আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১২

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১২
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

ফিহা অবাক হয়ে আরহান কে দেখছে হটাৎ কি কারণে আরহান রেগে গেলো সেটা ফিহার অজানা। ফিহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে

_” নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাই না কিন্ত কি জানো কনফিডেন্স ভালো কিন্ত অভার কনফিডেন্স ভালো না

_” বেবি তুমি এই সব কি বলছো ? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না

_” বুঝতে পারছো না তাই না তাহলে এটা কি

আরহান কথাটা বলে ফোনে ভিডিও অন করলো । ভিডিওটা দেখে ফিহা আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা

ভিডিও টে ফিহা একটা ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে । ফিহা কাপা কাপা গলায় বলে

_” এ এ এই ভিডিও তুমি কোথায় পেলে ?

_” কেনো আমার কি পাওয়ার কথা ছিল না খুব ভুল হয়ে গেছে ভিডিও টা পেয়ে তাই তো

_” আর আর হান বিশ্বাস করো

_” বিশ্বাস আর তোমাকে হা সেই জায়গা তুমি নিজেই নষ্ট করেছো । কি ভেবেছো আমি কিছু জানতে পারবো না আর তুমি আমাকে ঠকিয়ে যাবে

_” আরহান ভিডিও টা মিথ্যে বিশ্বাস করো এডিট করা কেউ ইচ্ছে করে আমার কাছ থেকে তোমাকে কেরে নিতে চাইছে (জড়িয়ে ধরে )

আরহান জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফিহা কে ফেলে দেয় । ফিহা টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায় । ফিহা অবাকের পর অবাক হচ্ছে এ কোন আরহান কে দেখছে একটা শান্তি ছেলে হটাৎ এই রকম হলো কি করে । আরহান এর এই রূপ ফিহা মেনে নিতে পারছে না ফিহা কিছু বলার আগেই একটা লোক হাত তালি দিতে দিতে আসে

ফিহা এবার শকড খায় । লোকটা আরহান এর পাশে এসে দাড়াতেই আরহান বাকা হেসে বলে

_” কি একে চিনতে পারছো তো ? নাকি এই লোক ও নকল তোমার মত

ফিহা কিছু বলছে না চুপ করে আছে । ফিহা কে চুপ করে থাকতে দেখে আরহান বলে

_” ভুলটা আমার ছিল যে মেয়ে আমি এত খারাপ কাজ করার পর ও আমাকে একবার বারণ করে না সে আমাকে কি ভালোবাসবে । ভালোবাসলে অন্য কারোর সাথে সহ্য করা যায় না সেখান তুমি

ফিহা এবার জোড়ে বলে

_” আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসতাম তাই তো কখনো বাধা দেয়নি ।

আরহান কিছু বলার আগেই পাশে থাকা ছেলেটা বলে

_” বাহ ওকে যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে আমি কে ? আমার সাথে এই দিন কি করেছো ?

ফিহা কে কিছু বলতে না দিয়ে আরহান বলে

_” অত কাহিনীর দরকার নেই আসল কথায় আসি সো তোমার প্রশ্ন আমি ভিডিও কোথায় পেলাম আর একে না কোথায় পেলাম তাই তো ? ওকে দেন বলছি সেদিন ভোরবেলায় যখন আমি বাসায় যাচ্ছিলাম তখন তোমাকে একটা হোটেল থেকে বের হতে দেখি ওতো ভরে তোমাকে ওমন একটা হোটেল থেকে বের হতে দেখে কেমন লাগলো । তোমাকে প্রশ্ন করবো তার উপায় ছিল না তাই হোটেলে খোজ নিয়ে দেখি তুমি প্রায় আসো । তোমার ব্যাপারে আমি যত টুকু জানি তোমার আব্বু আম্মু বিদেশে থাকে আর তুমি একা এখানে থাকো বিষয় কেমন লাগলো তাই না ।হোটেলে খোজ নিয়ে তোমার প্রেমিক শাওন মানে আমার পাশে যে দাড়িয়ে আছে তার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি তোমার আর ওর বিয়ে বাড়ি থেকে ঠিক করে রেখেছে কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি কারণ ঢাকা শহরের সবাই জানে তুমি আমার ওয়ুড বি ওয়াইফ। পরে শাওন আমাকে তোমাদের কিছু রোমান্টিক মুহুর্তের পিক দেখায় ।তোমার ব্যাপারে ওকে সব বললে তোমাদের কিছু ভিডিও আমাকে দেয় । শাওন এর সাথে কথা বলে আমার মাথায় একটা কথা আসে যদি তুমি ওকে ভালোবাসো তাহলে আমার সাথে কেনো এতদিন আছো কারণটা নে শুধু টাইমপাস সেটা আমার মনে হয় না এখন আসল কারণটা তুমি আমাদের বলবে

ফিহা রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে জয় আসতে আসতে বলে

_” ভাই আমার মনে হয় না এত সহজে বলবে

_” না বললে ওর শাস্তি দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হবে কি বলো (শাওন এর দিকে তাকিয়ে )

শাওন চোখ সরিয়ে বলে এইসব মেয়েদের জন্য সব মেয়েদের বদনাম হয় । ঘৃনা হচ্ছে আমার নিজের প্রতি এই মেয়েকে আমি একদিন ভালোবেসেছিলাম

ফিহা এবার শাওনের সামনে যেয়ে হাত জোড় করে বলে

_” এমন বলো না আমি যা করেছি জেদের বশে করেছি কিন্ত তোমাকে ভালোবাসা কোনো মিথ্যা ছিল না । যখন আব্বু আম্মু তোমার ছবি দেখায় তখন থেকে মনে মনে তোমাকে একটা জায়গা দিয়েছি তাই তো তোমার এক কথায় আমি তোমার সাথে রাত কাটাতে চলে যাই প্লীজ আমাকে ভুল বুঝ না আমি সব বলছি কিন্ত তুমি আ

ফিহা আর কিছু বলার আগেই আরহান কানে আঙ্গুল দিয়ে বলে

_” এইসব ড্রামা পরে হবে আগে আসল কথায় আসি তুমি কি নিজে স্বীকার করবে নাকি

ফিহা কিছু বলতে যাবে শাওন ফিহার মুখ টিপে বলে

_” তুই কি নিজে থেকে সব স্বীকার করবি নাকি তোর আব্বু আম্মু কে ফোন করতে হবে

_” না না আব্বু আম্মু কে কিছু বলো না প্লীজ আমি সব বলছি (কান্না করতে করতে ) আরহান আবরার আমার ভাই কে খুন করেছে সেই জন্য আমি ওর থেকে প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম

আরহান বাকা হেসে বলে

_” জয় তোর মনে আছে ক্লাস ৮ এ থাকতে জিহাদ নামে আমাদের এক ফ্রেন্ড ছিল

_” হা মনে আছে পড়ালেখা তেমন পারতো না তুই আর ও নকল করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলি অন্য একটা ছেলের কাছে । জিহাদ সেই ছেলে কে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছেলেটা মারা যায় পরে জিহাদ কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়

_” হুম ফিহা জিহাদের বোন । এতদিন আমার সাথে ছিল শুধু মাত্র আমার ক্ষতি করার জন্য কারণ আমার আব্বু জিহাদ কে জেলে পাঠায় আর আমি,তুই মিলে সাক্ষী দিয়েছিলাম। জিহাদ কে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েক বছর পর জিহাদ পালালোর চেষ্টা করার ফলে জীবন হারায় আর ওর এই নষ্টা বোন আমার সাথে থেকে আমার বিশ্বাস অর্জন করে ক্ষতি করতে চেয়েছিল কি তাই তো

শাওন ফিহার গালে চর মারে

_” ছি তোর ওই খুনি ভাইয়ের জন্য তুই এত বড় গেম খেললি আমার ভালোবাসা ,বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলি তোর মুখ দেখতে আমার ঘৃনা লাগছে

_” বিশ্বাস করো এই জয় আর আরহান মিলে মিথ্যা কথা বলছে আমার ভাই মোটেও ওমন কিছু করেনি এই আরহান মেরেছিল সেই ছেলেকে কিন্ত ফাঁসিয়ে দিয়েছে আমার ভাই কে আমার ভাই কিচ্ছু করে নি

_” ও রিয়েলি তোর ভাই কিছু করেনি সেই প্রুফ তো পুলিশের কাছে আছে ওখানে গিয়ে না হয় বাকিটা জেনে নিস

_” তোদের কাইকে আমি ছাড়বো না দেখে নিস । ফিহা ঝড়ের মত আসার আগে সব কিছু শান্ত কিন্ত চলে যাওয়ার পর বুঝা যায় কি ক্ষতি হয়েছে

_” এই ছিনেমার কথা জেলে গিয়ে দিস যা পরি মনির মত হাওয়া খেয়ে আয়

জয় কথাটা বলে চলে যায় । আরহান দাড়িয়ে শুধু ফিহা কে দেখছে একে বলে ভালোবাসা ফিহার মত মেয়ে শাওনের পা ধরে কান্না করছে কিন্ত শাওন নিজের মন শক্ত করে দাড়িয়ে আছে ।

_”কোনো মানুষ তো চাইবে না তার ভালোবাসার মানুষ একজন চরিত্র হিন হোক তাহলে কী নিশা পাখি ও আমাকে ফিরিয়ে দেবে একবার কি দেবে না ভালো হবার সুযোগ

মনে মনে কথা গুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। একটু পর জয় পুলিশ নিয়ে আসলো । ফিহা পুলিশ দেখে ভয়ে পিছিয়ে যেতে থাকে তার আগে শাওন ধরে ফেলে

_” তোমার সকল কাজ আমি শুধরে নিতে পারতাম কিন্ত তুমি তো একটা খুনি । নিজের ভাইয়ের মতো তোমাকে আমি আর কি ভালো করবো তোমার শাস্তি তোমার ভাইয়ের মতো হবে

শাওন কথাটা বলে ফিহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ফিহা কান্না মাখা চোখে শাওনের দিকে তাকায় কিন্ত আজ শাওন চোখ তুলে তাকালো না

_” অফিসার নিয়ে যান ওকে আর দেখবেন যেনো পালিয়ে যেতে না পারে

ফিহা চিল্লিয়ে বলে

_” আমি কি করেছি যে আমাকে নিয়ে যাবে

আরহান চুলের মুঠি ধরে বলে

_” কি করেছিস তোর মত মেয়ে কে যা বলা হয় সব কম হয়ে যায় । আমাকে মারা পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্ত আমার আব্বু কে এটা তো আমি সহ্য করবো না

_” মানে

ফ্ল্যাশ ব্যাক

নিশাত কে চেন পড়িয়ে দিয়ে আরহান আর জয় গল্প করছে তখন আরহান এর ফোনে মেসেজ আসে । আরহান তাড়াতাড়ি স্টোর রুমে চলে যায় । সেখানে কম্পিউটারে দেখতে থাকে ফিহা কি করছে

_” কাল যদি ক্যামেরা না লাগাতাম তাহলে আজ এত বড় প্রফ হাতে পেতাম না

জয় পাশ থেকে বলে উঠে

_” ফিহা এটা কি করছে ?

আরহান ভালো করে দেখে ফিহা প্রিন্সিপাল এর রুমে ঢুকে ক্যারেন্টের তার ছিঁড়ে রাখছে যাতে কেউ হাত দিতেই শকড খেয়ে মরে যায় ।

এইসব দেখে আরহান আর জয় রেগে নিজেদের হাত মুঠ করে নেয় । আরহান রেগে যেতে গেলে জয় আটকিয়ে দেয়

_” না এখন না সঠিক সময় এর জন্য অপেক্ষা কর

আরহান জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নেয় ফিহা যেতেই জয় প্রিন্সিপালের রুমে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে সব ঠিক করে আসে আর প্রিন্সিপাল কে ও সব বলে দেয় । প্রিন্সিপালের মাধ্যমে আজ অনুষ্ঠান শেষে ফিহা কে ধরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই আরহান রেগে ফিহার খেলা শেষ করে দেয় ।

বর্তমান

আরহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

_” আমি জানলাম কি করে জানো ? তোমার কানে যে রিং আছে সেটার মাধ্যমে আমি সব শুনতে পেয়েছি । তোমাকে ওটা দেওয়ার আসল কারণ ছিল প্রুফ জোগাড় করা আর সেটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি যাই হোক এখন আমাকে যেতে হবে বাকিটা তুই সামলে নিস (জয়কে ইশারা করে )

আরহান যেতেই জয় কিছু বলার আগেই ফিহা সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়। শাওন ছুটে যেতে গিয়ে ও যায়নি জয় বাকা হেসে বলে

_” এত গুলো শকড এক সাথে নিতে পারেনি কেউ নিয়ে যা এই ময়লা থুক্কু মহিলা কে

মেয়ে কনেস্টবল এসে ফিহা কে নিয়ে যায় । জয় শাওনের সাথে কথা বলে চলে যায় ।

আরহান নিশাত কে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছে কিন্ত পাচ্ছে না ।

_” উফফ নিশা পাখি কোথায় গেলো ? আজ কে এত খুশির দিন আর তুমি সাথে নেই । আজ সব বাধা শেষ এখন থেকে আমি তোমার মনের মত চলব খুব ভালোবাসি তোমায় নিশা পাখি (মনে মনে )

আরহান খুঁজছে কিন্ত এত মানুষের ভিড়ে পাচ্ছে না । নিশাত এর নাম্বার থাকায় ফোন দিতে গিয়েও দেয়নি হটাৎ দেখে নিশাত আর নেহা কথা বলতে বলতে আসছে । আরহান খুশি হয়ে ওদের কাছে যায় । আরহান কে থেকে দুইজন রীতিমতো অবাক নিশাত পাশ কাটিয়ে যেতে গেলে আরহান বলে।

_” কি ব্যাপার ঈশা কই ?

_” আসলে ভাইয়া ও তো ছোট মানুষ তাই ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হইছে সন্ধ্যা হতে গেলো স্যার দের ভাষণ শুরু হইছে তাই

_” আমার সাথে দেখা করে গেলো না

নেহা কে বলতে না দিয়ে নিশাত বলে

_” আমার বোন যার তার সাথে দেখা করে না

কথাটা বলে নিশাত চলে যায় পিছন পিছন নেহা ও । আরহান হাবলার মত তাকিয়ে আছে

_” কিহলো হটাৎ এমন রেগে গেলো কেনো ? বেশি জ্বালিয়ে ফেলছি নাকি (মাথা চুলকিয়ে )


ফাংশন প্রায় শেষের দিকে নিশাত চুপচাপ বসে আছে । আর কারোর সাথে কথা বলেনি জয় আর আরহান অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিশাত বলে নক এড়িয়ে গেছে ।

খাওয়া দাওয়া করে সবাই বাড়ির দিকে যাবে তখনই আরহান সামনে এসে দাঁড়ায়

_” আমাদের সাথে চলো তোমাদের বাসায় পৌঁছে দি

নিশাত কড়া গলায় বলে

_” কোনো দরকার নেই আমরা একা যেতে পারবো

_” আচ্ছা তাহলে সামনে এগিয়ে দি

নিশাত কাউকে পাত্তা না দিয়ে নেহা কে নিয়ে বেরিয়ে যায় ।

আরহান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে জয় কাধে হাত দিয়ে বলে

_” এখন থেকে তোর আসল পরীক্ষা শুরু । যে করে হোক নিশাতের মনের মত হতে হবে । কাল যেভাবে ফিহার আমাকে সব বলেছিস সেই ভাবে সব বলবি

_” হুম আমি রেগে গেলে তুই আমার ভুল ধরিয়ে দিবি

জয় আরহান এর হাত ধরে আশ্বাস দেয়।

নিশাত বাসায় যেয়ে কলিং বেল দেওয়ার আগেই দরজা খুলে যায় । হটাৎ এমন হওয়ায় নিশাত কিছুটা ভাবনায় ডুবে যায় । সব ভাবনা বাদ দিয়ে ভিতরে ঢুকতে পা দিতে চিল্লানির আওয়াজ আসে

চলবে

(সরি জানি আজকের পার্ট খুব খারাপ হইছে সারাদিন assignment করে লিখতে বসলাম । মাথা পুরাই শেষ কি লিখছি নিজে ও জানি না ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই বলেন কি কে চিল্লানি দিলো নতুন কোনো বিপদ নাকি অন্য কিছু দেখি কে গেস করতে পারেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here