#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ০২
সকালে উঠে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নেয় নিবির। তারপর সুপ্তকে রান্না করতে সাহায্য করে। সুপ্ত একাই রান্না করতে চায় আর নিবিরকে তার ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে বলে। কিন্তু নিবির সে কথা মানতে রাজি না। সে সুপ্তকে রান্নাতে হেল্প করবেই। রান্না শেষ হলে দুজনেই খেয়ে নেয়। এবার নিবিরের ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য রেডি হওয়ার পালা। নিবির যাওয়ার জন্য হয়ে নেয়। তারপর বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে তাদেরকে সালাম করে দোয়া চায় যেন চাকরি টা সে পেয়ে যায়। বাড়িওয়ালা তাকে বলে,” দোয়া তো সব সময়ই করব তোমাদের জন্য। চিন্তা করো না, এই চাকরি তোমার হবেই। কারন তোমার মত এত ভাল আর যোগ্য ছেলে কে চাকরি দিবে না তো কাকে দিবে?” বাড়িওয়ালার এরকম কথা শুনে নিবিরের গর্বে বুকটা ফুলে উঠে। ভাবে তার বাবা-মা বেচে থাকলে হয়ত এভাবেই তাকে দোয়া করত। বাবা-মা’র কথা মনে পরতেই তার মন টা খারাপ হয়ে যায়। বাড়িওয়ালা বুঝতে পারে ব্যাপার টা। বাড়িওয়ালা তাকে বুকে জড়িয়ে বলে,” তোমাকে না বলছি তোমার বাবা-মা’র কথা মনে করে কখনো কাদবে না। আমরা আছি তো, তোমরাই আমাদের ছেলে।” নিবিরের চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে। নিবির বুঝতে পারে না এটা কোন কিসের কান্না! হয়ত সুখের পানিই ঝড়ছে চোখ দিয়ে, এটাই ভেবে নেয় সে। সুপ্ত নিবির কে আঙুল দিয়ে খোচা দিয়ে বলে,” নিবির তোর কিন্তু যাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে।” নিবির সুপ্তর কথা শুনে বাড়িওয়ালার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে আসে। এরপর দুজনেই রিকশায় উঠে পরে। নিবিররা যে বাসায় ভাড়া থাকে সেখান থেকে সেই টিভি চ্যানেল এর অফিসে যেতে ১৫-২০ সময় লাগে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা অফিসের সামনে পৌছে যায়। রিকশা থেকে নেমে সুপ্ত রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয়। নিবির বাধা দিতে গেলে সুপ্ত তাকে বলে,” তুই মাত্র গতকালই এখানে এসেছিস। তোর কাছে টাকা পয়সা কতটুকু আছে জানি না। যা আছে তোর অন্য লাজে লাগাস। আর আমি এসব টুকটাক খরচ চালিয়ে নেয়। আর এমনি এমনি কিন্তু এ টাকা খরচ করব না, চাকরি পেয়ে গেলে বেতন পেয়ে আমাদের খাওয়াবি।” নিবির সুপ্তর কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে আর সম্মতি জানায়। তার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মানুষ সে ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। কারন তার কাছে হয়ত মা-বাবা নেই কিন্তু তার কাছে পৃথিবীর সব সুখ। তারপর নিবির সুপ্তকে বাসায় যেতে বলে সে অফিসের ভিতরে ঢুকে পরে।
নিবির অফিসের ভিতরে দ্রুত হাটতে থাকে, কারন তাকে ইন্টারভিউ দিতে থার্ড ফ্লোরে যেতে হবে। হাটতে হাটতে হঠাৎ করে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনেই পরে যায়। নিবির আর সেদিকে খেয়াল করে না। সে দ্রুত হাটতেই থাকে। কিন্তু একটু দূরে গিয়ে তার মনে পড়ে সে পরে গিয়েছিল, তাই সে আমার ফিরে আসে সেখানে যেখানে সে পরে গিয়েছিল। দেখে একটা মেয়ে পরে এলমেল হয়ে যাওয়া কাগজ গুলো আবার ফাইলে ভিতরে গুছিয়ে তুলছে। নিবির মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে, ” আমি কি আপনার কাজে হেল্প করব। আসলে আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ধাক্কা দেই নি, আর আমি আপনাকে সরি না বলেই চলে যাচ্ছিলাম কারন আমার ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে।” মেয়েটা তার কথা শুনে নিবিরের দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কিছু বলে না। আবারো কাগজ গুলো কুড়াতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। নিবির কিছু বুঝতে পারে না সে আবার বলে উঠে, ” ও..ও..ও.. আই এ্যাম সরি! আমি জানি না যে আপনি বোবা। সরি.. প্লিজ আপনি একটু কষ্ট করে কাগজ গুলো তুলে নিয়েন। আমার ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে। সময় মত পৌছাতে না পারলে চাকরি টা হাত থেকে চলে যাবে। আই এ্যাম সরি প্লিজ রাগ করবেন না।” এই বলে নিবির আবার তার পথের দিকে চলতে শুরু করে। সে ওয়েটিং রুমে ঢুকতেই তার ডাক পরে যায়। একটুর জন্য সে তার চাকরি টা মিস করতে বসেছিল। ভাবতে থাকে মেয়েটিকে যদি আমি হেল্প করতে যেতাম তাহলে আমার চাকরি টা ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে চলে যেত। সব সময় অন্যকে হেল্প করাই উত্তম কাজ হয়ে থাকে না। মাঝে মাঝে নিজের কথাও ভাবতে হয়।
সে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে পরে। সেখানে তিন জন ছিল। একজন এই অফিসের এমডি আর দুজন অফিসের সিনিয়র অফিসার। তাকে তিন জনই একের পর একে পালা করে প্রশ্ন করতে থাকে। সে সব গুলোর উত্তর ঠিক-ঠাক ভাবে দেয়। প্রশ্ন করার ফাকে অফিসের এমডি নিবিরের কলিফিকেশন চেক করে। প্রশ্ন করা শেষ হলে একজন সিনিয়র অফিসার বলে, ” আপনি এখন যেতে পারেন। আপানার চাকরি টা কনফার্ম হলে আমরা ই-মেইলে জানিয়ে দিব।” নিবির ভয়ে ভয়ে অফিসারকে জিজ্ঞেস করে,” আচ্ছা, আপনারা কয় দিনের ভাবে ভিতরে মেইলটা পাঠাবেন?” নিবির প্রশ্নটা করে নাম নিজে নিজেকেই বলে, এটা তো আমি কোন ভুল করলাম না। যদি আমার তারাহুরো দেখে চাকরি টা না দেয়। অফিসার এর গলার শব্দে আবার স্বাভাবিক ভাবে বসে। অফিসারটি বলে,” চাকরি কনফার্ম হলে আমরা আপনাকে দু-দিনের মধ্যে আপনাকে জানাব।” নিবির সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুম থেকে চলে আসে। অফিস থেকে বেরিয়ে দেখে সুপ্ত বাইরে হাটাহাটি করছে। সুপ্তকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। নিবির সুপ্তর কাচ্ছে এগিয়ে যায়। নিবিরকে দেখেই সুপ্ত হাসি মুখের নিবিরকে জিজ্ঞেস করে,
– কিরে কেমন হল ইন্টারভিউ?
– হুম। ভাল!
– তো চাকরি কি হয়েছে এখানে?
– এখনাও কিছু জানায় নি শুধু বলল, চাকরি কনফার্ম হলে ই-মেইলে জানিয়ে দিবে। কিন্তু তুই এখনো বাসায় যাস নি কেন?
– ভাবলাম আমরা একসাথেই বাসায় যাব। আর বাসায় গিয়ে আমি একা একা কি করব। তাই আর কি!
– ওহহ..! ভালোই করেছিস।
কথা বলতে বলতে ওরা দুজন রিকশায় উঠে। তবে বাসায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। ওরা পার্কে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করে। পার্কে গিয়ে বাকি সময় টুকু পার করে দেবে তারা। পার্কে গিয়ে যা দেখে তা দেখার জন্য মোটেও তারা প্রস্তুত ছিল না। আজকের জেনারেশন এত খারাপ হবে বলে কোন দিন ধারনা করা হয় নি। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড বলতে একজন বসে সিগারেট টানছে। পার্কের ভিতরে যতদূর দেখা গেল শুধু স্কুল স্টুডেন্ট। মনে হচ্ছে মৌমাছি দলে দলে এসে তাদের সুখের সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে। ছেলে-মেয়ে জোড়ায়-জোড়ায় ঝোপের আড়ালে বসে কি করছে সেটা না বলাটাই হয়ত সবার জন্য ভাল হবে। নিবির তাদের মধ্যে এক জোড়া কে ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করে,” আচ্ছা তোমরা এখানে স্কুল বাদ দিয়ে কি করছ?” তাদের মধ্য থেকে মেয়েটি বলে উঠে, ” আমরা এখানে অংক নিয়ে একটু কথা বলতে আসছি।” এরকম উত্তর পাবে, নিবির তা আসা করেনি। সে ভাবতে থাকে এভাবে অংক চলতে থাকলে দেশ যে একদিন কোথায় গিয়ে পৌছাবে তা বলা সাধ্যের বাইরে। নিবির সব সংকোচ ঘুচিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে বসে,” তোমরা যে এখানে বসে অংক ক্লাস করছো, সে ব্যাপারে কি বাসায় জানে?” নিবিরের প্রশ্নটা মনে হয় তাদের কাছে গ্রহণ যোগ্য মনে হল না। তাদের উত্তর টা ছিল এমন,” না..বাসায় জানে! আর আপনার জেনে কি লাভ? শুধু শুধু আমাদের মুল্যবান সময় গুলো নষ্ট করছেন!” নিবির আর সুপ্ত এবার দুজনেই তাদের উত্তর শুনে থমকে যায়। ওরা দুজন চলে যায় তাদের পার্কের অংক ক্লাসে।
নিবির আর সুপ্ত কি করবে আর কিছু ভাবতে পারছে না। আজ স্কুল কলেজ পার্কে চলে আসছে। এটাই কি ডিজিটাল বাংলাদেশ! সুপ্ত নিবির কে বলে,
– এখন কি এই অংক ক্লাস দেখবি নাকি বাসায় ফিরে যাবি। আমার কাছে তো বাসায় চলে যাওয়াই উত্তম বলে মনে হয়।
– হুম। ঠিকই বলছিস। এখানে যতক্ষন থাকব আমরা আমাদের অংকই ভুলে যাব। তার চেয়ে বাসায় সুখের ঘুম ঘুমোনোই ভাল।
নিবির আর সুপ্ত বেশি সময় সেখানে দাড়ায় না। ভেবেছিল এখানে বসে মনটা ভাল করবে। কিন্তু এখানে স্কুল কলেজর ক্লাস চলে তা তাদের জ্ঞান এর বাইরে। সুপ্তর মনেও একটা প্রশ্নই বার বার ধাক্কা দেয় যে, এখনকার শিশু নাকি আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আর ভবিষ্যৎ যদি এরকম হয় তাহলে এই ভবিষ্যতের কোন প্রয়োজন নেই। এটা ভবিষ্যৎ দেশ তো দুরের কথা পরিবার এর কোন উন্নতির অংশ হতেই পারে না। আর এটা দেশের বোঝা ছাড়া আর কিছু না। নিবির হঠাৎ করে বলে উঠে, ” আগে আমরা মুভিতে দেখতাম এগুলা। কোন দিন বাস্তবে দেখতে হবে, কোন দিনই তা ধারনা করেনি!” সুপ্ত তার প্রশ্নের কোন উত্তর দেয় না। কারন উত্তর টা সবারই জানা আছে।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/