#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 14…
হল থেকে বেরিয়ে আনহা নিজের বাড়ির দিকে চলল। রিক্সায় করে নিজের এলাকায় এসে ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে লাগল। ছেলেটার কাজ-কর্ম সব আনহার মাথার উপর দিয়ে গেছে। কী করতে চাইছে ছেলেটা। সব কথায় একটা ডাবল মিনিং। আচ্ছা ছেলেটা কী ওকে আগে থেকে চেনে। না, তা কী করে হয়? কিন্তু তবুও একটা প্রশ্ন থেকেই—কে ও? ওর সাথে থাকলে কয়েক বছর আগের কারও কথা কেন মাথায় আসে আনহার। আচ্ছা এরকম কী হতে পারে ও যাকে ভাবছে সেই ও। কিন্তু তাহলে নিজের পরিচয় কেন দেবে না। ধুরঃ সবটাই আনহার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। তখনি কারও ডাক পরে।
‘এই মেয়ে শোনো…’
থেমে যায় আনহা। পিছন ফিরে আওয়াজ দাতার উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে, ‘জি আমাকে বলছেন।’
তিনি আনহার কাছে এসে হেসে জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ, তোমাকেই ডাকছি। চিনতে পেরেছ আমাকে।’
আনহা কিছুটা দ্বিধান্বিত হলো। তিনি বললেন, ‘আমি তোমার আসাদ আংকেল।’
‘আসাদ আংকেল?’
‘ইহানের বাবা। তোমাদের কয়েক বাসা পর থাকতাম।’
‘আসাদ কাক্কু! তুমি…’ খুশিতে চকচক করে ওঠে আনহার মুখ। বলে, ‘কতদিন পর আপনার সাথে দেখা।’
হাসল আসাদ। বলল, ‘তা অবশ্য ঠিক। তোমার বাবা যখন বেঁচে ছিল তখন অবশ্য তার সাথে দেখা হতো। যে যাকগে, তোমার মা কেমন আছে? আর তুমি এখানে? আমি তো শুনেছিলাম…’
‘আসলে আংকেল আমি আর মা এখানেই আছি। ওখান থেকে চলে এসেছি।’
‘ওও আচ্ছা তাই বলো। তা এখন কোথায় যাচ্ছ?’
‘বাসায়।’ তখনি কিছু একটা ভেবে আনহা উৎফুল্ল হয়ে বলল, ‘আংকেল ইহান কোথায়? ও কেমন আছে?’
‘ইহান ভালোই আছে। কিন্তু অনেক বেশী বদমাশ হয়ে গেছে।’
হাসল আনহা। বলল, ‘ও আবার ভালোটা ছিল কবে? বরাবরের মতোই তো শয়তান।’
‘তা যা বলেছ। আচ্ছা, বাসায় চলো। সামনেই আমাদের বাসা।’
‘এখন কী ইহান থাকবে?’
আসাদ ঘড়ি দেখলেন। দুপুর হয়ে এসেছে। ইহানের বাসায় ফেরার সময় হয়েছে। তাই তিনি বললেন, ‘পেয়েও যেতে পারো।’
‘তাহলে যাব। কতদিন ওকে দেখেনি। আগের মতই শয়তান আছে নাকি ভালো হয়েছে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে।’
‘হ্যাঁ, কিন্তু সাবধান। তোমার উপর প্রচন্ড রেগে আছে সেদিনের পর।’
‘এতবছরে কি মনে আছে?’
‘তোমাকে না ভুললে সেই কথা কি করে ভুলবে?’
চুপ হয়ে গেল আনহা।
আসাদ বলল, ‘ও অনেকবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিল। এখনো করে। তবে আমি কিছু বললে রেগে যায়। আচ্ছা এসব কথা ছাড়ো। আগে বাসায় চলো।’
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল আনহা। অতঃপর আসাদের সাথে ইহানের বাসার উদ্দেশ্যে গেল। কেন জানিনা এতদিন পর আনহার মনে অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে। হয়তো ছোটবেলার ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ পেয়ে। সেদিনের জন্য ও ইহানকে সরি বলতে চায়। কিন্তু ইহান কী রিয়েক্ট করবে জানে না। হয়তো এ বছর পর সরি বলতে আনহা কিছুটা ইতস্তত হবে। ইহান বলবে, ‘ইট’স ওকে আনহা। ছোটবেলার কথা কেউ মনে রাখে। এখন আমি বড় হয়ে গেছি বুঝতে শিখেছি। এগুলো এখন ধরে বসে থাকার সময় নেই। নাকি এটা বলবে, ‘ আপনি ভাবলেন কী করে ইহান আপনাকে ক্ষমা করে দেবে? কখনোই ইহান তা করবে না আনহা। আপনি ভুল ভেবেছেন। জান গেলেও ইহান ক্ষমা দেবে না।’
কথাটা ভাবতেই হেসে উঠল আনহা। আসাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘এই বয়সে যদি মাথা খারাপ হয় তাহলে সাহানা কী করবে তোমাকে নিয়ে আনহা।’
আসাদের এ-কথায় কিছুটা লজ্জা পেল আনহা। বলল, ‘সরি।’
‘কী ভাবছ? হাসছ যে?’
‘ওই তো ইহান…’
‘হ্যাঁ, ও-ই গাধাটার কথা ভাবলে এমনি সবার হাসি আসে শুধু আমার রাগ লাগে।’
‘কেন?’ দ্বিধান্বিত হয়ে জানতে চাইল আনহা। আসাদ বলল, ‘জানো সেদিন কী করেছি? আমাকে এসে বিয়ের কথা বলছিল। ছেলে হয়ে বাবাকে এসব কি করে বলে আমি ভেবে পায়নি।’
‘কী বলেছিল?’
‘বিয়ের কথা।’
‘কার বিয়ে!’
‘কেন আবার ওর নিজের বিয়ে। আর কী বলেছিল জানো?’
সেদিন….
‘বাবা আমি বিয়ে করব। বয়স তো আর কম হলো না।’
ছেলের এ-কথায় আসাদ-অপর্ণা দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আসাদ জিজ্ঞেস করে, ‘বিয়ে করবি মানে? তোর বিয়ের বয়স হয়েছে? আএ বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কী?’
‘আমার বিয়ের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এই বয়সে বিয়ে না করলে ছেলে-মেয়ে কবে হবে? তারা বড়ই কবে হবে?’
ধাক্কা খান আসাদ। ‘২০বছর বয়সে তুই ভাবছিস ছেলে মেয়ে বড় কখন হবে? মানেটা কি?’
‘বাবা তুমি যখন বিয়ে করেছ তোমার বয়স ছিল ২৪। আমি নাহয় একটু তারাতাড়ি বিয়ে করতে চাইছি। তাতে দোষের কী?’
‘এই অপর্ণা তোমার ছেলের কথা শোনো। আরে ও-ই হারামজাদা আমি আর তুই এক। আমাদের সময় একটু বড় হলেই বিয়ে দেওয়ার চল ছিল।’
‘এই জন্য সময়টা ভালো ছিল। শুদ্ধ ছিল। তোমরা আমাকে বিয়ে দিবা না আমি প্রেম করলেই দোষ৷ আমার বুঝি স্বাদ-আহ্লাদ নাই নাকি?’
‘ছিঃ ছিঃ এই তোর লজ্জা করে না, বাপেরে বিয়ের শখের কথা কস?’
‘যাহ বাবা এতে লজ্জার কী আছে? আমি কী মেয়ে নাকি যে লজ্জা পাব। তাছাড়া আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখেছি তুমি পাশের বাড়ির রেশমি আন্টির সাথে ভাব জমাই কথা বলো। মানে… ‘
কথাটা শুনে আর কিছু বলতে পারল না আসাদ। অপর্ণার দিকে তাকাতেই দেখে সে অগ্নিচক্ষুতে তাকিয়ে আছে। এই ছেলে জন্ম থেকে বাপের জীবনটা ভাজা ভাজা করছে। আর আজ… এই বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটাতে চাইছে।
আসাদের কথা শুনে আনহা হেসে কুটিকুটি হয়ে পড়ল। ইহান একটুও বদলায়নি। আগের মতই আছে। এই বয়সে কিনা বিয়ের শখ!
অতঃপর দুজন কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতর এলো। কলিং বেল বাজাতেই অপর্ণা দরজা খুলল। কিন্তু আনহা চিনতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, ‘কে?’
আসাদ আনহার কথা বলতেই অর্পণা ভাবলেশহীন ভাবে ওকে ভেতরে আসতে বলল। আসাদ আনহাকে ভেতরে এনে অপর্ণাকে ওর জন্য নাস্তা আনতে বলল। আর আনহাকে বলল, ‘কিছু মনে কোরো না। আসলে সে ঘটনার পর থেকে ও তোমার উপর মনঃক্ষুন্ন হয়ে আছে।’
‘ইট’স ওকে আংকেল।’
আনহার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল আসাদ। আনহা সোফায় বসে টেবিলে থাকা নিউজপেপার দেখছিল। কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও যখন কেউ এলো না তখন আনহা এদিক-ওদিক দেখল৷ হঠাৎই ওর চোখ আটকায় দেয়ালে টানানো ছবিতে। মুহূর্তে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। অস্ফুটস্বরে বলে উঠে, ‘অয়নের ছবি ইহানের বাড়িতে। আর আসাদ আর অপর্ণার আন্টির সাথে কেন?’
তখনি আসাদ আসে। আনহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘কী হলো দাঁড়িয়ে আছ কেন?’
‘আংকেল ও-ই ছবিটা?’ আঙুল দিয়ে ইশারা করে। আসাদ ছবিটা দেখে হেসে বলল, ‘আরে ওটা তো ইহানের ছবি আমার বাড়িতে আমাদের সাথে অন্য কারও ছবি তো রাখব না তাই না।’
‘ও-ই ইহান?’
‘মানে? তোমার কী ওর সাথে দেখা হয়েছে?’
‘আংকেল আমাকে একটু যেতে হবে।’
‘কিন্তু…’
‘কিছু মনে করবেন না। আমি আরেকদিন আসব।’ বলেই দ্রুত সেখান থেকে প্রস্তান করল। সেখান থেকে অন্তির বাসায় গেল। অন্তি ততক্ষণে বাসায় চলে এসেছে। আনহা আবেগাপ্লুত হয়ে বলল, ‘অন্তি আমি ইহানের খোঁজ পেয়েছি।’
এতক্ষণ মোবাইল টিপছিল অন্তি। আনহার মুখে ইহানের নাম শুনেই মনিধারী সাপের মতো ফোস করে ওঠে। বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘শয়তানের নাম নিয়ে এত খুশি হওয়ার কী আছে? আর দেখ ও-ই ছেলের নাম আমার সামনে নিবি না। তুই তো জানিস না ও যাওয়ার আগে আমার কী অবস্থা করে গিয়েছিল৷ পুরো এক মাস বিছানায় পড়ে ছিলাম। তুই তো দেখতেও আসিস নি। এখন আবার ওর নাম।’
‘আহা! বাদ দে না আগের কথা। তুই জানিস ইহান কে?’
‘তোর যা কান্ডিশন আমি জিজ্ঞেস না করলেও তুই বলবি। তাই সাসপেন্স অফ রাখ। উগরাই দে। বল কে ইহান…’
আনহা ক্যাবলা হেসে বলল, ‘অয়ন হচ্ছে ইহান।’
এ-কথায় অন্তি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। তারপর বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলল, ‘সালা ছোট শাপ যখন ছিল তখন কম ছিল, বড় হইয়াও পিছু ছাড়ছে না। আর দেখছোস তুই? তাই তো বলি আমার উপর অয়নের এত রাগ কিসের? ফাস্ট যেদিন আমার সাথে ওর দেখা হইছিল কি কান্ডটাই না করছিল পুরো ১মাস ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ ছিল আমার।’
‘ধুরঃ, তুই শুধু ওর দোষটাই দেখিস?’
‘আজ্ঞে, জি না আপনি ভুল। তবে দেখ আনহা তোরে একটা কথা বলে সাবধান করছি। তুই যত পারোস ওর থেকে দূরে থাক। আমি শিয়র ও জেনে বুঝে এমন করছে সেদিনের প্রতিশোধের জন্য।
‘আচ্ছা সে দেখা যাবে। তুই বলতে পারবি অয়ন ধুরিঃ ইহানকে কই পাব?’
বিরক্তসুচক হাসি দিল অন্তি। বলল, ‘কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের পিছনে বাঁশ নিতে খুব পছন্দ করে। তুই হলি সেই ক্যাটাগরির। ইউ নো হোয়াট আনহা বেইবি, ইহান জানে তুমি ওকে চেন না। তাই নিজের পরিচয় গোপন করে তোমাকে জ্বালায়। কিন্তু যখন জানতে পারবে, তুই জেনে গেছিস ওই ইহান তখন কিন্তু সেটা করবে না। বরং যা বলার বা করার ডিরেক্টলি করবে।’
আনহা চুপ।
অন্তি বলল, ‘একটা কথা বলব আনহা। তোর প্রতি ইহানের পাগলামী কিন্তু স্বাভাবিক নয়। আর না সেটা আজকের। অন্যরকম কিছু একটা।’
‘কী বলতে চাইছিস তুই?’
‘আমি কিছু বলতে চাইছি না। শুধু তোকে বোঝাতে চাইছি এমন না হয়ে যায় এই পাগলামী রোগে পরিণত হয়। আমি কী মিন করতে চাইছি বুঝতে পারছিস?’
‘ও আমার ছোট অন্তি! তুই…’
‘মাত্র তিন বছরের আনহা। ও তোর তিনবছরের ছোট। আর মনে রাখিস এসব পাগলামী কিন্তু কোনো কিছুর ধার ধারে না। শেষে এই জন্য তোকে না পস্তাতে হয়।’
‘তুই বেশি ভাবছিস অন্তি…’
‘তুই কেন এটা মানতে চাইছিস না বলত আনহা? ইহানকে ইগনোর করলে তোর কী সমস্যা?’
‘তুই অযথাই ব্যাপারটা অন্য দিকে নিচ্ছিস।’ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল আনহা।
‘বেশ তো সময় বলবে আমি ঠিক ছিলাম না ভুল। তবে একথাই বলব, বেমানান কিছু কিছু জিনিস ইগনোর করতে হয়।’
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
ভুল-ত্রুটি সংশোধন যোগ্য 😑😑