#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ০৪
রাতে নিবির এর ফোনে ই-মেইল আসে। সে চেক করে দেখে “নিউজ বিডি” থেকে আসছে মেইল টা। মেইল টা ছিল তার চাকরির কনফার্মাশেন মেইল। নিবিরের খুশু আর কে দেখে! সুপ্তও আনন্দে মেতে উঠে নিবিরের চাকরির কথা শুনে। এরপর তারা রাতের খাবারের জন্য রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পরে। কিছুক্ষন পর সুপ্তর অস্বস্থি বোধ হয়, তাই সে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে টিভি টা অন করে। টিভিতে একটা খুন এর লাইভ নিউজ টেলিকাস্ট করা হচ্ছিল। সুপ্ত নিবির কে ডাক দিয়ে বলে, ” দেখ দোস্ত আজ দিন-দুপুরে ‘তাজ রেস্টুরেন্টে এক জনকে খুন করেছে। তাও আবার একজন পুলিশ কে! বলতে বাধ্য যে লোকটার[খুনির] বুকে পাঠা আছে।” নিবির যেন কারেন্টে একটা ঝটকা খেল। সে দৌড়ে রান্না ঘর থেকে চলে আসে। টিভিতে নিউজ টা মমনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। সুপ্ত ওর কান্ড দেখে বলে উঠে, ” মনে হচ্ছে খুন টা তোর মামাকেই করছে!” নিবির রাগের চোখে একবার সুপ্তর দিকে তাকায়। আবার সে টিভিতে নিউজ টা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
নিউজ টা দেখতে দেখতে নিবির এবার মুখ খোলে। সে বলে,” এই রেস্টুরেন্টেই তো আজ আমি দুপুরে খাইতে গেছিলাম!” সুপ্ত বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরে। নিবিরের কাছে এসে বলে, ” তার মানে এই রেস্টুরেন্টেই মেয়েটা তোকে বোকেছিল।” এই বলেই সুপ্ত হাসতে শুরু করে।নিবিরের শান্ত মন টা এবার আর শান্ত থাকল না। তার ইচ্ছে করছে ওকে একটা চড় মারতে। কিন্তু তার এখন আর মারামারি করার মুডও নেই। সে সুপ্তর দিকে তাকিয়ে বলে,” আমি এখানে সিরিয়াস একটা কেস এর কথা বলছি। আর তুই জোক করে বাচিস না। এই কথায় কথায় জোক করার ফল তোকে একদিন ভোগ করতে হবে। আমি মরছি যদি পুলিশ আমার বাসায় এসে পরে, তখন কি করব?” সুপ্ত এবার হাসি থামিয়ে নিবির কে বলে,” তুই শুধু শুধু টেনশন করছিস। পুলিশের খেয়েদেয়ে কাজ নেই তোকে ধরতে আসবে কেন? আরে পুলিশ জানে কে খুনি আর কে ভাল মানুষ। সে জ্ঞান পুলিশের আছে। তোর মত মাথায় গোবর নিয়ে ঘোরে না ওরা।”
নিবিরের টেনশন যেন বেড়েই চলছে। সুপ্ত নিবির কে বিছানায় বসতে বলে সে নিজেই রান্না শেষ করল। কিন্তু খাওয়ার সময় হলেও নিবির খাইতে পারে না। সুপ্ত আবার বলে,
– আচ্ছা খুন টা তুই করছিস?
– না..। আমি খুন করতে যাব কেন?[চমকে উঠে বলে]
– তো তুই এত টেনশন করছিস কেন? তুই যত টেনশন করছিস ওই পুলিশের পরিবারও এত টেনশন করছে না।
– কিন্তু আমি তো ওই রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম!
– আরে ভাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কত লোক ওইখানে খেতে যায় তুই যানিস। এখন কি সবাকেই পুলিশ থানায় নিয়ে যাবে?
– এই কথাটা অবশ্য তুই ঠিকই বলছিস। আমি শুধু শুধু টেনশন করছি।
এরপর নিবির পেট পুরে খেয়ে নেয়। খেয়েদেয়ে দুজনে অনেক্ষন টিভি দেখে, তারপর তারা ঘুমিয়ে পরে।
সকালে কে যেন তাদের দড়জায় কড়া নারে। সুপ্তর ঘুম ভেঙে যায় এর শব্দে। সে ঘুমো ঘুমো চোখে দড়জা খোলে। দড়জা খুলতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পাতছে না। হাত দিয়ে চোখ ডলে, আবার সে তাকায় দড়জার সামনে। এখনও সে নিশ্চিত হতে পারছে না যে সে ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে। এর মধ্যেই দড়জায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করে,” আপনিই কি নিবির?” সুপ্ত মাথা নেড়ে অস্বিকার করে। তখন পুলিশ গুলো আবার ওকে জিজ্ঞেস করে,” তাহলে নিবির কোথায়?” এই প্রশ্ন শুনে সুপ্তর গলা শুকিয়ে যায়। সে এলমেল ভাবে চারিদিকে দেখতে থাকে। আর ভয়ে ভয়ে পুলিশদের জিজ্ঞেস করে,” আচ্ছা স্যার কি হয়েছে আর নিবিরই বা কি করেছে?” পুলিশের মধ্যে থেকে তখন একজন বলে উঠে, ” আগে ওকে থানায় নিয়ে ১০৫ ডিগ্রি দিলে তারপর বুঝতে পারবি ও কি করেছে।” তাদের মধ্যে থেকেই আরেকজন বলে উঠে, ” একজন পুলিশ ওসি কে খুন করে আরামে ঘুমুচ্ছে
আর তুই বলছিস কি হয়েছে।” সুপ্তর মাথা ঘুড়াতে থাকে এ কথা শুনে। ঘেমে সে পুরো ভিজে গেছে।
এদিকে, তাদের কথার শব্দ শুনে নিবিরের ঘুম ভেঙে যায়। ” এত সকালে কে এসে ডিস্টার্ব করছে……” বলতে বলতে নিবির দড়জার দিকে এগিয়ে যায়। দড়জার সামনে আসতে তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়, পুলিশদের দেখে। সে চমকে উঠে। সে পুলিশদের জিজ্ঞেস করে, ” স্যার কি হয়েছে?” পুলিশরা ওর উপর ক্ষেপে উঠে বলে,” তোকে ১০৮ ডিগ্রি দিলে তুই বুঝতে পারবি তুই কি কতেছিস।” নিবির ওদের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। এবার তাদের মধ্যে একজন অফিসার বলে, ” চল তোকে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে।” নিবির বলে উঠে, ” কিন্তু স্যার! আমি তো কিছুই করিনি। আপনারা আমাকে শুধু শুধু দোষ দিচ্ছে।” ” সে তুই পুলিশ স্টেশনে গেলেই বুঝতে পারবি।” বলেই কন্সট্রেবল গুলো তাকে টানতে থাকে। নিবির এবার কেদে ফেলে। আর বলতে থাকে, ” স্যার! আমি কিছুই করিন। আপনাদের ভল হচ্ছে কোথাও একটা। ” কিন্তু কে শোনে কার কথা। পুলিশি গুলো নিবিরকে টানতেই থাকে। আর সুপ্ত পুলিশের ধরে নিবির কে ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু তারা কোন কথাই কানে তুলছে না।
টানাটানি করতে করতে এক সময় পুলিশ গুলো সুপ্ত কে ধামকি দিয়ে বলে,” ওকে ছেড়ে দে নইলে তোর ও খবর আছে।” সুপ্ত ভয়ে এবার পুলিশের পা ছেড়ে দেয়। পুলিশ গুলো হস্তানস্তা করতে করতে নিবির তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। সুপ্তও তাদের পিছু পিছু রাস্তা পর্যন্ত যায়। এদিকে বাড়িওয়ালাও বাইরে এসে দেখে নিবির কে নিয়ে যাচ্ছে। তারাও[বাড়িওয়ালা] পুলিশদের কাছে অনেক আবেদন অনুরোধ করে, কিন্তু তারা[পুলিশরা] কোন কথাই শোনে না। তারা নিবির নিয়ে পুলিশ স্টেশনের দিকে চলে যায়। সুপ্ত বুঝতে পারছে না সে কি করবে। বাড়িওয়ালা সুপ্তর থেকে নিবিরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারন টা জানতে চায়। সুপ্ত তখন সব খুলে বলে বাড়িওয়ালা কে। বাড়িওয়ালারও সুপ্তর কথা শুনে পুলিশের উপর রাগ উঠে যায়। সে বলে,” আসল খুনি কে ধরতে পারে। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালায়। ওদের উপর মনে হয় উপর থেকে চাপ আসছে, আর যাকে ইচ্ছে তাকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে।” সুপ্তও তাদের কথায় সম্মতি জানায়। তখন বাড়িওয়ালা সুপ্তকে সান্তনা দিয়ে বলে,” তুমি টেনশন করো না বাবা। ওরা নিবির কে কিচ্ছু করতে পারে বে না। আমরাও আছি তোমাদের সাথে।” সুপ্ত মনযোগ দিয়ে শুধু কথা গুলো শোনে কিন্তু কিছু বলে না।
সুপ্ত দৌদৌড়ে তাদের রুমে চলে আসে। তারপর তার অফিসের বস কে ফোন করে কয়েক দিনের ছটির কথা বলে। কিন্তু তার বস তাকে ছুটি দিতে চায় না। তার বলে সে[সুপ্ত] অফিসে অ্যাবসেন্ট থাকলে তাকে[সুপ্তকে] আর অফিসে রাখবে না। অফিস থেকে তাকে বের করে দিবে। কিন্তু সেসব কথায় একটুও মাথা ঘামায় না। সে তাদেরকে[অফিসের বসকে] বলে, ” আপনার যা ইচ্ছে করেন। ” বলেই ফোন কেটে দেয়। এখন সে কোথায় যাবে কাকে বলবে কিচ্ছু বুঝতে পাছে না।
ওদিকে, নিবিরকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। তারা[পুলিশ] নিবিরকে একটা অচেনা রুমে নিয়ে যায়। নিবির এরকম রুম কখনও দেখে নি। এটা জেল ছিল না। সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে, রুমে কোন জানলা নেই। রুমে ঢোকার জন্য শুধু একটা দড়জা আছে। আর রুমের মধ্যে একটা টেবিল আছে, টেবিলের একপাশে একটা চেয়ার আর ওপর পাশে একটা চেয়ার পাতা রয়েছে। রুমের মধ্যে একটা মাত্র লাইট, তাও আবার তার ঘোলা ঘোলা আলো। আর রুমের এককোনায় একটা ছোট বাক্স আছে। নিবিরের খুব ভয় লাগে। সে চিৎকার করে বলতে থাকে,” আমাকে এখানে নিয়ে আসছেন কেন? আমি তো বার বার আপনাদের বলছি যে, আমি কিছু করি নি। আপনারা শুনছেন না কেন?” কিন্তু নিবিরের কথা কেউ শোনে না। পুলিশ গুলো যার যার মত কাজে ব্যস্ত। নিবির কে টেবিলের একটা চেয়ারে বসতে দেয় আর হাতে হ্যানকাপ পড়িয়ে দেয়। নিবির কে রেখে পুলিশ গুলো চলে যায়।
নিবিরের আরো বেশি ভয় লাগতে লাগে। সে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাদতে থাকে।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/