আত্মতৃপ্তি পর্ব ১১

0
335

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ১১

তবে ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় আর কি! রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। মনে হচ্ছে আগামী তিন দিনেও রেস্টুরেন্টে পৌছানো সম্ভব না। নিবির রিকশায় ছটফট করছে। তার বিরক্ত লাগছে, এই জ্যাম দেখে। অনেক্ষন রিকশায় বসে থাকে, কিন্তু জ্যাম ছাড়ার কোন বার্তাই সে দেখতে পায় না। এদিকে ঘড়িতে ৯টা ছুয়ো ছুয়ো সময়। তাই সে আর মোটেই দেরি করতে ইচ্ছুক না। রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে সে হেটেই যাবে ভেবে নিয়েছে। তাছাড়া তার আর কোন উপায় জানা ছিল না। কি উপায়ই বা আছে। সে দ্রুত হাটতে থাকে। দৌড়ের চেয়ে কোন অংশে কম নয় তার হাটা। নিবির বার বার ঘড়ির দিকে তাকায়। হেটে হেটে অনেক দূর পর্যন্ত যায় সে। এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯টা ৫ বাজে। সে আরো দ্রুত হাটতে থাকে। এক পর্যায়ে নিবির রেস্টুরেন্টের প্রায় কাছাকাছিই চলে আসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে তাক লেগে যায় ৯টা বেজে ৩০ মিনিট! সে ভেবে নেয় হয়ত এতক্ষনে নিশি চলে গেছে। তবুও সে রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে পরে। সে দড়জা দিয়ে ঢুকে একটু এগিয়ে যায়। কয়েক পা এগিয়ে যেতেই দেখে নিশি স্থির ভাবে বসে আছে। নিবির গিয়ে নিশির দিকে ফুলের তোড়া টা এগিয়ে দিয়ে বলে,” হাই!!” নিবির ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে ফুল গুলো আর আগের মতো নেই। কিছু কিছু ফুলের পাপড়ি গুলো পরে গেছে। আবার কয়েকটার তো পাপড়ি থেতলিয়ে গেছে। নিবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলে,” আসলে রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল, তাই আসতেও দেরি হয়েছে। আর ফুল গুলোও নষ্ট হয়ে গেছে।” নিশি আদরের সাথে উত্তর দেয়,” সমস্যা নেই। তবুও ফুল গুলো অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে। ”

নিশি ফুল গুলো হাতে নিয়ে রেখে দেয় আর নিবিরকে বসতে বলে। নিবির খুব সাবধানতার সাথে তার চেয়ারে বসে। নিশি নিবিরের দিকে তাকিয়ে দেখে নিবির ঘেমে প্রায় গোসল করে উঠেছে। সে নিবিরের দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে থাকে। নিবিরও এবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘেমে ডুবো ডুবো অবস্থা। সে নিশিকে বলে উঠে, ” আমি তো বললামই রাস্তায় অনেক জ্যাম। তাই হেটেই আসছি। তাই একটু ঘেমে গেছি।” নিশি এবার আচমকা বলে উঠে,

– তুমি হেটে আসছো?

– হুম!![একটু নরম স্বরে]

– ওহহ সরি আমি আপনাকে তুমি বলে ফেলছি।

– কোন সমস্যা নেই। আপনি যদি চান তাহলে আমিও আপনাকে তুমি করে বলেতে পারি।

– অবশ্যই আপনি মানে তুমি আমাকে তুমি করেই বলতে পারো। আর হ্যাঁ সেদিনের জন্য আমি খুবই দু্ঃখিত! আমি আসিলে জানতাম না।

– সেদিন মানে কবেকার কথা বলছো?

– তোমাকে যে না জেনেই বকাবকি করেছিলাম। তার জন্য আমি দু্ঃখিত!

– ওহহ সেই কথা। সে কথা তো আমি সেই দিনই ভুলে গিয়েছি। আর শুধু তুমি কেন যে কেউই আমাকে তখন বকাবকি করত। সময়টা ছিলই এমন।

একটু পর ওয়েটার এসে তাদের বলে,” ম্যাম প্লিজ অর্ডারটা কনফার্ম করুন।” নিশি নিবিরকে বলে,” নিবির তুমি কি খাবে?” নিবির গম্ভীর ভাবে বলে,” তুমি আমাকে ডিনারে ডেকেছো তুমি অর্ডার করবে আমি তাই খাবো।” নিশি অবাক হয়ে যায় নিবিরের কথা শুনে। এরকম কোন সময় হয় নাকি। সবার পছন্দই তো এক না। নিশি আবার বলে,” কিন্তু তোমার তো অন্য কিছুও পছন্দ হতে পারে। আমার পছন্দ আর তোমার পছন্দ এক নাও হতে পারে।” কিন্তু আর কিছু বাড়িয়ে বলল না, সে আগের কথা গুলো বলল,” আমার পছন্দের তো অনেক কিছুই খেয়েছি আজ না হয় তোমার পছন্দের খাবার খেয়ে যাব।” নিশি মুচকি হাসে নিবিরের কথা গুলো শুনে। ওয়েটারও নিবিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। নিবির ওয়েটারকে বলে,” আমি কি ঠিক বলি নাই।” ওয়েটার বলে উঠে, ” হ্যাঁ। অবশ্যই আপনি ঠিক বলছেন। আমি এখানে অনেকদিন যাবৎ কাজ করি। কিন্তু কোন দিন আপনার মত কথা শুনি নি। যারা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড এখানে আসছে তারা আরো তাদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে ঝগড়া করেছে। এমনকি অনেকের ব্রেকআপও হয়ে গেছে।” ওয়েটার একটু থেমে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে,” আপনি খুব ভাগ্যবতী যে এই ভাইয়াটার মত বয়ফ্রেন্ড পাইছেন।” নিশি আর নিবির দুজনেই চমকে যায় ওয়েটার এর কথা শুনে নিবির একটু জোরে বকে উঠে, ” আপনি ভুল ভাবছেন। আসলে আমরা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড না। আমরা অফিসের কয়ালিগ। ” ওয়েটার এর মুখ বন্ধ হয়ে যায় সে বলে,” সরি! কিছু মনে করবেন না। আমি ভেবেছিলাম আপনারা….” আর কিছু বলে না। নিশি তার পছন্দের খাবার গুলা অর্ডার দেয়। এরপর ওয়েটার চল যায়।

নিবির নিশির দিকে তাকিয়ে দেখে নিশি মন খারাপ করেছে কি না। তারপর নিশিকে বল,” প্লিজ কিছু মনে করো না। ওয়েটার টা জানত না তাই আর কি।” নিশি বলে,” না সমস্যা নেই। আমি কিছুই মন করি নি।” এরপর তারা তাদের পছন্দ-অপছন্দ কাজ-কর্ম নিয়ে কথা বলতে থাকে। নিবির এতক্ষন নিশিকে ভালভাবে খেয়াল করেনি। কিন্তু সে এবার নিশির দিকে তাকিয়ে আর চোখ এর পলক ফেলতে পারে না। এত সুন্দর কখনো মানুষ হয় নাকি! ভাষায় প্রকাশ করা যা কখনোই সম্ভব না। নিবির নিশির দিযে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে। নিশি নিবির কে বলে উঠে, ” নিবির তুমি কি আমার কথা শুনতেছো!” কিন্তু নিবির কোন কথা বলে না। নিশি নিবিরকে আবার বলে একই প্রশ্ন করে কিন্তু কোন লাভ হয় না। আরো দু-তিন বার বলতে বলতে নিবির হোস এ ফিরে আসে। সে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমি শুনছি তুমি বল!” নিশি এবার হেসে উঠে। হাসলে নিশিকে আরো সুন্দর লাগে। নিবির আবারও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে থাকে নিশির দিকে। নিশি এবার বলে,” আমি তোমাকে কতক্ষন ধরে তোমার সাথে কথা বলছি। কিন্তু তুমি কোন উত্তরই দিচ্ছো না তুমি যানো।” নিবির এবার বলে,” সত্যি..!” ” হুম!!” এই বলে নিশি আবারও হাসতে শুরু করে।

একটুপর তাদের খাবার চলে আসে। নিশি হাসি থামিয়ে নিবিরকে বলে,” তো এবার খাওয়া শুরু করা যাক।” ” হুম অবশ্যই” বলে নিবিরও নিশির কথায় মত দেয়। এরপর তারা দুজনেই খাওয়া শুরু করে। আর মাঝে মাঝে দু-একটা কথাও চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু নিবির খাওয়া বা কথার দিকে মোটেও নজর দিচ্ছে না। তার নজর আটকে গেছে নিশির মায়াবী মুখ আর অসম্ভব সুন্দর হাসিতে। সে শুধু নিশির দিকেই বার বার তাকাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে খুব একটা কদর করছে না।

খাওয়া শেষ হলে নিশি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১টা বেজে গেছে। নিশি বলে,” আমার তো এখন যেতে হবে আব্বু আমার জন্য ওয়েট করছে।” নিবির ছোট বাচ্ছার মত আসতে করে বলে,” হুম যাও তাহলে।” নিবির রেস্টুরেন্টের বিল পে করতে যায় কিন্তু নিশি তাকে বিল পে করতে দেয় না। সে[নিশি] বলে,” ডিনারে ডেকেছি আমি, খাইয়েছিও আমি তো বিল টা তো আমারই পে করা উচিৎ, তাই না!” নিবির আর কোন কথা বলে না। নিশি বিলটা পে করে দেয়। এরপর নিবির নিশিকে গাড়িতে তুলে দেয়। আর নিশি যাওয়ার আগে নিবিরকে একটুকরো কাগজের চিরকুট দিয়ে যায়। নিশি চলে গেলে নিবির চিরকুট টা খুলে দেখে সেখানে একটা নাম্বার লেখা আছে।আর লেখা আছে,” রাতে কিন্তু অবশ্যই আমাকে একটা ফোন করবে।” নিবির ভাবে এটা নিশির নাম্বার ছাড়া আর কারো নাম্বার হতে পারে না। সে আবার রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেই ওয়েটারকে আরো একশত টাকা বকশিস দেয়। কিন্তু বলে বা যে কিসের জন্য দিল বকশিস টা। ওয়েটার টা জিজ্ঞেস করলে নিবির বলে,” তোমার কথাটা আমার খুব ভালো লাগছে তাই তোমাকে বকশিস টা দিলাম।” নিবিরের কথাটায় ওয়েটার টার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে সে কোন কথার ‘কথা বলেছে। কথা টা ছিল,” আপনি খুব ভাগ্যবতী যে এই ভাইয়াটার মত বয়ফ্রেন্ড পাইছেন!”

নিবির আর রিকশা উঠে না যদিও কোন জ্যাম ছিল না এ সময়। কিন্তু নিবিরের হাটেই ভাল লাগছে। সে হাটছে আর নিশির মায়াবী মুখ এর প্রতিচ্ছবি আকছে তার মনে। খুব ভালো লাগছে তার নিশির কথা ভাবতে। একটু পর একটা আন নোন নাম্বার থেকে ফোন আসে। নিবির রিসিভ করে বলে,” হ্যালো কে?” ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসে। বলে,” তোমাকে না বলেছিলাম আমাকে ফোন করতে।” নিবির কন্ঠটা প্রথমে না চিনলেই বুঝতে পারে যে অপাশ থেকে কে কথা বলছে। নিবির বলে,

– তুমি বাসায় পৌছে গেছো?

– হুম। আর তুমি?

– আমি এখনো বাসায় যায় নি রাস্তায় বসে আছি।

– বলো কিহ এখনও বাসায় যাও নি! আগে তারাতারি বাসায় যাও। তারপর তোমার সাথে কথা বলব। আর হ্যাঁ বাসায় পৌছে ফোন দিতে যেন ভুলে যাও না।

এই বলে ফোনটা রেখে দেয় নিশি। নিবির এবার রিকশা নিয়ে দ্রুত বাসায় চলে যায়।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here