আছি_তোমার_পাশে পর্ব ৭

#আছি_তোমার_পাশে
পর্ব ৭
লেখায়- #Anjum_Tuli
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
.
বহুদিন পর প্রতিক্ষিত এক সূর্যের দেখা পেলাম। ভোরের আলোয় তার লালছে আভা যেনো আমায়ও আলোকিত করছে।

সায়ান ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসার আজ দুদিন। সেদিন যখন কেন্দ্রীয় কারাগাড়ের সামনে রায়ান নিয়ে গেলো। বুকটা ধক করে উঠলো। আশ্চর্য রায়ান এখানে এসেছে কেনো? মনের মধ্যে কেবল এই কথাটাই বার বার প্রতিধ্বনি হচ্ছিলো। আমার ভেতরে ভয় আতংক কৌতূহল সব একসাথে ধরা দিতে লাগলো। রায়ান পার্মিশন নিয়ে মাকে নিয়ে ভেতরে গেলো। আমি যেতে চাইলেও সে দেয় নি। নিয়ম নেই বলে ধমক দিয়ে বাইয়ে দাড় করিয়ে রেখেছে। জেদ ধরে আমি তাদের সাথে গিয়েছিলাম। রায়ান কোনো ভাবেই সেখানে নিয়ে যেতে নারাজ। মা সায়ান ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসার পর কেমন মলিন মুখে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। আমি তাদের মা ছেলেকে বার বার লক্ষ্য করছিলাম। তুতুল বায়না ধরলো ‘আইত্তিম আইত্তিম’ বলে। সে আইসক্রিম খাবে। আইসক্রিম পার্লারটার পাশেই একটা হস্পিটাল। রায়ান আমাকে ইশারা করে বললো, ‘ঐ যে ঐখানে, হ্যাঁ ওখানেই। ওখানেই আমার তুতুলের মা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।’

আমি তাকালাম। আবার রায়ানের দিকে তাকালাম। তার চোখে মুখে হারানোর বেদনা। সেই মুহুর্তে আমি তাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না। করতে ইচ্ছাও হলো না। তবে ভেতরে এক চাপা কষ্ট অনুভব করলাম। রায়ান কাউকে ভালোবাসতো? তাহলে কি তুতুলের মা’ই সে? কিন্তু কিভাবে? অজানা ভয় গুলো সেই মুহুর্তে আমাকে ঘায়েল করে যাচ্ছিলো।

রাতের বেলা তুতুলকে ঘুম পাড়ানোর পর। রায়ান নিজ থেকেই বলল, ‘অসমাপ্ত কথাগুলো শুনবে না?’

আমি সায় দিলাম। চাদের আলোয় বারান্দা একদম লাইটের মতই উজ্জ্বল ছিলো। স্পষ্ট ছিলো রায়ানের মুখমন্ডল। মলিন মুখে সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
সেদিন বাসে মেয়েটির কথা শুনে আমি যখন বেকুব বনে গেলাম। মেয়েটি হেসে চলে গেলো। যেনো কোনো জোকস বলে ফেললো সে আমায়। তবে যাওয়ার আগে আমার দিকে একটা কাগজ ছূড়ে গেলো। যাতে গোটা অক্ষরে লেখা ‘রোদুসি”

আমি অবাক হয়ে তাকালাম। রোদুসি? এটা তো আমার নাম? রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘বলেছিলাম না কোনো এক বিশেষ কারণে তোমাকে রোদু বলে ডাকি? কারণ রোদুসি নামে তোমাকে যতবার ডাকবো। ততবারই আমার তার কথা মনে পড়ে যাবে তাই’

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমি চুপ করে রইলাম। সে বলল,
এর পর পরীক্ষা চলে আসলো। বেশ ভালো ভাবেই দিলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয় মেয়েটিকে প্রায়ই ক্যাম্পাসে দেখতাম। একদিন আমাদের সিনিয়র একজন ভাই এসে আমাকে রিকুয়েস্ট করলো যাতে করে আমি তার মামাতো বোনকে পড়াই। ভাবলাম ভালোই হবে। হাত খরচের টাকাটাও চলে আসবে এ থেকে। তাই রাজি হয়ে গেলাম। গেলাম ভাইয়ের সাথে। বাট গিয়ে দেখি ছাত্রী আর কেউ না। সেই রোদুসি। ইন্টারে পড়ুয়া আবেগের ভেলায় ভাসা সদ্য কিশোরী মেয়ে ছিলো সে। তবে তার মায়াবী চেহারায় চটপট কথাগুলোয় আমি হাসতাম। খুব হাসতাম। এক বছর তার নানা রকম যন্ত্রনা সহ্য করে পরে বাধ্য হয়ে টিউশনিটা ছেড়ে দিলাম।

কিন্তু সে এতটাই ডেসপারেট ছিলো যে আমায় ছাড়লো না। ক্যম্পাসে সিনিয়র ভাই যে বললাম উনার সাথে এসে আমার খোজ করতো। আমি হল থেকে বেরুলেই আমার পেছন পেছন আসতো। একদিন এক গাদা বাক্স বাটি নিয়ে এসেছিলো। আমি রাগে এসব ছূড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। এসে কি বলেছিলো জানো? জীবনের প্রথম সে আমার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছে। রাগের মাথায় খাবার গুলো ফেলে দেয়ার পর আফসোস করেছি। মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা। তাকে বোঝানো প্রয়োজন। প্রিতম ভাই মানে সেই সিনিয়র ভাই। রোদুসির রিলেটিভ। তাকে বললাম খুলে সব। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না। উলটো আমাকে খুজে বের করার কাহিনী বললো সে। সেদিন বাসে আমাদের সাথের অনেকের গায়েই বুয়েটের টিশার্ট ছিলো। আরও অবাক করা বিষয় কি জানো? সে তখন আমার ছবিও তুলেছিলো। প্রিতম ভাইকে জালিয়ে সে আমায় খুজে বের করেছে।’ কথাটা বলেই রায়ান হাসলো।

বলল, ‘প্রিতম ভাইকে সব বলার পর উনি বলে রোদুসি নাকি তাকে সব বলেছে।উলটো আমাকে রোদুসির সাথে প্রেম করতে বলে। এও বলে মেয়েটা নাকি খুব বেশি জেদি। তার প্রমাণও পেলাম কিছুদিন পর।

সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল চলে তখন। খুব মনোযোগ দিয়েছি পড়ায়। হঠাৎ একটা ফোন কল আসলো। যা আমার কল্পনায়ও কোনোদিন ছিলো না। রোদুসির বাবা কল দিয়ে বলল রোদুসি সুইসাইড এটেমপ্ট করার চেষ্টা করেছে। আমি যাস্ট কিছু বলার মত অবস্থায় ছিলাম না। তৎক্ষনাৎ ছুটে গেলাম।

হস্পিটালের বেডে শুয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। পরে বলে সবই নাকি তার প্ল্যান ছিলো। যদি রাজি না হই তাহলে আবারো নিজেকে শেষ করে দিবে। আবেগের বসে আবার কি করে ফেলে এসব ভেবে তখন চুপচাপ তার কথাগুলো শুনছিলাম।

তার বাবা আমাকে আবারো রোদুসিকে পড়ানো কনটিনিউ করতে বলে। তাদের একমাত্র মেয়ের ক্ষতি তারা কোনো ভাবেই চায় না। এমনকি এও বলে দরকার হলে এখনি তারা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে প্রস্তুত।

পড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু রোদুসির মনোযোগ থাকতো সম্পূর্ণ আমার উপর। তারপরও টেনে টুনে পাশ করে ফেলে। একটা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করাই। তখন থেকে আমি নিজেও রোদুসির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তার পাগলামু গুলো আমাকে বাধ্য করবছিলো তার প্রেমে পরতে। প্রতিদিন নিজ হাতে আমার জন্য রান্না করে আনতো। একগুচ্ছ লাল গুলাপ এনে বলতো দাও তো দাও এগুলো আমাকে দাও। তার কাছে এগুলোই ছিলো খুশি সুখ। আমার একটু ভালো ব্যাবহারে খুশিতে সে কেদে ফেলতো। ‘

আমার চোখে পানি চলে আসলো। এত ভালোবাসতো মেয়েটা রায়ানকে? রায়ান আমার দিকে তাকিয়ে হাতে একটা টিস্যু দিলো। চোখের পানি মুছলাম।
রায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে লাগলো,

‘গ্রাজুয়েশনের পর আমার মাথায় বাইরে যাওয়ার ঝোক চাপলো। যেতে হবে মানে যেতেই হবে। সেই সময়টাতে বাবার ব্যবসার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। সংসারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বেশ ভালো একটা জবের অফারও আমি নাকোচ করেছি বিদেশ যাওয়ার আশায়। বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি চেষ্টা করবেন। তবে কথা দিতে পারছেন না। ভাই বললো সে টাকা দিবে। আমি তখন অন্য কোনো কিছু ভাবি নি ভাই টাকা দিবে শুনে এতই খুশি হয়েছিলাম যে সে টাকাটা কোথা থেকে পাবে তা একবারও চিন্তা করি নি।

ছয় মাসে সব ধরনের কাজ কমপ্লিট করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। রোদুসির মনটা প্রায়ই খারাপ থাকতো। সে আমাকে এ নিয়ে কিছু না বললেও হুট করে একদিন বললো ‘চলো বিয়ে করে ফেলি’

রোদুসির মুখের দিকে তাকিয়ে আমি না করতে পারি নি। বরং এটাকে আমার যুক্তিযুক্তই মনে হয়েছে। মা’কে কথাটা জানালে মা না করেন। বাবাও সায় দেন না। সায়ান ভাইয়ের আগে আমার বিয়ে এটা বাবা মা মানতে নারাজ। তাই আমি আর রোদুসি লুকিয়ে কোর্ট ম্যারেজটা করে ফেলবো ভাবলাম। পরে ফিরে এসে সবাইকে জানাবো। দুদিন পর বিয়ের ডেইট ঠিক করলাম। কিন্তু হুট করে বিয়ের দিন সকাল থেকে রোদুসির ফোন সুইচ অফ আসছিলো। আমি কোনো ভাবেই তার কিংবা তার ফ্যামিলির কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তাদের বাসায় গিয়েও দেখলাম যে তালা।

পাশের বাসার তাদের জিজ্ঞাসা করলে জানায় তারা কাল মানে এর আগের দিন কোথাও গিয়েছে ফিরে নি। রোদুসি বলেছিলো সে তার গ্রামের বাড়ি যাবে। সকালে গিয়ে রাতে ফিরে আসবে। আমার সাথে আর কথা হয় নি। রাতে টায়ার্ড ছিলাম তাই একবারে সকালেই ফোন দিলাম। কোনো ভাবেই তার খোজ আমি পাচ্ছিলাম না। প্রিতম ভাইকে নিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে জিজ্ঞাসা করলেও পাই না। সবাই মোটামোটি টেন্সড ছিলো ব্যাপারটায়। যাবেটাই বা কই? এর মধ্যেই সায়ান ভাইও নেই। মা সায়ান ভাইয়ের জন্য পাগল প্রায় অবস্থা। এদিকে রোদুসির খবরও নেই। আমার যাওয়ার ডেইট ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগলো। এর মধ্যেই একদিন বাবা বুকের ব্যাথায় লুটিয়ে পরেন। হস্পিটালে নিয়ে যাই। যেতেই দেখি..

চলবে…

[ আমার একটা ছোট্ট গ্রুপ আছে। চাইলে আপনারা জয়েন হতে পারেন। লিংক কমেন্টে দিয়ে দিবো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here