আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৫+১৬

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৫+১৬
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

নিশাত ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আশে পাশে কিছু মহিলা নিশাত কে ঘিরে রাখছে কিন্ত নিশাতের মন বার বার এদিক ঐদিক ঈশা কে খুঁজছে । এই বাড়িতে আসার পর থেকে কিছু মহিলা নিশাত কে ঘিরে ধরছে তাদের নিশাত এর শশুর শাশুড়ি কাউকে দেখছে না আর ঈশা সে তো কোথায় চলে গেলো নিশাত আর খুঁজে পেলো । নিশাত একবার বাড়িতে চোখ বুলিয়ে নেয় বাড়িটা খুব বড়ো আর সৌখিন হটাৎ নিশাত এর চোখ উপরের একটা ঘরের দিকে যায় ।এক পলক ওখানে নেহা কে দেখছে মনে হলো। নিশাত নিজের চোখ ডলে আবার তাকিয়ে দেখে না কেউ নেই। নিশাত এর গাড়িতে আসার কথা মনে পড়ে।

রাস্তায় হটাৎ নিশাত নেহা কে দেখে চোখ আটকে যায়। নেহা একটা ছেলের সাথে দাড়িয়ে আছে ফুলের দোকানে । নিশাত ডাকতে যেয়ে ও পারেনি। নিশাত ঐদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নেহা চোখের আড়াল হয়ে যায় ।

সেইসময়ে কথা ভেবে নিশাত আশে পাশে ঈশা কে খুঁজতে থাকে

_” আচ্ছা সেই সময় নেহা কার সাথে ছিল ? আর ঈশা বা কোথায় গেলো আমাকে এখানে একা রেখে (মনে মনে )

নিশাত আকাশ পাতাল ভাবছে তখনই কিছু মহিলা নিশাত কে উঠিয়ে একটা ঘরে নিয়ে যায় । ঘরটা হলুদ গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো একদম নিশাত এর মনের মত । নিশাত ঘরের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মাথা নিচু করে নেয় । ঈদ দিনে প্রত্যেক টা মেয়ের মাঝে অস্থিরতা কাজ করে আর নিশাত এর তো সব থেকে বেশি কারণ নিশাত বিয়ের আগে ছেলের সাথে ২বার কথা বলছে । একটা অচেনা অজানা ছেলের সাথে সারাজীবন থাকতে হবে ভাবতেই নিশাতের বুক ধুক করে উঠছে ।

মহিলা গুলো নিশাত কে ঘাটের মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে গেলো । একটু পর ঈশা আসলো

নিশাত ঈশা কে কিছু বলার আগেই পিছন থেকে নেহা বলে

_” বিয়ের দাওয়াত তো দিলি না তাই আমরা ও তোর সাথে বেইমানি করলাম । একা একা থাক কেমন লাগে

নেহা গাল ফুলিয়ে বললে ও ঈশা হেসে দেয়। নিশাত অবাক হয়ে বলে

_” তুই এখানে কি করে ? মানে কিভাবে আসলি ?

নেহা নিশাত এর পাশে বসতে বসতে বলে

_” হা আমি তুই ত আমাকে দাওয়াত দিলি না কিন্ত দেখ আমি বেহায়ার মত চলে আসছি । আর আমাকে এখানে দুলাভাই আনছে

_” নেহ্ন আমি আসলে

_” থাক থাক আর বলতে হইবো না আমি সব জানি তবে তোকে একটা কথা বলবো যা হচ্ছে মেনে । সব আল্লাহ উপর ছেড়ে দে আল্লাহ কখনো কারোর সাথে খারাপ করবে না

_” তোর কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি

বাকিটা বলতে না দিয়ে ঈশা বলে

_” তোকে ওতো বুঝতে হবে না তোকে বুঝানোর লোক ঠিক বুঝিয়ে দিবে তাই না নেহা আপু

_” একদম ঠিক । আচ্ছা তুই থাক আমি আর ঈশা পাশের ঘরে আছি

নিশাত হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে

_” পাশের ঘরে থাকবি মানে কি ? আর আমি এখানে কি করবো ? আমি তোদের কথা কিছু বুঝতে পারছি না

নেহা দুষ্ট হেসে বলে

_” তোর জন্য জিজু আছে আমরা এখন যাই বাকিটা জিজু বুঝিয়ে দেবে

কথাটা বলে নিশাত কে রেখে নেহা ঈশার হাত ধরে চলে যায় । নিশাত হা করে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে । এখন অস্থিরতা আরো বেড়ে যাচ্ছে

ডিম লাইট এর আলোতে আফছা দেখা যাচ্ছে । নিশাত অনেকক্ষণ ধরে গুটিগুটি মেরে বসে আছে হটাৎ দরজা খুলার আওয়াজে নিশাত নড়েচড়ে বসে ।

_” বাসর রাতে যে স্বামী কে সালাম করতে হয় সেটা কি কেউ তোমাকে বলেনি নিশা পাখি

কথাটা শুনে নিশাত কিছুটা চমকে যায় তাও গুটিগুটি পায়ে নেমে সালাম করে । নিশাত এর দুইপাশে হাত দিয়ে নিশাত কে তুলে কপালে ভালোবাসা দেয়। নিশাত সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে

_” আপনি এখানে কি করে ? আমার স্বামী কোথায়?

আরহান বাকা হেসে বলে

_” নিজের স্বামী কে চিনতে পারছো না কি রকম স্ত্রী তুমি

আরহান লাইট জ্বালাতে জ্বালাতে কথাটা বলে উঠে । নিশাত পিছনে সরে যায়

_” স্বামী মানে কিসের স্বামী? আপনি আমার স্বামী না আমার স্বামী তো

_” বলো তোমার স্বামী কি ? আমি তো তোমার স্বামী ৩কবুল পড়ে বিয়ে করছি

_” মানে কি এইসবের ?

_” সব বলছি নিশা পাখি আগে ফ্রেশ হয়ে আসো । এই ড্রেস কতক্ষন পড়ে থাকবে যাও আগে ফ্রেশ হয়ে নাও

নিশাত তাও দাড়িয়ে আছে দেখে আরহান চোখ রাঙিয়ে বলে

_” তুই কি যাবে ? বাই এনি চান্স তুমি আমার কাছে ড্রেস পড়তে চাইছো নাকি

নিশাত হা হয়ে যায় আরহান এর কথায় । আরহান চোখ টিপ মেরে বলে

_” কি আমি রেডী করে দিবো

_” না না না আমি একা পারবো আপনাকে কিছু করতে হবে না

কথাটা বলে নিশাত ওয়াশরুমে যেতে গেলে আরহান পিছু ডাকে

_” শাড়ি না নিয়ে চলে যাচ্ছো

_” আসলে

আরহান কিছু না বলে ক্যাবার্ড থেকে একটা গোলাপী রঙের শাড়ি বের করে নিশাতের হাতে দেয়। নিশাত ওয়াশরুমে চলে যায়

একটু পর রেডী হয়ে বেরিয়ে দেখে আরহান পাঞ্জাবি ছেড়ে গেঞ্জি আর টাউজার পড়ে আছে । নিশাত মাথা নিচু করে নেয় কিন্ত আরহান নিশাতকে দেখে হা হয়ে যায় ।এই প্রথম নিশাত কে শাড়িতে দেখছে। গোলাপি রঙের শাড়ি চুল খোলা মুখে টুপটাপ পানি আছে ।

আরহান যেনো নিশাত কে দেখে আরেক দফা প্রেমে পড়ে যায় । আরহান বুকে হাত দিয়ে বলে হায় আমাকে তো মেরে ফেলবে

নিশাত মাথা নিচু করে বলে

_” আপনি এখন বলবেন বলছিলেন আপনি আমার স্বামী কি করে হন? আমার তো অন্য কারোর সাথে বিয়ে হবার কথা

আরহান হালকা কেশে নিশাতের কাছে যায়

_” বলবো আজ সব বলবো । আমার #মনের_আড়ালে যত কথা আছে সব বলবো ছাদে যাবে

নিশাত অবাক হয়ে দেখছে

_” লোকটা কি পাগল হলো নাকি (মনে মনে )

_”কিহলো কি ভাবছো যাবে ?

নিশাত মাথায় নাড়ায় । আরহান নিশাত এর হাত ধরে ছাদে নিয়ে যায় ।

ছাদের কোনায় নিশাত আর আরহান দাড়িয়ে আছে । নিশাত মাথা নিচু করে আছে আর আরহান নিশাতকে দেখতে ব্যাস্ত । নিশাত বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরহান বলে

_” আমি তোমাকে ভালোবাসি নিশা পাখি । এতদিন তোমাকে #আড়ালে_ভালোবেসে আসছি কিন্ত এখন আর পারবো না খুব ভালোবাসি তোমায় খুব।তোমার মধ্যে আমি আমার বেচে থাকার আলো দেখেছি । তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না সেটা বলবো না তোমাকে না পেলে মরার মত পড়ে থাকবো । প্লীজ আমাকে ছেড়ে যেও না কি হলো তুমি ভাবছো আমি এইসব বলবো না তোমার ভালোর জন্য তোমাকে বিয়ে করেছি

নিশাত এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল লাস্ট এর কথা নিশাত এর মাথার উপর দিয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে বুঝার চেষ্টা করছে আরহান কি বলছে। হয়তো আরহান সেটা বুঝতে পারছে তাই বলে উঠে

_” তোমার কাকী তোমাকে একটা বিবাহিত লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল । তার আগে একটা বিয়ে হইছে আর একটা মেয়ে হয়ে সেই স্ত্রী মারা গিয়েছিল ।সকালে ঈশা ফোন না করলে জানতে পারতাম না

_” ওহ তারমানে আপনি আমার উপর দয়া করছেন ? বিয়েটা শুধু আমাকে বাঁচাতে করেছেন তাহলে এখন যখন আমি ঠিক আছি তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিবেন তাই ত

ডিভোর্সের কথা শুনে আরহান এর খুব রাগ হয়ে তবুও নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বলে

_” না বিয়ে যখন করেছি স্ত্রীর মর্যাদা পাবে । একজন স্ত্রীর যা যা পাওনা সেইসব পাবে ঈশা আমাদের সাথে থাকবে । সব কিছুর বিনিময়ে আমি শুধু একটা জিনিষ চাই

নিশাত প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে আছে

_” আমি বাঁচতে চাই । ভালোবাসে সুস্থ্য মানুষের মতো জীবন যাপন করতে চাই করবে সাহায্য আমাকে । বানাবে একজন মানুষের মতো মানুষ তোমার মনের মানুষ। আমি জানি আমার মত ছেলের সাথে তুমি থাকতে চাইবে না কিন্ত আমি ভালো হতে চাই তোমার মনের মত হতে চাই প্লীজ একটা সুযোগ দাও আমাকে (মনে মনে )

আরহান এই সব ভাবছে নিশাতের ডাকে ভাবনার ছেদ ঘটে

_” কিহলো বলেন কি চাই?

_”উফফ আরহান তুই তো ভুলে গেছিস এই মেয়ে এক নম্বর এর ঘাড় তেড়া তোর কথা কি এত সহজে মেনে নিবে ওকে তোর স্টাইলে বুঝাতে হবে (মনে মনে ) হুম সেটা পরে বলবো আগে

_” আগে কি

আরহান নিশাত এর হাত ধরে টেনে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে । এমন কাজে নিশাত এর চোখ বড় বড় হয়ে যায় । কাপা কাপা গলায় বলে

_” কি করছে কি ? ছাড়ুন

_” কেনো ছাড়বো ? তুমি আমার বিয়ে করা বউ আর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে শুনো আজ থেকে আমরা বাকি স্বামী স্ত্রীর মতো থাকবো তোমাকে সময় দেবো সেটা যদি ভেবে থাকো তাহলে ভুল । তোমার ইচ্ছা না থাকলেও আমার সাথে থাকতে হবে bcz you are only mine আর আমি সব কিছু হারাতে পারি কিন্ত তোমাকে না। আর হা আমি এই টুকু বলতে পারি আগে যা করেছি করেছি তোমাকে কখনো ঠকাবে না আমার নিশ্বাস চলে যাবে তাও তোমাকে ঠকানোর কথা ভাববো না

নিশাত এর কপালে ভালোবাসা দিয়ে । নিশাত শুধু অবাক এর পর অবাক হচ্ছে কিন্ত একটা বিষয় নিয়ে নিশাতের খুব মন খারাপ ফিহা যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ? আরহান কি নিশাত কে ছেড়ে দিবে

এইসব ভাবনার মাঝে হটাৎ আরহান নিশাত কে কোলে তুলে নেয় ।

_” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে কি করছেন এই সব ?

_” কেনো ? তুমি জানো না আজ তো আমাদের ফুলসজ্জা (চোখ মেরে)

নিশাত চোখ বড় করে কিছু বলতে যাবে তার আগে
আরহান বলে

_” আর কোনো কথা না চুপ করে থাক নাহলে কিন্ত সবার সামনে কিস করবো অপস সরি এখানে তো কেউ নেই যাই হোক তুমি যদি

নিশাত তাড়াতাড়ি এক হাত দিয়ে আরহান এর গলা অন্য হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। সেটা থেকে
আরহান হাসে নিশাতের আড়ালে

ঘরে গিয়ে আরহান নিশাত কে শুয়ে দিয়ে নিজে পাশে শুয়ে বলে

_” ঘুমিয়ে পরো কাল আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে

_” আমি ভার্সিটিতে যাবো ? (অবাক হয়ে )

_” তুমি যদি ভেবে থাকো মূর্খ মেয়েকে নিজের স্ত্রী বানাবো তাহলে তুমি ভুল আমার জন্য হলেও পড়তে হবে না চাইলেও

_” এই আপনার কি জন্মের সময় মধুর বদলে নিমের রস খাইয়েছিল ? এত টেরা টেরা কথা কেনো? বলি এক বুঝেন আরেক উত্তর দেন আরেক

আরহান নিশাত এর দিকে কিছুতে ঝুঁকে পড়ে সেটা দেখে নিশাত কিছুটা সরে যায়

_” কি বলো তো আমি যদি সেইসময় জানতাম আমার বউ আমাকে এই প্রশ্ন করবে তাহলে আগে থেকে বলে রাখতাম মধু বেশি করে খাইয়ে দিতে । তবে আমার তো মনে হয় নিমের রস তোমাকে খাইয়েছে কখনো তো মিষ্টি করে কথা বলতে পারো যেমন ওগো শুনছো, কিছু খাবে ,এই নাও গো

নিশাত ভেংচি দিয়ে বকে

_” আহা কি সখ ওইসব আমার দ্বারা হবে না যেখানে গেলে শুনতে পাবেন সেখানে যান যতসব

কথাটা বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে ।আরহান মুচকি হেসে বলে

_” এত রাগ দেখিয়ে লাভ নেই কারোর কাছে না তোমার কাছ থেকেই এইসব শুনবো দেখে নিও

নিশাত কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়ে আরহান নিশাতকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে ।

সকালে নিশাত শাড়ি পড়ে চুল আচড়াচিল তখন পিছন আরহান বলে

_” শাড়ি পড়া শিখতে গিয়েছিলে কেনো ? আমি পড়িয়ে দিতাম

_” উল্টা পাল্টা কথা বাদ দিয়ে বলে ভার্সিটিতে যাবো কি না

_” কি গরম

আরহান এর সামনে এসে নিশাত কোমরে হাত দিয়ে কিছু বলার আগেই ঈশা চলে আসে

_” আপু আসবো

নিশাত কিছু বলার আগেই আরহান বলে

_” তোমার আবার পারমিশন লাগে নাকি যখন খুশি চলে আসবে

_” জিজু কোথাও যাবেন নাকি ?

_” হুম ভার্সিটিতে যাবো

ঈশা গাল ফুলিয়ে বলে

_” বিয়ের পরের দিন কেউ ভার্সিটিতে যায় ? আজকে আপুর সাথে সময় কাটাবেন তারপর যাবেন

_” আমার বোনটা তো খুব বুদ্ধিমান (ঈশার গাল টেনে ) তবে কি বলো তো সামনে তো আমার এক্সাম এখন তো যেতেই হবে আর ভালো ভাবে এক্সাম ন দিলে তোমার বোন তো আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না

ঈশা হেসে দেয় সেই সাথে আরহান ও। নিশাত দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের কাণ্ড দেখছে । ঈশা কে দেখে বুঝা যাচ্ছে না আরহান এর সাথে কিছু দিনের পরিচয় । মনে হচ্ছে অনেক দিনের পরিচয়

_” ঈশা যেভাবে আপন করতে পারছে আমিও কি পারবো এই হাসব্যান্ড নামক অচেনা মানুষকে (মনে মনে )

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here