আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৯
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
নিশাত পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা লোকটাকে জড়িয়ে ধরে আছে নিশাতের বুঝতে বাকি নেই এই সেই লোক যার জন্য এখানে আসা । লোকটা নেহা কে ছেড়ে নিশাতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে
_” hi beautiful শালীকা আমি সাগর
নিশাত নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত মিলায়।নেহা দুইজনের পরিচয় করিয়ে বসে পড়ে।
_” তাহলে আপনি যে আমার পাগল বান্ধুবির মন চুরি করছেন
সাগর একবার নেহার দিকে তাকিয়ে মুখের হাসি ঢির করে নিশাতে কে বলে
_” মন তো আমার চুরি করেছে সেই কবেই। ফেরত দেওয়ার নাম নেই
নেহা চিমটি কাটতে নিশাত আর সাগর এক সাথে হেসে দেয় । নিশাত বলে
_” তো আপনাদের বাড়ির লোক কি জানে ? i mean মেনে নিবে তো পড়ে যদি সমস্যা হয়
নেহা হাত ধরে বলে
_”আমাদের পরিবারের সবাই ওকে পছন্দ করে।আর মেনে না নিলে বুঝাবো
অনেকক্ষণ ধরে নেহা,নিশাত আর সাগর গল্প করছে। নেহার যেনো কথা শেষ হচ্ছে না নিশাত বাধা দিচ্ছে না প্রিয় মানুষের সাথে থাকলে সময় বুঝা যায় না ।
কিছুক্ষণ পর নেহা বলে
_” আচ্ছা এবার তাহলে যাওয়া দরকার অনেক সময় পার হয়ে গেছে ।
_” তোমরা বাইরে যাও আমি বিল দিয়ে আসছি ।
নেহা আর নিশাত বাইরে দাড়িয়ে গল্প করছে তখন সাগর এসে দুইজন কে আইস ক্রিম দেয়।
নিশাত হাত বাড়িয়ে নেওয়ার সময় পিছন থেকে কেউ নিশাতের হাত ধরে ফেলে । নিশাত পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহান দাড়িয়ে আছে । চোখ মুখ লাল হয়ে আছে । নিশাত কিছু বলার আগেই আরহান নিশাতের হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে যায় ।
নিশাত বাইকে উঠে একবার নেহার দিকে তাকায়।
আরহান কোনো দিকে না তাকিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে । পুনরায় নিশাত কে টানতে টানতে রুমের ভিতর এনে বলে
_” কি করছিলে ওই ছেলের সাথে ? আমাকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছিলে ?
এইটুকু যথেষ্ট নিশাতের চোখে পানি এনে দেওয়ার জন্য । যে মেয়েটা কঠিন সময় কখনো ভেঙ্গে পড়েনি সে এখন অল্পতে কান্না করে ফেলে । চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আরহান কে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরহান এগিয়ে এসে দুই গালে হাত দিয়ে বলে।
_” কি ভেবেছিলে ? আমি এইসব বলবো? তোমাকে ভালোবাসি আর বিশ্বাসেই তো ভালোবাসা টিকে থাকে
নিশাত আরহান কে জড়িয়ে ধরে বলে
_” আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনার লাল চোখ মুখ দেখে আমি ভেবেছিলাম
_” কি যে আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি ? পাশে নেহা ছিল সেটা আমি দেখেছি আর আমি আমার নিশা পাখি কে খুব ভালো করে চিনি । রোদে চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল
নিশাত এবার মাথা তুলতেই দেখে আরহান ঘেমে শরীরে শার্ট লেগে আছে । কপাল দিয়ে ঘাম পড়ছে মুখ লাল হয়ে আছে ।
নিশাত নিজের উড়না দিয়ে আরহান এর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে
_” আসলে আজ নেহা জোর করে ওর
নিশাত কে বলতে না দিয়ে ।আরহান নিশাতের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে
_” জানি ওই লোকটা নেহার বিএফ । কিছুদিন ধরে ওদের আমি ঘুরাঘুরি করতে দেখেছি। এক্সামের চাপে খেয়াল ছিল না । একবার তো পার্কে দেখেছিলাম
নিশাত ভ্রু কুচকে বলে
_” আপনি পার্কে কি করতে গিয়েছিলেন ?
_” আরে বাবা এমনি গিয়েছিলাম । ঘুরতে
_” তো ঘুরতে কি একা গিয়েছিলেন নাকি কোনো মেয়ের সাথে হুম
আরহান নিশাতের ফুলে থাকা ঠোঁটে কিস করে বলে
_” না রে বাবা সেই সাহস কি আমার আছে ? স্মোক করতে গিয়েছিলাম তখন দেখছিলাম
আরহান আনমনে কথাটা বলে দেয় কিন্ত যখন খেয়াল হয় নিশাতের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশাত রাগে ফুঁসছে ।
_” তুই এখনো স্মোক করিস ? আমাকে না প্রমিজ করেছিলি স্মোক করবি না তাহলে
আরহান এবার নিশাত কে ছেড়ে কান ধরে দাড়িয়ে পড়ে।
_” সরি বাবু সত্যি সরি ! আর কখনো করবো না আসলে টেনশনে ছিলাম তাই মাথা কাজ করছিলো না বিশ্বাস করো আমি সত্যি ছেড়ে দিয়েছি কিন্ত মাঝে মাঝে
নিশাত রেগে বলে
_” তো যা টেনশন কমানোর কাছে যা । আমি কে ? আমাকে তো বিয়ে করেছিস শুধু মাত্র
নিশাত অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে । আরহান এগিয়ে আসতে গেলে
_” একদম আমার কাছে আসবি না । যেই হাত দিয়ে ওই সব খেয়েছিস সেই হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবি না
_” বউ সরি আর করবো না সত্যি বলছি
নিশাত অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে
_” শরীর আমার ঘিনঘিন করছে
কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে যায় । আর আরহান ওখানেই দাড়িয়ে বিড়বিড় করতে থাকে
_” উফফ আরহান নিজের মুখের উপর কাবু করতে পারিস না ।যখন খুশি যা খুশি বলে দিস আজ তো তোর কপালে দুঃখ আছে । কিছু একটা কর
নিশাত ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে আরহান ওভাবেই দাড়িয়ে আছে । নিশাত কে দেখে ভুবন ভুলানো হাসি দেয় । নিশাত না দেখার ভান করে বাইরে চলে যায়
আরহান পিছন থেকে ডাকে
_” বউ ও বউ শুনো না
নিশাত রান্নাঘরে এসে কোল্ড কফি বানিয়ে ঈশা কে ডাক দেয়। ঈশা এসে বলে
_” আপু কিছু বলবি ?
_” এটা তোর দুলাভাই কে দিয়ে আয়
ঈশা কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যায় ।
আরহান গোসল করে বের হতেই দেখে ঈশা দাড়িয়ে আছে । আরহান মুচকি হেসে বলে
_” আরে আমার পুচকি যে
ঈশা কফি এগিয়ে দিয়ে বলে
_” আপু পাঠিয়েছে
আরহান বুঝে যায় যে নিশাত অনেকটা রেগে গেছে।
আরহান মুচকি হেসে কফির কাপ হাতে নিয়ে বলে।
_” তুমি খেয়েছো ?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বুঝায় । আরহান কিছুটা খেয়ে ঈশা কে দিতে গেলে নিশাতের ডাক পড়ে
_” ইসু তোর কফি নিয়ে যা ।কারোর টা খেতে হবে না
ঈশা আরহান এর দিকে তাকিয়ে বলে
_” এটা তুমি খাও আমি আসছি
আরহান আর কিছু না বলে সম্পূর্ণ খেয়ে নিচে যায় । নিশাত রান্না ঘরে সব খাবার টেবিলে সাজাচ্ছে ।
আরহান এগিয়ে যেতে গিয়েও পারছে বাড়িতে সার্ভেন্ট ভর্তি । আরহান এর এখন খুব রাগ লাগছে কেনো যে এত মানুষ রাখতে গেলো ।
নিশাত একবার আরহানের দিকে তাকাতেই দেখে আরহান কান ধরে সরি বলছে ।
নিশাত চুপচাপ নিজের কাজ করছে ।
টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে । আরহান শুধু উসখুস করছে সেটা নিশাত খেয়াল করলেও কিছু বলে না ।
আমজাদ হাবিব হটাৎ বলে
_” আরহান তুমি নাকি জব ইন্টারভিউ দিচ্চো?
আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_” জি আব্বু আসলে
_” থাক আমি বুঝছি । দুইটা থেকে তো রিজেক্ট হয়ে গেছো ?
নিশাতের খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।হা করে আরহান এর দিকে তাকিয়ে আছে । আরহান মাথা নিচু করে বলে
_” আমি চেষ্টা করছি আব্বু
আমজাদ হাবিব হেসে বলে
_” চাইলে আমি তোমার চাকরি দিতে পারি কিন্ত আমি জানি তুমি আমার দয়া নিবে না তাই তো পরিচয় গোপন করে ইন্টারভিউ দিচ্ছ । আজ তোমার উপর আমার গর্ববোধ হচ্ছে ।ইনশাল্লাহ তোমার চাকরি হয়ে যাবে । আমি একটা বই দেবো সেটা পড়ে দেখো কাজে লাগবে
আরহান নিরবে মাথা নাড়ায় । নিশাত তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে যায় । আরহান ও হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে দেখে নিশাত নেই ।
ঈশার রুমে ও নেই । সারাবাড়ি খুঁজে কোথাও পায় না । হটাৎ মেঘের গর্জনে আরহান ছাদে গিয়ে দেখে নিশাত দোলনায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে ।
আরহান এগিয়ে গিয়ে নিশাতের পাশে বসে তখনো নিশাতের চোখ বন্ধ । আরহান নিশাতের হাত ধরতেই নিশাত চোখ না খুলে হাত সরিয়ে নেয় ।
আরহান এবার নিশাত কে জড়িয়ে ধরে বলে
_” সরি নিশা পাখি i am really sorry সত্যি বলছি আর হবে না। অনেক চেষ্টা করেছি ছাড়াতে কিন্ত অতিরিক্ত টেনশনে
নিশাত নিজেকে ছাড়িয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে দাড়ায় । আরহান ও পিছন পিছন গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ।
_” সরি সরি সরি সরি সরি
আরহান এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে । নিশাত অনুভব করলো ওর কাঁধে তরল জাতীয় কিছু পড়ছে আর আরহানের গলা ভারী হয়ে আসছে ।
নিশাত পিছন দিকে ফিরতেই আরহান অশ্রুমাখা চোখে তাকিয়ে বলে
_” বিশ্বাস করো নিশা পাখি ওইসব না খেয়ে যতটা কষ্ট হয় তার থেকে ও বেশি কষ্ট হয় তুমি কাছে থেকেও কথা বলো না । জানো, একতরফা ভালবাসাকে আমি এতদিন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এসেছি, যারা একতরফা ভালবেসে যায় তাদের কে নিয়ে অনেক হাসি তামাশা করেছি। কিন্তু আজ আমি বুঝেছি, একতরফা ভালবেসে যেতে কতবড় হৃদয় লাগে, কতটা কষ্ট সইতে হয়, কতটা নিঃস্বার্থ হতে হয়। তোমাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি কিন্তু আমি যে এখনও তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে পারিনি। মনের কোনে এখনও তোমাকে আপন করে পাবার বাসনা রয়ে যায়। তোমাকে হারাতে চলেছি এই কথাটা মনে হলেই জীবণটাকে অর্থহীন মনে হয়, মনে হয় তোমাকে ছাড়া এ ভুবনে থেকে লাভ কি? তুমি না থাকলে যে আমার জীবণ থেকে হাসি আনন্দ সককিছুই বিলীন হয়ে যাবে! তবুও আমি এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাই, তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে চাই, জীবণের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত! পাশে থাকবে তো নিশা পাখি ?
নিশাত রাগী গলায় বলে
_” আমি যদি আপনার লাইফে এত ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে থাকি তাহলে আপনার টেনশনের কথা আমাকে ফোন করে বলতেন । আপনি জব খুঁজছেন সেই ব্যাপারে ও আমাকে কিছু বলেননি। মনে হচ্ছে আমি আপনার জীবনে অর্থহীন
আরহান নিশাতের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে।
_” ওভাবে বলো না তুমি আছো বলে আমি আছি । তোমার জন্য আমি সব ছেড়ে দিয়েছি আর জবের ব্যাপারটা আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম তাই কিছু বলিনি । সেদিন লেট আসার জন্য বকে ছিলে সেইদিন আমার একটা জব ইন্টারভিউ ছিলো। আমি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তোমাকে হ্যাপি রাখার কিন্ত আমার ভুলে বার বার তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি i am sorry প্লীজ আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না
নিশাত আরহান কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে
_” আব্বু যা বলছে সেই ভাবে কাজ করেন । আর ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখেন লাভ হবে
_” তুমি পাশে থাকলেই চলবে আর কিছু লাগবে না
_” ভাবেন না যে আমি মাপ করে দিয়েছি । শাস্তি তো আমি পাবেন
_” ওকে মহারানী
রাতে
আরহান ল্যাপটপে বসে ইন্টারভিউ ব্যাপারে দেখছে আর নিশাত আরহান এর পাশে বসে কি সব লিখছে ।
কিছুক্ষণ পর আরহান এর হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে
_” এটাই আপনার শাস্তি
আরহান পুরোটা পড়ে টাসকি খেয়ে যায়। অবাক চোখে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_” আর কিছু বাকি আছে ?
নিশাত মুচকি হেসে বলে
_” এখন মনে পড়ছে না । পরে বলে দেবো
আরহানের কাশি উঠে যায় ।নিশাত তাড়াতাড়ি পানি দেয় ।
চলবে
( আজ দিতে চাইছিলাম না কিন্ত মনে করে লিখে ফেললাম । অ্যাসাইনমেন্ট এখনো শেষ হয়নি দোয়া করবেন যেনো কালকের মধ্যে শেষ করতে পারি । ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । )