আছি_তোমার_পাশে পর্ব ৪

আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ৪
লেখায়- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
রায়ান আমাকে আদেশ স্বরূপ বলল, ‘রোদু ঘরে যাও’

মহিলাটি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল, ‘আমার নাতনিকে আমায় দিয়ে দাও’

রায়ান ব্যাথিত নয়নে তাকালো মহিলার পানে। বলল, ‘আপনি বসুন মা বসে কথা বলি’

মহিলা বসল। আমি সিড়ির কর্ণায়ে দাঁড়িয়ে আছি। রায়ান আমার দিকে আর তাকায় নি। তবে ভয়ে আছি দেখলে না বকা খাই। তুতুল আসল। দৌড়ে গিয়ে মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘নানুমনি’

রায়ান মা ডাকলো আর তুতুল নানু! আমার বুকটা ধক করে উঠলো। আমি ছলছল নয়নে আম্মার দিকে তাকালাম। আম্মা বিরক্ত হলো। এগিয়ে গেলেন মহিলাটির কাছে। কোনো রকমের কোশল বিনয়াদি করার প্রয়োজন মনে করলেন না। ডাইরেক্ট প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘আপনি এখানে?’

মহিলাটি বিরক্তির দৃষ্টি তাকিয়ে বললেন, ‘আমার নাতনিকে নিয়ে যেতে এসেছি’

আম্মার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। কিছুটা ব্যাঙ্গ সুরে বললেন, ‘আজ তিন বছর পর মনে হলো নাতনিকে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন?’

রায়ান তুতুলকে একটানে নিজের কাছে এনে রাখলেন।

মহিলাটি রায়ানের দিকে তাকিয়ে খানিকটা উচ্চ স্বর নিক্ষেপ করেই বললেন, ‘আমি কতবার তোমাকে বলেছি আমার নাতনিকে আমার কাছে দিয়ে দাও তুমি দাও নি। আর আজকে তুমার মা আমাকে এত কথা শুনাচ্ছেন?’

রায়ান দম নিলো। তারপর আম্মাকে চলে যেতে বলল। আম্মা গেলেন না। বসেই রইলেন। রায়ান মহিলাটির দিকে তাকিয়ে একটু শক্ত কন্ঠেই বলল, ‘তুতুলের শরীরে আমাদের বংশের রক্ত বইছে। তাহলে আমি আপনাকে কেনো দেবো? আর তাছাড়া আপনারা তো তাকে নিতে চান নি? চেয়েছিলেন অনাথ আশ্রমে দিতে। যা আমি বেচে থাকতে কখনোই সম্ভব না। আপনাকে মা বলি ডাকি আর তাই এতটুকু সম্মান করলাম। এবার আপনি আসতে পারেন। আর কখনো তুতুলকে নিয়ে কোনো কথা যেনো না শুনি।’

একটু থামলো, তারপর বলল, ‘আরেকটা কথা ভালো ভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নিন। তুতুল আমার মেয়ে’

মহিলাটি রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট করে স্বাদ মিটেনি? এবার আমার নাতনির টাও করতে চাচ্ছো? কোন অধিকারে তুমি তুতুলকে নিজের মেয়ে বলে দাবী করো?’

রায়ান হাত মুঠো করে চোখ বুজে জোরে শ্বাস ছাড়লেন।

আম্মা উনার কথায় তেতে উঠলেন। এক কথায় দু কথায় ঝগড়া লেগে গেলো। রায়ান ধমক দিয়ে আম্মাকে থামালেন। তারপর তুতুলকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আমার কোলে এনে দিলেন। মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আজ থেকে আপনার সাথে আমার সুতো কড়ি যে সম্পর্কটা ছিলো সেটাও শেষ। আমি চাই না আমার মেয়েটার উপর কোনো রকমের বাজে প্রভাব পড়ুক। আর তুতুলের মা বাবা দুজনই আছে। তার কোনো কিছুর অভাব নেই। তাই সো কল্ড লোক দেখানো নানি তার না থাকলেও চলবে।’

মহিলাটি ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে বললেন, ‘এজন্যই তুমাকে আমার পছন্দ ছিলো না। মেয়েটা তো বুঝে নি পাগল ছিলো পাগল।’

রায়ান মুখে হাত দিয়ে আলতু ঘাম মুছলেন। তারপর কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। মহিলা যেতে যেতে বলে গেলো, ‘এর শেষ দেখে ছাড়বো’

তুতুলকে নিয়ে ঘরে আসলাম। মাথায় আমার হাজার খানেক কথা এলোমেলো ভাবে ঘুরতে লাগলো। অস্বস্থি হচ্ছে ভীষণ। রায়ানকে নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে।।

রায়ান রুমে ঢুকলো। এসে এক পলক আমার আর তুতুলের দিকে তাকালো। আমি তুতুলকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। হেটে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গেলাম। ভালো লাগছে না কিছু। আমি অনুভব করলাম আমার পেছনে কেউ আসছে। ধীরে ধীরে সে আমার পাশে এসে দাড়ালো। কোনো কথা নেই কারো মুখে।

নিরবতার অবসান ঘটালো রায়ান। যখন বলল, ‘আমি জানি রোদু, তোমার মনে অনেক প্রশ্ন । এজন্যই আমি বিয়ের আগে সব কিছু ক্লিয়ার করে দিতে চাইছিলাম। মা আমাকে সব কিছুতে বাধা দিয়েছে।
কোনো ভালো পরিবার আমাদের সম্পর্কে জানলে তাদের মেয়ে তুলে দিবে না রোদু দিবে না। কিন্তু আমি…. ‘

রায়ানের কন্ঠ আটকে গেলো। তার কন্ঠে কম্পন অনুভব করলাম। কাধে হাত রাখলাম। সে হাত সরিয়ে দিলো। বলল, ‘আমাকে ছুলে তুমি কি অপবিত্র হয়ে যাবে রোদু?’

আমি ব্যাতিগ্রস্থ হয়ে বললাম, ‘এসব আপনি কি বলছেন?’

রায়ান শুনলো না। দূরে গিয়ে দাড়ালো। কিছু দুঃখমেশানো সুরে বলল, ‘আমি যখনি লাইফে মোভ অন করতে চাই, অতীত এসে ধরা দেয় রোদু। আমি চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে। এর জন্য মন স্থিরও করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি মনে হয় ভুল রোদু। ভুল। তুমি ভালো কিছু ডিসার্ভ করো। খুব ভালো কিছু।’

আমি মনোযোগ দিয়ে রায়ানের সমস্ত কথা শুনলাম। কিছু বলতে যাবো এর আগেই টুনির মা এসে রায়ানকে আর আমাকে যেতে বললো। আম্মা নাকি খবর পাঠয়েছেন।

আম্মা মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন। আমি আম্মার পাশে গিয়ে বসলাম। রায়ান দাঁড়িয়ে আছে। আমি এক পলক রায়ানের দিকে তাকিয়ে আম্মাকে বললাম,
‘আমি কি এ বাড়ির মেহমান আম্মা?’

আম্মা আমার দিকে তাকালেন। আমার হাত ধরে বললেন, ‘আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম আমার মনে হয়েছিলো আমার রায়ানের জন্য তোমার থেকে ভালো কাউকে কোনো দিন পাবো না। তুমিই একমাত্র একজন যে রায়ানকে বুঝবে। আর দেখো আমি ঠিক ছিলাম। এতদিনে তোমাকে আমি দেখেছি আরো ভালো করে চিনেছি। তুতুলের জন্য যদি তুমি এতটা করতে পারো তাহলে নিজের স্বামীর জন্য কি করবে না! ‘

তিনি দম নিলেন। রায়ান চুপ করে আছে। আম্মা আমাকে আবারো বলতে লাগলেন, ‘তুমি আমার বউমা না। তুমি মেয়ে। আমার ঘরের লক্ষী। আমার ছেলেটাকে আগলে রেখো বউমা’

উনি কেদে দিলেন। আমার খারাপ লাগলো। তবুও আমি এক অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করে ফেললাম, ‘আম্মা তুতুল কে?’

আম্মা চোখের পানি মুছে বললেন,’সেদিন না বললাম’

আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, ‘আমি সত্যিটা জানতে চাই আম্মা’

আম্মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আমি যাই।’

আম্মা যেতে দিলেন না। একটু নরম কন্ঠেই বললেন, ‘বউমাকে সব খুলে বল বাবা। মরার আগে ছেলেটার সুন্দর সংসার দেখে মরি।’

রায়ান থমকালো। এক পলক আমার দিকে তাকালো৷ কিন্তু দাড়ালো না। চলে গেলো।
আম্মা আমার হাত ধরে বললো, ‘আমার ছেলেটাকে ছেড়ো না মা। রায়ানটা উপরে শক্ত ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে খুব নরম।’

আমি আম্মার হাত শক্ত করে ধরলাম। ভরসার হাত। মনে মনে বললাম আমি আছি। থাকবো রায়ানের পাশে। আমি যে তাকে ভালোবেসেফেলেছি আম্মা। কিন্তু আমি সব জানতে চাই। সব সব।

‘তুতুল আসলে কে আম্মা?’

চলবে…

[আজকে শত ব্যাস্ততার মাঝেও আপনাদের রিকুয়েস্টে দিয়েই দিলাম। তাই একটু ছোট পর্ব হয়েছে। পরেরটা বড় করে দেয়ার চেষ্টা করবো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here