আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_৭
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই ঈশার ডাক
_”এই আপু খুল কতক্ষন লাগে তাড়াতাড়ি খুল না
নিশাত মাথা ঠান্ডা করে দরজা খুলতেই ঈশা নিশাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্না করে দেয়
_”এই আপু তোর কি হইছে আমাকে বল তুই তো কখনো দরজা আটকিয়ে থাকিস না । আজ এসে একবার ও আমার দিকে তাকালি না । আমি কি কিছু করেছি বল না আপু প্লীজ
নিশাত এর রাগ জেদ ফুস হয়ে যায় । ইশা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_”ওই পাগলী মেয়ে তুই কান্না করছিস কেন?জানিস না অতিরিক্ত চাপে থাকলে আমি একটু একা থাকতে চাই । এই টুকু ব্যাপারে কেউ কান্না করে চোখ মুছ
_”না আপু তোর কিছু একটা হইছে আশার সময় দেখলাম চোখ ফোলা । আমাকে বল কি হইছে কেউ কিছু বলছে কি না
নিশাত ঈশার মাথার চুল টেনে আদরে কণ্ঠে বলে
_”খুব বড়ো হয়ে গেছিস তাই না হুম ? আমার কিছু হয়নি আর তুই না খেয়ে এখানে কি করছিস ? দুপুরে খাস নি কেনো ? কোন বিএফ এর সাথে ঝগড়া করছিস (ভ্রু কুচকে )
ঈশা অবাক হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে
_”আপু তুই এইসব কি বলছিস আমার আবার বিএফ আসবে কথা থেকে ?আমি তো তোর জন্য খাইনি ভাবলাম তুই আসলে এক সাথে খাবো কিন্ত তুই তো ঘরে বসে আছিস আর bf তো তোর আছে
_”টেনে দেবো এক চর । খুব পাকা হইছিস তাই না
_”হ্ন শুধু আমার দোষ তোর বিএফ না থাকলে এই ফুল আর চকোলেট কে দিলো বল
নিশাত এর সামনে ফুলের বুকে আর চকোলেট বক্স ধরে । নিশাত অবাক হয়ে দেখছে
_”আমার তো কোনো বিএফ নেই তাহলে এই গুলো কে দিলো?
নিশাত নেরে ছেড়ে দেখে ফুলের ভিতর একটা ছোট চিরকুট। তাতে লেখা
‘ ভালো যে বাসে সে কখনো অপমান করে না
শাসন করে ।শুধু বুঝে নিতে হয়
তোমার চোখে বৃষ্টি না মুখে হাসি দেখে শেষ
নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই ।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার এই চোখ তোমার মুখে হাসি দেখতে চায় ।
ইতি আড়ালে ভালোবাসা
নিশাত চিরকুট পড়ে ভাবতে থাকে কে লিখেছে পাশ থেকে ঈশার কথা । নিশাত এর ভাবনার ছেদ ঘটে
_”কিরে আপু প্রেম করছিস আমাকে বললি না যাই হোক জিজুর নাম কি রে ?
_”এক থাপ্পর দেবো কিসের প্রেম ? ছোট ছোট হয়ে থাক আর এই গুলো
নিশাত ফুল আর চকোলেট নিয়ে বাইরে ফেলে দেয় । ঈশা বিরক্তি নিয়ে বলে
_”আপু তোর মধ্যে কি কোনো রস কস নেই ? কেউ একজন ভালোবেসে দিয়েছে আর তুই ফেলে দিলি এতে কিন্তু তুই তার ভালোবাসা কে অপমান করলি । আর অন্যের ভালোবাসা কে অপমান করার অধিকার তোর নেই
_”এই তুই চুপ কর যা পড়তে বস । এইসব মাথায় আনবি না শুধু জেনে রাখ তোর জন্য আমি আর আমার জন্য তুই এনাফ আর কাউকে লাগবে না
কথাটা বলে নিশাত নিচে যায় আর ঈশা ভাবতে থাকে
_”কে আমার এই বদমেজাজি বোনের প্রেমে পড়লো তাকে তো দেখতে হয় ইসস কি সুন্দর ফুল গুলো ফেলে দিল
নিশাত নিচ থেকে চিল্লিয়ে ডাকছে ঈশা তাড়াতাড়ি নিচে যায় । ঈশা যেতেই নিশাত রাগী গলায় বলে
_”খাওয়া কি লাগবে না ? দিন দিন শুটকি মাছ হচ্ছিস আমার জন্য না খেয়ে থাকার কি দরকার ?কাল থেকে যদি এমন হয় তাহলে খাবার এর থেকে বেশী মার খাবি
ঈশা জড়িয়ে ধরে আদরে গলায় বলে
_”তুই আমাকে কখনো মারতে পারবি না সেটা আমি জানি
_”খুব জানছ এখন খেয়ে নাও হা কর
নিশাত ঈশা কে খাইয়ে দিচ্ছে আর ঈশা নিশাতকে । দুই বোনের এই মধুর সম্পর্ক দেখলে চোখ জড়িয়ে যায় । কয়জনের ভাগ্যে নিশাতের মত একটা বড় বোন জুটে ।
এদিকে
রাস্তায় ফুল আর চকোলেট গুলোর দিকে তাকিয়ে আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে
_”আজ সত্যি আমি নিশা পাখি কে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি । সেই কষ্টের কাছে এটা সামান্য। কষ্ট যখন দিয়েছি মুখে হাসি ফুটানোর দায়িত্ব আমার সামনে না হক আড়ালে
কথাটা বলে আরহান কাউকে ফোন করে
_”আমার এক্ষুনি লাগবে আর্জেন্ট
…..
_” ওকে পাঠিয়ে দাও
ফোন রেখে আরহান বাকা হেসে নিশাতের বারান্দার দিকে তাকিয়ে বলে
_” কিভাবে রাগ করে থাকো আমিও দেখবো নিশা পাখি
রাতে নিশাত শুয়ে আছে তখনই নিশাতের ফোনে একটা মেসেজ আসে unknown number থেকে
মেসেজে লিখা
‘ এই তো আমি আছি তোমার
কাছাকাছি ,ছাদে আসলে পাবে খুঁজে
অজানা ভালোবাসাকে
নিশাত মেসেজ দেখে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আর ভাবছে
_”কে এই লোক যে আমার ব্যাপারে সব জানে আমার নাম্বার পেলো কোথায় ? যাওয়া কি ঠিক হবে ? না না নিশাত তুই পাগল হলি কে না কে তোকে যেতে বলবে আর তুই সুরসুর করে চলে যাবি থাক যাবার দরকার নেই
একটু পর আবার মেসেজ আসে
“কি হলো ভয় পাচ্ছো ? মানুষের সাথে না মিশলে বুঝবে কি করে কেউ ভালো কে খারাপ
নিশাত এবার ফোন ওফ করে ঘুমিয়ে পড়ে ।
ঈশা কাদঁছে নিশাত ঈসাকে খুঁজে পাচ্ছে না ঈশা চিৎকার করে বলছে আপু আমাকে বাঁচা আমাকে এখান থেকে নিজে যা ।
নিশাত পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু ঈশা কে পাচ্ছে না । অনেক খুজাখুজি করার পর ঈশা কে পেলো নিশাত ঈশার কাছে যাবার আগে কেউ একজন ঈশা কে অন্ধকার এর মধ্যে নিয়ে যায়
_”নাআআআআআআআআআস
নিশাত চিৎকার করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে । কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে পুরো শরীর ঘেমে গেছে । চোখে পানি । নিশাত বিছানা থেকে নেমে উঠে চারিদিক ঈশা কে খুঁজতে থাকে । ঈসাকে ঘরে না পেয়ে নিচে চলে যায়
নিশাত এর কাকু হাসাদ খান চা খাচ্ছে নিশাত কে এই আবে দৌড়ে আসতে দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে বলে।
কাকা : কিরে মা এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো ? আর একি অবস্থা তোর
নিশাত কোনো কথায় কান না দিয়ে ওর কাকা কে বলে
_”ইসু কই কাকা ? ওকে দেখছি না কেনো ? বল আমাকে কোথায় ও
_”মা তুই একটু শান্ত হও ঈশা আছে এখানেই আছে
_”না আগে আমাকে বলো
_”ঈশা তো ছাদে গেছে
নিশাত এক দৌড়ে ছাদে চলে যায়। গিয়ে দেখে ঈশা বসে আছে ।নিশাত গিয়ে জড়িয়ে ধরে
_”আপু তুই কি হইছে ?
_”তুই আমাকে না বলে এখানে আসলি কেনো ? আর আমাকে ডাকলি না কেনো ?জানিস কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আর কখনো আমাকে না বলে কোথাও যাবি না
_”আপু তুই ঠান্ডা হো তুই ঘুমাচ্ছিলি দেখে আমি আর ডাকি নি । প্রতিদিন তো ভোরে উঠিস আজ না হয় একটু ঘুমালি তাই
_”হুম বুঝছি তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছি
_”আমি এমনি তেই বড়ো শুধু তোর চোখে পড়ে না
_”পাকনা বুড়ি
_”আপু জানিস কি হইছে ?
_”না বললে কি করে জানবো ?
_”সেটাই তো দেখ আপু কাল ছাদে কেউ কি সুন্দর করে ফুল গাছ লাগিয়ে গেছে
নিশাত ঈশার কথায় ছাদের চারিপাশ তাকিয়ে দেখে অনেক রকম ফুল গাছ লাগানো ।
_”তাহলে কি কালকে কে মেসেজ দিয়েছিল সে করেছে এই সব কিন্ত কেনো ? কি চায় ?
ঈশা নিশাতের হাত ধরে অন্য পাশে নিয়ে বলে
_”দেখ আপু দোলনা কি সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে কত সুন্দর লাগছে । আমি বসছি তুই আমার কিছু পিক তুলে দে
নিশাত হা করে দেখছে সব তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে
_” আমার জন্য এত কিছু কে করবে ? কিসের জন্য ?
_”কিরে আপু ছবি তুলে দে হা করে কি শুধু দেখবি
নিশাত ঈশার কিছু ছবি তুলে দেয় । ঈশা সেইগুলো দেখছে আর নিশাত ছাদ এর চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে
_”আপু চল খুদা লাগছে । রিনা অ্যান্টি (কাজের লোক ) রান্না করেছে চল
ঈশা নিশাত কে টেনে নিচে নিয়ে যায় । নিশাত ফ্রেশ হয়ে নেয় তবুও ওর মাথা থেকে এই চিন্তা যাচ্ছে না কে করলো এইসব ।
ঈসাকে টাটা দিয়ে ভার্সিটির জন্য বের হতে যাবে তখনই নেহা এসে হাজির । নেহা নিশাতকে কিছু বলতে না দিয়ে বলে
_”গাড়িতে উঠলে আমি খুব খুশি হতাম
নিশাত বুঝলো মামলা গম্ভীর তাই কোনো কথা ছাড়া গাড়িতে উঠে বসে । নেহা মুখ গম্ভীর করে বসে আছে আর নিশাত তো ভাবনা মগ্ন। নেহা ভাবছে নিশাত হয়তো রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করবে কিন্ত সে তো নিজের চিন্তায় ব্যাস্ত দেখে নেহা বলে
_”আমি যে কারোর উপর রাগ করেছি সেটা কি কেউ বুঝছে নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছে
…..
নিশাত এর কোনো রেসপন্স না পেয়ে নেহা নিশাত কে ধাক্কা দিয়ে বলে
_”এখানে আমি আছি আপনি কোন রাজকুমারের চিন্তায় মগ্ন (গম্ভীর কণ্ঠে )
নিশাত এবার নেহা কে ভালো করে দেখে বলে
_”কিছু বললি?
_”বাহ এখন আমার কথা কারোর কানে যাচ্ছে না আমি যে গাধার মত বকছি সেটা কেউ শুনছে না । তোর মন কই থাকে আর ফোন সেটা বন্ধ কেনো? কাল রাতে কত বার ফোন দিয়েছি সকালে ফোন দিয়েছি কিন্ত ম্যাডাম এর ফোন খুলা থাকলে তো
নেহার কথায় নিশাতের কালকে ফোন বন্ধ করার কথা মনে পড়ে তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে অন করে । কিছুক্ষণের মধ্যে মেসেজ আসতে থাকে ৫৬টা মেসেজ আসছে সেই নাম্বার থেকে
_”এই যে ম্যাডাম আমি কিছু বলছি উত্তর কি দেওয়া যাবে (রেগে )
_”সরি জানু ফোনের চার্জ ছিল না এই দেখ এখন অন করলাম আর তুই তো জানিস আমার ফোন চালাতে বেশি ভালো লাগে না
_”টা লাগবে কেনো? তোর তো একটা বোন আছে ইসস আমার যদি একটা বোন থাকতো কত মজা হতো
ওদের কথার মাঝে ভার্সিটিতে চলে আসে । নেহা আর নিশাত কথা বলতে বলতে যাচ্ছে তখনই জয় সামনে এসে দাড়ায়। মুখে মিষ্টি হাসি টেনে বলে
_”তো ম্যাডাম এর মুড কি ঠিক হয়েছে ?
নিশাত মুচকি হাসি দেয় । জয় ও হেসে বলে
_”আমার ফ্রেন্ডের এই হাসিতে হাজারো ছেলে আহত । তো কাল তোমাকে কতবার ফোন দিয়েছিলাম বন্ধ কেনো ?
নিশাত মাথায় হাত দিয়ে বলে
_”হায়রে একদিন ফোন বন্ধ আর সেইদিন সবাই ফোন দিচ্ছে আর অন্যদিন ফোন অন থাকলে কারোর খোজ পাওয়া যায় না
(এটা সত্যি কথা )
নিশাত এর কথায় নেহা আর জয় হেসে দেয় । সাথে নিশাত ও
জয় নিশাত নেহা কথা বলতে বলতে যাচ্ছে দুইতলা থেকে কেউ একজনের ওদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
হলরুমে যাওয়ার আগে নিশাত আরহান কে দেখতে পেলো । আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার অন্য দিকে ফিরে তাকায় । আরহান এর চোখ লাল হয়ে আছে কপালে দুই একটা দাগ মশা কামড়ানোর । নিশাত সেই সব পাত্তা না দিয়ে নিজের মত চলে যায়
আরহান রাগী দৃষ্টিতে নিশাতের দিকে তাকায়
_” আমার ঘুম হারাম নিজে কত শান্তিতে ঘুমিয়েছে সারারাত মশার কামড় খেয়ে দাগ বসে গেছে আর মহারানী এসেই জয়ের সাথে যোগের মত লেপ্টে গেছে । এত কিসের খাতির ওকে আমাকে মশার কামড় খাওয়ানোর শাস্তি তুমি পাবেই (মনে মনে )
এদিকে নিশা হলরুমে বসে কাজ করছে আর ভাবছে
_”কাল আমাকে অপমান করা আজ মজা বুঝবে just wait and see (মনে মনে )
নিশাত ঝালমুড়ির দোকান থেকে অনেকগুলো ঝাল নিয়ে নিজের উড়না আড়ালে লুকিয়ে ফেলে । চুপি চুপি আরহান এর গাড়ির কাছে যায় । গাড়িটা ভালো করে দেখে চাকার কাছে বসে পড়ে
বসে গাড়ির হাওয়া ফুস করে দেয়
_”একটা করলে হবে নাকি আরো করবো ? আরে আমি কি পাগল একটা করা যা হাজার টা করা তাই । এখন আসল কাজ
নিশাত গাড়ির দরজা টান দিতেই খুলে যায় ।নিশাত তো মহা খুশি । আরহান এর গাড়ির কাছে কেউ আসার সাহস পায় তাই লক খুলে রাখা ।নিশাত গাড়ির ভিতর ঢুকে যায়
একটু পর বেরিয়ে ডেভিল স্মাইল দেয় ।
_”তুমি আমাকে অপমান করেছো আমি তোমার ঐ ঠোঁট জ্বালিয়ে দেবো হ্ন (বিড়বিড় করে )
নিশাত মাথায় উড়না পেচিয়ে সেখান থেকে চলে যায় ।
এদিকে আরহান হলরুমে আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে নিশাত আছে কি না । আস্তে আস্তে নিশাতের ব্যাগ এর কাছে যায় । চারিদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিশাতের ব্যাগে প্লাস্টিক এর সাপ ঢুকিয়ে দেয়
_”নিশা পাখি আমি জানি তুমি সাপ খুব ভয় পাও এটা কালকে আমাকে মশার কামড় খাওয়ানোর জন্য (মনে মনে )
চলবে
(দুইজন নিজেদের প্ল্যান মত করছে কি হবে এদের । ভাবছি এদের আলাদা করে দেবো দুইজন এক রকম বিয়ে দিলে মারামারি করে শেষ তখন আমাকে কেস সামলাতে যেতে হবে । কেমন হইছে জানাবেন আপনাদের কমেন্ট এর উপর আগামী পর্ব নির্ভর )