আমার পুতুল বর পর্ব : ১১+১২
লেখিকা : আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
কি হয়েছে জানু এখানে এভাবে বসে আছো কেনো?( চারপাশে তাকিয়ে দুষ্টুমি করে বললো ) আমার জন্যে অপেক্ষা করছিলে বুঝি ?
কিন্তু সামনের ব্যাক্তিটির কোনো হেলদোল নেই। এক মনে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আর কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করছে ,,,,,,
আরশি আর সূর্যকে এক সাথে বের হতে দেখে অভ্র তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। মুচকি হাসি দিয়ে সূর্যের উদ্দেশ্যে বললো,
~কেমন আছেন ভাইয়া? কোথাও যাচ্ছেন নাকি?( আরশির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে )
~ হ্যাঁ একটু শপিং মলে যাচ্ছিলাম কিছু দরকারি জিনিস কিনতে।
~ওহ আচ্ছা! আরশি চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাকিরা অপেক্ষা করছে ।
আরশি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কি করবে বুঝতে পারছে না । একবার সূর্যের দিকে তাকাচ্ছে তো আর একবার অভ্রর দিকে।
অভ্র বাইকে বসে আসতে এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো – “কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? উঠো! উঠে বসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
~ আরশি কিছু বলবে তার আগেই সূর্য গম্ভীর গলায় বললো–ও আমার সাথে যাবে। মানে গাড়িতে করে। আমিও একই মলে যাচ্ছি। তাই ও আমার সাথেই আসুক। তুমি বাইক নিয়ে চলে এসো।
~ আরশি তুমিতো আমাকে আগে বলোনি যে তুমি তোমার ভাইয়ার সাথে যাবে?
সূর্যর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
~ আমি ওর ভাই নই আমার একটাই বোন। আর আগে বলেনি তো কি হয়েছে এখন তো বলছে যে আমার সাথে যাবে।
~ কিন্তু ভাইয়া আরশি তো কিছুই বলেনি এখন পর্যন্ত।
সূর্য আরশির দিকে তাকালো। অভ্র ও তাকালো। আরশি কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু সূর্যের চোখ গরম করা দেখে অভ্র কে মিন মিন করে বললো,,
~ আপনি চলে যান ভাইয়া আমি ওনার সাথেই যাবো।
সূর্য্য বাঁকা হাসলো। আর অভ্র অবাক হলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সূর্য আরশির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে, চলে গেছে।
শপিং মলেও কাজের বাহানায় অভ্র আরশির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু বারবার সূর্য তাকে বাধা দিয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে এতে আরশিও কিছু বলছেনা। এমনকি যতক্ষণ তারা শপিংমলে ছিল সূর্য আরশির হাত ধরে রেখেছিলো। এটা দেখে অভ্রর ভীষণ রাগ হয়েছে। তাই সে রেগে ওখান থেকে বেরিয়ে ভার্সিটি তে ফিরে এলো।
আরশির কাছে আজ সবটা স্বপ্ন মনে বলে মনে হচ্ছে। এও কি সম্ভব?
~ ভার্সিটি যাবেতো? চলো ড্রপ করে দিচ্ছি। মিহি তুমিও এসো।
মিহি কিছুটা অবাক হয়েই মাথা নাড়লো। আর আরশি এখনো ভাবছে সূর্যের হয়েছেটা কি?
ওদের ভার্সিটিতে এসে সূর্য্য গাড়ি থামালো। আরশি আর মিহি নেমে দাড়ালো।
~ থ্যাংক ইউ ভাইয়া পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
~ ওয়েলকাম । আরশি!! ছুটি হলে আমি নিতে আসবো। দেরি হলে ওয়েট করবে। কিন্তু কোথাও যাবে না।
কথাটা বলে সানগ্লাস পরে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আরশি আর মিহি হতভম্ব হয়ে গেছে। আজ সূর্যের মনের ভিতর কোন সূর্য্ উঠলো যে আজ আরশির প্রতি এতটা অধিকার দেখাচ্ছে??
আরশি অবাক হলেও কিছুক্ষণ পর মুচকি হাসলো। আজ ও অনেক খুশি। আজ ওর পুতুল বর ওর সাথে কথা বলেছে, সাথে করে মলে নিয়ে গেছে, কলেজে দিয়ে গেলো, আবার বলে গেছে নিয়ে ও যাবে।
~ হ্যাঁ রে আরশি ? আমি সব ঠিক দেখছি তো? (আরশি বাকা চোখে তাকাতেই) না মানে তোর রাগী, গম্ভীর পুতুল বর আজ তোর এত কেয়ার করছে ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না এই আর কি!! হে হে হে (মেকি হাসি দিয়ে)
আরশি চোখ উল্টে বললো,, ~বাজে বকা বন্ধ কর চল ক্লাসে যাই। এই বলে পিছনে ফিরতেই দেখল অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। আরশির বেশ খারাপ লাগছে তখন অভ্র কে ওভাবে না করে দেওয়ায়। কিন্তু কিছু করার ছিলনা। সূর্যর কথা না শুনলে আবার রেগে যেতো হয়তো আজকের মতো এমন সুন্দর দিনটাও পেতো না। এটা ভেবে দিক তাকিয়ে একটু হাসলো। চোখ তুলে দেখল অভ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ অস্বস্তি আর জড়োতা নিয়ে বলল,,
~ ভাইয়া আসলে আজকে সকালে যা হলো আই মিন আপনাকে এতক্ষণ ওয়েট করালাম কিন্তু বললাম আপনার সাথে যাব না তার জন্য আম রিয়েলি সরি।।। অভ্র কিছু না বলে তাকিয়ে আছে। এবার আরশির অস্বস্তি আরও বেশি হচ্ছে। অভ্র বেশ কিছুক্ষন পর বলল,,,
~ সূর্য ভাইয়া কি শুধু তোমার কাজিন?
অভ্র যে এমন একটা প্রশ্ন করবে আরশি তা ভাবতে পারিনি।। তাই অনেকটা চমকে উঠলো। পাশ থেকে মিহি শুকনো কাশি দিলো।আরশি আমতা আমতা করে বলল,,
~ হ.. হঠাৎ এই প্রশ্ন? উনি তো আমার কাজিন ই।
~ হ্যাঁ তাইতো কা জি ন ই তো ওরা। ( কিছুটা টেনে কথাটা বললো মিহি )
আরশি ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। মিহি চুপ করে গেলো।
~ কিন্তু আমার কেনো যেনো তা মনে হলোনা ।
~ কি কেনো ভাইয়া?
~ না যখন মলে ছিলো সারাক্ষণ তোমার সাথে ছিলো মানে হাত ধরে ছিলো, কি কি নিবে আর কি নিবে না তা ডিসাইড করে দিচ্ছিল তাই,,,,
~ ঐসব তো ভাই হিসেবে করেছে। ( মিহি আগ বাড়িয়ে বললো )
মিহির দিকে একবার তাকিয়ে,,,
~ হ্যাঁ তাই ।
~ ভাই.? তাহলে তখন ভাই বলাতে রেগে গেলেন কেনো? আবার বললেন– আমার একটাই বোন কিন্তু আরশি তো ওর বোন ই হয়। আপন নয়তো কাজিন বোন।
এখন এই প্রশ্নের উত্তর আরশি কি করে দিবে? ওতো নিজেই জানেনা সূর্য হঠাৎ এভাবে রিয়েক্ট কেনো করলো। আরশি কে চুপ থাকতে দেখে আর অভ্র কে ওর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহি তাড়াহুড়ো করে বললো,,,
~ এই আরশি ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তোর তো আবার নোটস কমপ্লিট করার কথা ছিলো। ওইটা করতে হবে তো চল।
আরশি বোকা বনে গেলো মিহির কথায়। ~ আমি? নোটস কি,,
আরশিকে ইশারায় চুপ করতে বললো।
~ বলিস না ভুলে গেছিস , তোকে নিয়ে কি করবো আমি! চল আরশি কে ইশারা করে সামনে এগুতে বললো।
আরশি কনফিউজড হলেও মিহির কথা মতো কাজ করলো । ওরা দ্রুত ওখান থেকে চলে গেলো।
অভ্র ওদের হাবভাব বেশ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। ওবেশ বুঝতে পারছে ওরা ওর করা প্রশ্নটাকে এড়িয়ে গেছে। সূর্য–আরশির সম্পর্ক আর পাঁচটা কাজিনদের মতো নয় । কিছু একটা রহস্য তো আছে।
অভ্র চুপচাপ বট গাছের নীচের বেঞ্চে বসে পড়লো। ওর বার বার আরশি আর সূর্যের ঐ সময়ের বিহেভের কথা ভেবে চলেছে। ওর মনে একটা চাপা রাগ বাসা বাঁধছে। তখনই ওর পাশে নিধি এসে বসলো। আর নিজের মতো বকবক করা শুরু করে দিলো।
~ আরে এই বলবে কি ভাবছো? আমাদের বিয়ে শাদী বাচ্চাকাচ্চার কথা ভাবছো?( অভ্রকে জোরে ঝাঁকিয়ে )
এবার অভ্রর এতক্ষন জমে রাখা রাগটা তরতর করে বেড়ে গেলো । প্রচন্ড রেগে নিধিকে ধমক দিয়ে বললো,,,
~ কি সমস্যা তোমার! এক কথা কতদিন বলতে হবে যে আমাকে জালানো বন্ধ করো। আমাকে ইরিটেট করা কবে বন্ধ করবে তুমি? আর মেয়ে মানুষ তুমি একটু তো লজ্জা থাকা উচিত ।। একটা মেয়ে হয়ে তোমার থেকে বড়ো একটা ছেলেকে বাজে মেয়েদের মতো ডিস্টার্ব করে যাচ্ছো? কোনো ক্লাস নেই তোমার? তোমার কারণে যদি আমার আর রেহানের ফ্রেন্ডশিপ ভাঙ্গে আমি তোমায় ক্ষমা করবো না। আজকের পর থেকে আমাকে আর জ্বালাবে না তুমি। বুঝতে পেরেছো? বাজে মেয়ে একটা।।।
নিধির দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কান্নার কারণে কথাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্টে বললো,,,,
~ হা,, হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। আর সরি আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্যে। আর কখনো করবো না। কিন্তু আমি বাজে মেয়ে নই। আমি নই বাজে মেয়ে। কথাটা বলে দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
অভ্র বুঝতে পারলো অতিরিক্ত করে ফেলেছে। এতোটা খারাপ ব্যাবহার ওর সাথে করা উচিৎ হয় নি। শিট কি করলাম এটা। নিজের চুল দু হাত দিয়ে টেনে।
#চলবে
আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব: ১২
~ আমি তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো দিম্মা । তোমার প্রিয় মানুষটার আর কোনো কষ্ট আমি হতে দিবো না। কিন্তু খুব শিঘ্রই সকল সমস্যার সমাধান আমাকে করতে হবে। আমি আর পালিয়ে বাঁচতে পারছি না।
গাড়ির স্টেরিং এ মাথা ঠেকিয়ে এসব ই ভাবছিলো সূর্য। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো।
~ হেলো! হ্যা ন্যান্সি বল!
~ তুই কোথায় সূর্য? যাওয়ার সময় তো একবার বলে গেলিনা। আর এখন পর্যন্ত একটু ফোন করে জানালি না যে কোথায় গেছিস?
~ ওয়েট ওয়েট ওয়েট ন্যান্সি আমি কখন কোথায় যাই না যাই সেটা আমি কাউকে বলিনা। আর তুই তো আগে কোনদিন এসব জিজ্ঞেস করিস নি আজ হঠাৎ কি হলো যে এরকম ভাবে জিজ্ঞেস করছিস?
~ তুই ও তো আগে কখনো এরকম বিহেভ করিস নি। আমার না মনে হচ্ছে তুই বাংলাদেশ এ এসে পাল্টে গেছিস। আগের মতো নেই তুই।
~ শোন! আমি সবসময় ই এমন ছিলাম। এখন জাস্ট একটু টেনশন এর মধ্যে আছি। তাই তোর এসব কথা এখন নিতে পারছি না। বাড়িতে ফিরে কথা হবে। বায়।
~ আরে সূর্য…. ফোন কেটে দিলো! কেনো করছিস তুই এমন সূর্য? তোকে নিয়ে আমার খুব ভয় হয় যদি কখনো আমার থেকে দূরে চলে যাস ?? সুজানা আপুকে আমি বলতে শুনেছি,,,
” মা এবার ভাই আর আরশির মধ্যে সব টা ঠিক হয়ে গেলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমরা সবাই মিলে একসাথে আনন্দের সাথে থাকতে পারবো। আর পুতুল বউ তার পুতুল বরকে নিয়ে সুন্দর মতো সংসার করতে পারবে। ইয়ে।”
এসবের মানে কি? আপু কেনো এসব বলছিলো? তোর সাথে ঐ মেয়েটার কি সম্পর্ক?? আর আজ তুই এমনই বা করলি কেনো? তোকে আমি আমার থেকে দুরে যেতে দেবনা সূর্য কখনো না। চোখের কোটরে জমে থাকা পানি গুলো মুছে।
ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে সূর্যের জন্য অপেক্ষা করছে আরশি আর মিহি। ” হ্যা রে ভাইয়ার আসতে কতক্ষন? আমি আবার বুক শপে যাবো বই কিনতে। ”
~ বললো তো ওয়েট করতে আর কিছু…. ঐতো এসে গেছেন।
সূর্য গাড়ির ভেতর থেকেই আরশি কে উঠে আসতে ইশারা করলো।
~ মিহি আমি আসছি রে। তুই সাবধানে যাস। বুক শপ তো উল্টো রাস্তায় নাহলে তোকে আমার সঙ্গে করেই নিয়ে যেতাম।
~ আরে সমস্যা নেই। টেনশন নিস না। যা ভাইয়া ওয়েট করছে।
আরশি মাথা নাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।
~ বেল্ট টা বাঁধো।
~ হ্যাঁ?
~ সিট বেল্ট!
~ নিজের দিক ভালো, ওহ অকে।
আরশি সিট বেল্ট বাঁধতেই সূর্য গাড়ি স্টার্ট দিলো।
এতক্ষন ওদের দেখে মুচকি হাসছিলো মিহি।
~ ওদেরকে একসাথে কত্ত কিউট লাগে।😘 ওরা যেনো সবসময় এরোকম একসাথেই থাকে আল্লাহ।।
ওরা যেতেই মিহি বুক শপের দিকে হাটা দিলো। বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর ওর মনে হচ্ছে একটা বাইক ওকে ফলো করছে। নিজের সন্দেহ দুর করতে পিছনে ফিরলো। দেখলো সত্যিই একটা বাইক দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কে বসে আছে তা চেনা যাচ্ছে না কারণ মাথায় হেলমেট পড়া।
~ এক্সকিউজ মি !! আপনি কি আমাকে ফলো করছেন? বাইকে বসা লোকটা কোনো প্রতুত্তর করলো না। ” ওহ হেলো! জবাব দিচ্ছেন না কেনো?” এবার ও কিছু বললো না লোকটা। মিহি লোকটার সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে রেগে বললো–
মাঝরাস্তায় একটা মেয়ের সাথে ফাজলামো করা হচ্ছে? লোক জড়ো করে না এমন মার খাওয়াবো যে জীবনেও ভুলবেন না।।। আজব তো! কথা বলছেন না কেন কানে কালা নাকি? কথা বলবেন না তো? আপনাকে তো আমি!! বাইকে বসা ছেলেটি তারপর হেলমেট খুলে ফেললো। মিহি হা করে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগের থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিটার জন্য রাগ এবার যেনো দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।
~ আপনি! আপনি অমাকে ফলো করছিলেন? কেনো করছিলেন? সেদিন কিছুই কথা মিস করে গেছিলেন বুঝি যা আজ পূরণ করতে এসেছেন?
~ বাইকে বসো।
~ (চোখ বড় বড় করে) কেন আপনার তেতো কথা শোনার জন্য আমার বাইকে কেন বসতে হবে ? এখানেই বলুন আমি শুনছি।
~তুমি বড্ড বেশি কথা বলো। বাইকে বসতে বলেছি চুপচাপ বসো।
~আমি আপনার বাইকে উঠবো না। আর কেন উঠবো কেহ হন আপনি আমার? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাকে যেতে হবে।
~তুমি সোজা কথায় উঠবে না তো? এ মাঝরাস্তায় তুমি কি চাও তোমাকে কোলে করে বাইকে উঠাবো?
~ (মিহি চোখ দুটো রসগোল্লার মত করে ফেললো) কি বলছেন টা কি এসব?
~ আমাকে যদি আরেকবার বলতে হয় বাইকে উঠার কথা তাহলে আমি এমনই করব।। ভেবে দেখো তুমি কি করবে তোমার হাতে ৫ সেকেন্ড সময় আছে। মেয়েহি হতবাক হয়ে গেছে। বলে কি এই লোক?
~ ৫,৪,৩,২,.
~ আ আ উঠছি।
~ গুড।
মিহি রেহানকে বকতে বকতে বাইকে উঠে বসলো।
~ এখানে কেন এনেছেন আমাকে? রেহান মিহিকে লেকের পাড়ে নিয়ে এসেছে।
~ বসো তারপর বলছি। বেঞ্চের দিকে ইশারা করে।
~ না আমি বসবো না আপনি আমাকে বলুন আপনি, আমাকে এখানে কেন এনেছেন?
রেহান বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,,,
~ আসলে মিহি আমার তোমাকে আসলে কিছু বলার ছিলো..
~ তো বলুন।
~ আসলে সেদিন আমার তোমার সাথে ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি তার জন্য আই এম,, আম রিয়েলি সরি। সেদিন আমি আদিবকে তোমাকে ওসব বাজে কথা বলতে শুনেছিলাম। আমার আগে থেকেই আদিব কে পছন্দ ছিল না তার উপর তোমাকে ঐ কথা গুলো বলায় কেন জানিনা আরো বেশি রাগ হয়েছিলো। সঙ্গে তোমার উপর ও রাগ হয়েছিল। তুমি কেনো ওর কথা শুনছিলে? রাদার বলবো কথা বলছিলেই বা কেন ঐ রাস্কেল টার সাথে,, তাই রাগের মাথায় তোমায় ওসব বলে ফেলেছি। সরি। ( এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো )
মিহি অবাক হয়ে রেহানকে দেখছে । রেহান ওকে সরি বলছে ভাবা যায় এগ্লা??? মিহি কে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রেহান থতমত খেয়ে গেলো।
~কি হয়েছে এভাবে কি দেখছো আমি কি ভুল কিছু বললাম??
~ ভাবছি!
~হাহ?
~ ভাবছি যে নাক উচু ইগো ওয়ালা ধলা বান্দর আমাকে সরি বলছে? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
~ ও গড!! মিহি আমি সিরিয়াস কিছু বলছি তোমায়! আর তুমি ইয়ার্কি মারছো?
~ ইয়ার্কি কোথায় মারলাম? আমার যা মনে হয়েছে তাই বলেছি।
~ উফফ! এবার বলো?
~ কি বলবো?
~ আমি যে এতক্ষন বললাম শুনো নি?
~ হ্যাঁ শুনেছি।
~ তো এবার তোমার মতামত বলো! আই মিন আমার সরি একসেপ্ট করেছো?
~ (গম্ভীর ভঙ্গিতে) আপনি আমাকে সেদিন অকারণে অনেক কথা বলেছেন তাই এমনি এমনি আপনাকে আমি ক্ষমা করব না। সো, সরি নট এক্সেপ্টেড।
~ আমি তো ক্ষমা চাইলাম। এবার আর কি করতে হবে? ( বেশ অসহায় ভাব নিয়ে বলল )
মিহির দারুন মজা লাগছে রেহানের এমন অসহায় অবস্থা দেখে। বেশ হয়েছে এতোদিন অনেক জ্বালিয়েছে এবার আমার পালা।
~ কি হলো? কিছু তো বলো!
~ আমি যা বলবো তাই করবেন?
~ উম ওকে। যা বলবে তা,,, তাই করবো। ( কিছুটা নার্ভাস হয়ে )
~ না জানি এই পাগলের কারখানা কি কি করতে বলে আমাকে। এখন যদি বলি করবোনা তাহলে সরি অ্যাকসেপ্ট করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সরি একসেপ্ট করবে না আমি শান্তি পাবো মহা মুশকিল । ( মনে মনে )
~ তো শুনুন এখন থেকে আগামী ২৪; ঘণ্টা আমি যা যা বলবো আপনাকে তাই করতে হবে ! রাজি?
~ ২৪ ঘণ্টা? মানে কি কি করতে হবে?
~ আমি যা বলবো তাই। বলুন রাজি কিনা?
~ ( এ কোথায় ফেঁসে গেলাম আমি। কি কি করতে হবে আমায় আবার ) আচ্ছা রাজি। সো সরি এক্সেপ্টেড?
~ আগে ২৪ ঘন্টা আমার কথা মতো কাজ করুন তারপর।
~ ( চোঁখ উল্টে ) ওকে ফাইন। করবো তুমি যা যা বলবে।
মিহির তো খুশীতে লাফাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সামনে বাঁদরটা আছে বলে নিজেকে সামলে নিলো। এবারে বুঝবে বাচ্চু এই মিহি কি জিনিস।
~ চলুন।
~ কোথায়?
~ আমি বুক শপে যাবো বই কিনতে। এমনিতেই আপনার জন্যে দেরি হয়ে গেছে। এবার জলদি চলুন। তারপর আমার বই সমেত আমায় বাড়ি পৌঁছে দিবেন।
(বাইকে বসে) আর হ্যা খুব তেষ্টা পেয়েছে আমি আইস্ক্রিম খাবো। আপনি খাওয়াবেন।
~ (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) ওকে। ও বেশ বুঝতে পারছে মিহি ওর উপর পুরনো বদলা নিবে। কিন্তু কিছু করার নেই।
বাইক স্টার্ট দিলো। মিহি রেহানের এক কাধের উপর হাত রাখতেই চোঁখ ঘুরিয়ে ওকে দেখলো।
~ হোয়াট? পরে যাবনা আমি? আপনি কি চান পরে আমার হাড় গোড় ভাঙ্গি? ( চোখ ছোট ছোট করে )
রেহান কিছুনা বলে সামনে তাকিয়ে চোখ উল্টে হতাশার সহিত মাথা নাড়িয়ে বুক শপের উদ্দেশ্যে চললো। আর মিহি বিজয়ীর হাসি হাসলো।
এদিকে অভ্র পুরো ভার্সিটিতে নিধিকে খুঁজে চলেছে। মেয়েটাকে অনেক হার্ট করে ফেলেছে। একবার সরি বলা দরকার কিন্তু ওকে কোথাও খুঁজেই পাচ্ছেনা। ক্লাসে, কেন্টিনে কোথাও নেই। ফোঁনটাও ধরছে না। রেহান কে যে ওর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে সেই উপায় টাও নেই। এখন নিজের উপরই ভীষণ রাগ হচ্ছে। কার রাগ কাকে দেখালো সে।
নিজের ঘরে বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছে নিধি। আজ অভ্র ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। ও জানে ও অভ্রকে একটু বেশিই জ্বালাতন করে। কিন্তু কি করবে মানুষটাকে ভালোবাসে সে। আর ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার জন্যই আজ নিজের সব লাজ লজ্জা ভুলে এভাবে অভ্রর পিছে পরে আছে। এতে অভ্র ইরিটেট হয়। রাগ ও করে । রাগ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এভাবে কথা বলবে? ওকে বাজে মেয়ে বলবে??( দুই হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ) বুকে হাত গুজে নাক ফুলিয়ে বললো- “আমি বাজে মেয়ে, আমার কোন ক্লাস নেই তাইতো? ঠিক আছে! আমি আর আপনার কাছে যাবনা মিস্টার অভ্র। আপনি নিজে আসবেন আমার কাছে আর আপনার করা ব্যবহারের জন্য সরি ও বলবেন। তখন বুঝাবো আমাকে এতগুলো কথা শুনানোর ফল।
#চলবে