আত্মতৃপ্তি পর্ব ১৪

0
341

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ১৪

[রাত ৪ঃ৩০]

নিবির রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। সুপ্ত শুধু নিবিরের সব কান্ড দেখছে। একটু পর সুপ্ত নিবিরকে বলে,” নিবির তুই এমনভাবে রেডি হচ্ছিস, যেন মনে হচ্ছে তোর বিয়ে।” নিবির সুপ্তর দিকে তাকিয়ে বলে,” আমার বিয়ের চিন্তা তোকে করতে হবে না। তুই তোর মতো রেডি হয়ে নে। এমনিতেই এই ঢাকা শহরে জ্যাম এর অভাব নেই। দ্রুত রেস্টুরেন্টে পৌছুতে হবে।” সুপ্ত বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এরপর সেও রেডি হয়ে নেয়। দুজনে বেড়িয়ে পরে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। আজ ভাগ্য ভালো যে রাস্তায় তেমন জ্যাম ছিলো না। তাই তারা দ্রুতই পৌছে যায়।

নিবির আর সুপ্ত রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটা টেবিল চয়েচ করে বসে পরে। সুপ্ত বলে উঠে, ” দোস্ত তাহলে অর্ডার দে।” ” দাড়া না একটু!” এই বলে নিবির এদিক সেদিক উঁকি মেরে তাকাতে থাকে। সুপ্ত নিবিরের এরকম কাজ দেখে বলে,” কিরে তুই কাকে খুজিস?” নিবির মাথা দিয়ে না করে বলে,” কই কাকে খুজবো আমি।” ওদের কথার মধ্যেই নিশি চলে আসে ওদের মাঝে। সুপ্ত নিশির দিকে তাকিয়ে বলে,” হ্যালো আপু এখানে কি চাই। আপনি আপনার ছিট সামলান গিয়ে।” নিশি সুপ্তর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। তারপর নিবিরকে বলে,” এইটাই তোমার সেই বন্ধু না! কি যেন নাম……হুম…. সুপ্ত.. রাইট!” নিবির মাথা নিচু করে বলে,” হুম।” সুপ্ত ওদের দুজনের কথোপকথন দেখে অবাক হয়ে যায়। সে নিশির দিকে মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে। এরপর নিবিরকে বলে,” নিবির এইটা কে?” নিবির সুপ্তকে বলে,” এইটা হচ্ছে নিশি। আমার….!” সুপ্ত এই কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বলে,” মানে?” নিবির চারপাশে তাকায় দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নিবির সুপ্তকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে বলে,” আসতে কথা বল। সবাই দেখছে।” সুপ্ত এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে সত্যি সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর নিবির বলে,” মানে এইটাই তোর গার্লফ্রেন্ড! আর ওর বাবার অফিসেই তুই কাজ করিস?” নিবির সুপ্তর দিকে তাকিয়ে বলে,” ক্যান পছন্দ হয়নি?” ” পছন্দ হবে না ক্যানো! এটা তো মানুষ না, আস্ত একটা পরি!” এই বলে সুপ্ত নিশিকে দেখতে থাকে। নিশি সুপ্তর কথা শুনে হাসিতে ফেটে পরে। নিবির নিশিকে বলে,” আজ কি বসবা নাকি দাড়িয়েই খাবার খাবা!” নিবিরের কথা শুনে নিশি বসে পরে আর বলে উঠে, ” নিবির তুমি কি জানো তোমরা দুই বন্ধুই জোকার!” নিবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাকে দেখে কি জোকারের মত লাগে? ” ” আর নয় তো কি?” এই বলে নিশি হাসতে থাকে। এদিকে সুপ্ত নিশির দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। নিবির সুপ্তকে দেখে বলে,” ভাই আজ আর দেখিস না কাল বাসায় নিয়ে রেখে দিব নি তারপর মনে ভরে দেখিস। তোর চোখ পরে তো ওর মেকাপই নষ্ট হয়ে গেল।” নিশি নিবিরের কথায় হাসি থামিয়ে বলে,” ওই হ্যালো… আমি মেকাপ করি না।”

তাদের অনেক্ষন বসে মজা করতে থাকে তারপর খাবারের অর্ডার দেয়। তবে আজ সব কিছু নিবিরের পছন্দের। যেগুলো নিশি বা সুপ্ত কখনোই খায় নি। তো অর্ডার অনুযায়ী খাবার চলে আসে। এরপর তারা খেয়েও নেয়। নিশি নিবিরকে বলে,” নিবির আমি বলতে বাধ্য যে, তোমার চয়েচ কিন্তু খারাপ না।” নিবির নিশির চোখে চোখ রেখে বলে,” চয়েচ খারাপ হবে ক্যামনে, যেখানে আমি তোমাকে চয়েচ করেছি।” নিশি এই কথা শুনে একটু লজ্জা পায়। আর মুখ নিচে নামিয়ে মুচকি হাসি দেয়। তবে তার হাসিটা কেউ দেখতে পায় না।

সব শেষে নিবির নিশিকে আগের মতোই গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। আর নিশি বাসার দিকে চলে যায়। নিবির সুপ্তকে বলে,

– তুই বাসায় যা, আমার বাসায় যেতে একটু দেরি হবে।

– কেনো তোর এত রাতে আবার কিসের কাজ।

– আর বলিস না আমার নতুন একটা রিপোর্ট জমা দিতে হবে কাল সকালেই। কিন্তু আমি রিপোর্ট টা কমপ্লিট করিই নি।

– কিন্তু রাতে তুই কোথায় রিপোর্ট করবি?

– আরে সামনে ব্রিজ টা আছে ওই ব্রিজ টা নিয়ে কন্টেন্ট লিখবো। তাই একটু ব্রিজ টা ভালোভাবে আগে পর্যবেক্ষন করতে হবে।

– কিন্তু কাল সকালেই তো করতে পারিস।

– কাল সকালেই তো জমা দিতে হবে। প্লিজ ভাই..!

– আচ্ছা ঠিক আছে। দ্রুত বাসায় ফিরবি কিন্তু আর নিজে সতর্ক থাকিস। এমনিতেই কিন্তু এর আগে এলমেলো কেস এ ফেসে গেছিস।

– ঠিক আছে তোর টেনশন করতে হবে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক।

সুপ্ত বাসায় চলে যায়। নিবিরও তার কাজে মন দেয়। সে ব্রিজের কাছে গিয়ে ব্রিজ টা ভালো ভাবে দেখে। কাজ শেষ করে সে বাসায় চলে যায়।

পরদিন সকালে যথারীতি নিবির অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে সবার আগে তার রিপোর্ট জমা দেয়। তারপর নিজের কেবিনে এসে কাজে মন দেয়। নিশি এসে দেখে সুপ্ত কাজ করছে। সে নিবিরকে বলে,” ভালোই দেখছি বাধ ইমপ্লয় এর মতো কাজ কতে যাচ্ছা।” নিবির নিশির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলে,” নইলে তো শশুর মশাই তার অফিসেও রাখবে আর তার মেয়েকেও দিবে না।” নিশি কি বলে আর বুঝতে পারছে। তার চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে সে লজ্জা পেয়ে একদম লাল হয়ে গেছে। নিশি আবার বলে,

– আচ্ছা নিবির তোমাকে একটা কথা বলব তুমি কি সত্যি কথা বলবে?

– হুম বলো। কি জানতে চাও।

– আচ্ছা তোমার ম্যাজিস্ট্রেট এর মার্ডার কেস এর কথা মনে আছে?

– এ কথা মনে থাকবে না।[নরম স্বরে]

– আচ্ছা তুমি কি যানো ম্যাজিস্ট্রেটকে কে খুন করেছিল?

– নাহহ। আমি কিভাবে জানবো?

– ঠিক আছে তুমি কি রেস্টুরেন্টে এমন কাউকে দেখে সন্দেহ করতে পারো যে, সেই খুন টা করতে পারে।

– এমন কাউকেই তো মনে হল না। সবাই নরমল ভাবেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ তুমি এসব প্রশ্ন করছো কেন?

– না…এমনি। ভাবছিলাম নিজের বয়ফ্রেন্ড এর নামে কিছু লিখব।

– ওহহ আচ্ছা। আমার এত ভালো ভালো গুন রেখে তুমি সেই মার্ডার কেস এর কাছে গেলা কেনো?

– এমনি আর কি। তুমি আমাকে সন্দেহ করছো? যাও তোমার সাথে আর আমি কোন ব্যাপারেই কথা বলবো না।

– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আই এ্যাম সরি!

কিন্তু নিশি তার সাথে আর কথা বলছে না। নিবির নিশির চেয়ারে গিয়ে বসে সরি বলে। নিশি চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যেতে লাগে। নিবির তাকে হাত টেনে ধরে। আর বলে,” তোমার জন্য একটা গিফ্ট আছে।” নাম নিশি পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,” কি?” নিবির নিশিকে তার হাটুর উপর বসায়। তারপর নিশির ঠোঁটে একটা চুমুু দেয়। নিশি নিবিরকে সরিয়ে দিয়ে বলে,” সবাই দেখছে তো!” নিবির আবার নিশিকে জড়িয়ে ধরে বলে,” আরে কেউ দেখছে না। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।” এরমধ্যে একজন বলে উঠে, “ভাইয়া আমি দেখছি।” নিশি নিবিরকে আবার সরিয়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। নিবির ওর[যে কথাটা বলেছিল] দিকে তাকিয়ে বলে,” তুই যা দেখছিস এখানেই ভুলে যা। আর এই কথা যদি অন্য কেউ জানে তো আমি তোকে কি করব?” ছেলেটা বলে,” কিছু করতে হবে না ভাইয়া। আমি কিছুই দেখি নি।” “গুড বয়।” এই বলে নিবির আবার নিশির দিকে তাকায়।

নিশি গিয়ে তার চেয়ারব বসে। আর নিবিরও আর কিছু বলে না, সেও তার ছিটে এসে বসে কাজ করতে থাকে।

নিশি এখন আর কাজে মন দিতে পারছে না। সে শুধু নিবিরকে চুপ চুপ করে উকি মেরে দেখছে। হঠাৎ নিবির বলে উঠে,

– চুপ করে দেখার কি আছে। আমাকে ডাক দাও আমিই তোমার কাছে চলে আসি।

– আমি তোমাকে দেখিতে যাবো কেন? আমি তো কাজ করছি।

– তা তো আমি দেখছিই। এত নাটক করতে পারো তোমরা।

– আমি আবার কই নাটক করলাম।

এরপর দুজনেই আবার চুপ হয়ে যায়। আর কাজ করতে থাকে। তবে নিশি এখনো কাজ করতে পারছে না।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here