আত্মতৃপ্তি পর্ব ০৩

0
744

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্বঃ ০৩

অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই নিবির আর সুপ্ত বাসায় পৌছে যায়। বিকেলে তারা আর বাসা থেকে বেরোয় না। বলে, বাইরে গিয়ে কি হবে? তাদের অংক শেখার কোন প্রয়োজন নেই।

পরদিন নিবির বাসায় একাকৃত হয়ে পরে। কারনটা ছিল সুপ্তর অফিস। সুপ্ত একটা বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করে। বেসরকারি হলেও কম্পানিটার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে, যখন ইচ্ছা ছুটি পাওয়া যায়। তবে, যদি অফিসের এমডি এর মুড ভাল থাকে। আর যদি তার মুড খারাপ থাকে তাহলে ছুটি তো দুরের কথা, কেউ যদি এক মিনিটের জন্য বাইরে বেরোয় তাহলে তার দ্বিতীয় বার এই অফিসে ঢোকা আর সম্ভব হয়ে পরবে না।

নিবির ভাবতে থাকে সারাদিন সে কিভাবে কাটাবে এই একা বাসায়। তখন তার মনে পরে যায় তাদের বাড়িওয়ালার কথা। বুদ্ধিটা খারাপ না, বাড়িওয়ালার সাথে গল্প করে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে। তাদের তো আর সারাদিন কোন কাজ নেই। রান্না-বান্না ছাড়া। তাই সে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে বাড়িওয়ালার রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে বাড়িওয়ালা বসে গান গাইছে আর তার গৃহধর্মিনি তার পায়ের কাছে বসে রান্নার জন্য আলু কাটছে। এক পলকের জন্য নিবির কোন রোমান্টিক মুভিতে ঢুকে পরে। আজকের দিনেও এরকম স্বামী-স্ত্রী পাওয়া কঠিন। নিবির দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের এই রোমান্টিক দৃশ্য উপভোগ করতে লাগে।

তবে বেশি সময় তার এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখার ভাগ্য হয় না নিবিরের। বাড়িওয়ালার চোখ নিবিরের দিকে পরে যায়। নিবির কে দেখেই বাড়িওয়ালা বলে উঠে,” আরে বাবা নিবির তুমি বাইরে কেন! ভেতরে আসো।” নিবির যেন এত সময় ধরে কোন সর্গে তাদের ভালবাসার প্রতিক খুজে পেয়েছিল। কিন্ত বাড়িওয়ালার ডাকে তার সে ঘোর কেটে যায়। সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,” আহহ..আংকেল! গান বন্ধ করলেন কেন? আমি আপনার গান শুনে পুরোনো দিনের মধ্যে হাড়িয়ে গিয়েছিলাম। আপনার গলা কোন গায়কের চেয়ে কোন অংশে কম নয়!” কথা গুলো বলতে বলতে নিবির গিয়ে বাড়িওয়ালার পাশে বসে পরে। বাড়িওয়ালা তার কথা শুনে হাসতে থাকে। কিন্তু কিছু বলার প্রয়োজন মনে করে না। অনেক্ষন কথা বার্তা চলতে থাকলে নিবির বাড়িওয়ালা সম্পর্কে জানতে চায়। বাড়িওয়ালার তখন হাসি উজ্জ্বল মুখ পরিবর্তন হয়ে যায়। তার মুখে আর হাসি টা থাকে নিমিষেই তা কষ্টের বোঝায় পরিনত হয়ে যায়।

তখন সে বলতে থাক, বাড়িওয়ালা কোন এক কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি কাজ করত। তারা রিলেশন করে বিয়ে করে যার জন্য তাদের বাবা-মা মেনে নিতে না পেরে তাদের বাসা থেকে বের করে। তখন তারা দুজন ঢাকা চলে আসে আর কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেয়। এ দিয়ে তাদের কোন রকম ভাবে চলে যেত। তাদের কোন আত্বীয়স্বজনও তদের খোজ খবর রাখে না। এখন পর্যন্তও তাদের কোন খবর নেয় নি তারা। তারা অনেক কষ্ট করে এখানে জায়গা কিনে বাড়ি করে। জীবনে অনেক কষ্ট সয়ে গেছেন তারা। তার মধ্যে সব বড়টা হল তারা কোন সন্তনের বাবা-মা হতে পারে নি এখন পর্যন্ত। কথা গুলো বলতে বলতে বাড়িওয়ালা কেদে ফেলে। নিবির তাকে কি বল শান্তনা দিবে বুঝতে পারে না। তারপরও কিছু একটা বলে শান্তনা দেয় তাদের। তারপর রান্না করার কথা বলে সেখান থেকে নিজেদের রুমে চলে আসে।

সুপ্ত দুপুরে অফিসেই খাবে তো নিবিরের রান্না করার প্রশ্নই ওঠে না। নিবির ভাবে সে বাইরে গিয়ে খাবে আজ। তাই সে গোসল সেরে রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা হয়। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সে একটা খালি টেবিল বেছে নেয়। কিছুক্ষন পর ওয়েটার চলে আসে তার অর্ডার নিতে। নিবির তার পছন্দের খাবার গুলো অর্ডার করে। অর্ডার দিয়ে নিবির ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু একটা দেখছিল। সে হঠাৎ চোখ ফোন পেরিয়ে সামনের টেবিলে গিয়ে পরে। দেখতে পায় কালকের সেই মেয়ে যার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গিয়েছিল। নিবির তার চেয়ার টা ছেড়ে দিয়ে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসে। মেয়েটা শুধু নিবিরের দিকে একবার তাকিয়েই আবার তার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। নিবির কথা বলার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু কোথা থেকে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। কিছু সময় এভাবে দ্বিধার মধ্য দিয়ে কাটানোর পর অবশেষে মুখ খোলে নিবির।

নিবির মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,” কালকের জন্য আই এ্যাম সরি! আসলে আমি আমার ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই নি আমি। আর জানতাম না যে, আপনি বোবা। আসলে বোবাদের কষ্ট টা আমি বুঝতে পারি। তারা মনের কষ্ট সবার কাছে শেয়ার করতে চাইলেও পারে না। ” রেগে গিয়ে মেয়েটার পুরো মুখ লাল হয়ে যায়। তারপর নিবির আবার বলতে থাকে,” এই যে আমি আপনার কষ্ট টা বুঝতে পারছি। আপনার খুব বকার ইচ্ছে হচ্ছে আমাকে কিন্তু পারছেন।” এরপর হাত দুটো মোনাজাত এর মত উচু করে বলতে থাকে,” হাই আল্লাহ..! তুমি এত সুন্দর একটা মেয়েকে এত বড় শাস্তি কেন দিলে…!” নিবির আরো কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আগুনে ঘি ঢাললে যেভাবে আগুল আরো লাফিয়ে উঠে, তেমনি মেয়েটা যেন রাগে আস্ত একটা আগুনের গোলার রুপ ধারন করে। মেয়ে তার হাতে থাকা জুস নিবিরের দিকে ছুরে মারে। নিবিরের জামাটা একদমই নষ্ট হয়ে যায়। আরো একটা কথা বললে অবাক হবেন যে মেয়েটা বোবা ছিল না। সে নিবিরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে, ” তুই বোবা..! তোর চোদ্দগুষ্টি বোবা! হালার পো হালা কখন ধরে বোবা বোবা লাগিয়ে রাখছিস। তুই বোবাদের কি কষ্ট বুঝিস?” নিবির বিড়ালের মত চুপচাপ শুধু শুনতে থাকে।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখে তাদের এইসব কান্ড দেখছে সবাই। মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে আবার বসে পরে। এর মধ্যে ওয়েটারও চলে আসে। এসে দেখে তাদের এই অবস্থা। কিন্তু তখন পরিবেশ সেই আগের মতই ঠান্ডা হয়ে যায়। যে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। মেয়েটা তার ব্যাগ নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যায়। নিবির বুঝতে পারে না সে কি করবে। না সে উঠতে পারছে, না সে বসে থাকতে পারছে! তারপরও নিবির ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর তার খাবার চলে আসে। কিন্তু খাবার খেতে পারছে না কেন যানি। সে আর বেশি সময় সেখানে থাকে না। দ্রুত বিল-পে করে বাসায় চলে আসে।

সে বাসায় এসে ভাবতে থাকে যে, তাহলে মেয়েটা বোবা ছিল না। কিন্তু মেয়েটা তাকে ভালভাবে বললেই পারত। এভাবে ছিনগ্রেট করার কি আছে। সে বলতেই পারত যে, সে বোবা না। আর নিবির কতবার তাকে সরি বলে কিন্তু মেয়েটা কোন রেসপন্সই দেয় না। এজন্যই তো নিবির তাকে বোবা ভেবেছিল। চোখের সামনে থেকে মেয়েটার প্রতিচ্ছবি যেন সরছেই না।

বিকেলে সুপ্ত অফিস থেকে ফিরে আসে। কিন্তু নিবির সুপ্তর সাথে কোন কথাই বলছে না। সুপ্ত কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু তার উত্তর টুকূ দিচ্ছে। কিছু বাড়িয়ে বলছে না, এমন কি নিবিরের মন খারাপ দেখতে পায় সুপ্ত। সুপ্ত কিছু বুঝতে পারে না। ভেবে নেয় নিবির বাসায় একা একা ছিল সারাদিন তাই হয়ত মন খারাপ। নিবিরও সুপ্ত কে কিছু বলে না। কিন্তু বেশি সময় তার মুখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। সুপ্ত তার মন খারাপের কারন জানতে চায়। কিন্ত নিবির তাকে কিছুই বলে না। সুপ্ত তখন বলে,” দেখ ভাই এখানে থাকি শুধু তুই আর আমি। এরমধ্যে তুই যদি কোন কারনে মন খারাপ করে থাকিস তাহলে আমার তো আর ভাল লাগবে না। কি হয়েছে সেটা বল। ” নিবির আবার আর চুপ থাকতে পারে না।

নিবির সুপ্ত কে বলতে থাকে, আমি কাল ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাই দুজনেই। কিন্তু উঠে মেয়েটার দিকে খেয়াল না করেই আমার ইন্টারভিউ এর ওয়েটিং রুমের দিকে যাই। একটু পরে মনে পরে যায় মেয়েটার কথা। তাই আবার মেয়েটার কাছে গিয়ে সরি বলি। কিন্তু মেয়েটা কোন কথাই বলে না। তাই আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা বোবা। আজ দুপুরে তুই নেই বলে আর রান্না করেনি। তাই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম খাবার খেতে। সেখানেও মেয়েটাকে দেখতে পাই। মেয়েটাকে আবাত সরি বলি, কিন্তু মেয়েটা কোন কথাই বলে না। তাহলে কে ভাববে না যে মেয়েটা বোবা। তাই আমি বোবাদের কষ্ট বোঝার কথা বলছিলাম। আর মেয়েটা আমার দিকে জুস ছুরে মারে। আর আমাকে বকা বকি করে। রেস্টুরেন্টের মাঝে আমাকে অনেক অপমান করে।

সুপ্ত নিবিরের কথা শুনে হাসি থামাতে না। সুপ্ত হেসেই চলছে। নিবির সুপ্তর দিকে তাকিয়ে আবার বলে,” আমি আমার দুঃখের কথা বলছি। আর তুই কি না হাসছিস। তোর মত বন্ধু আমার দরকার নেই। থাক আমি চলে গেলাম।” সুপ্ত এবার কোন কতে হাসি থামিয়ে বলে,” সরি দোস্ত আমি তোর কান্ডের কথা শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। আর তুই কথায় কথায় বাড়ি ফিরে যেতে চাস কেন বলতো?” নিবির কিছু বলে না। কিছুক্ষন পর নিবির বলে উঠে,

– তবে জানিস বন্ধু মেয়েটাকে দেখতে একদম পরির মত। ওর চোখ, ওর ঠোঁট ওর গাল পরিও এত সুন্দর হয় না রে!

– তুই জানিস পরি অত সুন্দর হয় না! তুই কি পরিদের সাথে প্রতিদিন মিটিং করিস নাকি?

– আরে দোস্ত সেরকম কথা না। তুইও যদি ওকে একবার দেখিস তাহলে আর চোখের ফেলতে পারবি। সত্যি খুব সুন্দর মেয়েটা!

– আমার সেরকম মেয়ের দরকার নেই, যেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমার চোখের পলকই যদি না ফেলতে পারি। পরে দেখব ধুলো-বালি দিয়ে আমার চোখ কানা হয়ে গেছে।

– আমি তোকে ইম্পর্টেন্ট কথা বলছি। আর তুই জোক মারছিস।

– তুই প্রেমে পরেছিস এটা ইম্পর্টেন্ট কথা! আগে জানতাম যা, যে প্রেমে পরা ইম্পর্টেন্ট কথা।

– কে বলছে তোকে যে আমি প্রেমে পরে গেছি? আমি তো শুধু মেয়েটার সুন্দর্যের কথা বলছি। এখানে প্রেমে পরার কি হল?

– ওও তাই বুঝি। আমি কি কোন ফিটার খাওয়া বাচ্চা যে, তুই যা বুঝাবি আমি বুঝব।

নিবির আর কিছু বলতে পারে না। তার কাছে বলার মত কোন শব্দই নেই।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here