আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_৮
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
আরহান আস্তে আস্তে হলরুম থেকে বের হয়ে আসে । আসার সময় দেখে নিশাত আসছে আর আরহান এর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসছে
_”দেখবো এবার তোমার কি হয় নিশা পাখি । আমাকে মশার কামড় খাওয়ানো (মনে মনে )
_” এখন আপনার কি হবে মিস্টার রুড ।আমার সাথে রুডলি কথা বলার শাস্তি এবার পাবে (মনে মনে )
নিশাত হলরুমে গিয়ে দেখে জয় ডাকছে । নিশাত জয়ের কাছে যায়
_” ডাক ছিলেন ?
_” কোথায় ছিলে? দেখ তো সব ঠিক আছে কি না
নিশাত ভালো করে দেখে মিষ্টি হেসে বলে
_” আপনারা এত কষ্ট করে করছেন সুন্দর না হয়ে পারে । এক কাজ করেন স্যার বা ম্যাম দের মধ্যে একজনকে ডেকে দেখান
_” গুড আইডিয়া আমি ও তাই ভাবছিলাম । আচ্ছা তুমি থাকো আমি বাকি গুলোদেখি
নিশাত মাথা নাড়িয়ে হা বলে । জয় যেতেই নিশাত ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে যায়
_” হাতে এটা কি বাঁধছে ইসুর কোনো কিছু না তো ? এই মেয়েটা যেখানে সেখানে নিজের জিনিস ফেলে রাখে
কথাটা বলতে বলতে নিশাত বের করে সামনে নিয়ে দেয় এক চিৎকার । আরহান বাইরে থেকে চিৎকার শুনে হলরুমে আসে ।
নিশাত জোরে জোড়ে লাফাচ্ছে আর সাপ সাপ করছে । আরহান তো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে বাকিরা ও সবাই নিশাতের এমন কাণ্ডে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
নেহা ছুটে নিশাতের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কি হইছে? নিশাত সে তো কোনো কথা বলার অবস্থায় নেই জোড়ে জোরে শুধু সাপ সাপ করছে
নেহা কে জড়িয়ে ধরে বলছে
_” নেহূ বাঁচা আমাকে প্লীজ বাঁচা সাপ (চিল্লিয়ে )
নিশাত তো প্রায় কেঁদে দিবে দেখে আরহান এসে গম্ভীর কণ্ঠে সাপ টা তুলে বলে
_” এটা তো প্লাস্টিক এর সাপ । এই সাপ দেখে কেউ ভয় পায় সে নাকি আবার ভার্সিটিতে পড়ে
_” নিশু বেবি দেখ এটা প্লাস্টিক এর সাপ । কিছু হবে না চল
নেহা নিশাত কে নিয়ে বাইরে যায় । বাইরে নিশাত কিছুটা স্বাভাবিক হয়
_” আমার ব্যাগে সাপ কে রাখলো ?
_” আমি তো কাজ করছিলাম আর তোর ব্যাগে কেউ কেনো সাপ রাখতে যাবে ? এখানে কেউ ত জানে না তুই সাপ ভয় পাস
_” সেটা আমি জানিনা তবে আমি sure কেউ ইচ্ছা করে রাখছে
_”দেখ তুই আর টেনশন নিস না পানি খা
নিশাত পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ।নেহা বলে
_” ওইসব নিয়ে ভাবিস না আরো ভয় করবে । কাজে মন দে তাহলে দেখবি মন থেকে ওটা চলে যাবে
নিশাত কিছু বলে না ।দুর থেকে আরহান নিশাত কে দেখছে
_” আমার নিশা পাখি যে এত ভয় পায় সেটা আজ বুঝলাম । সারা দুনিয়ার কাছে সাহসী মেয়ে অথচ একটা প্লাস্টিকের সাপ দেখে ভয় পায় । সরি নিশা পাখি তোমার সাথে এমন কখনো করতে চাইনি কিন্ত কি করবো বলো কাল সারারাত জেগে মশার কামড় খাইছি একটু শাস্তি তোমাকে না দিলে মশারা দুঃখ পাবে (বাকা হেসে )
আরহান পকেটে হাত দিয়ে সিগারেট খুঁজে কিন্ত পায় না তাই গাড়ির কাছে যায় । আরহান কে যেতে দেখে নিশাত মনে মনে শয়তানি হাসি দেয়
_” এখন বুঝবে মজা (মনে মনে ) নেহা তুই যা আমি আসছি
_” কোথায় যাবি ? কোথাও যেতে হবে না আমার সাথে চল
_” তুই যা আমি আসছি
নিশাত আর নেহা কে কিছু বলতে না দিয়ে চলে যায় । আরহান গাড়ি থেকে সিগারেট বের করে মুখে দিয়ে ধরাবে হটাৎ ওর ঠোঁট জ্বলে উঠে
_” কিহলো ? আমার ঠোট জ্বলছে কেনো ?
আরহান সিগারেট ভালো করে দেখে আবার ঠোঁটে দেয় এখনো জ্বলছে । ওইটা বাদ দিয়ে আরেক টা নেয় সেটায় ও জ্বলছে । সব গুলো ঠোঁটে দিলেই জ্বলছে
আরহান রেগে সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দেয় এখনো আরহান এর ঠোঁট জ্বলছে । না পেরে বিয়ারের বোতল নেয় মুখ দিতেই পরক্ষণেই সব ফেলে দেয়
_” কি এটা ছি
দূর থেকে নিশাত সব দেখছে আর হাসছে
_” ঠিক হইছে আমাকে অপমান করা এখন বুঝো তোমার সিগারেট এ মরিচ ঘষে দিয়েছি আর বিয়ারের বোতলে ফুসকার টক পানি
নিশাত নিজে নিজে বলছে আর হাসছে হটাৎ আরহান কে দেখে হাসি উধাও হয়ে যায় । চোখ স্থির হয়ে যায়
আরহান আর ফিহা একে অপরকে কে কিস করছে । নিশাত সেটা দেখে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে চলে যায়।
এইদিকে আরহান ফিহা কে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ফিহা ছাড়ছে না । আরহান জোড়ে ধাক্কা দিতে ফিহা দূরে সরে যায়
_” কি হলো বেবি ? এভাবে দূরে সরালে কেনো ?
_” what are u doing ?
_” কেনো বেবি ভালো লাগছে না
ফিহা আবার কিস করতে গেলে আরহান আটকিয়ে দেয়
_” ফিহা তোমাকে আগেও বলেছি এখন ও বলছি আমার পারমিশন ছাড়া আমাকে টাচ করবে না
_” কিন্তু আরহান তোমার তো ঠোঁট জ্বলছিল আর আমরা তো বিয়ে করবো
_” বিয়ে যখন করবো তাহলে অপেক্ষা কেনো করছো না ?
_” what ? তুমি এই কথা বলছো ? আরহান তুমি হাজার হাজার মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়েছ আমি কি কখনো কিছু বলেছি আজ হটাৎ সাধু সাজছ
_” আমি সাধু সাজছি না আর আমি মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়েছি তাদের নিজেদের ইচ্ছায় জোর করে না । আমার কথা আলাদা কারণ আমি আগে থেকে এমন আর তুমি সেইসব জেনে আমার সাথে আছো কিন্ত তুমি ? তুমি তো pure হয়ে ঘুরে বেড়াও আদো কি তুমি pure ? (ভ্রু কুচকে )
আরহান এর কথায় ফিহা কিছুটা ভরকে যায় নিজেকে ঠিক করে মেকি হাসি দিয়ে বলে
_” হা বাবু আমি তো শুধু তোমার জন্য । ওকে সব বিয়ের পর এখন মাথা ঠান্ডা করো চলো আমরা লং ড্রাইভ এ যাই (আরহান এর হাত ধরে )
_” তুমি যাও আমি কোথাও যাবো না
_” আচ্ছা তাহলে সামনে তো বসি চলো
আরহান ফিহার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায় । ফিহা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো আজকাল
আরহান এর কথা ফিহ্যার কাছে কেমন জটিল লাগছে ।
_” তুমি আমাকে ভালোবাসো না সেটা আমি বুঝতে পারছি কিন্ত কি কারণে আমার সাথে আছো সেটা বের করতে হবে
আরহান কথাটা মনেমনে বলে সামনে হাটা ধরে ।পিছনে বডিগার্ডের মত ফিহা ও যাচ্ছে
দুইতলা থেকে জয় দেখে রাগে ফুঁসছে জয় কিছুতেই বুঝতে পারছে না আরহান কেনো ফিহা কে নিজের সাথে রাখে ? ফিহা ঠিক না সেটা সবাই জানে আরহান কেনো বুঝতে পারছে না
আজকে সাজানোর শেষ দিন কাল বিদায় অনুষ্ঠান । স্যার আর ম্যাম এসে সব দেখছে আর জয়কে বাহবা দিচ্ছে পাশেই নিশাত আর নেহা দাড়িয়ে স্যার বলে
_” আমি সত্যি গর্বিত তোমার উপর এই দায়িত্ব দিয়ে তুমি সত্যি কারের অর্থে একজন ভিপি হবার জন্য যোগ্য
_” ধন্যবাদ sir
স্যার আর ম্যাম আরো কথা বলে অন্য দিকে যায় জয় সবার দিকে তাকিয়ে বলে
_” ধন্যবাদ সবাইকে এত ভালোবেসে কাজ করার জন্য ।
হটাৎ একজন বলে উঠে
_” সব তো আপনার জন্য আপনি আমাদের ভার্সিটির ভিপি হয়ে সবাইকে যেইভাবে বুঝিয়েছেন সেইভাবে সবাই করেছে
জয় কিছু বলার আগেই ফিহা ভেংচি কেটে বলে
_” ভিপি তো আরহান এর করুণার জন্য হয়েছে । ও যদি এই পদ না সাক্রিপ্রাইজ না করতো তাহলে কি করে ভিপি হতো
জয় মুখে হাসি নিয়ে বলে
_” ঠিক তাই আরহান আমার ভাই হয়ে আমার জন্য অনেক কিছু করছে । শুধু আমার জন্য না এই ভার্সিটিতে অনেক ভিখারী আছে তাদের জন্য ও অনেক কিছু করছে এখনো করছে
কথাটা ফিহা কে বলছে সেটা ফিহা বুঝতে পারছে ফিহা কিছু বলতে যাবে তার আগে নিশাত বলে
_” আমি মনে করি কোনো কিছু পেতে গেলে যোগ্যতা লাগে । আর যোগ্য মানুষকে সেই পদ দেওয়া হয় এর মধ্যে করুণা করা কথা থেকে আসছে
_” আচ্ছা guys বাদ দাও তোমাদের সবাইকে আমি ট্রিট দেবো সবাই ক্যান্টিনে যাও
সবাই খুশিতে যায় জয় নেহা আর নিশাত কে নিয়ে যায় ।
ক্যান্টিনে নিশাত চুপ করে বসে আছে জয় অনেকক্ষণ ধরে দেখছে কিন্ত কিছু বলছে না । নেহা বলে
_” কি রে তুই খাচ্ছিস না কেনো ? খেয়ে দেখ অনেক টেস্ট
_” খাবো না তোরা খা
জয় নেহা কে ইশারা করতে নেহা নিশাতের মুখ চেপে ধরে আর জয় নিশাতের মুখে খাবার দেয় । যতক্ষণ না চাবাচ্ছে নেহা ছেড়ে দেয়নি
নিশাত কাশতে কাশতে শেষ নেহা পানি দেয় । আশে পাশের সবাই দেখে হাসছে
_” তোরা আমাকে মেরে ফেলবি নাকি ?
_” তুই তো সোজা কথার মানুষ না এখন চুপ চাপ খা
নাহলে
নিশাত মুখে হাত দিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে
_” থাক বোন আমি খাচ্ছি
নিশাত খেতে নিলে হটাৎ কি মনে করে ওইটার কে বলে
_” এক্সকিউজ me আমাকে একটা পিজ্জা এর দুটো বার্গার দেন তো প্যাক করে দিবেন
_” জি ম্যাম
নেহা আর জয় একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে । নিশাত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে
_” ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই এইসব আমি ইস্যুর জন্য নিচ্ছি তুই ত জানিস ইসু কে ছাড়া আমি কখনো কিছু খাইনি আর ওর অনেক দিন থেকে বাইরে খাবার ইচ্ছা
_” ওহ তাহলে কাল ওকে নিয়ে এসো আমাদের সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেবে আর ইনজয় ও করবে
_” না না ও খুব দুষ্ট বাইরে আসলে ওকে থামানো যাবে না আর ইনি তো আছেই কর দুষ্টুমিতে হেল্প করার (নেহা কে দেখিয়ে )
_” ইসু মনে হয় আমার বোন না ওকে তোকে আনতে হবে না আমি নিয়ে আসবো
_” একদম না
_” আচ্ছা আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি তোমরা খাও
_” না ট্রিট দিচ্ছেন ভালো কথা কিন্তু ইস্যুর জন্য নেওয়া খাবার আমি টাকা দেবো আপনাকে দিতে হবে না
_” আমি দিলে কি সমস্যা ? আর ইসু তো আমার ও বোন
_” আমি নিজের খরচ নিজে করতে পারি প্লীজ জোর করবেন না
_” তোমাকে তো কিছু দিচ্ছি না দিচ্ছি তো আমার ছোট বোন কে । আর পরে না হয় তোমার বিয়ের দাওয়াত খাইয়ে পুষিয়ে দিও
জয়ের যুক্তির কাছে নিশাত কে হার মানতে হয় । খাওয়া শেষে নিশাত আর নেহা জয়ের সাথে যায় সেখানে আরহান ও দাড়িয়ে আছে
_” কি ব্যাপার তুই এখনো যাস নি?
জয় অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো । আরহান নিশাত কে দেখে বলে।
_” হা আমার গাড়ির চাকা কে হাওয়া সরিয়ে দিয়েছে
_” কি বলিস তোর গাড়ির সাথে কে এমন করবে ? কারোর তো সাহস নেই তোর গাড়ির কাছে যাওয়ার
নিশাত কিছু বলে না আরহান নিশাত কে দেখছে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
_” জানিনা চল
জয় মাথা নাড়িয়ে গাড়িতে বসে পিছনে নেহা আর নিশাত আর সামনে জয় আরহান । আরহান লুকিং গ্লাস এ নিশাত কে দেখছে । তখনই জয় বলে
_” নিশাত কাল তোমাকে আমি আনতে যাবো রেডী হয়ে থেকো
জয়ের কথায় নেহা বলে
_” না আমি নিশু কে নিতে আসবো । আপনার আসার দরকার নেই
জয় কিছু বলে না আরহান রেগে বলে
_” তুই কি একটু তাড়াতাড়ি যাবি
জয় শুধু মুচকি হাসে
চলবে