আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_৯
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
নিশাত বিছানায় বসে বসে আজকের ঘটনা ভাবছে আর পাশে ঈশা ননস্টপ বকবক করে যাচ্ছে । নিশাত এর মনে হচ্ছে কান ধরে ঈশা কে বের করে দিতে কিন্ত পারছে না নিশাত বিরক্ত নিয়ে ঈশা কে বলে
_” তুই কি তোর বকবক বন্ধ করবি নাকি আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাবো কোনটা ?
ঈশা কাদো কাদো মুখ করে নিশাত কে জড়িয়ে ধরে বলে
_” আপু তুই এমন করছিস কেনো ? জয় ভাইয়া তো বললো আমি গেলে কোনো সমস্যা হবে না তাই আমি তোর সাথে গেলে তোর কি সমস্যা ?
_” দেখ ইসু যেটা জানিস না সেটা নিয়ে কথা বলবি না ওখানে অনেক ধরনের লোক থাকলে আর তাদের মধ্যে তোকে নিয়ে আমি কি করবো তার থেকে তুই বাসায় থাক আমি ভিডিও কল এ তোকে সব দেখাবো হ্যাপি
ঈশা নাক ফুলিয়ে বলে
_” না একদম না ওকে আমি তোর সাথে যাবো না কিন্ত জয় ভাইয়ার সাথে যাবো। আমি ফোন করছি wait
কথাটা বলে ঈশা চোখের পলকে নিশাতের ফোন নেয়। নিশাত রেগে ফোন কেরে নিয়ে বলে
_” একদম পাকনামি করবি না । চুপ চাপ খা
নিশাত ফোন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে যায় ।ঈশা নো টেনসন ভাব নিয়ে খাচ্ছে । ঈশা খুব ভালো করে জানে নিশাত ঈশার কান্না মাখা মুখ দেখলে না নিয়ে যেতে পারবে না
নিশাত ছাদে হাঁটছে আর গুনগুন করে গান গাইছে কেনো যেনো নিশাতের আজ সব কিছু অন্যরকম লাগছে ।
_” আমার সাজানো গুছানো জীবন হটাৎ এরকম এলোমেলো কেনো লাগছে ? নিজের মনকে শান্ত করতে পারছি না কেনো ? উফফ ভালো লাগে না গান শুনি
নিশাত ফোন বের করে গান প্লে করে নিজে ও গুনগুন করে গান শুনছে
“একটা ছেলে মনের আঙ্গিনাতে ধির পায়েতে
এক্কা দুক্কা খেলে বন পাহাড়ির ঝর্না খুঁজে
বৃষ্টি জলে একটা ভিজে
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে
আমি তো ছিলাম বেশ চুপিসাড়ে
ছোট্ট মেয়ে সেজে একটা কনে
সবুজ বনে নিলছে আলো জ্বলে
সপ্ন ভেজা মাটিতে পা ফেলে
(বাকিটা নিজে শুনে নিয়েন )
গানটা যেনো নিশাতের মনের কথা বলছে । নিশাত চোখ বুঝে গান গাইছে আর এই দিকে কেউ একজন আড়াল থেকে নিশাতের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এত দূর থেকে গান সম্পূর্ণ আসছে না তবে হালকা হালকা শুনতে পাচ্ছে ।
আরহান গাড়ি ঠিক করে যাবার সময় ভাবলো নিশাত কে একবার দেখে যাই । যেই ভাবা সেই কাজ নিশাতের বাড়ির সামনে আসতেই দেখে নিশাত ছাদের কিনারে ধরে হাঁটছে আর গুনগুন করে গান গাইছে
_” আমাকে জ্বালিয়ে এখন মনের সুখে গান গাওয়া হচ্ছে wait and watch baby
আরহান পকেট থেকে ফোন বের করে নিশাতের নাম্বারের মেসেজ দেয় । নিশাত মুনের সুখে গান গাইছিল হটাৎ মেসেজ টন বেজে উঠায় নিশাত বিরক্তি নিয়ে ফোন হাতে নিতেই শকড খায়
মেসেজে লিখা
” ওভাবে গান গেয়ো না কাক নিজেদের লোক মনে করে তুলে নিয়ে যাবে তখন তোমার হবু স্বামী আর বাচ্চারা তো কান্না করবে
নিশাত মেসেজটা দেখে তাড়াতাড়ি কল দিতে গেলে দেখে বন্ধ । এদিকে নিশাতের কাণ্ডে গাড়ি থেকে থাকা আরহান হাসতে হাসতে শেষ
নিশাত এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজছে আর বলছে
_” আমাকে কাক বলা একবার সামনে আয় বুঝাবো কাক না বাঘ
একটু পর আরেকটা মেসেজ আসে ।নিশাত মেসেজ দেখে আরো রেগে যায়
” এমন ভাবে খুজছো মনে হচ্ছে আমি তোমার হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক যাই হোক প্রতিদিন মধু খাবে জানি কোকিল হবে না তবুও কাক থেকে যদি শালিক হয় এই আর কি
নিশাত এর নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে এই অজানা লোক নিশাতকে পুরু পাগল বানিয়ে দিচ্ছে । আরহান হাসতে হাসতে গাড়ি নিয়ে চলে যায় ।
এদিকে নিশাত সে তো আশে পাশে দেখছে হটাৎ পাশের ছাদে একটা ছেলে কে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়
ছেলেটা দুইপাশে হাত মেলে হাই তুলে নিশাতের দিকে তাকাতেই নিশাতের চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায়
ছেলেটা : এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো ?? কিছু করলাম নাকি ? বাবা গো খেয়ে ফেলবে নাকি ? (মনেমনে )
ছেলেটা মুখে একটু হাসি এনে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_” hi
নিশাত এখনো আগের ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে । ছেলে পিছনে ফিরে চলে যেতে গেলে নিশাত ডাক দেয়
_” এই যে আপনি আমাকে কাক বলছেন ??
ছেলেটা আশে পাশে তাকিয়ে কি যেনো খুঁজছে
_” কিহলো আমার উত্তর না দিয়ে কি খুঁজছেন ?
_” আমাকে বলছেন ?
_” আপনাকে নয়তো কি কাক কে বলবো
ছেলেটা আকাশে তাকিয়ে দেখে
_” কাক তো নেই তার মানে আমাকে বলছেন হা বলুন
_” আপনি এখানে কি করছেন ?
_” নতুন আসছি তাই একটু ঘুরে দেখছিলাম সত্যি জানতাম না ছাদে আসা বারণ
_” আমি কি বলেছি কথার উল্টো মানে ধরেন কেনো ? বেশি কথা না বলে আপনার ফোন টা দেন তো
এবার ছেলেটা আকাশ থেকে পড়লো হটাৎ অজানা অচেনা মেয়ে এসে ফোন চাইছে । ছেলেটা গলা শুকিয়ে আসছে নতুন ভাড়া এসে যে এই বিপদে পড়বে টা কে জানত
_” কিহলো দেন না কেনো ?
_” না মানে কিন্ত কেনো ?
নিশাত চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ছেলেটা ফোন দিয়ে দেয় ।
নিশাত ভালো করে ফোন দেখে ছেলেটার দিকে তাকায় ।
_” দেখেন বোন আপনি কি বলছেন আমি সত্যি জানিনা প্লীজ আমার কোনো ভুল হলে সরি কিন্ত আমার আব্বুকে বলবেন না তাহলে আমা
বাকিটা বলার আগেই নিশাত হাত বাড়িয়ে চুপ করে দেয়
_” সরি আসলে ভুলটা আমারই অন্য কাউকে আপনি ভেবে anyway sorry again
ছেলেটা যেনো এবার হাফ ছেড়ে বাঁচলো । ছেলেটার কান্ড দেখে নিশাত হেসে দেয়
_” এখানে কিভাবে আসলেন ?
_” আসলে আমরা নতুন কিনেছি এই বাসা টা । আজ শিফট হলাম
_” আমি নিশাত ভার্সিটিতে পড়ি আর আপনি ?
_” আমি নিরব ইন্টার 2nd ইয়ার এ পড়ি
_” ওহ আমার ছোট তাহলে তো তুমি করে বলা যায়
_” সমস্যা নেই বলতে পারো
নিশাত আরো কিছুক্ষন কথা বলে চলে যায় আর নিরব নিশাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
_” সিনিয়রের সাথে প্রেম ভালোই ত । ছি ছি নিরব এইসব কি ভাবছিস না এইসব ঠিক না তোর আব্বু জানলে গাছের সাথে বেধে প্রেম বের করবে
হটাৎ নীরবের আব্বুর ডাক পড়ে নিরব ভয়ে ভয়ে চলে যায়।
এদিকে আরহান রুমের সব ড্রেস বের করে দেখছে কাল কোনটা পড়বে । যত দিন যাচ্ছে ততই নিশাতের প্রতি টান বাড়ছে নিশাত কে ছাড়া এক মুহুর্ত চলছে না । আরহান চেষ্টা করছে নিশাতের প্রতি ফিলিং আড়ালে রাখতে কিন্ত পারছে না
আরহান একটা একটা ড্রেস আয়নায় দেখছে আর রেখে দিচ্ছে জয় দরজায় দাড়িয়ে সব দেখছে
_” যে মেয়েটার ভার্সিটিতে আসাতে এত পরিবর্তন হতে পারে সেই মেয়েটা জীবনে চলে আসলে কি না হবে (মনে মনে )
কথাটা ভেবে বুক ভরা নিশ্বাস বেরিয়ে আসলো জয় ধির পায়ে আরহান এর বিছানায় গিয়ে বসে কিন্ত আরহান এর সে দিকে কোনো খেয়াল নেই
_” আচ্ছা নিশা পাখি কাল কি পড়ে আসবে ? তবে নিশা পাখি যাই পড়ুক সব কিছুতে ওকে সুন্দর লাগবে আমার মনের দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখলে আমার রাজ্যে সব থেকে সুন্দর আমার নিশা পাখি (মনে মনে )
জয়ের কথায় আরহান সোজা হয়ে তাকায়
_” আরহান আবরার পোশাক নিয়ে এত ভাবছে ইন্টারেস্টিং (বাকা হেসে )
_” তুই হুটহাট আমার রুমে আসিস কেনো ?
_” ভালো লাগে যাই হক আজ কাল তোকে ক্লাবে দেখা যাচ্ছে না কোথায় থাকিস
জয়ের কথায় আরহান আমতা আমতা করে বলে
_” নতুন একটা ক্লাবে যাই সেখান কার ড্রিংক অনেক ভালো
_” পুরনো ড্রিংক এর থেকে থেকে বেশি নেশা
_” হা অন্য সব নেশার থেকে এই নেশা আমাকে বেশি ধরেছে হাজার চেষ্টা করলে ও ছাড়াতে পারি না । অন্য সব নেশা আমাকে কাবু করতে পারিনি কিন্তু ওই নেশা আমাকে পুরুপুরি ঘিরে ধরছে
_” কি বলিস তাহলে আমাকে ও তো খেতে হবে
আরহান বাকা হেসে বলে।
_” এই নেশায় ডুবে যাওয়ার অধিকার শুধু আমার আছে অন্য কারোর না তুই এখন যা
আরহান অন্য দিকে তাকায় আজ কাল জয়কে কেনো যেনো সহ্য হচ্ছে না কারণ টা কি নিশা নাকি অন্য কিছু বুঝতে পারছে না আরহান
জয় আরহান কে শুনিয়ে নিশাত কে ফোন দেয়। আরহান নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ফোন আছার মেরে জয়ের কলার ধরে
জয় আরহান কে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ।আরহান উঠে জয়কে কিছু বলতে যাবে তার আগে
আরহান এর আম্মু এসে দুইজনকে থামিয়ে দেয়
আরহান শুধু রাগে ফুসছে। জয় আরহান এর আম্মুকে বুঝিয়ে বাইরে পাঠায়
জয় এবার আরহান এর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে
_” যাকে তোর মারার দরকার তাকে তুই কাছে টেনে নিচ্ছিস আর যাকে কাছে টানার দরকার তাকে দূরে দূরে রাখছিস কেনো আরহান কেনো ?
চলবে
(সরি কালকে দিতে পারিনি কাল হুট করে স্কুল থেকে ডাক পড়ছে আর সেই জন্য স্কুলে ছিলাম আর শরীর অনেক ক্লান্ত ছিল । assignment দিচ্ছে তাই একটু ব্যাস্ত থাকছি রাতে আরেক পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো হ্যাপি রিডিং)