আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৮

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৮
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

নিশাত এগিয়ে যেতেই ।আমজাদ হাবিব মুচকি হেসে বলল

_” দাড়িয়ে আছো কেনো ?

নিশাত ও মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে

_” আসলে আরহান দাড়াতে বলছিলো তো তাই

_” ওহ ওর আসতে মনে হয় দেরি হবে তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পারো ।

নিশাত কিছু বলার আগেই পিছন থেকে আরহান রাগী গলায় বলে।

_” আমার স্ত্রী কে আমি নিয়ে যেতে পারবো । কারোর সাহায্যের দরকার নেই

আমজাদ হাবিব অবাক চোখে আরহান কে দেখছে । আরহান নিশাত কে টানতে টানতে বাইকের কাছে নিয়ে যায় । আরহান বাইকে উঠে নিশাত এর দিকে তাকাতেই নিশাত উঠে পড়ে ।

আমজাদ হাবিব ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে

_” তাহলে আমার বেপরোয়া ছেলের মধ্যে দায়িত্ববোধ চলে আসছে

আমজাদ হাবিব কথাটা বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায় ।

আরহান বাইকে নিশাতের দিকে না তাকিয়ে সামনে দৃষ্টি রেখে বলে

_”বাইক কি তোমার পছন্দ না ? আগে বললে ত গাড়ি নিয়ে আসতাম । আমার জন্য এই টুকু অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিলো না দেখে শ্বশুরের দামী গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলে ?

নিশাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_” জানেন তো বিশ্বাসের উপর ভালোবাসা নির্ভর । যেখানে বিশ্বাস নেই সেইখানে ভালোবাসা নেই। সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর

আরহান আর কিছু বলল না ওর যা বুঝার বুঝে গেছে । নিশাত চুপ করে আছে

বাড়িতে এসে আরহান নিশাত কে নামিয়ে দিয়ে যেতে গেলে নিশাত বলে।

_” কোথাও যাচ্ছেন ??

_” সামনে একটু কাজ আছে যাবো আর আসবো

_”কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আমার সাথে বাসায় চলুন। এখন বাইরে গিয়ে স্মোক করবেন তাই তো ? আজ কিন্ত বাড়ি ঢুকতে দেবো না

_” আরে বাবা যাবো আর আসবো । কেনো বর কে কাছে পেতে ইচ্ছা করছে নাকি ? একটু তর সইছে না(চোখ মেরে)

নিশাত বুঝতে পেরেছে আরহান এইগুলো নিশাত কে রাগানোর জন্য বলছে । নিশাত কিছু না বলে বাইকের চাবি নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে যায় ।

আরহান আর কি করবে হেঁটে হেঁটে যেতে হলো । নিশাত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরহান নেই । ঈশা কে ডাক দিতেই ঈশা চলে আসে

_” আপু আজ এত দেরি হলো কেনো ?

_” কাজ ছিল তোর দুলাভাই কই ?

_” সেটা তো তুমি বলবে আমার সাথে তো দেখা করেনি

নিশাত এর এবার রাগ লাগছে। বাইকের চাবি নেওয়ার পর ও চলে গেলো ।

_” আজ বাড়ি আসুক ঢুকতে দেবো না । বাইরে উল্টা পাল্টা কাজ করবে তাহলে বাইরে থাক ।বাড়ি আসার দরকার নেই (বিড়বিড় করে )

ঈশা পাশ থেকে বলে

_” আপু তোর কি পাগলে ধরছে কি বিড়বিড় করছিস ?

_” না কিছু না চল খাবি চল অনেক বেলা হইছে

নিশাত ঈশার হাত ধরে নিচে আসতেই দেখে কলিংবেল বেজে উঠে । নিশাত দরজা খুলে দেখে আরহান দাড়িয়ে আছে।

রাগে নিশাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে কিন্ত রাগ বেশিক্ষণ থাকলো না । আরহান ঘেমে একাকার মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ করে আসছে ।

_” আপনি আমাকে না বলে কোথাও

বাকিটা বলতে পারলো না আরহান নিশাতের সামনে একটা প্যাকেট ধরে বললো

_” সামনে থেকে সরো বাইরে কি গরম বাবা গো (ভিতর ঢুকতে ঢুকতে )

ঈশা আরহানকে দেখে ফিক করে হেসে বলে

_” দুলাভাই তোমার কি অবস্থা ? মনে হচ্ছে গোসল করে আসছো

_” বাইরে অনেক রোদ । তোমরা থাকো আমি গোসল করে আসি

নিশাত ব্যাগ বের করে থেকে ওখানে ফুসকা রাখা ।

_” তারমানে উনি ফুসকা আনতে গিয়েছিল ।কিন্ত এত দুর পায়ে হেঁটে উফফ এই লোক কি পাবনা থেকে পালিয়ে আসছে

পাশ থেকে ঈশা চিল্লিয়ে বলে

_” wow ফুসকা কত দিন খাইনি আজ খাবো

_” না পরে তুই টেবিলে বস আমি খাবার দিচ্ছি

নিশাত ঈশা কে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের ঘরে যায় ।

ঘরে গিয়ে দেখে পানির টুপটাপ শব্দ হচ্ছে। নিশাত বিছানায় বসলো

একটুপর আরহান বেরিয়ে নিশাতের দিকে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো। এতে কি নিশাত গলে যাবে

নিশাত আরহান কে টেনে খাটের উপর বসিয়ে দেয় । আরহান এর গাল নিজের ধরে নিজের মুখের কাছে ধরে

পরক্ষনেই নিশাতের মাথা গরম হয়ে যায়

_” সিগারেট খেলেন কেনো ? সেইজন্য তাড়াতাড়ি গোসল করতে গেলেন যাতে বুঝতে না পারি তাই তো

_” আমি সত্যি খাইনি বিশ্বাস করো ।

_” রাখ তোর বিশ্বাস তুই বাইরে অকাজ করে বেরাবী আর আমি সব সহ্য করবো । কখনো না হয় তুই এইসব ছাড়বি নাহলে আমাকে ছাড়বি এখন বল কি করবি ?

নিশাত এর কথায় আরহান অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে । যে মেয়ে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না সে আজ তুই করে কথা বলছে । আরহান নিজেকে ঠিক করে বলে

_” বাবু বিশ্বাস করো আমি সত্যি খাইনি । আর তুমি কিভাবে কথা বলছো ?

_” বাবু ,সোনা তোর গফ দের বলবি আমার কাছে না । তুই যে মিথ্যে বলছিস তার প্রমাণ তোর চোখ ইচ্ছে করছে চোখ তুলে মার্বেল খেলি

আরহান বুঝলো পানি অনেক দুর চলে গেছে তবে
আরহান ভালো করে জানে বউ রাগ করলে তাকে মানাতে হয় কি করে । আরহান নিশাতের কোমর জড়িয়ে বিছানায় ফেলে দেয় । ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে নিশাতের বুঝতে সময় লাগলো ।

আরহান নিশাত কে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে

_” এত রাগ করছো কেনো বউ ?? তুমি তো এতদিন আমার সাথে ছিলে না ওইগুলো ছিল তাই ছাড়তে একটু কষ্ট হচ্ছে কিন্ত বিশ্বাস করো আমি ছেড়ে দেবো

_” প্রমিজ ?

_”পাক্কা প্রমিজ

আরহান নিশাত কে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে বলে।

_” সব নেশার উর্ধ্বে তুমি । সব কিছু ছাড়তে পারবো কিন্ত তোমাকে ছাড়তে পারবো না । আল্লাহ যখন একবার তোমাকে আমার কাছে দিয়েছে তাহলে সেটা আগলে রাখার দায়িত্ব আমার । আমার থেকে তোমার মুক্তি নেই। আমি মারা গেলেও তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবে না । আমার নাম সারাজীবন তোমাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে

নিশাত শুধু আরহান এর কথা শুনছে । লোকটার মধ্যে এত পজেসিভ নেস কেনো ? এর উত্তর শুধু সেই জানে

আরহান নিশাত কে বুকের সাথে জড়িয়ে আবার বলে

_” জানো নিশাপাখি এত দিন সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতাম কিন্ত এখন মনে হচ্ছে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলে চলবে না। কষ্ট করতে হবে সব স্বপ্ন পূরণ করতে হবে তাহলেই জীবন সার্থক

নিশাত আস্তে করে বলে।

_” আপনার কি স্বপ্ন ?

আরহান নিশাতের মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আজ যেনো নিশাতের খুব ভালো লাগছে । মনে হচ্ছে এটাই আসল জায়গা । একটা নিরাপদ বুক যেটা শুধু নিশাতের । আরহান কাপল আলতো ভালোবাসা দিয়ে বলে

_” আগে কখনো ছিল না কিন্ত এখন আমার চোখে অনেক স্বপ্ন। সেই সব পূরণ করতে হবে যে করেই হোক তোমাকে সব কিছু দিয়ে সুখী করতে চাই

নিশাত এবার মাথা উচু করে বলে

_” টাকা পয়সা দিয়ে একজন নারী সুখী হয় না । স্বামীর ভালবাসা দিয়ে সুখী । সবার সামনে যেনো মাথা উচু করে বলতে পারি এই আমার স্বামী

_” পারবে নিশাপাখী পারবে । একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দেবো তোমার মনের মত হয়ে যাবো শুধু আমার পাশে থেকো

নিশাত নিজের চোখের পানি আড়াল করে বলে

_” হইছে ছাড়েন অনেকক্ষণ আসছি খুদা লাগছে

_” হা খেতে তো হবেই তুমি অনেক পাতলা

_” কি আমি পাতলা ? কে কইছে আপাকে ?

নিশাত রেগে বলে আরহান দুষ্ট হেসে বলে

_” বুঝায় যাচ্ছে কোলে নিলে মনে হবে ছোট বাচ্চা কে নিচ্ছি

নিশাত রেগে বুকে এক গুসি মেরে উঠে দাড়ায় ।

_” তো যান যার ওজন বেশি

কথাটা বলে বাইরে চলে যায়। আরহান হাসতে হাসতে সেও চুল মুছে বাইরে আসে।

বিকালে
নিশাত চা বানিয়ে আমজাদ হাবিব এর কাছে যায় । আমজাদ হাবিব গার্ডেনে বই পড়ছে নিশাত গিয়ে পাশে বসতেই আমজাদ হাবিব খুশিতে বলে

_” এই সময় আমার মন খুব চা চা করে কিন্ত বাইরের লোকের হাতে চা খেতে ভালো লাগে না

_” বই পড়তে পড়তে চা খেতে সত্যি খুব ভালো লাগে দাড়ান আমি আরহান কে ডাকি

আমজাদ হাবিব নিশাতকে বাধা দিয়ে বলে

_” থাক মা। ও একা থাকতে বেশি পছন্দ করে এখন ওকে ডাকলে রাগারাগি করবে

নিশাত চোখ দিয়ে বুঝায় কিছু হবে না ।নিশাত ডাক দিতেই আরহান ছুটে চলে আসে

_” কি হইছে নিশা পাখি ? এভাবে ডাকছো কেনো?

_” এখানে বসুন তারপর বলছি

আরহান বসতেই নিশাত চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে

_” পরিবারের সাথে এক সাথে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা

আরহান কিছু বলতে গিয়ে ও পারলো না । চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিলো

_” আমি জানি আপনার খুব রাগ হচ্ছে কিন্ত পরিবারের উপর রাগ করে আর কত দূরে থাকেন এখন আপনাদের কাছে আসার সময় হয়ে গেছে । আপনার যে এখন ওইসব নেশা ধরেছে সেটা বুঝতে পেরেছি বিছানায় আপনাকে ছটপট করতে দেখে বুঝেছিলাম তাই তো চা বানিয়ে দিলাম (মনে মনে )

আজ আরহান এর লাস্ট পরীক্ষা । আরহান হেঁটে হেঁটে পড়ছে আর নিশাত খাইয়ে দিচ্ছে । এটা এই এক সপ্তাহে প্রতিদিনের রুটিন । আরহান আগের থেকে অনেকটা বদলে গেছে এখন নিশাত বলতে পাগল। রাতে আরহান পড়বে আর নিশাতকে পাশে থাকতে হবে ।

আরহান বই রেখে তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নেয়। নিশাত বলে

_” all the best

আরহান কপালে ভালোবাসা দিয়ে বেরিয়ে যায় । নিশাত ও রেডী হতে থাকে ভার্সিটিতে সকাল সকাল যেতে হবে ।

নিশাত ভার্সিটিতে যেতেই নেহা ঝেকে ধরে

_” এতক্ষণে আসার সময় হলো ? কখন থেকে অপেক্ষা করছি

_” বুঝলাম কিন্ত সে

_” চল আজ ক্লাস করতে হবে না

নিশাত কে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেলো।

রেস্টুরেন্টে নেহা আর নিশাত বসে আছে ।নিশাত বিরক্ত নিয়ে বলে

_” কি রে কখন আসবে ?

_”আরে অপেক্ষা কর

নিশাত বিরক্তি নিয়ে বসে থাকতে থাকতে হটাৎ কেউ বলে উঠলো

_” hi beautiful girl

চলবে

(গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করছি কারণ সবার অতীত বোরিং বোরিং শুনতে শুনতে আমি নিজেই থিম ভুলে যাচ্ছি । আজ প্লীজ কেউ ভুল ধরবেন না খুব প্যারায় আছি । মাঝে গল্প নাও দিতে পারি ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here