আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট ১১
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
নিশাত ধমকের সুরে ঈশা কে চুপ করতে বলে । ঈশা আরহান এর দিকে তাকিয়ে দেখে আরহান কেমন করে তাকিয়ে আছে তাই ঈশা বলে
_” আরে আপু রেগে যাচ্ছিস কেনো ? আমি just দেখছিলাম এটা আমার জিজু কি না মানে রূপা আপুর জামাই এর মত দেখতে তো (রূপা নিশাতের মামাতো বোন ) তাই গুলিয়ে ফেলছিলাম কিন্ত এখন সব কিলিয়ার
_” যাকে তাকে দেখে উল্টা পাল্টা বলবি না আগে ভালো করে দেখবি তার
নিশাত কে থামিয়ে দিয়ে ঈশা বলতে শুরু করে
_” আরে আপু তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেনো ? ভুল তো মানুষের জন্য নাকি গরু ছাগলের জন্য তাই না ভাইয়া (আরহান এর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে )
আরহান আবার কেশে উঠে এবার জয় কানে কানে বলে
_” এত কাশিস না নিশাত করোনার রুগী মনে করে হসপিটালে দিয়ে আসবে (ফিসফিসিয়ে )
আরহান কনুই দিয়ে গুতা মেরে নিশাতের দিকে তাকায় । নিশাত কে দেখে বুঝা যাচ্ছে রেগে আছে কিন্ত কিছু বলতে পারছে না । নেহা কথা বলা শেষ করে বলে
_” কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেনো ? ভিতরে চল
এবার জয় বলে
_” হা তোমরা ভিতরে যাও দেখো কেমন লাগছে ? আর নিশাত you are looking beautiful তাই না আরহান
আরহান এর দিকে তাকিয়ে দেখে আরহান নিশাত কে দেখছে। জয় ধাক্কা দিতেই আরহান বলে
_” হুম কিন্ত সব থেকে সুন্দর লাগছে এই প্রিন্সেস কে একদম বার্বি ডলের মত লাগছে (ঈশা কে দেখিয়ে )
_” আপনাকে ও খুব সুন্দর লাগছে Mr handsome
আরহান নিচু হয়ে ঈশার গালে টেনে বলে
_” তাই তোমার নাম কি cutie pie
_” ঈশা তোমার ??
নিশাত রেগে বলে
_” ইসু বড়দের আপনি করে বলতে হয়
নিশাত এর কথার পেক্ষিতে আরহান বলে উঠে
_” তুমি আমাকে তুমি করে বলবে । এতে কারোর কোনো সমস্যা হবে না যদি কারোর হয় সে হিংসুটে
নিশাত কিছু বলতে গিয়ে বললো না । ঈশা আরহান গল্পের ঝুলি খুলে দিয়েছে ।আরহান ও ঈশার সাথে খুব ফ্রী ভাবে কথা বলছে যেনো কত দিনের চেনা
ওদের কথার মাঝে সেখানে ফিহা আসতেই নিশাত আরহান এর কাছ থেকে ঈশা কে নিয়ে সিড়ি দিয়ে চলে যায় । যাওয়ার সময় তাকিয়ে দেখে আরহান কেমন অসহায় এর মত তাকিয়ে আছে
ফিহা বকবক করছে আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে । নিশাত একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওখান থেকে চলে যায় । নিশাত যেতেই আরহান একবার জয়ের দিকে তাকায় তো একবার ফিহার দিকে ।
_” বেবি আমি তোমাকে কিছু বলছি ?
_” হুম বলো (বিরক্তি নিয়ে )
_” বলো মানে কি আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো
_” রোজ যেমন লাগে
ফিহা গাল ফুলিয়ে বলে
_” আমাকে সুন্দর লাগছে না ? সবার মত কি লাগছে
আরহান চোখ বন্ধ করে নিশাতের মুখ মনে করে বলে।
_” ভালোবাসার মানুষকে একবার দেখলে অন্য কাউকে আর ভালো লাগে না । প্রতিদিন নতুন করে নতুন ভাবে ভালোবাসার মানুষের প্রেমে পড়া
একটু দেখার জন্য পাগলের মত ছুটে যাওয়া । চোখের দেখার চেয়ে মনের দেখা বেশি টানে। রূপ দেখে ভালোবাসা সেটা তো ক্ষণিকের মোহ মাত্র । রূপ তো একদিন নষ্ট হয়ে যাবে কিন্ত মন সবসময় সতেজ থাকবে । মনকে ভালোবাসা আসল ভালোবাসা
ফিহা আরহান কে জড়িয়ে ধরে বলে
_” বেবি তুমি এত কঠিন কঠিন কথা কি করে বলো আমি তো বুঝতেই পারি না
আরহান মুচকি হেসে জয়কে ইশারা করতেই জয় পকেট থেকে একটা বক্স বের করে দেয় । আরহান সেটা নিয়ে ফিহা কে ছেড়ে বলে
_” তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি
_” সত্যি ? (খুশিতে গদগদ হয়ে )
_” হুম
আরহান বক্স থেকে দুল বের করে ফিহা কে দেয় m ফিহা খুশি হয়ে পড়ে নেয়
_” wow কি সুন্দর কতো টাকা নিয়েছে? দেখে তো অনেক দামি মনে হচ্ছে
_” just for u কিন্ত তোমাকে প্রমিজ করতে হবে কখনো খুলবে না সবসময় পড়ে থাকবে
ফিহা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে
_” প্রমিজ কখনো খুলবো না । তাহলে এখন আমি যাই
আরহান মাথা নাড়ায়। ফিহা যেতে জয় বলে
_” যদি খুলে ফেলে তাহলে তো খেলা শেষ
_” কিছু শেষ না আমি আছি কি করতে (বাকা হেসে )
এদিকে নিশাত,নেহা মিলে ঈশা কে ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে ঈশা বক বক করছে আর দেখছে ।
অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরির পর নিশাত বলে
_” ইসু এবার চল তোকে কিছু খাইয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেবো
ইসু আর নেহা একে অপরের দিকে তাকাতাকি করে ঈশা মন খারাপ করে বলে
_” আপু তুই এমন করছিস কেনো ? এখনো তো অনুষ্ঠান শুরু হলো না আর তুই
_” দেখ ইসু পাকনামি করিস না আসতে চাইছিস তাই নিয়ে এসেছি কিন্ত বেশিক্ষণ থাকা যাবে না অনুষ্ঠান শুরু হবে দেরি করে
_” তা আমি থাকলে তোর কি এমন হচ্ছে ?
_” সেটাই তো তোর সমস্যা কোথায়? ঈশা আমার সাথে আসছে আমার সাথে যাবে
_”তোরা যা খুশি কর
নিশাত রাগ করে অন্য দিকে চলে গেলো নেহা আর ঈশা হাসছে
_” ঈশা আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো তুই যাবি?
_” যাবো না মানে এখন আপুর কাছে গেলে আমাকে গিলে খাবে
নেহা হেসে ঈশার হাত ধরে যেতে গেলে জয় আর আরহান সামনে এসে দাঁড়ায় । নেহা কিছু বলার আগেই জয় বলে
_’ ঈশা কে আমাদের কাছে রেখে যাও আমরা দেখছি
নেহা যেতে চায় না কিন্ত ঈশা জোর করে পাঠিয়ে দেয় ।
আরহান হেসে বলে
_” তো এবার বলো আমাকে জিজু কেনো ডাকলে ?
_” সেইসময় তো বললাম বিশ্বাস হলো না
_” মোটেও না তবে জিজু ডাক শুনতে আমার কোনো সমস্যা নেই (মুচকি হেসে )
_” আমার ও জিজু বলতে কোনো সমস্যা নেই । আর আমি জানি আপনি আপুকে প্রতিদিন ফুল দিয়ে যান সেদিন সকালে আপনাকে ফুল রাখতে দেখেছিলাম আর এটাও জানি আপনি সারারাত আমাদের বাড়ির সামনে বসে থাকেন
আরহান আর জয় হা হয়ে শুনছে নিশাতের চেয়ে ঈশা বেশি পাকনা । ঈশা আবার বলে
_” আমার আপনাকে জিজু হিসেবে খুব ভালো লাগছে
_” আস্তে তোমার ঘাড় তেরা বোন শুনলে সব শেষ
ঈশা হেসে বলে
_” ঘাড় তেড়া কে সোজা তো আপনাকে করতে হবে। বাবা গো এমন ভালোবাসা আমি কখনো দেখিনি যে রাত জেগে দাড়িয়ে থাকে শুধু দেখার জন্য
আরহান হেসে দেয় । জয় জোড়ে বলে
_” দেখতে হবে না ভাইটা কার তবে যাই বলিস তোর সালিকা কিন্ত তোর পক্ষে
_” জি না আমি আপুর পক্ষে তবে আপুকে যদি কেউ সত্যি ভালোবাসে তাকে আমি সম্পূর্ণ সাপোর্ট করবো কিন্ত আপুকে কষ্ট দেওয়া যাবে না
_” ওকে আমার বোনটি কিন্ত তোমার আপুকে এখন কিছু বলতে পারবে না প্রমিজ
_” ওকে জিজু প্রমিজ
_” বাই দা বাই এই টা তোমার আপুর জন্য আমি দিলে ত অনেক প্রশ্ন করবে তুমি চুপিচুপি গলায় পরিয়ে দিবে
_” আমি কেনো আপনি পড়িয়ে দেন ?
_” সেই উপায় থাকলে তো (মাথা চুলকিয়ে )
_” আমি ব্যাবস্থা করছি আসো
জয় আরহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঈশার পিছনে যায় । নিশাত গার্ডেনে বসে ছিল ঈশা পিছন থেকে গিয়ে চোখে হাত দেয়। নিশাত রেগে বলে
_” ইসু এটা বাসা না ছাড়
_” না আপু তোর জন্য একটা গিফট আছে চোখ খুলার চেষ্টা করবি না
_” আরে
নিশাত কে বলতে না দিয়ে ঈশা আরহান কে ইশারা করতেই আরহান চুপিচুপি এসে নিশাতের গলায় একটা পাথরের চেন পড়িয়ে দেয় । নিশাত কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ ছিল । আরহান চেনটা পড়িয়ে দিয়ে মাথায় একটা ভালোবাসা দিয়ে চলে যায় । ঈশা আস্তে আস্তে হাত সরাতেই নিশাত চারিদিকে দেখতে থাকে
_” আপু কি খুঁজছিস ?
_” এখানে কেউ ছিলো আমি ফীল করেছি
_” তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই
_” আমি বলছি ছিল
নিশাত চারিদিকে খুঁজতে থাকে আর ঈশা বেকুব এর মত তাকিয়ে থাকে । নেহা এসেই চিল্লিয়ে বলে
_” এই তোরা এখানে কি করছিস সবাই ঐদিকে নৃত্য পরিবেশন করছে আর তোরা
কথাটা বলে ঈশা আর নিশাত কে টেনে নিয়ে যায় । গিফট এর কথা নিশাতের মাথা থেকে বেরিয়ে আসে ।
চেয়ারে বসে সবাই স্টুডেন্টের নৃত্য দেখছে কিন্ত নিশাত এর চোখ বার বার কাউকে খুঁজছে কিন্ত পাচ্ছে না । নিশাত নেহার কানে কানে বলে
_” নেহ্ন ওদের তো দেখছি না ?
_” তুই আবার কাদের খুঁজছিস নাচ দেখনা কি সুন্দর ক্লাসিকাল ড্যান্স করছে
নিশাত বিরক্তি নিয়ে বসে আছে । কিছুক্ষণ পর পাশে তাকাতেই দেখে ঈশা চকোলেট খাচ্ছে । নিশাত অবাক হয়ে বলে
_” এই তুই চকোলেট কোথায় পেলি? তোর কাছে তো কোনো টাকা নেই
_” ভাইয়া দিয়েছে
_” ভাইয়া মানে কোন ভাইয়া ? যে খুশি যা খুশি দেবে আর তুই খেয়ে নিবি কই সেই ভাইয়া (রেগে )
ঈশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে পিছনে তাকিয়ে দেখ । ঈশার কথা মত নিশাত পিছনে তাকিয়ে শকড খায়
নিশাত দের পিছনে আরহান আর ওর ফ্রেন্ডরা বসে আছে । নিশাত কে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরহান বলে
_” আসসালামুয়ালাইকুম (মুচকি হেসে )
নিশাত আরো শকড খায় । হা করে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে ঝুঁকে বলে
_” চকোলেট ফুরিয়ে গেলে বলো । তোমার বোন তো কিছু খাওয়াবে না আমি ভাই হয়ে কিছু না করলে কি হয়
_”ভাই মানে ?
আরহান কলার ঝাড়া দিয়ে বলে
_” ঈশা আমার ছোট বোন
_” কবে থেকে ?
_” আজ থেকে এমন মিষ্টি একটা বোনের এমন বোন কি করে হয় (নিশাতের দিকে তাকিয়ে )
নিশাত এবার রেগে ঈশার কাছ থেকে চকোলেট নিয়ে আরহান এর মুখে পুরে দিয়ে বলে
_” এইভাবে হয়
কথাটা বলে নিশাত উঠে যায় আর আরহান আয়েসে চকোলেট খাচ্ছে প্রিয় মানুষের হাতের বলে কথা পছন্দ না করলে ও কি ফেলে দেওয়া যায় ।
নিশাত আরহান কে বকতে বকতে অনেক গুলো চকোলেট এনে ঈশা কে দেয়
_” নে যত পারিস খা । আমার বোনকে আমি খাওয়াতে পারবো নতুন কোনো ভাই দরকার নেই
আরহান সেটা দেখে বাকা হেসে বলে
_” ঈশা এইসব ফেলে দে না জানি কি মিশিয়ে আনছে তোকে তো আনতে চাইছিল । এখন দেখা যাবে এর মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো
নিশাত রেগে আগুন কিছু বলার আগেই ঈশা বলে।
_” ঠিক কথা আমি খাবো না
_” তুই খাবি তোর জামাই ও খাবে
নিশাত রেগে চকোলেট ঈশার মুখে জোর করে দিতে গেলে নেহা বলে
_” এই তোরা একা একা খাচ্ছিস কেনো ?আমাকে দে আমার মত মানুষ কি তোর চোখে পড়ে না
পাশ থেকে জয় বলে উঠে
_” পিপঁড়া কে তো কেউ দেখতে পায়নি এই কেউ দে
নেহা চোখ বাকিয়ে তাকাতেই জয় অন্য দিকে ঘুরে যায় ।নেহা জয়ের মত করে বলে
_” এত হাতি থাকলে তার মধ্যে কি আমাকে দেখা যায়
_” বাবা মা কি খেতে দেয় না নাকি কিপটামি করে বাবা মার টাকা বাচাছে
_” দেখুন
_” এখন দেখতে চাই না হোয়াটসঅ্যাপ এ ছবি পাঠিয়ে দিও ভালো করে দেখবে নিবো
জয় আর নেহাকে ঝগড়া করতে দেখে আরহান বলে
_” যেমন ইনি তেমন তার বান্ধবী এর মধ্যে আমার বোনটা থাকলে এদের মত হয়ে যাবে
নিশাত এবার রেগে পিছনে না তাকিয়ে বলে
_” তো আপনার সাথে থেকে কি শিখবে সিগারেট খাওয়া মানুষকে অপমান করা
_” আমার মধ্যে অনেক খারাপ গুন আছে কিন্ত কেউ এই খারাপ মানুষকে ভালো বানাতে চাইছে?
খারাপ হয়ে কেউ জন্মায় না পরিস্থিতি মানুষকে খারাপ বানিয়ে দেয়
আরহান এর কথা নিশাতের বুকে গিয়ে লাগলো । নিশাত কিছু বুঝে উঠার আগেই ফিহা আরহান কে নিয়ে চলে গেলো । নিশাত এক দৃষ্টিতে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে
কি একটা ভেবে নিশাত ও উঠে যায় । চারিদিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে হটাৎ পিছন থেকে কথা আসছে শুনে নিশাত সেইদিকে চলে যায়
নিশাত গিয়ে দেখে আরহান আর ফিহা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে । নিশাত মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে
আরহান ফিহা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ফিহার গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় । ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হওয়ায় ফিহা কিছু বুঝতে পারে না
আরহান রেগে বলে
_” তোমার খেলা শেষ এখন থেকে আমার খেলা শুরু
চলবে
(দিন দিন গল্পটার রেসপন্স কুমে যাচ্ছে কেনো ? গল্পটা কি খারাপ হচ্ছে assignemet করে গল্প লিখছি তাও যদি ভালো না লাগে তাহলে আমি আমার মত তাড়াতাড়ি শেষ করে দি । অতীত বোরিং লাগল কালকেই শেষ করে দেবো হ্যাপি রিডিং )