#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 03…
‘আমি সত্যি বলছি। আমি কিচ্ছু করি নি। প্লিজ মেরোনা আমাকে। উহুম.. উহুম..’
হেঁচকি তুলে কাঁদছে আনহা। কিন্তু তাতে আনহার মা সাহানার মন ভিজল না। প্রচন্ড রেগে আছেন তিনি। এতটুকু মেয়ে কিনা এই বয়সে… ছি ছি। ভাবতেও লজ্জা করছে ওনার। আরও বেশি করে মারতে লাগলেন।
এতক্ষণ ইহান চুপ করে দাঁড়িয়ে আনহার কান্নার মজা নিচ্ছিল। কিন্তু সাহানা এবার আনহাকে অনেক বেশি মারছে। আনহার কাঁদতে কষ্ট হচ্ছে— ব্যাপারটা বুঝতে পারে ইহান। ও একবার সাহানার হাতের চিঠিটার দিকে তাকায়; আরেকবার আনহার দিকে। সিমানের দেওয়া চিঠিটা ও ছিঁড়ে ফেলেছিল। আর এই চিঠিটা ইহান এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সত্যি-মিথ্যে বলে লিখিয়ে এনেছে। আর তাই তো সাহানা আরও বেশি মারছে ইহানকে।
‘মা আমি সত্যি বলছি, আমি কিচ্ছু করি নি।’
‘তাহলে কি ইহান মিথ্যে বলছে?’
তৎক্ষনাৎ ইহান বলে উঠল, ‘আন্টি ছেড়ে দিন ওনাকে। আপনি অন্তিকে কিছু বলুন। আনহাকে ও-ই তো জোর করে নিয়ে গেছে। আনহা যেতে চায় নি।’
কথাটা শুনে সাহানা মারা থামিয়ে ইহানের দিকে কড়া চোখে তাকায়। বলে, ‘ও তারমানে সব নষ্টের গোড়া ও-ই মেয়েটা। এই বয়সেই আমার মেয়ের মাথা খাচ্ছে।’
‘তা নয়তো কী? আনহা কথা বলতে চাইছিল না। এমনকি চিঠিটাও নিতে চায় নি। অন্তিই তো জোর করেছে। বিশ্বাস না হলে আনহাকে জিজ্ঞেস করুন।’
সাহানা রাগী চোখে আনহার দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে ইহান সত্যি বলছে?’
আনহা কিছু বলতে পারল না। মাথা নিচু করে চুপ রইল। এটা তো সত্যি অন্তি ওকে সিমানের সাথে কথা বলার জন্য জোর করত।
আনহাকে চুপ থাকতে দেখে সাহানা গম্ভীর গলায় বলল, ‘তোকে যদি আর ও-ই অন্তির সাথে ঘোরাঘুরি, এমনকি কথা বলতে দেখি তাহলে হাড্ডি আর মাংস আলাদা করে দেব।’
তারপর রাগে গটগট করতে করতে চলে গেল। আনহা ওখানে বসেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। ইহান গিয়ে আনহার পাশে দু’হাঁটু ভাজ করে বসে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অতঃপর বলে, ‘দেখলেন তো, অন্তি আপনাকে বাঁচাতে আসে নি। আমি এসেছি। অন্তির জন্যই তো আপনি মার খেলেন। যদি ও আপনাকে সিমানের সাথে কথা বলতে না বলত, আপনি কি আন্টির মাইর খেতেন? তারপরেও বলবেন, অন্তি আপনার সব—আমি আপনার কেউ না।’
ইহানের এই কথায় আনহা বিস্মিত চোখে ওর দিকে তাকায়। এটা কী বলল ইহান? অন্তির জন্য নাকি ও মার খেয়েছে? মাইর তো আনহা ইহানের জন্য খেল। কিন্তু সেটা আদোও কী ইহান মানতে চাইবে? প্রশ্ন আনহার।
কিন্তু তার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ না করে ইহান। গম্ভীর মুখ করে চলে গেল। আনহা ওখানে বসেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ওর যাওয়া দেখে।
.
.
.
.
.
.
.
.
🍁৫🍁
পরের দিন সন্ধ্যা বেলায় আনহা কোচিং থেকে ফিরছে। প্রায় আটটা বাজে। কোচিং শেষ হয়েছিল ছয়টার দিকে। কিন্তু ঊর্মির কাছ থেকে নোট আনতে ওর বাসায় যায়। যাতে এত দেরি হয়ে গেছে।
সাহানা ওকে অন্তির সাথে মিশতে নিষেধ করেছে। তাই একাই ফিরছে। অন্তি কোচিং শেষে বাসায় চলে গেছে। নাহলে ওর সাথেই যেত।
যদিও রাত আটটা বেশি নয়। কিন্তু আনহার জন্য এটা অনেক রাত। ও এত রাত করে কখনো বাসার বাইরে থাকে না। আনহা দ্রুত পায়ে বাসার দিকে পা বাড়ায়। কিছুদূর যেতেই রাস্তায় মোড় আসে। আনহা ভাবান্বিত হয়ে পড়ে কোন পথ দিয়ে যাবে? বড় রাস্তা দিয়ে গেলে অনেক সময় লাগবে। ও ঠিক করল মাঠের রাস্তা দিয়েই যাবে।
মাঠের রাস্তাতে তেমন মানুষ নেই। ভয় করছে আনহার। যদিও অন্তির সাথে প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। কিন্তু আজকে একা যাচ্ছে তাই হয়তো ভয় করছে।
আনহা কিছুদূর যেতেই টং তোলা চায়ের দোকান খোলা দেখে। হারিকেন জ্বলছে। দোকানের সামনে পাতা বেঞ্চে দু’একটা লোক বসে চা খাচ্ছে। দোকানদার গরম পানিতে চায়ের কাপ ধুচ্ছে। এটা দেখে আনহা কিছুটা সাহস পায়।
দোকানটা পার হতেই আনহা চেনা এক কণ্ঠে শুনতে পায়। ‘আপনি এত রাতে এখানে কী করছেন?’
আনহা সচকিত হয়ে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকাল। তারপর নাকটা উঁচু করে ইহানকে না দেখার ভঙ্গিমায় পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইল। ও কালকের পর পণ করে রেখেছে—ইহানের সাথে কথা বলবে না। এমনকি ওকে দেখলেও এড়িয়ে চলবে। করলও তাই। ইহানকে না দেখার ভঙ্গিমায় চলে গেল।
আনহার উপেক্ষায় কিছুটা ভ্রু কুঁচকায় ইহান। কিন্তু তাই বলে তো আনহাকে ছেড়ে দেবে না। তাই না। আনহা ওর সাথে কথা না বললে ও বলবে? ও কি আনহার পর? তাহলে কেন বলবে না? তাই ও আনহার পিছু পিছু হেঁটে ওর সামনে গিয়ে পথ আটকায়। কোমর বেঁধে বলে, ‘আপনি এত রাতে এখানে কী করছেন?’
‘তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে না কি?’
‘হ্যাঁ, দিতে হবে।’
কিছুটা অবাক হয় আনহা। কিন্তু এই ছেলের সাথে কথা বাড়াতে চায় না। তাই রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, ‘বাসায় যাচ্ছি।’
‘ওওও.. কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে যাবেন না। এটা ভালো রাস্তা না।’
এ-কথায় রেগে যায় আনহা। ঝাঁঝরা কণ্ঠে বলে, ‘ভালো-মন্দের তুই কী বুঝিস? নাক টিপলে দুধ পড়ে, সেই ছেলের আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছিস?’
‘দেখুন আনহা, রাতুল ভাইয়াকে সেদিন বলতে শুনেছি এই রাস্তায় নাকি মেয়েদের জন্য ভালো না।’
‘তো?’
‘তো কী? আপনি মেয়ে নন? ছেলে নাকি? নাকি হিজড়া।’
‘তুইইই…’ আনহা রেগে ইহানের দিকে এগিয়ে গেল। ইচ্ছে করছে ছেলেটার গলা টিপে দিতে। শয়তান বাচ্চা। যার মানে বোঝে না সেটা নিয়ে কথা বলে। ‘এই অসভ্য আরেকটা বাজে কথা বললে সত্যি মাইর খাবি। এসবের কী বুঝিস রে?’
‘আমি সব জানি?’ দাম্ভিক সুরে বলল ইহান।
‘দূর।’
‘আপনার বিশ্বাস হলো না। জানেন, একটা হিজড়া আফজাল আংকেলের কারখানায় টাকার জন্য এসেছিল। বেশি টাকা চাওয়ায় আফজাল আংকেল দিতে চায় নি। তাই হিজড়াটা নিজের কাপড়…’
তৎক্ষনাৎ ইহানের মুখ চেপে ধরল আনহা। বলল, ‘আর বলিস না। আর বলিস না। এইজন্যই বলে পিচ্চিদের সামনে খারাপ কাজ করতে নেই। তারা বড়দের মতো লজ্জা পেয়ে লুকায় না। বরং মাইকিং করে।’
‘উহুম… উহুম…’ ইহান ওকে ইশারায় ছাড়তে বলে। আনহা ওকে ছেড়ে দিয়ে কড়া কণ্ঠে জানতে চায়, ‘আমি তো বাসায় যাচ্ছি। তুই কী করছিস?’
খিলখিল করে হেসে ওঠে ইহান। বলে, ‘আমাকে কী আপনার মতো মেয়ে মনে হয়। ঘরে বসে থাকব। আমি ছেলে। ছেলেরা রাত অবধি বাইরে না থাকলে পুরুষ হয় না।’
আনহা ট্যারা চোখে তাকায়। কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘এই.. এই.. তু..তুই কীইই বলছিস এসব? পুরুষ হয় না মানে? তোর বয়স কত? এই বয়সে পুরুষ হওয়ার জন্য…’
‘রাতুল ভাইকে বলতে শুনেছি। যে হয় সে নয়তে হয়; যে হয় না সে নব্বইতেও হয় না। তাই তো আমি এখন থেকেই পুরুষ হচ্ছি।’
এ-কথায় ছোট একটা শ্বাস ফেলল আনহা। এই ছেলে বড় হয়ে কী হবে? কে জানে? এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই অপেক্ষা না করে সামনের দিকে হাঁটা দিল। বাঁধ সাধে ইহান। ওর হাত ধরে বলে, ‘আপনি এই রাস্তা দিয়ে যাবেন না। আমার সাথে বড় রাস্তা দিয়ে চলুন।’
কিন্তু আনহা ওকে ধমক দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। ইহান মুখ গোমড়া করে বলে, ‘যাও যাও। যখন বিপদে পড়বে তখন মজা বুঝবে।’
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আনহা কিছুদূর যাবার পর বুঝতে পারে ইহান ঠিক বলেছিল। রাস্তাটা আসলেই খুব নীরব। একদম সুনশান-নিস্তব্ধ। ইহানের সাথে বড় রাস্তা দিয়ে গেলেই ভালো হতো। কিন্তু কী করার? দু’একটা ঢোক গিলে বাড়ির পথে হেঁটে চলল।
হঠাৎই আনহার নিজের সামনে কোনো মানুষকে আবিষ্কার করে। সে টলতে টলতে এদিকেই আসছে। লোকটাকে দেখে স্বস্তি পায় আনহা। যাক একটা অন্তত লোক তো আছে। ভেবেই আনহা হাঁটতে লাগল। কিন্তু কেউ ওর হাতটা টেনে ধরল। আনহা ভয়ার্ত চোখে পিছনে তাকিয়ে দেখে সেই লোকটা। কেমন একটা দুলছে? বিশ্রি একটা গন্ধ আসছে তার থেকে। আনহার বুঝতে বাকি রইল না লোকটা কেন এমন করছে? ও কান্না গলায় বলল, ‘কী করছেন আংকেল? আমার হাতটা ছাড়ুন। ব্যথা পাচ্ছি আমি।’
‘এই চুপ। কোনো কথা বলবি না। নাহলে…’ মাতাল কণ্ঠে বলল লোকটা। আনহাকে টেনে-টুনে রাস্তার পাশে ঝোপের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। আনহা চিৎকার করছে। কিন্তু এই ফাঁকা রাস্তায় কেউ ওর চিৎকার শোনার জন্য নেই। আর না বারো বছর বয়সী রোগা-সোগা একটা মেয়ের শক্তি আছে এই মধ্যবয়সী লোকটার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর। ও মাটিতে বসে পড়ল। কিন্তু লোকটা ওকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে ভাঙা রাস্তার ইট-পাথরের খোঁচায় আনহার উরু হতে শুরু করে পায়ের বিভিন্ন জায়গা ছুঁলে রক্ত পড়ছে। সেলোয়ারে ভিজে যাচ্ছে। আনহা সহ্য করতে পারছে না। চিৎকার করে কাঁদছে।
তখনি লোকটি একহাতে আনহাকে ধরে আরেকহাত মাথায় দিয়ে ‘আঃ’ করে ওঠে। বিধ্বস্ত চেহারায় আনহা সামনের দিকে তাকাতেই ইহানকে দেখতে পায়। আনহা লোকটির দিকে দেখে। কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। তারমানে ইহান লোকটিকে ইট মেরেছে।
আনহা দ্রুত লোকটার হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইল। কিন্তু লোকটি তো ছাড়লই না। বরং জঘন্য ভাষায় ইহানকে গালি দিয়ে বলল, ‘মা** পুত। তুই আমারে মারলি।’
‘ছাড়ুন আমাকে।’ ছাড়াতে ছাড়াতে বলল আনহা।
লোকটা আরও জোরে আনহার হাত খামচে ধরল। আনহা সহ্য করতে না পেরে হু..হু.. করে কেঁদে ওঠে। ইহান গিয়ে আনহার আরেকহাত ধরে বলল, ‘ছাড়ুন ওনাকে। ছাড়ুন বলছি আনহাকে।’
লোকটি এতে আরও রেগে গেল। আনহাকে একহাতে জাপটে ধরে ইহানকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পিচ্চি ইহান নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়। ইটের সাথে আঘাত পেয়ে মাথা থেকে গড়গড় করে রক্ত পড়তে শুরু করে। ‘আঃ’ করে আর্তনাদ বেরিয়ে আসে ইহানের মুখ থেকে। আনহা ‘ইহান’ বলে জোরে চিৎকার দেয়।
লোকটা সেদিকে খেয়াল না করে আনহাকে টেনে নিয়ে যায়। তখনি ইহান এসে লোকটার যে হাতে হাতে আনহাকে ধরে রেখেছে, সে হাতে কামর বসায়। লোকটা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। ইহান কামরে চামড়া ছুঁলে পুরো রক্ত বের করে দিয়েছে। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে লোকটা আনহার হাত ছেড়ে দেয়।
তৎক্ষনাৎ ইহান আনহার হাত ধরে বলে, ‘আনহা পালান।’
আনহাও আর অপেক্ষা করে না। ইহানের হাত ধরে দৌড় দেয়। কিন্তু ও-ই লোকটা ওদের পিছু ছাড়ে না। কিছুদূর যেতেই আনহা ইটে বেঁধে পড়ে প্রচন্ড ব্যথা পায় পায়ে। উঠে দৌড়াবার চেষ্টা করলে পারে না। ইহান পিছনে তাকিয়ে দেখে ওই লোকটা ওদের দিকেই আসছে। তাই ও আর অপেক্ষা করে না।
‘আনহা আপনি আমাকে ধরুন।’ আনহা ইহানের কাঁধে হাত রেখে উঠে দাড়াবার চেষ্টা করে। ইহান অনেক কষ্টে ওকে নিয়ে সামনে থাকা ট্রাকের পিছনে গিয়ে লুকায়।
লোকটা ট্রাকের কাছে আসতেই আনহা কুত করে কেঁদে ওঠে। কিন্তু শব্দ বের হওয়ার আগেই ইহান ওর মুখ চেপে ধরে। ফিসফিসিয়ে বলে, ‘কী করছেন আনহা? লোকটা জেনে যাবে!’
ইহানের ছোট হাতটা আনহার মুখে। দু’জন দু’জনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিপদগ্রস্ত দু’টি নিষ্পাপ প্রান। একে-অপরকে রক্ষা করায় যারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আচমকা লোকটার কর্কশ গলায় বিশ্রি ভাষা শুনতে পায় ওরা। ‘ও-ই জাউড়া পোলাপাইন গুলা তোরা কই?’
আনহা ভয়ে কান্না করে দেয়। ইহান আরও জোরে ওর মুখ চেপে ধরে। আনহা ভয়ে ইহানকে জড়িয়ে ধরে। ইহান আনহার পেট অবধি পড়েছে। ইহান আনহাকে সামলাতে না পেরে ছোট হাত দু’টো দিয়ে আনহাকে আঁকড়ে ধরতে চায়। আনহা নিজের কান্নাটা সামলাতে চাইছে। কিন্তু পারছে না।
কিছুক্ষণ পর…
ইহান আনহাকে ফিসফিস করে বলল, ‘আনহা লোকটা বোধহয় চলে গেছে।’
এ-কথায় আনহা ওকে ছেড়ে ভয়ার্ত চোখে উঁকি দেয়। হ্যাঁ, সত্যি লোকটি চলে গেছে। হাফ ছেড়ে বাঁচে ও। তখনি খেয়াল করে ইহানের কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। এখন বেশি না পড়লেও চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। আনহা নিজের ওড়না ছিড়ে ইহানের কপালে বেঁধে দেয়।
‘চল এখন বাড়ি যাই।’
‘কিন্তু আপনি তো পায়ে ব্যথা পেয়েছেন।’
‘তাতে কী? আমাকে ব্যথা পেতে দেখতে তো তোর ভালো লাগে। তাই তো মাইর খাওয়াস।’ অভিমানি কণ্ঠে বলল আনহা।
‘ইহান প্রত্যুত্তর না করে চুপ রইল। বলল, ‘আপনি একটু বসুন। আমি আগে দেখে আসি লোকটি গেছে কিনা।’
‘কিন্তু ইহান…’
আনহার কথা না শুনে ইহান বাইরে বের হয়। দেখে সত্যি লোকটি চলে গেছে। অতঃপর আনহাকে ধরে বাড়ির পথ দেখে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সাহানা মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে। বলেছিল ফিরতে দেরি হবে। তাই বলে এতটা। ৯টা বাজতে চলল। আনহার বাবাকে ফোন দিয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন তোলে নি। তাই সাহানা নিজেই আনহাকে খোঁজার জন্য যাবে ঠিক করল। বাইরে বের হতে যাবে, তখনি দরজায় নক পড়ে। প্রান ফিরে পায় সাহানা। ওনি দ্রুত গিয়ে দরজা খোলে। কর্কশ কণ্ঠে বলে, ‘এত দেরি লাগে…’
কিন্তু আনহা-ইহানের দিকে চোখ পড়তেই চমকে ওঠে। বাচ্চা দু’টো রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। ইহানের মাথায় আনহার পাতলা ওড়না। আর আনহা খুঁড়িয়ে আছে। ওনি উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কী হয়েছে তোদের?’
ইহান কিছু বলার আগেই মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যায়। অনেকটা রক্ত বেরিয়েছে। সাহানা দ্রুত ইহানকে কোলে তুলে নেয়। কাটা জায়গা পরিষ্কার করে পট্টি দিয়ে দেয়। অতঃপর আনহার দিকে নজর দেয়। মেয়েটা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে আছে।
‘কিরে আনহা কী হয়েছে?’
আনহা কাঁদতে কাঁদতে সাহানাকে সব বলে। কথাগুলো শুনে সাহানা শরীর শিউরে ওঠে। জড়িয়ে ধরে আনহাকে। আজ কী ঘটতে পারত মেয়ের সাথে ভেবেই কেঁপে উঠছে। ওনি দ্রুত আনহাকে গোছল করিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দেয়। তারপর দুধ গরম করে এনে আনহাকে খাইয়ে দেয়। ইহানকে বিছানায় শুইয়ে রেখেছে। ওর মায়ের কাছে ফোন দিতে হবে। তবে ইহানকে মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ দিচ্ছে সাহানা। আজ ছেলেটা না থাকলে কী অঘটন টাই না ঘটত!
তখনি কী একটা ভেবে মেয়ের হাত চেপে ধরে। বলে, ‘এই কথা কাউকে বলবি না আনহা।’
‘কিন্তু কেন মা?’
‘যা বলছি তাই। ইহানকেও বলে দেব কাউকে না বলতে। বুঝেছিস।’
মাথা নাড়ায় আনহা। সাহানা মেয়েকে জড়িয়ে দু’চোখের পানি ছেড়ে দেয়। মনে মনে বলে, ‘তুই বুঝবি না আনহা। এই কথা যদি তুই কাউকে বলিস কেউ মানতে চাইবে না তোর ক্ষতি হইনি। সবাই তিলকে তাল বানিয়ে তোর নিষ্পাপ জীবনে কালী লেপে দেবে। যা চাইলেও মুছে ফেলা সম্ভব নয়। দেখা যাবে তোর এই কথা দাগ হয়ে চিরদিন তোকে তাড়া করবে।’ কথাটা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন তিনি।
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন।]
ছোটবেলার কাহিনী খুব শীঘ্রই শেষ হবে। আগের মতো বড় করে দিতে পারছি না বলে সরি।
বিঃদ্রঃ এখানে ইহানকে কোনো সাইকো ক্যারেক্টার দেওয়া হয় নি। বাচ্চাদের শয়তানি নমুনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। 😑😑 যদি কেউ বলেন, বাচ্চারা ফেরেস্তা। তাহলে বলব, বর্তমান পিচ্চি ফেরেস্তা খুব খারাপ😒😒😒 অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।😐😐 কোনোদিন কোনো বাচ্চার ফেভারিট মানুষ হইতে নাই। বিশেষ করে প্রাইমারি লেভেলের বাচ্চাদের🤧🤧🤧
আর এটা ছোটবেলা। এখানে যে কাহিনী দেওয়া হয়েছে সেখানে লাভ-রিলেশন এরকম কিছু নয়। তাই কেউ বিকৃতভাবে ব্যাপারটা ভাব্বেন না। স্টোরির কাহিনীটা সেন্সেটিভ তাই বলে রাখা ভালো।
ধন্যবাদ…
#মেহের🍁