আমার তুমি আছো পর্ব ৩
BSG_বাংলা সিরিজ গল্প
আচ্ছা এই কি সেই পিয়াস ভাইয়া যে কিনা আমার একটু কিছু হলেই বাড়ি মাথায় করতো? হ্যা সেবার যখন আমার পা কেটেগিয়েছিল তখন এই পিয়াস ভাইয়া সারা রাত আমার পা ধরে বসে কেঁদেছিলো। আর আজ সে আমাকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছে। হাত দুটো দেখে একটু মায়া হলো না পিয়াস ভাইয়া তোমার? তুমি তো জানো আমার শরীর থেকে রক্ত বের হলে আমি কেমন দূর্বল হয়ে যাই। এতো যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারি না গো। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ওয়াশরুমে গিয়ে হাত দুটো পানিতে ডুবিয়ে রাখলাম। আজ আমার চোখের পানিটাও বাঁধ মানছে না।
— আলো এই আলো কি হয়েছে রে? পিয়াস ওইভাবে চলে গেলো কেন?
আমি ভাবীর গলা শুনে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ট্যাপ বন্ধ করে তোয়ালে নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
— আলো সবকিছু ঠিক আছে তো? আর এইখানে কফি পড়ে আছে কেন! তোর চুড়ি গুলো এইভাবে ভাঙ্গলো কে!
আমি কি বলবো ভাবীকে বুঝতে পারছি না। কি করে বলি যে পিয়াস ভাইয়া এইসব করেছে। আমি ভাবীকে ওই জায়গাটা থেকে একটু পিছিয়ে নিয়ে আসি।
— ও,,তে,, মন,, কিছু না ভাবী,,, আ,,সল,, আসলে কফিটা পড়ে গেলো তো আর এই চুড়ি গুলো,,, চুড়ি গুলো,,।
— থাক আলো আর কিছু বলিস না আমি সব বুঝতে পারছি। তুই যখন সত্যিটা বলবিনা তখন আর বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলিস না।
আমি ভাবীর কথা শুনে ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। ভাবী আমার মাথায় হাত রাখলেন।
— আমি জানি না আলো পিয়াস তোর সাথে কেন এমন করছে? আমি যখন প্রথম এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছিলাম তখন তোর সাথে পিয়াসের সম্পর্ক কতো অন্যরকম ছিল। কতো কেয়ার করতো তোর। আর এখন বিশেষ করে লাস্ট তিনটা মাস ওর কি হয়েছে আমি কিছুই বুঝতেছিনা।
— আমি ও কিছু জানি না ভাবী কিছু জানি না। পিয়াস ভাইয়া তো আমাকে সহ্য করতেই পারছে না এখন।— আচ্ছা আর কাঁদিস না। নীচে চল নাস্তা করবি।
— ভাবী,,, ভাবী তুমি আমাকে কথা দাও এখনের ব্যপারটা তুমি খালাম্মাকে কিছু জানাবে না বলো?
— ঠিক আছে জানাবো না।
ভাবীর সাথে নীচে আসলাম। আমাকে আর ভাবীকে দেখে খালাম্মা এগিয়ে এলেন।
— কই ছিলি তোরা? আয় নাস্তা শুরু কর।
আমার হাত ধরে চেয়ারে বসালেন। আমার প্লেটে খাবার তুলে দিলেন।
— এই নে আলো তোর পচ্ছন্দের ছিট রুটি বানিয়েছি।
আমি খালাম্মাকে দেখে হাসলাম। খালাম্মা আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলো।
— আজকে তোকে আমি নিজের হাতে খাওয়াবো।
— হুম আলোকেই খাওয়াও আমি তো কেউ না।
ভাবী অভিমানের সুরে এভাবে বলাতে খালাম্মা মুচকি হাসি দিয়ে আমাদের দুজনকেই খাওয়াচ্ছেন।
— খুব খারাপ লাগছে রে কোন অনুষ্ঠান করতে পারলাম না।
— থাক না খালাম্মা পিয়াস ভাইয়াকে তুমি নয় পরে বুঝিয়ে বলবে।
— হ্যা মা আলো ঠিক কথা বলেছে পরে পিয়াস এর সাথে আমরা কথা বলবো এ ব্যপার নিয়ে। আর তাছাড়া বাবা আর ওর বড়ো ভাইয়া ওনারা ফিরে আসুক তখন দেখবে আমরা সবাই মিলে বললে ও রাজী হয়ে যাবে।
— হুম তাই হবে।
আমি বেশকিছুক্ষণ চুপ থাকলাম।
— খালাম্মা আমি বলছিলাম কি যখন কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না, আমাকে ভার্সিটি যেতে দিবে?
মানে আমি চাইছি পড়াশোনা টা কমপ্লিট করতে। আর তাছাড়া আর এক মাস পর আমার ফাইনাল পরীক্ষা তাই..।
— আলো তুই কি বলছিস। তুই পড়াশোনা করবি তাতে আমি অনুমতি দেওয়ার কে! আলো লেখাপড়া নিয়ে আমি কোন আপোষ করবো না তুই যা।
খালাম্মার কথা শুনে আমি তো আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
— ইউ আর সুপার খালাম্মা। আমি তাহলে আসছি।
একছুটে রুমে এসে আমার ব্যাগে পেন খাতা ঢুকিয়ে নিলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে নিলাম। সব কিছু পারফেক্ট। খালাম্মা যাওয়ার সময় গাড়ি নিয়ে যেতে বলছিলেন কিন্তু আমি না করে দিলাম। কারণ আমার রিকশায় করে ভার্সিটি যেতে বেশ লাগে।
ভার্সিটি তে আসতেই আমার বান্ধবী তানিয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো। হালকা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
— আমি খুব খুশি শুনলাম কাল না কি পিয়াস ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে হয়েছে? আমি তো আজকে তোকে ডাকতে গিয়েছিলাম তখন শুনলাম। তুই খুব ভাগ্যবতীরে,,, যা কে ভালোবাসলি তাকেই পেলি।
— আমাকে যে পিয়াস ভাইয়া ভালোবাসেনারে।তানিয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাত দুটো ধরলো।
— কি বলছিস তুই? মজা করছিস না কি রে! পিয়াস ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি।
— না রে ভালোবাসেনা। আমাকে পচ্ছন্দ করে না এখন আর। জানি না কেন!
— আমি জানি তোকে ভালোবাসে বলেই বিয়ে করেছে। তুই কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
তানিয়া আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে নিয়ে এলো ক্লাস রুমে। রুমে আসতেই আমাদের দিকে নেহা এগিয়ে এলো।
— কি রে আজ তুই ভার্সিটি আসলি যে? হিসাব মতো তোর তো আজকে বৌভাত!
আমি নেহাকে কি বলবো। কিছু তো একটা বলতে হবে। সত্যি টা তো বলা যাবে না। তানিয়াকে সব বলা গেলেও এই নেহাকে সব কিছু বলা যায় না। ও যেনো একটু অন্যরকম। আমি কিছুটা শান্ত হয়ে ধীর গলায় বললাম।
— বড়ো ভাইয়া, বাবাই ওনারা তো এখন দেশে নাই তাই ওনারা ফিরলে অনুষ্ঠান হবে।
নেহা আমার কথা বিশ্বাস করলো কি না জানি না তবে মুখ ভঙ্গি করে বললো।
— কি জানি ব্যপার বুঝলাম না। হুট করেই বিয়ে করলো। এখন আবার,,।
— আচ্ছা ছাড় না এসব, এক্ষুনি স্যার চলে আসবেন। বন্ধ কর এসব কথাবার্তা।
তানিয়া ধমকের স্বরে কথা গুলো নেহাকে বললে নেহা নিজের সিটে গিয়ে বসে। আমার পিঠে হাত রেখে আমাকে সান্ত্বনা দেয়।
স্যার এতোক্ষণ লেকচার দিয়ে গেলেও আমার কোনো কিছু কানে ঢুকছে না। আমি শুধু ভাবছি পিয়াস ভাইয়া কি করবে আমার সাথে!ভার্সিটির ক্লাস শেষ আমি আর তানিয়া হাঁটছি তখন নেহা এসে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো।
— কি রে আলো তুই কি একাই যাবি না কি?
— কেনো দেখতে পাচ্ছিস না আমি আছি তো!
— আমি সেটা বলছিনা তানিয়া। পিয়াস ভাইয়ার সাথে ওর তো যাওয়া উচিৎ এখন। তোর সাথে তো সবসময় যায়।
— পিয়াস ভাইয়ার কি আর কোন কাজ কাম নাই? বিয়ে করেছে বলে আলোকে নিয়ে সবসময় ঘুরবে।
তানিয়া আমার হাত ধরে নিয়ে নেহার সামনে থেকে বেরিয়ে আসলো।
— এই নেহাটা না বড্ড পাজী, সবসময় এর না তার পিছনে কাঠি করে যাচ্ছে।
— তানিয়া ছাড় না আমি নেহার কথা কিছু মনে করিনি তুই ছাড় না।
তানিয়া আর কিছু বলে না। আমরা দুজনে গল্প করতে করতে রাস্তার মোড়ে আসি। হঠাৎ তানিয়া একটা ছেলেকে দেখে আমাকে নিয়েই তার কাছে যায়।
— আরে তানভীর তুই? তুই কবে আসলি?
— আমি তো গত পরশু আসছি। তোদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোকে পিক করে নিয়ে এটসাথে চলে যাবো।— ওহ ভালো করেছিস। আলো এটা আমার কাজিন তানভীর সিঙ্গাপুর থেকে স্টাডি কমপ্লিট করে আসছে। আর তানভীর এটা আমার বেস্টফ্রেন্ড আলো।
— হায়।
— হ্যালো।
— চল তাহলে তোর বেস্টফ্রেন্ডকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসি। তোরা তো একসাথে যাচ্ছিলি।
— হুম ওর বাড়ি গেলে হয়তো এক পথে যাওয়া যেতো কিন্তু এখন।
— না ঠিক আছে, তিনিয়া তুই বাড়ি চলে যা আর আমি রিক্সা ধরে চলে যাচ্ছি।
আমার কথা শুনে তানিয়া আমাকে বললো,,
— তানভীর না আসলেও তোকে একাই যেতে হতো। আমাকেও এখন থেকে একাই যেতে হবে। তুই চল তোকে একটু এগিয়ে দি।
আমাদের কথা শুনে তানিয়ার কাজিন তানভীর বললো ও যাবে আমাদের সাথে। আমি ভাবলাম অনেকটা লেট যখন হয়ে গেছে বাস ধরে নি। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালাম, তানিয়া বললো সে না কি আমাকে তুলে দিয়ে তবে যাবে আর এটা সে প্রতিদিন করবে। বিকাল হয়ে গেছে, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, আর আমার চুলগুলোও উড়ছে, আমি বার বার আমার চোখে মুখে পড়া চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিচ্ছি কিন্তু আবার সেই একি। হঠাৎ তানভীর আমার চুলে হাত দিলো।
— সো বিউটিফুল,, আলো তোমার চুল গুলোতো বেশ সুন্দর কোমড় অব্দি। আই লাইক ইট।
আমি একটা হাসি দিয়ে ওর কাছ থেকে সরে এলাম। বাস আসতে আমি বাড়িতে চলে এলাম।আমি আসতেই খালাম্মা আমাকে ধরে নিলেন।
— দেখো কে এসেছেন?
আমি দেখলাম ছোট আব্বু আর ছোট আম্মু এসেছেন। আমি দৌড়ে ছোট আম্মুর কোলে বসে পড়লাম।
— আমার আম্মু টা কেমন আছে?
— একটুও ভালো না। তোমরা ভীষণ পচা। সারাদিন আমাকে একটা কল দাও নি। জানো সকালে তোমাদের কথা ভেবে আমি কতো কষ্ট পাচ্ছিলাম!
আমি গাল ফুলিয়ে কথা গুলো বলে উঠতে গেলে ছোট আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
— রাগ করছো কেনো তোমার ছোট আম্মু তো বললো বিকালে তোমাকে গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে।
আমরা সবাই গল্প করছি ভাবী মিষ্টি চা নিয়ে এসে আমাদের সাথে বসলেন। অনেক হাসছিলাম আর মজা করছিলাম। হঠাৎ ছোট আম্মু বলে উঠলেন।
— আলোর মধ্যে আপুর মিল পাওয়া যায় তাই না। ওর হাসিটা তো আপুর মতোই লাগে।
এমন কথায় আমার কষ্ট লাগলো সবাই কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে গেল। নিরবতা ভেঙে ছোট আব্বু বলে উঠলো।
— এবার তাহলে আমরা আসি। ওই তো পিয়াস বাবা চলে এসছে।
পিয়াস ভাইয়া ছোট আম্মু আব্বুর সাথে কথা বললো। আমি কতো করে বললাম ওদেরকে থাকার জন্য কিন্তু ওরা চলেই গেলো। মন খারাপ হয়ে গেল। সবাই চলে গেলে আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নি। তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করি তা না হলে পিয়াস ভাইয়া চলে এসে আমাকে দেখলে রাগারাগি করবে।শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে নিয়ে মুখ তুলে দেখি পিয়াস ভাইয়া দরজা লক করছে। ভয়ে শাড়ির আঁচলের খুঁট ধরে নি। পিয়াস ভাইয়া আমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে ভয়ে পিছোতে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ি। পিয়াস ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
— আজকে ভার্সিটি গিয়েছিলি তাই না আলো?
— জী,, জ্বী,, ভাই,, ভাইয়া,,।
আমার সব চু্লটাকে নিয়ে গোল করে হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে নেয়। আমার ভয় হচ্ছে এই বুঝি টেনে ধরে।
— তোকে কতোবার বলছি আলো চুল খুলে বাইরে যাবি না।
বলেই আমার চুলটা টান দিয়ে ধরে। আমি সামান্য ব্যথায় চোখ বুজিয়ে ফেলি। আমি দু হাত দিয়ে পিয়াস ভাইয়ার হাত দুটো ধরি।
— আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া ছেড়ে দাও। আর চুল খুলে বাইরে যাবো না।
পিয়াস ভাইয়া আমার চুলটাকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে টান দেয়। আমার চোখে পানি চলে আসে।
— আলো এই নিয়ে বিশবার তোকে বলেছি। কিন্তু সেই এক কথা বলে বারবার ভুল করছিস।
আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার চুল দুটো টেনে ধরে। আমি ব্যথায় ছটফট করলেও ছাড়ে না।
— তোর চুলের প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে তাই না রে! আর তাই জন্যই তোকে বারবার মানা করা সত্ত্বেও সেই এক কাজ করিস। আলো তোর চুলটাই যদি না থাকে তাহলে তো কেউ কোন প্রশংসা করবে না তাই না!
— পিয়াস ভাইয়া ছেড়ে দাও না গো আমাকে। আমি আর এই ভুল করবো না। প্লিজ ছেড়ে দাও পিয়াস এমন করো না। পিয়াস ছাড়ো আমাকে।
আমার চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ ওর কানে গেলো না। আমার হাজার কাকুতি শুনলো না। চোখের পানিও তার মন গলাতে পারলো না। চিৎকার করতে করতে একটা সময় ফুঁপাতে শুরু করলাম। পিয়াস ভাইয়া আমার চুলেতে এলোমেলো কাঁচি চালিয়ে পাঁচ মিনিট পর কাঁচি ফেলে দিয়ে আমাকে টেনে তুললো। আমার মুখের ওপর পরা চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে গেলো।
#চলবে ……….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(দয়া করে নেক্সট নেক্সট বলে না চিল্লিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করতে পারেন তো। এতে আমাদের লেখক লেখিকাদের লেখার প্রতি উৎসাহ বাড়ে 🙂)