আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৩
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে । প্রকৃতিতে আজ যেনো যুদ্ধ লেগেছে সকাল থেকে আবহাওয়া ঠিক ছিল কিন্ত এখন হটাৎ বৃষ্টি সাথে বাতাস । এই বৃষ্টির মাঝে কেউ একজন বাইরে বসে কান্না করছে। বাতাসের বেগ এত পরিমাণ যে বৃষ্টির পানি সোজা নিশাতের শরীর ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । হ্যা নিশাত আজ প্রকতির সাথে পালা দিয়ে চোখের পানি ফেলছে। আজ যেনো প্রকৃতি নিশাতের সব কষ্ট ধুয়ে মুছে ফেলে দিচ্ছে ।
কিছুক্ষণ আগেও নিশাতের মুখে হাসি ছিল কিন্ত এখন অশ্রু ভরা নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ কে ডাকছে যেনো একটু বৃষ্টি কমে যায় হয়তো আজ আল্লাহ নিশাতের ডাক শুনতে পাচ্ছে বৃষ্টি কমার বদলে বেড়ে যাচ্ছে ।
ফ্ল্যাশ ব্যাক
নিশাত পা রাখতে যাবে তখনই কারোর চিল্লানির আওয়াজ কানে ভেসে আসে । নিশাত ওখানেই থেমে যায় সামনে যাওয়ার সাহস পায় না অবাক নয়নে সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখছে অন্ধকারে ভালো থাকলে পারছে না। ব্যাক্তিটি নিশাতের কাছে আসতেই নিশাত কেপে উঠে কারণ নিশাতের কাকী নিশাতের সামনে দাড়িয়ে আছে । নিশাত ওর কাকীর চোখ দেখে বুঝে যায় আজ নিশাতের কপালে খারাপ কিছু আছে । নিশাত এর ভাবনার মাঝে ওর কাকী নিশাতের গালে সজোরে থাপ্পড় পড়ে । নিশাত কিছু বলে না মাথা নিচু করে থাকে
নিশাত এর কাকী চিল্লিয়ে বলে
_” এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি ? তোর বাপ আমাদের ঘাড়ে রেখে গেছে এই সব করার জন্য আমি একটু বাড়ি থেকে বের হইছে ওমনি রাত বিরেতে ফষ্টি নষ্টি করে বেরাচ্ছিস মুখ পুরী।
নিশাতের কাকা থামানোর চেষ্টা করছে ততই কাকী চিল্লিয়ে উঠছে
_” কিরে কোন জায়গায় মুখ কালো করে আসছিস ? এই সব করে বেড়াস আজ তোর এক দিন কি আমার একদিন
কথাটা বলে নিশাত কে মারতে থাকে নিশাতের কাকা আটকিয়ে ও পারছে না । নিশাত এর কাকী নিশাতের চুলের মুঠি ধরে বলে
_” কে ওই ছেলে সত্যি করে বল
নিশাত শুধু কান্না করছে চুলে টান লাগার ফলে মাথাটা ঘুরছে তবু কিছু বলছে না
_” এখনো বলবি
আবার মারতে থাকে । মারতে মারতে ফোন কেরে নেয়
_” দেখি কোন নগরের সাথে কথা বলিস
নিশাত এবার পায়ে পড়ে যায়
_” মামী বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি সত্যি বলছি
_” বিশ্বাস আর তোকে আমি না থাকতে প্রতিদিন তোর বাড়ির সামনে ছেলে দাড়িয়ে থাকে কেন ?বল পারার সব লোক দেখেছে এমন কি আজ দুইদিন ধরে তুই সন্ধার পরে বাসায় আসিস কোথায় থাকিস ? কি ভেবেছিস তুই এই সব করে বেরাবি আর আমরা সহ্য করবো আমার বাড়ি এই সব চলবে না
নিশাত এর কাকা চিৎকার করে বলে
_” কি সব বলছো ? নিশাত এমন মেয়ে না আজ ওর ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান ছি
_” চুপ তুমি আর একটা কথা বলবে না তোমার জন্য আজ ওর এত সাহস । রাহুলের কসম লাগে তুমি এখান থেকে চলে যাও
নিশাত এর কাকা চুপ করে চলে যায়
নিশাত চুপ করে কান্না করছে কি বা বলবে তার তো বলার কিছু নেই সত্যি ত সে জানে না কোন ছেলে তার বাড়ির সামনে থাকে । বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে হটাৎ ঈশা কান্না করতে করতে নিশাত কে জড়িয়ে ধরে
_” আপু কাকী আমাকে অনেক মেরেছে দেখ পায়ে লাঠি দিয়ে বারি মেরেছে
নিশাত তাড়াতাড়ি করে দেখতে গেলে । কাকী নিশাত কে ধাক্কা মেরে ঈশার থেকে সরিয়ে দেয়
_” অনেক নাটক করেছিস আর না তোর মত নষ্টা মেয়ে কে আমি আমার বাড়ি রাখবো না
নিশাত কান্না করতে করতে বলে
_” কাকী তুমি যা বলবে তাই করবো কিন্ত ইস্যুর খুব লেগেছে আমাকে দেখতে দাও নাহলে ওর রাতে জ্বর আসবে প্লীজ
_” তোর পাপের শাস্তি তুই পাবি প্রতিদিন যার সাথে থাকিস আজও তার কাছে না
_” কাকী প্লিজ বিশ্বাস কর আমি এমন কিছু
আর কিছু বলার আগেই নিশাতের কাকী নিশাত কে বাড়ির বাইরে বের করে দেয় । ঈশা কান্না করছে
_” আপু আপু আমাকে নিয়ে যা
ঈশা ছুটে বাইরে যেতে গেলে কাকী ধরে ফেলে আর দরজা আটকিয়ে দেয়। নিশাত চিৎকার করে কান্না করছে আর বলছে
t
_” কাকী প্লিজ ইসু কে ওষুধ লাগিয়ে দাও ওর খুব কষ্ট হচ্ছে
নিশাত এর ডাক ওর কাকী শুনলো না ঈশা কে জোর করে ঘরে দিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয় ।
বর্তমান
নিশাত কান্না করছে হটাৎ ঈশার গলা পেয়ে আশে পাশে তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করে
_” আপু আমি এই উপরে তাকিয়ে দেখ
নিশাত দরজার ছাউনী থেকে একটু সামনে এসে উপরে তাকিয়ে দেখে ঈশা দাড়িয়ে কান্না করছে ।ঈশার দাড়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে সেটা নিশাতের বুঝতে দেরি হয়নি
_” ইসু বোন আমার তোর পায়ে অনেক লেগেছে তাই না যা টেবিলের ডোয়ার থেকে মলম নিয়ে লাগা আর শুন জ্বরের ওষুধ খেয়ে নিবি যা বোন তোর গায়ে পানি লাগলে শরীর আরো খারাপ করবে
_” আপু তুই পাগল তুই এভাবে ভিজছিস আর আমি না না আপু চল আমরা এখান থেকে দূরে চলে যাই তোকে কত বার বলেছি
নিশাত খেয়াল করে দেখে ঈশা কাপছে । নিশাত এবার গম্ভীর হয়ে বলে
_” ইসু তুই যদি এখন গিয়ে মলম না লাগাস তাহলে আমি এখুনি অনেক দূরে চলে যাবো যেখান থেকে তুই আমাকে কখনো খুঁজে পাবি না
ঈশা যাবে না কিন্ত নিশাতের জোরাজুরিতে ঈশা ভিতরে যায় । নিশাত আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে
_” আপু এই নে
নিশাত তাকিয়ে দেখে ঈশা একটা ছাতা দিচ্ছে । নিশাত রেগে বলে
_” ইসু তোকে বললাম রুমে যেতে তুই
_” না আপু তুই কষ্টে আসিস আর আমি শান্তিতে ঘুমাবো না না তুই আমার আব্বু আম্মু তুই আমার দুনিয়া
নিশাত এবার কান্না করে দেয় আজ সে নিরুপায় । ঈশা কে শান্ত করার মতো ভাষা ওর কাছে নেই ।
_” ইসু তোকে আমার কসম লাগে যা ওষুধ লাগিয়ে শুয়ে পড়
ঈশা কান্না করতে করতে চলে যায় । নিশাত ঈশার দেওয়া ছাতা দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলে
_” না আমাকে ইসুড় জন্য সুস্থ থাকতে হবে । আল্লাহ আমাকে মাপ করো আমি জানি কসম দেওয়া গুনাহ কিন্ত আমার যে আজ কিছু করার নেই ইসু তো নাহলে এখান থেকে যেত না । আল্লাহ কেনো এমন পরীক্ষায় ফেললে (কান্না করতে করতে )
এদিকে
আরহান বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে । হালকা ছিটে ফোঁটা আরহান এর শরীরে পড়ছে আরহান সেটা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে আর নিশাতের মুখ মনে করছে
_” আর কিছুক্ষণ নিশা পাখি তারপর আমি তোমাকে নিজের মনের কথা বলে দেবো । কালকেই আমি তোমাকে বলে দেবো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি কিন্ত তুমি যদি রাজি না হও তাহলে না না নিশা রাজি হোক বা না হোক আমার সাথে থাকতেই হবে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার অধিকার নিশার নেই । আর কিকুক্ষণ
আরহান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে খুশিতে ওর চোখ মুখ চকচক করছে । কতদিন না কতবছর পর আরহান এর মুখে এমন হাসি ।
_” আচ্ছা নিশা পাখি কি করছে ? একবার ফোন করে দেখবো না থাক ঘুমাচ্ছে হয়তো ।
আরহান ফোনে নিশাতের ছবি দেখছে ।
মাঝরাতে বিদুৎ চমকানোর শব্দে নিশাতের কাকী বাইরে তাকিয়ে দেখে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে । নিশাত এর কাকা সেই থেকে বুঝাচ্ছে কিন্ত নিশাতের কাকী শুনতে রাজি না । বাইরের এই অবস্থা দেখে কাকী নিশাতের কাকার দিকে তাকিয়ে দেখে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে আছে
_” যাও তোমার আদরের ভাইজি কে নিয়ে এসো । জ্বর এসে যাবে
নিশাত এর কাকা যেনো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না ।নিশাতের কাকীর দিকে তাকাতেই নিশাতের কাকী বলে।
_” ছেলে ঘুমাচ্ছে আর কথা না বাড়িয়ে যাও
নিশাত এর কাকা এক ছুটে বাইরে আসে । দরজা খুলতেই দেখে নিশাত গুটি মেরে বসে বসে কান্না করছে । নিশাত এর কাকা কাধে হাত দিতেই নিশাত কেপে উঠে
_” উঠ মা আমাকে মাপ করে দে আমি তোর জন্যে কিছু করতে পারলাম না
নিশাত উঠে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় । কাকা মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে
_” কাদিস না মা
_” কাকা তুমি যাও কাকী দেখলে তোমার উপর রাগ করবে
_” নারে মা তোর কাকী আসতে বলেছে এখন চল । শরীর খারাপ করবে গা এমনি অনেক গরম
নিশাত এর কাকা নিশাত কে ঘরে নিয়ে আসে । নিশাত এক ছুটে নিজের রুমে গিয়ে দেখে ঈশা ফ্লোরে শুয়ে আছে । নিশাত নিজের ড্রেস বদলে ঈশা কে ডাকতে থাকে
_” ইসু উঠ এখানে শুয়ে আছিস কেন? উঠ এই দেখ আমি তোর আপু
ঈশা ঘুমের ঘোরে হুম হুম করছে । নিশাত দেখে ঈশার পায়ে লাল দাগ পড়ে গেছে
নিশাত ঈশা কে কোলে তুলে বিছনায় শুয়ে দিতেই । নিশাত এর কাকা আসে
_” কাকা তুমি?
_” এই নে গরম দুধ খেয়ে নে নাহলে শরীর খারাপ করবে
_” কাকা ঈশার শরীর অনেক গরম । ঘুমের মধ্যে কেপে কেপে উঠছে
কাকা ঈশার শরীরে হাত দিতেই দেখে অনেক গরম । দরজা থেকে নিশাতের কাকী বলে
_” বোনের যদি ওতো চিন্তা থাকতো তাহলে বাইরে এইসব করে বেরাতিস না
নিশাত পিছনে তাকিয়ে দেখে কাকী দাড়িয়ে আছে । নিশাত চুপ করে মাথা নিচু করে ফেলে
নিশাত এর কাকী ঈশার কাছে বসে বলে
_” জলপট্টি এনে দেবে কেউ
নিশাত ছুটে জলপট্টি আনতে যায় । নিশাত এর কাকা জ্বরের ওষুধ গুরু করছে ।
নিশাত এর কাকী দুধের মধ্যে ওষুধ মিশিয়ে ঈশা কে হালকা উঠিয়ে খাইয়ে দেয় । নিশাত জলপট্টি এনে দেয়
_” জলপট্টি দে কমে যাবে
কথাটা বলে কাকী চলে যায় । নিশাত সারারাত জলপট্টি দেয় পাশে কাকা বসে থাকে । নিশাত অনেক বার যেতে বলছে কিন্ত তিনি উঠেনি । নিশাত এর ও শরীর ভালো লাগছে না
সকালে ঈশার ঘুম ভাঙতেই পাশে নিশাত কে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে। নিশাত একটু আগে ঘুমিয়েছে ঈশার এভাবে জড়িয়ে ধরাতে নিশাত এর ঘুম ভেঙ্গে যায়
_” দেখি জ্বর কেমন আছে ?
কপালে ভালো করে দেখে মুচকি হেসে বলে
_” কাল বলেছিলাম ওষুধ খেতে খাস নি কেনো ?
_” আপু তুই কখন আসছিস ? চল আমরা এখান থেকে চলে যাই আমার আর এখানে থাকতে ভালো লাগছে না
_” ইসু চুপ কর শরীর ভালো না আমি তোর জন্য দুধ নিয়ে আসি
নিশাত ঈশা কে বলতে না দিয়ে উঠতে গেলে মাথা ঘুরে যায় কিন্ত ঈশা কে বুঝতে না দিয়ে আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নামে তখনই পিছন থেকে কেউ চেচিয়ে বলে
_” এত সকালে কোথায় যাচ্ছিস ?
নিশাত ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে
_” আসলে কাকী রান্না
_” তোকে কিছু করতে হবে না কাজের লোক আছে সেই সব করবে তুই যা ঈশার কাছে আর এটা নিয়ে না
কথাটা বলে একটা ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দেয় । নিশাত ব্যাগ ভালো করে দেখে ওখানে একটা শাড়ি আর গহনা আছে
চলবে