আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২৯

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২৯
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

বিছনায় বালিশ জড়িয়ে বসে আছে নিশাত। আরহান বকবক করে যাচ্ছে আর ড্রেস চেঞ্জ করছে।নিশাত কাচুমাচু হয়ে বসে আছে জানে কথা বললে এখন বিপদ ।

_”হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে তারপর বাইরে যেতে হবে?পা কেটে রেখে বাইরে যাবো কাল থেকে।দেখি ঘুরাঘুরির সখ যায় কই। কার খেয়াল ডুবে ছিলে?আর একটু হলে কত বড়ো ক্ষতি হতো।সবাই এই সময় সাবধানে থাকে আর উনি নেচে নেচে বেড়ায়।

কথা বলতে বলতে আরহান ওয়াশরুমে চলে যায়।নিশাত হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বিড়বিড় করে বলে।

_”যাক বাবা মুখ চালিয়েছে ভালো কথা।হাত তো চালায় নি।কিন্ত রাগ তো আমার করার কথা।

সেইসময় নিশাত গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে দেখে আরহান রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।নিশাত কিছু বলার আগেই কোলে নিয়ে ঘরে আসে।নিশাত ভয় টে কিছু বলে না।রাগী মানুষের রাগ খুব ভয়ংকর কিন্ত যারা শান্ত তারা একবার রেগে গেলে সামলানো খুব মুশকিল।

নিশাত বিছানা থেকে নামতে গেলে দরজার খুলার আওয়াজে আবার আগে মত চুপ করে বসে থাকে।

আরহান চুল মুছতে মুছতে বলে

_”খাওয়া দাওয়া কি করা লাগবে না?জিরো ফিগার বানানোর ইচ্ছা থাকলে কবর দেওয়া ভালো।

নিশাত বিড়বিড় করে বলে

_”কথা শুনে পেট ভরে গেছে

বিড়বিড় করে বললেও সেটা আরহান ঠিক শুনতে পেয়েছে। আড় চোখে তাকাতেই নিশাত আমতা আমতা করে বলে

_”আমার খুদা লাগছে সাথে বাবুর ও।

আরহান চুল আঁচড়িয়ে বাইরে যেতে যেতে বলে

_”বিছানা থেকে যেনো এক পা না নামে।

আরহান যেতেই নিশাত ভেংচি কেটে বলে

_”শুধু বকবে।একটু ভালোবাসলে কি হয়।এই সময় তো স্বামীর ভালোবাসা চায় সবাই আর আমার পোড়া কপাল।নিজের দোষে আজ এমন হইছে যদি ঈশা থাকতো তাহলে কি পাগলামি না করতো।i miss u ishu

নিশাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।চোখের পানি মুছে ফোনে ইস্যুর সাথে কাটানোর ছবি গুলো দেখছে।ঈশার ছবিতে এতটা মগ্ন হয়ে গেছে আরহান যে ওর পাশে এসে দাড়িয়ে আছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।

আরহান ফোন কেরে নিতে নিশাতের হুস ফিরে।চোখ লাল হয়ে আছে।আরহান কি বলবে বুঝতে পারে না ।নিশাতকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

নিশাত যেনো এই টুকু সাপোর্ট চাইছিল আরহানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আরহান ও বাধা দেয় না। কিছু কষ্ট কান্নার মাধ্যমে বেরিয়ে আসা ভালো।

অনেকক্ষণ পর আরহান জোড় করে নিশাতের মুখ তুলে বলে

_”আর না।অনেক কান্না করেছো আর করতে দেবো না।এই কান্না তুলে রাখো সঠিক সময়ে কান্না করো।এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নাও।

নিশাত চোখ মুখে কিছু বলার আগেই আরহান বলে

_”চোখ মুছলে নাক মুছলে না কেনো?

নিশাত হালকা আরহান কে ধাক্কা দেয়।

_”তোমার ঐ পিপঁড়ার মত হাত আমার কিছু করতে পারবে না।তাই বৃথা চেষ্টা করে এনার্জি নষ্ট করে লাভ নেই।

আরহান নিশাতের মন অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য চেষ্টা করছে নিশাত সেটা বুঝতে পেরে বলে

_”আমাকে মাপ করো।আমি সত্যি অনেক খারাপ।নিজের বোনের কষ্ট বুঝতে পারলাম না আর না তোমাকে বুঝতে পারলাম না।আমাকে ক্ষমা করে দাও প্রমিজ করছি এখন থেকে তোমার মনের মত হবার চেষ্টা করবো।তুমি যা বলবে সব করবো।শেষ বারের মত আমাকে ক্ষমা করো একটা সুযোগ দিয়ে দেখো।

_”এটা সময় হলে দেখা যাবে আগে খেয়ে নাও।আজকাল একটু বেশি বলছো

আরহান ভাত মাখিয়ে নিশাতের মুখের সামনে ধরলে নিশাত খেয়ে নেয়। আরহান খাইয়ে উঠে যেতে গেলে নিশাত হাত ধরে বসিয়ে দেয়।

পেলেটে ভাত নিয়ে আরহানকে খাইয়ে দেয়।

_”আচ্ছা তোমার যেই কাজ করতে গিয়েছিলে সেই কাজ কি হয়েছে ?

খাওয়াতে খাওয়াতে প্রশ্ন করে নিশাত।আরহান কোনো উত্তর দেয় না দেখে নিশাত আবার বলে

_”আচ্ছা বলতে হবে না কিন্ত আমরা এই জায়গায় থাকছি কেনো? মানে তোমার বাড়ি

বাকিটা বলার আগেই আরহান ধমক দিয়ে বলে

_” ওতো কথা বলো কেনো?সময় হলে সব জানতে পারবে।একটু সময় দরকার তারপর আমি নিজে সব বলবো এখন তোমাকে একটা কাজ করতে হবে

বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বলে আরহান।নিশাত ফিক করে হেসে বলে

_”তুমি এমন ভাবে বলছো যেনো আমরা কোনো সিক্রেট মিশনে যাচ্ছি।

আরহান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নিশাত মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে ।আরহান আবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে

_”ধরে নাও সেইরকম।কাল তুমি আমাদের বাসায় যাবে। সেখানে একটা ছোট কাজ করতে হবে আর হা আমরা এখানে আছি বা আমি বেচে আছি এই কথা কাউকে বলবে না।

নিশাত চিন্তিত হয়ে বলে

_”তোমার আম্মুকে ও জানাবো না?জানো উনি কত কষ্ট পেয়েছিলেন।তোমার বেচে থাকার কথা শুনে খুব ভালো লাগবে

_”আমি বললাম না কাউকে বলবে না মানে বলবে না।কাল যাবে কানে ব্লুটুথ দিয়ে কেউ যাতে বুঝতে না পারে।বাকিটা কাল বলবো

_”ওকে

নিশাত পেলেট রেখে এসে দেখে আরহান শুয়ে আছে।নিশাত কোনো কথা না বলে আরহানের বুকে শুয়ে পড়ে ।

_”কিহলো এটা?

নিশাত চোখ বন্ধ করেই বলে

_”বাবু বাবা কে অনেক মিস করছিলো।এখন কাছে পেতে চায় আমার কি দোষ ।

বাচ্চাদের মত মুখ করে বলে।আরহান নিশাতের আড়ালে হাসে।

মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরহান আর নিশাত নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আরহান একবার নিশাতের দিকে তাকিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে

_”সব কিছুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে তোমাকে।হয়তো আমি থাকবো আবার না।নিজের অজানা শত্রুর থেকে তোমাকে বাঁচাতে হবে।

সকালে

আরহান ফোনে কথা বলছে আর নিশাত ঘরে রেডী হচ্ছে।

হটাৎ আরহান চিল্লিয়ে বলে

_”বের হয়ে গিয়েছে মানে? আই ডোন্ট নিড এনি এক্সকিউজ যে করেই হোক ওকে আমার চাই মানে চাই ।সেটা কি করে করবি তোরা ভালো জানিস।এক ঘণ্টার মধ্যে ওকে চাই

কথাটা বলে আরহান ফোন ছুড়ে মারে।

_”একটা ও কাজের না

_”কে কাজের না ?হুম?

নিশাতের কণ্ঠে আরহান সেদিকে তাকিয়ে থ মেরে যায়।নিশাত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

নিশাত এগিয়ে এসে আরহানের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে

_”কি হলো?কোন মেয়েকে চাই?

কিছুটা রাগী ভাবে বলে আরহান নিশাত কে ভালো করে দেখছে। ব্ল্যাক কালারের গাউন।মাথায় হিজাব। হাতে হোয়াইট স্টোনের চুরি।কালো কালারের মধ্যে নিশাতের মুখটা ফুটে উঠছে।

আরহানের মুখ থেকে আপনাআপনি বের হয়ে যায়

_”মাশাল্লাহ

_”কি? কি বললেন ?

আরহানের হুস আসলে নিজেকে ঠিক করে বলে

_”কিছু না।তুমি রেডী?

_”রেডী পরে আগে বলেন কাকে চাই?কোন মেয়ের প্রতি প্রেম জাগছে?

_” হোয়াট??

_”ঠিক তো বলছি। তুমি তো ফোনে বলছিলে ওকে আমার চাই।

_”শাট আপ!মুখ বন্ধ রেখে ব্লুটুথ পড়ে নাও।

নিশাত কানে পড়তে পড়তে বলে

_”আজকে আমাকে কেমন লাগছে ?

আরহান অন্যদিকে তাকিয়ে বলে

_”জাস্ট লাইক এ পেত্নী।তাও আবার কালো পেত্নী

নিশাত গাল ফুলিয়ে বলে
_”এই পেত্নী নিয়ে আপনাকে সংসার করতে হবে।

মাঝ রাস্তায় আরহান গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলে

_”এখান থেকে তোমাকে একা যেতে হবে আর যা বলছি মনে থেকে যেনো।ওই বাড়ি কে আসছে না আসছে সব খবর আমার চায়।আর কিছু খেতে বললে খাবে না ।ভুলেও যেনো এক গ্লাস পানিও খাবে না

নিশাত বিরক্তি নিয়ে বলে।

_”উফফ আমি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি না।যা বলছ সব করবো ।এখন যাই

_”সাবধানে

নিশাত গাড়ি থেকে নেমে একটা ক্যাব বুক করে চলে যায়। আরহান কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে সে ও চলে যায়।

নিশাত দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতেই সার্ভমান্ট এসে দরজা খুলে দেয়।

নিশাত ভিতরে যেতেই সার্ভমান্ট সালেহা বেগম কে ডাকে। নিজের চুল খোফা করতে করতে সালেহা বেগম নিচে আসে।নিশাতকে দেখে কিছুটা চমকে যায়।নিশাত এগিয়ে গিয়ে সালাম করতেই

সালেহা বেগম মাথায় হাত রেখে বলে

_”কেমন আছিস ?ওখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।

নিশাত মুচকি হেসে বলে

_”না কোনো সমস্যা হচ্ছে না কিন্ত তোমাদের আর এই বাড়িটাকে খুব মিস করছিলাম

_”যখন মনে হবে তখন চলে আসবি।তোর জামাই আসে নি

নিশাত আমতা আমতা করে বলে

_”না ও তো কাজে গেছে তাই আমি একা আসলাম।
তোমার হাতে খাবার খেতে।

_”ভালো করেছিস।তুই বস আমি নিজে তোর জন্য আলু পরোটা বানাচ্ছি।

নিশাত মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।সালেহা বেগম যেতেই নিশাত উপরে চলে যায়।

ফোনের ওপাশ থেকে আরহান চিল্লিয়ে বলে

_”আজ বাড়ি আসো তোমার পরোটা বানাবো।বার বার বারণ করছি কোনো কিছু খাবে না তারপর ও।

নিশাত বিরক্ত নিয়ে ফিসফিস করে বলে

_”চুপ করো তো কাজ করতে দাও।

নিশাত গিয়ে আমজাদ হাবিব এর রুমে ব্লাবের ভিতর হিডেন ক্যামেরা লাগায়।

ওপাশ থেকে আরহান আবার বলে

_”ড্রয়িং রুমে একটা লাগিয়।

নিশাত কাজ শেষ করে আরহানের ছবির সামনে দাড়িয়ে দেখতে থাকে ।ফোনের ওপাশ থেকে আরহান বলে

_”আবারও বলছি কিছু খাবে না কিন্ত

নিশাত কিছু বলার আগেই সালেহা বেগম বলে

_”কি রে তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?

নিশাত চোখের পানি মুছার ভান করে বলে

_”এই লোকটাকে খুব মনে পড়ছিল

সালেহা বেগম নিশাতের মাথায় হাত দিয়ে বলে

_”যে যাওয়ার সে তো গেছে।ধরে রাখা তো যাবে না তাই বলে নিজের লাইফ নষ্ট করিস না।আর বাচ্চা কে নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।তোর আব্বু বলেছিল ওরা নাকি বাচ্চা চায়।

নিশাত কিছু বললো না কিন্ত ওপাশ থেকে আরহানের ফোঁস ফোঁস করার আওয়াজ ঠিক পাচ্ছে।

বিকালে নিশাত বাড়ি আসে আরহানের কথা মত।বাড়ি এসে দেখে আরহান নেই।

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।আজকাল নিশাতের শরীর তেমন চলছে না যত দিন যাচ্ছে বাচ্চার আভাস পাচ্ছে।শরীরটা বিছনায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে চলে যায়।

কিছুর আওয়াজে ঘুম ভেংগে যায় নিশাতের।লাল চোখে তাকিয়ে দেখে আরহান পাশে বসে ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কি দেখছে ।

নিশাত উঠে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে

_”কি করছে উনি?মেরে ফেলবে নাকি

আরহান কিছু বলা না।নিশাত চোখ ভালো করে ডলে বলে

_”আপনার বাড়ি তো এটা।আর উনি কি করছেন? এ তো আপনার বাড়ির সার্ভমান্ট? আমি কিছু বুঝলাম না

আরহান কিছু বলতে যাবে তার আগে কলিং বেল বেজে উঠে ।আরহান উঠে যায় নিশাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে

_”এত রাতে কে আসলো? গিয়ে দেখি তো

নিশাত চোখ ডলতে ডলতে নিচে গিয়ে চোখ চড়কগাছ।

চলবে

(গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে মিলাবেন না।খুব তাড়াতাড়ি গল্পটা শেষ করবো এত চাপ নিয়ে পারছি না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here