#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ১৩
নিবির অফিস শেষ করে বাসায় এসে রুমে খুজে দেখে সুপ্ত রুমে নেই। সে সুপ্তকে খুজতে ছাদে যায়। ছাদে গিয়েই নিবিরের মনটা খুশিতে ভরে উঠে। সুপ্ত আর বাড়িওয়ালারা দুজন মিলে বসে লুডু খেলছে। তার ইচ্ছে করে তার যদি সত্যি সত্যিই তার বাবা-থাকত তাহলে প্রতিদিন এভাবে ছাদে বসে লুডু না খেললেও অনেক মজা করত। কিন্তু তার সে ভাগ্যই হয় নি। দূর থেকে সুপ্ত আর বাড়িওয়ালারা নিবিরকে দেখতে পেয়ে তারা নিবিরকে ডাক দেয়। আর বলে,” নিবির বাবা এসো তুমিও এসে আমাদের সাথে খেলতে পারো।[বাড়িওয়ালা]” নিবির আসতে আসতে তাদের কাছে যায়। আর বসে পরে তাদের তিনজনের মাঝে। তারপর নিবিরও লুডু খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করে। খেলার মাঝে তারা অনেক কথা চালিয়ে যায়। এবং তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যায়। সন্ধ্যা হলে খেলা শেষ করে নিবির আর সুপ্ত রুমে চলে যায়। বাড়িওয়ালারাও তাদের রুমে চলে যায়।
রুমে ঢুকতেই নিশি ফোন দেয় নিবিরকে। নিশির ফোন দেখে সুপ্ত বলে,” তুই যদি এখন বাবু-সোনা করিস তাহলে আমি বাইরে চলে যাব।” নিবির হাসতে গিয়ে থেমে বলে,” তুই-ই নিশির সাথে দেখা করার কথা বলছিস আবার তুই-ই কথা বলতে বারনও করিস। বলতো কোন দিকে যাব আমি?” ” আরে আমি তো সেকথা বলি নাই যে তুই নিশির সাথে কথা বলিস না। আমি বলছি প্রেম করবি ভালো কথা। কিন্তু প্লিজ টিকটকারদের মতো নেকামো করবি না।” এই বলে সুপ্ত বিছানায় বসে টিভি অন করে। নিবির আর কিছু বলে না সুপ্তকে। সে নিশির ফোন রিসিভ করে।
– হ্যালো.. নিবির। কি করো?
– এই তো সুপ্তর সাথে বসে টিভি দেখছি। তুমি কি করো?
– তোমার সাথে কথা বলছি।
– তা তোহ আমি দেখছিই। এছাড়া আর কি করছো?
– এই তো বসে আছি। আর তুমি আমাকে দেখছো? কোথায় আছো তুমি? কিভাবে দেখছো আমায়?
– আরে ওইটা তো কথার কথা বলছি আমি। আর আমি তো বাসায়।
একের পর এক ভিন্নরকম বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকে নিবির আর নিশি। আর ওদিকে সুপ্ত টিভি দেখা নিয়ে ব্যস্ত। সুপ্ত বাইরের দিক থেকে বিরক্তি বোধ করলে, ভেতিরে খুব খুশি। কারন তার প্রিয় বন্ধু নিবির তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেছে। সুপ্ত টিভি দেখছে ঠিকই, কিন্তু তার রয়েছে নিবিরের দিকে।
প্রায় অনেক সময় নিবির আর নিশি ফোনে কথা বলে। তারপর তারা একসময় কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নেয়। নিবির সুপ্তকে গিয়ে বলে, ” বন্ধু কি করো?” সুপ্ত নিবিরের দিকে একবার তাকায়। তারপর নিবিরের সামনে তিনটে আঙুল ধরে বলে,” বলতো এখানে কয়টা আঙুল আছে?” নিবির সুপ্তর এরকম প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে বলে,” কিরে কি হইছে বলতো?” সুপ্ত নিবিরকে আবার বলে,” আমার কিছু হইনি। আগে বল এখানে কয়টা আঙুল আছে?” নিবির উত্তর দেয়,” তিনটা!” সুপ্ত এখন যা বলে তা শোনার জন্য নিবির মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সুপ্ত বলে উঠে,
– তাহলে তো তোর চোখ ঠিকঠাকই আছে। তাইলে তুই এইটাও দেখতে পাইছিস যে আমি টিভি দেখছি। কিন্তু তুই এই প্রশ্নটা করলি ক্যান?
– প্রশ্নটার উত্তর কিন্তু শেষে দিলিই তুই। তাহলে এত নাটক করলি ক্যান?
– আসলে সময় কাটছে না তাই একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বললাম।
দুজনে রাতে রান্না করে খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পরে।
মাঝরাতে সুপ্তর ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুমো-ঘুমো চোখে দেখে তার পাশে। নিবির নেই। এবার সে ভালোভাবে চোখ মুছে নেয়। দেখে সত্যিই নিবির তার পাশে নেই। তারপর উঠে বাথরুম আর রুমের সব জায়গায় খোজে কিন্তু নিবিরকে পায় না। এতক্ষন নরমল ভাবে থাকলেও এখন সুপ্তর একটু ভয় লাগে। সে দড়জার কাছে গিয়ে দেখে দড়জা খোলা। তারপর বাসার নিচে যায় কিন্তু কাউকেই পায় না। সে কি মনে করে যেন আবার ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে সুপ্ত তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। সে দেখে নিবির ছাদের একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। সে একটু কাছে এগিয়ে যায় কথা গুলো স্পষ্টভাবে শোনার জন্য। কিন্তু সুপ্ত নিবিরের কোন কথাই বুঝতে পারে না। সুপ্ত নিবিরের কাছে গিয়ে নিবিরের কাধে হাত রেখে বলে,” কিরে তুই এত রাতে এখানে একা একা কি করিস?” সুপ্ত কাধে হাত দেওয়ায় নিবির চমকে উঠে। আর পিছনে তাকিয়ে দেখে সুপ্ত দাঁড়িয়ে আছে। সে সুপ্তকে বলে,
– তুই এখানে এত রাতে?
– প্রশ্নটা আমিই আগে তোকে করেছি। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
– না আসলে…!
– আসলে কি? হুম। আমি এখন বুঝতে পারছি। আমার সামনে তুই নিশির সাথে কথা বলতে চাস। না। তাই মধ্য রাতে এই ছাদে এসে নিশির সাথে কথা বলিস।
নিবির চুপ করে থাকে কিছু বলে না। সুপ্ত তাকে আবার বলে,
– কি এখন কথা বলিস না ক্যানো? এখন আমি বুঝতে পারছি তুই আমাকে বন্ধু হিসেবে মানিস ই না।
– কে তোকে বলল যে আমি তোকে বন্ধু হিসেবে মানি না? তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি ভাবছি তোকে কাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাব। আর তোকে সারপ্রাইজ দিব। কিন্তু তুই তো সব কিছু নষ্ট করে দিলি।
এই কথা শোনার পর সুপ্ত আর কিছু বলে না। সে চুপ হয়ে যায়। তারপর নিবির সুপ্তকে জড়িয়ে ধরে বলে,” তুই তো এখন আমার সব তোকে ছাড়া আমি আর কার সাথে থাকব।” সুপ্ত এখনও কোন কথা বলে না। তারপর দুজনেই রুমে চলে যায়। আর ঘুমিয়ে পরে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সুপ্ত নিবিরকে বলে,” দোস্ত তুই যে কাল রাতে বললি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবি আজ। সত্তিই কি নিয়ে যাবি?” নিবির ছোট করে একটা মুচকি হাসি দেয়। হাসিটার রহস্য সুপ্ত বুঝতে পারে না। এরপর নিবির বল,” হুম দোস্ত তুই কিন্তু ৯টার আগেই রেডি হয়ে থাকিস। আমরা পৌনে নয়টার দিকে এখান থেকে বের হব।” ” ঠিক আছে। ” এই বলে সুপ্ত রান্না ঘরে যা সুপ্ত। এমনিতেই সুপ্ত খুব একটা রান্না ঘরে যায় না আর সেও রান্নার প্রতিও আগ্রহবাদী নয়। বেশিরভাগ সময় নিবিরই রান্না করে। কিন্তু আজ ইচ্ছে করেই রান্না ঘরে যাওয়ার কারণ টা নিবির বুঝতে পারে। নিবির ফ্রেশ হয়ে নিশিকে ফোন দেয়।
– হ্যালো ম্যাম! গুড মর্নিং!
– হুম গুড মর্নিং!
– তো ঘুম থেকে কি উঠছেন। নাকি বিছানাকেই আপন করে শুয়ে আছে?
– আমি তোমার মত অলস না যে সারাদিন ঘুমাবো। আমি প্রতিদিন খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠি।
– ওহহ আচ্ছা। তাই তো বলি আমার এত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে কেন?
– কেন?
– কারন আমার বউটা যে সকালে উঠে বাসার সব কাজ করে। আমারও ইচ্ছে করে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে সাহায্য করতে।
– তুমি থাকো তোমার বাসায় আর আমি থাকি আমার বাসায় তুমি আমাকে হেল্প করবা কিভাবে?
– দুরত্বটা দেখলা কিন্তু আমার ইমোশনটা দেখলা না। সেই জন্যই বলি তুমি দ্রুত আমার বাসায় চলে আসো।
– আচ্ছা দাঁড়াও আমি এখ্যুনি আসছি।
– আরে আমি তো এখন আসার কথা বলি নি। আমি বলছি আমাদের বিয়ের কথা। আমি এইটা বুঝি না মেয়েদের মাথায় কি থাকে? একটু ঘুরিয়ে কথা বললেই আর বুঝে না যে কি বললাম।
– উহহ… আইছে বিয়ে করতে। আমার বাবার কাছে আমাদের রেলাশন এর কথা বলতেই তোমার হাত-পা কাপে। আর জনাব আসছে বিয়ে করতে!
– তুমি মিথ্যা বলো কেন? আমার তো শুধু পা টাই কাপে। আর কিছু কাপে না।
– তোমার শুধু পা- টাই কাপে না। সাথে সবই কাপে।
– মানে তুমি কি বলতে চাইছো?
– তুমি যেটা বুঝছো সেটাই।
– আচ্ছা বাদ দাও আজ রেস্টুরেন্টে ঠিক সময় আসো কিন্তু।
– আমি তো ঠিক সময়ই পৌছে যাই। কিন্তু তুমিই তো শুধু জ্যাম এর রাজা। যখনই বাসা থেকে হও তখনই তোমাকে জ্যাম ঘরে ফ্যালে।
– আচ্ছা ঠিক আছে আজ ঠিক সময়ই পৌছে যাব।
এই বলে নিবির ফোনটা কেটে দেয়।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/