আত্মতৃপ্তি পর্ব ১০

0
368

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ১০

রাতে নিবির ছাদে বসে গান শুনে মনের সুখে। সে আজ ব্যাথার গান গুলো বেছে নিয়েছে। কেন জানি আজ তার মনে হচ্ছে তার বুকে অনেক কষ্ট জমে আছে। তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাদতে। কিন্তু তাকে কিছু একটা বাধা দিচ্ছে। নিজেকে খুব একা একা লাগছিল নিবিরের। সুপ্ত দূর থেকে নিবির কে দেখে চোখের কোনে জল আসতে। সুপ্ত গিয়ে নিবিরের পাশে বসে। নিবির বুঝতে পেরে চোখের জল খানি মুছে নেয় তার হাতের আলতো ছোয়ায়। সুপ্ত নিবিরকে বলে,” আমি জানি আন্টি আর আংকেল[নিবিরের বাবা-মা] কে খুব মনে পড়ছে তোর। আমি আমি তোকে সান্তনা দিতে এখানে আসি নি। আমি সান্তনা দিলে তুই কান্না বন্ধ করবি এটা আমি চাই না। তুই কাদ.. চিৎকার করে কাদ! তোর মন হালকা হয়ে যাবে।” নিবির সুপ্তর দিকে তাকিয়ে কেদে ফেলে। সুপ্ত নিবিরকে তার বুকে জড়িয়ে নেয়। একটু পর কান্না থামিয়ে নিবির বলে,” জানিস বন্ধু আমি আমার আব্বু-আম্মু কে খুব মিস করি। তাদের চেহারাটাও আমার ভালোভাবে মনে নেই। খুব ছোট থাকতেই আমি আমার বড় চাচার বাসায় চলে যাই পড়াশোনার জন্য। তাদের কোন ছবিও নেই আমার কাছে যে, দেখব তাদের।” কথা গুলো শুনে সুপ্তর চোখেও জল দেখা যায়। কথা গুলো এমন কষ্টদায়ক ছিল। সুপ্ত বলে,” আচ্ছা আংকেল আন্টি কিভাবে মারা গেছে?” প্রশ্নটা শুনে নিবিরের বুকে বড় একটা ঝটকা লাগে। নিবির স্তব্ধ হয়ে যায়।

অনেক্ষন চুপচাপ থাকে দুজন। অবশেষে সব নিরবতা ভেঙে সুপ্ত তাকে আবার প্রশ্নটা করে আর বলে,” তুই আমাকে সব কথাই বলছিস। কিন্তু আমি তাদের মৃত্যুর কারন জানতে চাই তুই একদম চুপচাপ হয়ে যাস। এর কারন কি? কি এমন হয়েছিল তাদের সাথে? প্লিজ আজ তো বল!” নিবির এখনো অন্য মনস্ক হয়ে আছে। সুপ্ত নিবিরের কাধে হাত দিতেই নিবির চমকে উঠে বলে,” আজ না। তোকে অন্য একদিন বলব!” সুপ্ত এ কথা শুনে একটু মন খারাপ করে কারনটা ছিল, সুপ্ত যখনই নিবিরকে তার[নিবিরের] বাবা-মায়ের মৃত্যুর কথা জিজ্ঞেস করে নিবির তখনই এই একই উত্তর দেয়। সুপ্ত আবার নিবিরকে জিজ্ঞেস করে,” আচ্ছা আমি তোকে যখনই এই প্রশ্ন টা করি তুই শুধু বলিস, আজ না অন্য দিন বলব অন্যদিন কবে বলবি? আমার মরার পরের দিন বলবি।” নিবির সুপ্তর দিকে আচমকা তাকায় এই কথা শোনার পর। আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশে তারার খেলা দেখতে মন দেয়। সুপ্ত আর কিছু বলে না। শুধু যাওয়ার আগে নিবিরকে বলে যায় তারাতারি শুয়ে পরতে।

পরদিন নিবির ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি করে ফেলে। তাই অফিসে যেতেও অনেক টা দেরি হয়ে যায়। সে খুব দ্রুত অফিসের দিকে ছুটতে থাকে। তবুও তার এক ঘন্টা লেট হয়ে যায়। সে গিয়ে দেখে রুমের সবাই এসে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। নিবির তারাতারি গিয়ে নিজের টেবিলে বসে কাজ করে। তবে কাজে তার আর মন বসছে না। একটু পর এমডি আসে তাদের রুমে। এমডি আসতেই নিবির একটু ভীত হয়ে যায়। এমডি নিবিরকে বলে,” নিবির সাহেব, তাহলে আপনি অফিসে আসছেন!” নিবির ভীত স্বরে বলে,” জী স্যার!!” এমডি এবার হাসতে হাসতে বলে,” তুমি যে কাল রিপোর্ট টা করেছিল, অনেক ভালোছিল। তুমি যে দক্ষ তার পরিচয় দেখিয়ে দিয়েছো। এমন কি নিশিও তোমার করা রিপোর্ট টা খুব পছন্দ করেছে।” নিবির অবাক হয়ে যায়। নিশি আবার কে। সে ভাবল নতুন করে আবার কে এল তাকে ফাসাতে। নিবির কমল সুরে বলে,

– স্যার এই নিশি টা আবার কে?

– ওহহ!

এই বলে এমডি সেদিনের সেই মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। যে মেয়েটা গতকালই তাকে[নিবিরকে] অনেক বকাঝকা করেছে। এমডি মেয়েটার কাধে হাত রেখে বলে,

– ও হচ্ছে আমার একমাত্র মেয়ে নিশিতা। তবে নাম টা তার খুব একটা মনের মতো হয়নি তাই নিজেই নিজের নাম টা একটু কমিয়ে নিশি রেখেছে। আমি যানি তুমি ওর উপর রাগ করে আছো, আসলে তুমি যতটা খারাপ ভাবছো ও কিন্তু ততটা খারাপ না। সত্যি কথা বলতে ও কোন গুন্ডা মাস্তানদের একদমই দেখতে পারে না। তাই তোমাকে ভুল করে একটু-আধটু বকাঝকা করেছে। আমি আবারো বলছি, প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না।

– না স্যার আমি কি মনে করব। আমি তার উপর কোনভাবেই রেগে নেই।

নিবির কথা গুলো বলে মেয়েটা অর্থাৎ নিশির দিকে তাকায়। দেখে নিশি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। এমডি নিবিরের অনেক প্রসংশা করে। তারপর চলে যায় নিজের রুমে। নিবির আবারো কম্পিউটার এর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে। নিশি নিবিরকে ডেকে বলে উঠে, ” আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি! ” নিবির হোশ এ ফিরে আসে নিশির কথা শুনে। নিবির উত্তর দিয়ে বলে,” ইয়’স ওকে।” বলে আবার কম্পিউটার এর দিকে তাকায়। নিশি বলে,” আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনি আমাকে ক্ষমা করছেন। কারন আপনি আমার দিকে একবারও তাকাচ্ছেন না।” নিবির চুপ থাকে কিছু বলে না। নিশি আবার বলে,”আচ্ছা আমি আপনি যদি আমার সাথে আজ ডিনার করেন তাহলে ভেবে নিব আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন।” এবার নিবির নিশির দিকে মুখ করে বলে,” ক্ষমার করার সাথে ডিনারের কি সম্পর্ক? ” নিশি কিছু বলে না শুধু নিবিরের হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দেয়। নিবির কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখে সেখানে একটা রেস্টুরেন্টের নাম লেখা আছে। নিশি বলে উঠে, ” আমি যানি আপনি সেই রেস্টুরেন্টে[যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট খুন হয়েছিল] আর যাবেন না। তাই অন্য রেস্টুরেন্টে যাব। ঠিক আজ ৯টা। প্লিজ সময় মত পৌছে যাবেন! আপনার জন্য আমি ওয়েট করব আমি।” এই বলে নিশি তার কাজে হাত বাড়ায়। আর কোন কথা বলে না। নিবিরও আর কথা বাড়ায় না সেও কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।

অফিস শেষ হলে নিবির সোজা বাসায় চলে যায়। নিবির সুপ্তকে সব খুলে বলে। সুপ্ত শুনে তো খুব খুশি। সে[সুপ্ত] বলে,

– এটা ভালো কথা। তোর কপাল খুলে গেছে। তুই যার কথা সারাক্ষণ ভাবিস সেই তোকে আজ ডিনারে ডেকেছে। মিস করবি না কিন্তু! তারা গোসল করে রেডি হয়ে নে।

– আবে গাধা ৯টায় যেতে বলছে। আর এখন বাজে ৬টা। তিন ঘন্টা কি আমি রেডি হয়ে বসে মুড়ি খাবো?

– ওহহ তাহলে তো অনেক দেরি আছে। তাহলে কি নিবি ভাবছিস কিছু?

– কি নিব মানে? ডিনারে ডেকেছে। যাব খেয়েদেয়ে চলে আসব।

– আরে গাধা আমি না তুই। সালা তোকে প্রথম ডিনারে ডেকেছে অন্তত একটা ফুলের তোড়া তো নিয়ে যাবি।

– ও না হয় নিয়ে যাব নি। কিন্তু তুই এত মাথা ঘামাচ্ছিস কেন। আর এমন ভাবে কথা বলছিস যেন, ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

– না আজ বিয়ে না আজ শুধু ডিনার করে আয়। তারপর ওর[নিশি] বাবার সাথে কথা বলে বিয়েটা না হয় ঠিক করে নিব।

নিবির আশ্চর্যের চোখে সুপ্তর দিকে তাকিয়ে থাকে। নিবির ওকে[সুপ্ত] বলছে কি আর সুপ্ত নিবিরকে কি এলোপাথাড়ি কথা বলে যাচ্ছে। সুপ্ত নিবিরের এমনভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বলে,

– ভাই সকাল হওয়া পর্যন্ত সময়টুকু তো ওয়েট কর। এখনই তো আর মেয়ের বাবার কাছে যাওয়া যাবে না।

– আর একটা আবোলতাবোল কথা বলবি তো তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে।

এই বলে নিবির একটা লাঠি নিয়ে সুপ্তর দিজে এগিয়ে যায়। সুপ্ত এক দৌড়ে ছাদে চলে যায়। নিবিরও সুপ্তর পিছু পিছু ছাদে যায়। সুপ্ত ছাদের একদম কিনারায় চলে যায়। নিবিরও ওর দিকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। সুপ্ত এবার বলে,” আমাকে মেরে কি করবি। আমাকে মেরে তুই বেচে থাকবি কি করে।” নিবির হাত থেকে কাঠি ফেলে দেয় তারপর সুপ্তকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

[২ ঘন্টা পর]

নিবিরের যাওয়ার সময় চলে আসে। নিবির যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর সুপ্ত ওকে সাহায্য করছে। নিবির সুপ্তকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে তার সাথে যাওয়ার জন্য। সুপ্ত নিবিরের কথা শুনে বলে,” আমি গিয়ে কি তোদের মাঝখানে বসে আঙুল চুসবো।” নিবির সুপ্তকে বলে উঠে, ” আরে আমাদের মাঝখানে বসতে যাবি কেন আমাদের টেবিলের পেছনের টেবিলে বসবি। প্লিজ চল না।” ” আমার মাথা খাস না তো। তুই একা যাবি বুঝলি।” এই বলে সুপ্ত ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। ওয়াশ রুমে ঢুকে আবার বলে উঠে, ” আর হ্যাঁ যাওয়ার সময় কিন্তু মনে করে ফুল নিয়ে যাস।” নিবির নিশির দেওয়া সময়ের আধ ঘন্টা আগেই বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here