল তার মেয়ে। তুতুলকে যেনো কখনো কষ্ট না দেই। সে না থাকলে তুতুলের আর কেউ নেই কেউ নেই। আমি কথা দিয়েছিলাম রোদুসিকে। তুতুলের আমি আছি। সারাজীবন থাকবো। তুতুলের আপন হয়ে। খুব আপন কেউ।
তুতুলের বাবা হয়েছি আমি রোদু। তুতুলের বাবা। তুতুলের মুখে সর্ব প্রথম বাবা ডাক শুনেছি আমি রোদু। সে আমার সন্তান। সেদিন রোদুসিকে কথা বলতে দেই নি আমি রোদু। সে কষ্ট পাচ্ছে আমি নিজের চোখে দেখছিলাম। তার প্রত্যেকটা কথার সাথে চুয়ে চুয়ে চোখের পানিও নির্গত হচ্ছিল। আমি নিজের চোখে তার কষ্ট দেখতে পারি নি রোদু। তাকে থামিয়ে দিয়েছিলাম। দেখো আমি তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম আর সে অভিমান করে চলে গেলো। চলেই গেলো রোদু। আমার রোদুসি আমাকে ছেড়ে আমাদের তুতুলকে ছেড়ে চলে গেলো। সেদিন ছোট তুতুলটা আমার কোলে থেকে চিৎকার করে কান্না করছিলো। অথছ তার মা আরামে ঘুমাচ্ছিলো। বাচ্চা মেয়েটার কান্নাও তার ঘুম ভাঙ্গাতে পারে নি রোদু। পারেনি। আমি কতটা অসহায় ছিলাম। ঠিক কতটা আমি তুমাকে বুঝাতে পারবো না রোদু । কিছুতেই পারবো না। ‘
চলবে…
(বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির একজন অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।
২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৬১টি ধর্ষণের মামলার সাজা পায় মাত্র ৬৮ জন ধর্ষক। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ৬টি জেলায় ৪৩৭২টি মামলায় মাত্র ৫ জন ধর্ষকের শাস্তি হয়।
এসম্পর্কে আমার যতটুক ধারণা আর গোগল সার্চ করে গল্পের স্বার্থে এভাবে লিখেছি। আর তাছাড়া সায়ানের নিজের উপর কোনো কন্ট্রোল ছিলো না তখন। সে সজ্ঞানে কিছু করে নি। গল্পের কথা বিবেচনা রেখে এভাবে লিখেছি, তাই আইন নিয়ে ভুল ধরবেন না প্লিজ, আমি আইনের স্টুডেন্টও নই। বাকি আপনাদের মতামত জানাবেন। গল্প নিয়ে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন গঠন মন্তব্য করেন । ধৈর্য রেখে গল্প পড়েন। আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার করা হবে
অ্যান্ড সেকেন্ড থিং – The Maaliki, Hanbali scholars and Abu Yusuf from the Hanafi school of jurisprudence said: “ It is not permissible to marry her (i.e. the pregnant woman) before she gives birth to the child, as the Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, said: “One should not have sexual intercourse with a pregnant woman until she gives birth to the child.
প্রেগন্যন্ট অবস্থায় বিয়ে সম্ভব নয়। তাই এটাও স্কিপ রাখা হয়েছে।)