#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ০৫
[ভুল সংশোধনঃ গত পর্বে বলেছিলাম ওসি কে খুন করে। কিন্তু ওটা ওসি হবে না, ম্যাজিস্ট্রেট হবে। ধন্যবাদ। ]
কিছু সময় পর একজন মেয়ে ইন্সপেক্টর আসে। নিবির ইন্সপেক্টর এর দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে এসে নিবিরের সামনের চেয়ারে বসে নিবির কে উদ্দেশ্য করে বলে,” মি.নিবির আপনার খুনের কেসটা আমাকেই ট্রান্সফার করা হয়ে। তুমি যত দ্রুত তোমার ভুল স্বীকার করবে তত তোমার সাজা কমে আসবে। আর তুমি যদি তোমার মুখ না খোলো, তাহলে আমরা কিভাবে মুখ খোলাব তা তুমি নিশ্চয় জানো।” এ কথা শুনে নিবিরের গা শিউরে ওঠে। ও বলে উঠে,” ম্যাম, আমি জানি পুলিশ অফিসার টা কিভাবে মারা গেছে। সত্যি বলছি আমি তো শুধু ওখানে দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলাম।” কথা গুলো শুনে মেয়ে ইন্সপেক্টর টা কিছু বলে না। সে একজন কন্সট্রেবল কে কি একটা যেন আনতে বলে। কন্সট্রেবল একটু পরে একটা ল্যাপটপ নিয়ে আসে। ইন্সপেক্টর মেয়েটা ল্যাপটপ থেকে রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজ বের করে নিবির কে দেখতে বলে। নিবির দেখতে পায়, ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমে ফোনে কথা বলতে বলতে ওয়াশ রুমের দিকে যায়। তার কিছুক্ষন পর নিবিরও তার শার্ট ঝারতে ঝারতে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরে। ৫মিনিট পর নিবির ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু নিবির ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসার আগে একজন লোক ওয়াশ রুমে যায়।
এর মধ্যে ইন্সপেক্টর বলে উঠে, ” এবার বলো, তুমি খুন করো নি!” নিবির তাও বলে, ” সত্যি বলছি আমি খুন করি নি। আমি সেরক ছেলেই না। আমি তো সেদিন ওখানে গিয়েছিলাম দুপুরের খাবার খেতে।” ইন্সপেক্টর তখন বলে উঠে,
– আচ্ছা মানলাম আপনি সেখানে খাবার খেতে গিয়েছিলেন, কিন্তু আপনি শার্টে কি ঝারছিলেন?
নিবির তখন সব কিছু খুলে বলে,
– আসলে সেদিন আমি বাসায় একা ছিলাম। আমার বন্ধু সুপ্ত সে অফিসে গিয়েছিল। আমি একা বলে দুপুরে আর রান্না করার ইচ্ছে হয় না। তাই আমি রেস্টুরেন্টে যাই খাবার খেতে। কিন্তু সেখানে একটা মেয়ে আমাকে জুস দিয়ে ভিজিয়ে দেয় তাই আমি ওয়াশ রুমে যাই ফ্রেশ হতে।
– কিন্তু কোন অচেনা মেয়ে আপনাকে জুস দিয়ে ভাই ভিজিয়ে দিতে যাবে কেন? এরকম বানোয়াট কথা শোনার জন্য আপনাকে এখানে নিয়ে আসা হয়নি….
ইন্সপেক্টর কথা শেষ করতে পারে না, তার আগেই নিবির বলে উঠে,
– মেয়েটার সাথে তার আগের দিন দেখা হয়েছিল ‘ নিউজ বিডি’ টিভি চ্যানেল অফিসে যেখানে আমি সেই অফিসেই চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে আমি মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাই কিন্তু মেয়েটাকে আমি সরি না বলেই ইন্টারভিউ এর জন্য চলে যাচ্চিলাম। একটু পরে আমার মনে পরে যায় আমি মেয়েটেকে সরি বলি নি। তারপর আবার গিয়ে তাকে সরি বলি। কিন্তু সে কোন কথা বলে না। এরপর আমি সেদিন রেস্টুরেন্টে গিয়েও দেখি মেয়েটা ওই রেস্টুরেন্টেই বসে আছে। তাই আমি আবার গিয়ে তাকে সরি বলি কিন্তু সে তাও কোন কথা বলে না। তাই আমি ভেবেছিলাম সে বোব। কিন্তু তাকে বোবা বলতেই সে আমার শার্টে জুস ঢেলে দেয়। এটা পরিষ্কার করার জন্য আমি ওয়াশ রুমে যাই…..
নিবির কথা শেষ করতে না করতেই ইন্সপেক্টর বলে,
– আর তখন আপনি ম্যাজিস্ট্রেটকে একা মেয়ে তাকে খুন করেন তাই তো! আপনি বলেছি খুন কেন করেছেন সে কথা বলতে আর আপনি বাংলা মুভির কাহিনী বলে যাচ্ছেন।
কিছুক্ষন থেমে গিয়ে ইন্সপেক্টর আবার বলে উঠে,
– আচ্ছা মেয়ে টা কে ছিল?
– আমি জানি না ম্যাম। আমি যত জানি ঠিক তত টুকুই বলে দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি আর জানি না।
এই বলে নিবির কাদতে শুরু করে। নিবিরের কান্না দেখে ইন্সপেক্টর তাকে কান্না থামাতে বলে, কিন্তু সে কান্না থামাতে পারে না। একটু পর ইন্সপেক্টর তাকে জোরে ধমক দিয়ে কান্না থামাতে বলে। এবার সে ভয়ে চুপ হয়ে যায়। ইন্সপেক্টর কন্সট্রেবল কে সে মেয়ের সব তথ্যসহ মেয়েটাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসতে বলে। কন্সট্রেবল তার[ইন্সপেক্টর ] এর কথা মত মেয়েটাকে নিয়ে আসিতে যায়। ইন্সপেক্টর মেয়েটা নিবিরের দিকে আবার ফিরে আসে আর বলে,
– তো মি.নিবির সাহেব নিজেকে খুব জিনিয়াস মনে করেন। মাস্টারমাইন্ড এর সাথে খুনটা করেছেন। খুনের কোম প্রমানই রাখেন নি। কিন্তু খুন টা করে আপনি খুব খারাপ করেছেন, আপনাকে র মাসল দিতেই হবে।
– আমি আপনাদের আর কত বার বলব যে আমি কোন খুন করিনি। আপনারা বোঝার চেষ্টাই করছেন না। আর আমি তো একা শুধু ওই ওয়াশ রুমে যাই নি, আমার আগে ও পরে অনেক মানুষই তো গেছে ওয়াশ রুমে।
– ওয়াশ রুমে সবাই গেছে কিন্তু খুন টা তো আপনিই করেছেন।
– আপনাদের বুঝানোর মত ভাষা আর আমার নেই। আমি আর কত বার বলব আমি কোন খুন করি নি।
– আচ্ছা মি.নিবির আপনি বলছেন আপনি রেস্টুরেন্টে দুপুরে খাওয়ার জন্য গিয়ছিলেন। কিন্তু আমরা ওখানে গিয়ে জানতে পারি আপনি ওখানে গিয়ে খাবার অর্ডার ঠিকই করেছিলন কিন্তু খাননি। কিন্তু কেন বলেন তো!
– হ্যাঁ আমি খাবার অর্ডার করেছিলাম কিন্তু খাই নি। কারন মেয়েটা আমাকে অনেক বকে যার জন্য আমি আর খেতে পারি না। তাই আমি না খেয়েই বাসায় চলে আসি।
– চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। আর হ্যাঁ আমরা এটা প্রমাণ করেই ছাড়ব যে খনটা আপনিই করেছন।
ইন্সপেক্টর মেয়েটা তার কথা আর শোনে না সে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। নিবির গলা চিৎকরে বলতে থাকে,” আমি খুন করি নি… আমি খুন করি নি…! প্লিজ আমাকে যেতে দিন। ” কিন্তু কেউ তার কথা শোনে না। আর শুনবেই বা কেমন করে, নিবির ওই রুম্ব একা বসে আছে। তাছাড়া ওইখানে প্রানি বলতে কেউ নেই।
[সুপ্তর বাসার দৃশ্য….]
সুপ্ত ছটফট করতে থাকে সে কি করে তার বন্ধুকে বাচাবে। সে পুলিশ স্টেশনে চলে যায়। কিন্তু তাকে নিবির এর কাছে যেতে দেওয়া হয় না। ইন্সপেক্টর মেয়েটা তাকে বাধা দেয়। সুপ্ত অনেক রিকুয়েষ্ট করে কিন্তু কোন কাজ হয় না। ইন্সপেক্টর মেয়েটা বলে কোর্ট অনুমতি দিলেই তার সাথে দেখা করতে পারবেন আর আমরা তাকে ছেড়ে দিতে পারব। এর বাইরে আমরা কিছুই করতে পারব না। সে পুলিশ স্টেশনে থেকে চলে আসে আর একটা চায়ের দোকানের সামনে বসে পরে। অনেক চিন্তা ভাবনা করার পরে, তার মনে পরে যায় তার এক বন্ধুর কথা। সে এই ঢাকাতেই একজন নামিদামি উকিল। তার নাম ইশতিয়াক। সে দ্রুত ইশতিয়াক এর বাসার দিকে রওনা দেয়। ইশতিয়াক মাত্র সকালের নাস্তা করছে। ঠিক তখনই সুপ্ত ইশতিয়াক এর কাছে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে যায়। ইশতিয়াক দৌড়ে এসে সুপ্তকে টেনে তোলে আর জিজ্ঞেস, ” কিরে সুপ্ত তুই এখানে! আর তোর এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে? ” সুপ্ত এতই হয়রান হয়ে গেছে যে, সে কোন কথাই বলতে পারছে না। ইশতিয়াক সুপ্তকে একটা চেয়ারে বসতে দেয় আর এক গ্লাস পানি দেয় হাতে। সুপ্ত এক চুমুকে সব টুকু পানি সাবার করে দেয়। সুপ্ত জোরে জোরে স্বাশ নিতে থাকে। একটু ঠিকঠাক হয়ে গেলে সুপ্ত বলতে শুরু করে,” নিবির কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। ওরা বলে নিবির নাকি ম্যাজিস্ট্রেট খুন করেছে। কিন্তু নিবির ওরকম ছেলেই না। ও খুন করে নি…” সুপ্তর কথা গুলো স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। তাই ইশতিয়াক কিছুই বুঝিতে পারে না তার কথা। ইশতিয়াক আবার সুপ্তকে বলে উঠে, ” সুপ্ত আগে ভালভাবে গুছিয়ে কথা গুলো বল তো।”
সুপ্ত এবার বলতে থাকে,” নিবির আমার বন্ধু। সে কাল দুপুরে তাজ রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গিয়েছিল। কিন্তু রাতে এসে জানতে পারে সেখানে একটা ম্যাজিস্ট্রেট এর খুন হয়। পুলিশ নিবিরকে সেই খুনি ভেবে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। আমি ওদের অনেক বলি ছেড়ে দিতে কিন্তু তারা ছাড়তে রাজিই না। এমন কি আমি পুলিশ স্টেশনেও গিয়েছিলাম তাও কোন কাজ হল না। আসলে নিবির খুব ভাল আর ভদ্র ছেলে। সে ওই কাজ করতে পারে না।” এই বলেই সুপ্ত কাদতে শুরু করে। ইশতিয়াক তাকে শান্তনা দিতে থাকে আর কাদতে মানা করে। সে বলে সে কিছু একটা করে নিবির কে বাচানোর চেষ্টা করবে। সুপ্ত তাকে অনেক অনুরোধ করে। ইশতিয়াক সুপ্তকে শান্তনা দিতেই থাকে। এরমধ্যে ইশতিয়াক এর পরিবারও চলে আসে। তারাও সম্পুর্ন ব্যাপার শুনে। আর সুপ্তকে চিন্তা করতে না করে বলে। বলে, ” ইশতিয়াক নিশ্চয়ই কোন একটা উপায় বের করে নিবে। তুমি শুধু আল্লাহ এর কাছে ভড়শা রাখো আর দোয়া কর।” সুপ্ত কে ইশতিয়াক এর পরিবার অনেক আগে থেকেই চেনে। আগে প্রায়ই সুপ্ত এখানে আসত। এখন কাজের চাপে আর আসতে পারে না। ইশতিয়াক এর বাবা-মা আর তার[ইশতিয়াক এর] বউ আছে এবং তাদের দু-বছরের একটা বাচ্চাও আছে।
ইশতিয়াক এর মা সুপ্ত কে জিজ্ঞেস করে সে সকালে খাবার খেয়েছে কি না। সুপ্ত কান্না জরিত কন্ঠে না করে। ইশতিয়াক এর মা তাকে[সুপ্তকে] খাওয়ার জন্য টানতে থাকে। কিন্তু সে[সুপ্ত] কোন মতে ই খেতে রাজি না। অবশেষে ইশতিয়াক এর বাবা আর তার[ইশতিয়াক ] এর বউ এর জোরাজোরিতে খেতে বসে। এমন কি ইশতিয়াক এর ছোট ছেলেটা বলে,” আন্তেল[আংকেল] আপনি তান[খান]। সুপ্ত ইশতিয়াক এর ছেলের দিকে তাকিয়ে ছোট করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে খাবারের টেবিলে বসে পরে।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/