#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ১২
নিবির বাসায় গিয়ে দেখে সুপ্ত আধমরার মতো শুয়ে আছে। সে সুপ্তে ডেকে বলে,
– কিরে সুপ্ত ঘুমাইছিস নাকি।
– নাহহ। চোখ বন্ধ করে ঘুম ঘুম খেলছি![একটু রাগী গলায়]
– আচ্ছা ঘুমা তাইলে?
এই বলে নিবির ছাদে যায়। নিবির ফোনটা বের করে নিশিকে ফোন করবে। এমন সময় সুপ্ত বিছানা থেকে উঠে এসে নিবিরকে বলে,” কিরে তোর কি হইছে বলতো! আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললি যে ঘুমাইছি নাকি। আবার আমাকে ঘুমাইতে বলে ছাদে আসছিস। আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।” নিবির এত সময় ধরে সুপ্তর কথা ভালভাবে শোনেই নি। সে নিশির নাম্বার সেভ করতে ব্যস্ত। এবার নিবির সুপ্তকে বলে,” সুপ্ত তুই কি আমাকে কিছু বললি?” এই কথা শুনে সুপ্তর মাথায় আগুন জ্বলে যায়। সুপ্তর ইচ্ছে করে ওকে[নিবির] এক লাথি দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিতে। কিন্তু সে তার রাগকে কন্ট্রোল করে বলে,” তাহলে আমি এতক্ষন কার সাথে কথা বললাম।” ” কি মনে হয়, তুই কার সাথে কথা বললি আমি কিভাবে জানব।” এই কথা বলে নিবির নিশিকে ফোন করে। সুপ্তর মাথায় আরো রাগ উঠে যায়। ” আচ্ছা ভাই তুই থাক। আসলে আমিই এখানে এসে ভুল করেছি। আমি ক্ষমা তোর কাছে!” এই বলে সুপ্ত আবার রুমের দিকে চলে যায়। এদিকে নিবির দু-তিন বার নিশিকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না। সুপ্তর যাওয়া দেখে নিবির বলে, “তুই কি রুমে গিয়া ঘুমাবি নাকি?” ” নাহহ! হাডুডু খেলব। খেলবি তুই?” এই বলে সুপ্ত চলে যায়। নিবির ধীরে ধীরে বলে,” ছেলেটার যে হইছে আল্লাহ-ই ভাল জানে!” এরপর নিবির ফোনটা ছাদের মেঝেতে রেখে আকাশের দিকে তাকায়।
আহহ! কি সুন্দর আকাশ টাহ। এরকম তারা ভরা আকাশ দেখার সুযোগ কয়জনের হয়। এসব ভাবতে থাকে নিবির আকাশের দিকে তাকিয়ে। একটু পরেই নিশির ফোন আসে। নিবির থাবা দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
– কইছিলা এতক্ষন। আমি কখন থেকে তোমাকে ফোন করেই যাচ্ছি। [নিবির]
– আমি একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলাম।[নিশি]
– ওহহ। তো এখন কি করো?
– এই তো রুমের মধ্যে হাটাহাটি করছি। তুমি?
– আমি ছাদে বসে তারা গুনছি। তুমি চাইলে বারান্দায় এসে আমাকে সাহায্য করতে পারো।
– রাতের আকাশ তো আমার কাছেও খুব ভালো লাগে।
এই বলে নিশি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আকাশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সে। এরপর বলে উঠে,
– হুম… আকাশটা সত্যিই খুব সুন্দর!
– ঠিক তোমার মতো!
কথাটা শুনে নিশি তাক লেগে যায়। তার উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারছে না সে। চুপচাপ হয়ে যায় নিশি। নিশি নিস্তব্ধতা দেখে নিবির বল,
– আমি কি ভুল বলেছি নাকি?
– অবশ্যই ভুল। কারন আমি অতটাই সুন্দর না, যতটা চাঁদনী রাতের আকাশ।
– সত্যিই তুমি আজকের আকাশের চেয়েও অনেক সুন্দর।
– হইছে হইছে আর ইম্প্রেস করতে হবে।
– আমি তোমাকে ইম্প্রেস করার জন্য বলছি না। যা সত্যি তাই বলছি।
এরমধ্যে সুপ্ত আবার রুম থেকে ছাদে চলে আসে। এসে নিবিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,” নিবির রুমে অনেক মশা আজ প্লিজ চলনা একটু কয়েল কিনে নিয়ে আসি।” কিন্তু নিবির সুপ্তর কথা গুলো খেয়ালই করছে না। সুপ্ত এবার রাগে ধপাৎ করে ছাদের মেঝেতে শুয়ে পরে। নিবির ফোনটা কানের কাছে থেকে সরিয়ে সুপ্তকে বলে,” কিরে তুই না হাডুডু খেলতে গেলি। তাহলে আবার এখানে কেন?” ” ওখানে হাডুডুর প্লেয়ার বেশি হয়ে গেছে তাই একটু কমাতে হবে।” এই বলে সুপ্ত উঠে বসে। নিবির সুপ্তর কথার কিছুই বুঝতে পারে না। সে বলে উঠে,
– মানে? আমি তো কিছুই বুঝছি না তোর কথা।
– তোকে বুঝতে হবে চল আমার সাথে একটু দোকানে চল কয়েল কিনতে হবে।
– কয়েল কেনার কি দরকার। মশারী আছে। মশাই টাঙা। আর তুই কি সাত বছরের ছোট ছেলে যে তোর সাথে দোকানে যেতে হবে।
– মশারী টাঙালে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। আর এখানে একেকটা কুকুর সিংহের চেয়ে কম না। মানুষ দেখলেই কামড়াতে আসে।
এদিকে নিশি বার বার ” হ্যালো কি হয়েছে কি হয়েছে… ” বলে চিল্লাইতে থাকে। নিবির নিশিকে বলে,” আর বলো না! আমার এক বন্ধুকে ডেংগু কামড় দিছে।” ” কি বলো। তুমি কিন্তু ওর কাছে যেওনা। তোমারই হতে পারে, এটা কিন্তু ছোয়াচে রোগ।” এই বলে নিবিরকে সাবধান করতে থাকে নিশি। সুপ্ত নিবিরকে আবার বলে,
– এইটা কি আজকের রেস্টুরেন্টের মেয়ে নাকি?
– আজকের মানে আমি তো এই মেয়ে ছাড়া অন্য কারো সাথে দেখা করিনি। আর ওর সাথেই তো প্রথম দেখা হয়েছিল অফিসে।
– হইছে.. হইলেই হল একটা। আর এবার যদি আপনাদের প্রেম সংলাপ শেষ হয়ে থাকে, তাহলে আমার সাথে কি একটু বাইরে যেতে পারবেন।
– ইসসস! তোর অশান্তিতে আমি শান্তিভাবে নিশির সাথে কথাও বলতে পারছি না।
– দোকান থেকে আগে কয়েলটা কিনে নিয়ে আসি। তারপর তোরা সারা রাত কথা বল আমার কোন সমস্যা নেই। আর মামা মেয়েটার নামটা কিন্তু যোস!
নিবির কিছুক্ষন সুপ্তর দিকে তাকিয়ে থাকে আড় চোখে। তারপর দুজনেই বাইরে দোকানে যায় কয়েল কিনতে। নিবির নিশির সাথে কথা বলতে বলতেই যায়। কয়েল কিনে সুপ্ত রুমে চলে যায় আর নিবির আবার ছাদে গিয়ে বসে পরে। নিবির আর অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলে। কথা শেষ করতে ইচ্ছে করছে কারোরই। দুজনেই কথার মধ্যে আটকে পরে। তাদের টেনশনই ছিলো না যে পরের দিন তাদেরকে আবার অফিসে যেতে হবে। প্রায় রায় দুটো পর্যন্ত কথা চলে তাদের। এরপর সমাপ্তি ঘটে আজকের রাতের জন্য। কথা বলা শেষ হলে নিবির রুমে গিয়ে দেখে সুপ্ত ঘুমিয়ে পরেছে।
পরদিন সকালে নিবির ঘুম থেকে উঠে দেখে সুপ্ত এখনো ঘুমোচ্ছে। নিবির সুপ্তকে একটা লাথি মেরে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। সুপ্ত লাফ দিয়ে উঠে বলে, ” এই কে রে… কে রে?” তারপর চোখ খুলে দেখে নিবির দাঁড়িয়ে আছে সামনে। নিবির বলে উঠে, ” চাকরি যাওয়ার পর থেকে তো তুই শুধু ঘুমোচ্ছিসই। যখনি বাসায় আসি, দেখি তুই ঘুমোচ্ছিস। কাল রাতে তুই ঘুমালে সবার আগে। আর সকালে উঠলেও সবার পরে। এত ঘুম কই থাকে তোর।” ” আরে বলিস না চাকরি চলে যাওয়ায় আমি ডিপ্রেশনে পরে গেছি তাই ঘুমিয়ে এর প্রতিকার করছি।” এই বলে সুপ্ত আবার শুয়ে পরে। নিবির বলে,
– ডিপ্রেশন এ গেলে মানুষ সিগারেট খায়, মদ খায়। কিন্তু এই প্রথম দেখলাম কেউ ঘুমিয়ে ডিপ্রেশন কমাচ্ছে।
– আচ্ছা ওসব বাদ দে। আগে বল মেয়েটার নাম্বার পেলি কিভাবে?
– মেয়েটিই দিয়েছে।
– ইচ্ছে করেই দিছে, নাকি ওকে বাধ্য করেছিস দিতে।
– আরে নাহহ। ও রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যাওয়ার সময় ইচ্ছে করেই ওর নাম্বার আমার হাতে দিয়ে গেছে।
নিবির ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বেড়িয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে সুপ্তকে বলে যায়,” শুধু ঘুমাস না খাওয়া-দাওয়ার পর একটু বাইরে এসে ঘুরে দেখিস। নইলে অসুস্থ হয়ে পরবি কিন্তু।”
নিবির রিকশা নিয়ে সোজা অফিসের জন্য চলে যায়। অফিসে গিয়ে দেখে নিশি আগেই চলে আসছে। নিশির সাথে কথা সেরে নিজের টেবিলে গিয়ে বসে কাজে মন দেয় নিবির। সে আজ এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে রিপোর্ট করে। অনেক সুন্দরভাবে গুছিয়ে গাছিয়ে লেখে সে। সেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অসংখ্য বিষয় তুলে ধরে। তার কিছু অংশ নিশিকেও পড়ে শোনায়। নিশিও মুগ্ধ হয়ে যায়, নিবিরের লেখা দেখে। এরপর নিবির এমডিকে রিপোর্ট টা জমা দিতে যায় রিপোর্ট জমা এমডির সাথে অনেক্ষন কথা বলে নিবির, অফিসের বিষয় নিয়ে।
এরপর সে তার রুমে এসে তার টেবিলে বসে পরে। নিশি এসে বলে,” আগামী কাল তো শুক্রবার বার। তো আগামীকাল কি আমরা আবার রেস্টুরেন্টে যেতে,পারি!” নিবির কিছুক্ষন নিরবভাবে কিছু একটা ভাবে তারপর বলে,” আচ্ছা ঠিক আছে যাব নি। কিন্তু সেম টাইম।” নিশি খুব খুশি হয় নিবিরের এরকম উত্তরে।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/