#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃস্পেশাল [সমুদ্র বিলাস]
লেখিকাঃমাহযাবীন
সমুদ্র বিলাসের শ্রেষ্ঠ সময়টি হয়তো রাত।আর যদি রাতটি হয় জোৎস্নাময় তবে এর মুগ্ধতা অবর্ণনীয়।রাতের নিস্তব্ধতা,ঠান্ডা বাতাসের আলতো করে ছুঁয়ে যাওয়া,সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে মন দুলে উঠা, আকাশের বুকে মস্ত বড় চাঁদের উপস্থিতি যা তার জোৎস্না দিয়ে পৃথিবীর অর্ধেকাংশের কুটকুটে অন্ধকার দূরীভূত করে এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করে তাপহীন মনোমুগ্ধকর আলো।সেই সাথে জোৎস্নার আলো যখন সমুদ্রের পানিতে প্রতিফলিত হয় তখন পানিগুলো দেখতে যেনো রাশি রাশি মুক্তোর দানা।
আফিম ও নাফিয়া উভয়ই সমুদ্রের কিনারা ধরে ধীরে ধীরে পথ চলছে।একটু পর পর সমুদ্রের পানি ঢেউ হয়ে এসে আলতো করে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাদের পা দু’টো।একে-অপরের আঙুলে আঙুল ঢুকিয়ে নিরবে হাঁটছে তারা।এমন মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি ও পরিবেশে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হাঁটার অনুভূতি প্রকাশের কোনো শব্দ আছে কি?
উহু!এ অনুভূতিটি শুধুই অনুভব করা যায়,ব্যাখা করা যায় না।কিছু বিশেষ অনুভূতি এমনই হয়,নামহীন ও বর্ণনাতিত। ধুকপুক করা হৃদয় ও লজ্জানুভূতি নিয়ে হাঁটার মাঝেই একটু পর পর তাকাচ্ছে নাফিয়া,আফিমের দিকে।আফিমের ঠোঁটে হাসি নেই তবে তার শান্ত চেহারা তার মনের প্রশান্তি ব্যক্ত করছে।আফিম হাঁটার মাঝেই হটাৎ থেমে যায়।নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-চলো পানিতে খানিকটা ভিজে আসি!
আফিমের কথায় অবাক হয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এই রাতে পানিতে?
-তো?(ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে আফিম)
-মোটেই না।আমার ভয় লাগে।
-তবে তো ভিজতেই হবে।(ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
নাফিয়া এর তীব্র অসম্মতি জানিয়ে কিছু বলে ওঠার আগেই আফিম তার হাত ধরে হাটু অব্দি পানিতে নিয়ে আসে।কাজটি এতোটাই দ্রুত করে আফিম যে নাফিয়া কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাতে সময় পায় না।হাটু সমান পানিতে এসে আফিম থামতেই নাফিয়া আফিমকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে।আফিমও জড়িয়ে ধরে নাফিয়াকে নিজের মাঝে।ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-আমার বুকে লেপ্টে থাকার সুযোগ আরো পাবে কিন্তু এসময়ের এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য টা মিস করলে আর নাও পেতে পারো।
আফিমের কথার কোনো উত্তর দেয় না নাফিয়া।সে ভয়ে আফিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই আছে।আসলে নাফিয়ার পানির আতংক আছে(ওয়াটার ফোবিয়া)।তাই জন্যেই এতোটা ভয় পাচ্ছে সে।আফিম ধীরে ধীরে নাফিয়াকে নিজের বক্ষ হতে উঠিয়ে শান্ত কন্ঠে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আমি আছি তো!তোমার কিচ্ছু হবে না।শুধু ঐ দিক টায় তাকাও।
ভালোবাসা এক অদ্ভুত রকমের অনুভূতি।এই অনুভূতিতে যেমন আছে বিশ্বাস,ঠিক তেমনই আছে ভরসা ও নির্ভরতা।আফিমের কথায় এক বুক ভরসা নিয়ে নিজের ভয়কে দূরে ঠেলে আফিমের বিপরীত দিকে ফেরে নাফিয়া।আহা,কি সুন্দর সেই দৃশ্য!আকাশে মস্ত বড় চাঁদ আর চাঁদের আলো পানিতে পরায় পানি জ্বলজ্বল করছে।সেই সাথে হাটু অব্দি পানিতে নামায় সমুদ্রের ঢেউয়ের পানির স্পর্শ মিলছে।ঠান্ডা বাতাস তো আছেই।মুহূর্তেই ভয় ভুলে একরাশ মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলো নাফিয়ার মন।হটাৎই পেটে কারো দু’হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে।আফিম পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।নাফিয়ার কাঁধে মুখ রেখে চোখ জোড়া বুজে নেয় আফিম।নাফিয়াও এর বিপরীত নয়।সেও নিজের চোখজোড়া বুজে নিয়েছে।উভয়ই সমুদ্রের এই সৌন্দর্যে অনুভূতির সাগরে ডুব দিচ্ছে।
এভাবেই অনেকটা সময় পার হবার পর আফিম নাফিয়কে বলে ওঠে,
-চলো ওদিক টায় যাওয়া যাক।
আফিমের কথায় সম্মতি দেয় নাফিয়া।উভয়ই পানি হতে উঠে আরো কিছুটা পথ চলে।হাঁটার মাঝেই নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমরা ফিরবো কখন?
নাফিয়ার প্রশ্নে তার দিকে তাকায় আফিম।অতঃপর বলে ওঠে,
-রাত টা এখানেই থাকছি।
আফিমের কথায় অবাক হয় নাফিয়া।এমন একটি বিশেষ রাত আফিম সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে!মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে যায় তার।কিন্তু তা প্রকাশ করে না সে।আফিম নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে তার মন খারাপ হওয়া টা উপলব্ধি করে।ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে সে বলে ওঠে,
-ঐ দিক টায় তাকাও।
আফিমের ইশারা অনুযায়ী সেই দিক টিতে তাকাতেই সে দেখতে পায় একটি ক্যাম্পিং তাঁবু।তাঁবুটির চারপাশটা এলইডি নেট লাইটস দিয়ে সাজানো।খুশিতে নাফিয়ার ঠোঁটে এক লম্বা হাসি ফুটে ওঠে।সে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বেশ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-আমি তাঁবুটির কাছে যাই?
ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার জন্যেই করা হয়েছে।
-উহু!আমাদের জন্য।
বলে আর দেরি করে না নাফিয়া।এক প্রকার দৌড়ে তাঁবুর দিকে এগিয়ে যায় সে।নাফিয়ার উচ্ছ্বাস দেখে বেশ ভালো লাগছে আফিমের।সে ঠোঁটে হাসি নিয়ে নাফিয়ার পেছন পেছন এগিয়ে যায়।
তাঁবুটির ভেতরে দু’জনের জন্যে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।একটি ছোটো ম্যাট্রেস বিছানো আছে এবং তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি।খুবই সুন্দর লাগছে নাফিয়ার কাছে তাঁবুটি।সে আফিমের কাছে এসে ঠোঁটে আনন্দের হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-এতোটা অনন্য না হলেও পারতেন,আফিম।বাসর রাতে জোৎস্না বিলাস তো অনেকেই করে কিন্তু সমুদ্র বিলাস ক’জনে করে?এতো অসাধারণ চিন্তা কোত্থেকে আসে আপনার মাথায়!
ঠোঁটে হাসি টেনে আফিম দু’হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।নাফিয়া চমকে আফিমের দিকে তাকায়।উভয়ই একে-অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আফিম ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-পছন্দ হয়েছে?
-অনেক বেশি।এই বিশেষ রাতটিকে সত্যিই আপনি ভীষণ বিশেষ করে দিয়েছেন যা আমি কখনোই আশা করেছিলাম না।
-তবে তো তোমারও কিছু করা উচিৎ আমায় বিশেষ অনুভব করানোর জন্য।(ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
এ কথায় নাফিয়ার মুখখানি লজ্জায় লাল হয়ে যায়।কিন্তু আফিম যেহেতু তার জন্যে এতোটা করেছে তবে তারও তো কিছু করা উচিৎ।নিজের মাঝে লজ্জাগুলোকে নিয়েই ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট আফিমের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় সে।আলতো এক স্পর্শ কপালে এঁকে দিয়ে আফিমের দুচোখে এবং গালেও ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় নাফিয়া।আফিম চোখ বুজে ভালোবাসা নিচ্ছে তার প্রিয়ার।গালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর পর নাফিয়া,আফিমের ঠোঁটের দিকেও অগ্রসর হয় কিন্তু একরাশ লজ্জা এসে বাঁধা দেয় তাকে।সে আর না এগিয়ে আফিমের বুকে নিজেকে লেপ্টে নেয়।নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ বুজে রেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তোলে আফিম।দু’হাতে শক্ত করে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-হাও আর ইউ ফিলিং,মিসেস.আফিম ইবনান?
আফিমের নেশালো কন্ঠস্বরে নাফিয়া ধীরে ধীরে এক তীব্র ঘোরে জড়িয়ে পরছে।হৃদয়ের স্পন্দন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার।সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
-জানি না তবে এক অন্য রকম ভালোলাগার অনুভূতি।
আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-পূর্বের দু’টি ধন্যবাদ তোলা ছিলো,মনে আছে?
-হু।
-কিভাবে ধন্যবাদ বলতে হয় শিখিয়ে দিয়েছিলাম!নাও গিভ মি থ্যাংকস ইন দ্যাট ওয়ে।[এখন আমাকে ওভাবে ধন্যবাদ দেও]
ধন্যবাদ বলার সেই পদ্ধতিটি মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় নাফিয়া।চোখজোড়া বুজে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁটে লজ্জা মাখা হাসি ফুটে ওঠে তার।ধীরে ধীরে আফিমের বক্ষ হতে মুখ উঠিয়ে তার চোখ পানে তাকায় সে।চেহারায় লজ্জা ও চোখে তার মাদকতা।জোৎস্নার আলোতে নাফিয়ার এমন মোহনীয় রূপ আফিমকে একটি ঘোরের মাঝে নিয়ে যাচ্ছে।সে ঘোর লাগা কন্ঠে নাফিয়াকে বলে ওঠে,
-ডু ইট ফাস্ট,মিসেস.আফিম ইবনান।
আজ আফিমের কোনো আবদারই ফিরিয়ে দিতে চায় না নাফিয়া।নিজের লজ্জাকে যথাসম্ভব সংযত করবার চেষ্টা চালিয়ে এই অসাধ্য কাজটি করবার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করছে সে।চোখ জোড়া বুজে তার ঘোড়ার গতিতে স্পন্দিত হওয়া হৃদয় নিয়ে কচ্ছপের গতিতে আফিমের ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিতে থাকে নাফিয়া।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাদের ওষ্ঠদ্বয় একে-অপরকে স্পর্শ করে।আফিমের ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ পেতেই নাফিয়ার শরীরে যেনো বৈদ্যুতিক শক লাগে।সে ছিটকে সরে আসে আফিমের থেকে।
আফিম অবাক হয়ে তাকায় নাফিয়ার দিকে।নাফিয়ার এমনটি করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে।
আফিমের থেকে সরে এসে নিজের লজ্জারাঙ্গা মুখখানি মাটির দিকে নুইয়ে রাখে নাফিয়া।তার হৃৎস্পন্দন কতোটা বেড়ে গিয়েছে তা তার নিঃশ্বাসের গতিই বয়ান করছে।
আফিম নাফিয়ার এতোটা লজ্জা পাওয়া দেখে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে নাফিয়ার দিকে।আফিমকে নিজের দিকে এগোতে দেখে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে নাফিয়া।ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।বিশেষ করে,আফিমের ঘায়েল করা চাহনি তার হৃদয়ে গিয়ে লাগছে।হটাৎ ই সে নিজের কোমরে আফিমের হাত জোড়ার স্পর্শ অনুভব করে।সাথে সাথে কেঁপে ওঠে সে।সেই সাথে কাঁধে আফিমের গরম নিঃশ্বাসও অনুভব করতে পারছে।আফিম পেছন থেকেই নাফিয়ার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে এক হেঁচকা টানে নাফিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।অনতিবিলম্বে নাফিয়ার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে নেয় আফিম।এভাবেই ধীরে ধীরে একে-অপরের সাথে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ে দুজনে।
প্রকাণ্ড খোলা আকাশের নিচে ও বিশাল সমুদ্রের কিনারায় জোৎস্নার আলোতে এক নব দম্পতি তাদের ভালোবাসার পূর্ণতার গল্প লিখছে।এ গল্পের পাঠক ঐ খোলা আকাশ,প্রবাহমান বাতাস,বহমান সমুদ্রের পানি এবং আকাশের বুকে বিরাজ করা সেই মস্ত বড় চাঁদটি।
চলবে
[বিয়ের পর নিজের সারনেম চেঞ্জ করে স্বামীর সারনেম লাগানো গুণাহ।যেমনঃনাফিয়া ইবনান।কিন্তু মিসেস.আফিম ইবনান বলা টা কোনো গুনাহ না।(আমার জানা মতে)]