আমার পুতুল বর পর্ব: ৯+১০
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
~অভ্র শুনছেন??
অভ্র ওর ক্লাসের দিকে যাচ্ছিল, পিছন থেকে পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে তাকালো । তাকাতেই যেন চেহারায় একরাশ বিরক্তি আর অস্বস্তি ফুটে উঠল। বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো–
~ তোমায় কতবার বলেছি সিনিয়র আমি তোমার রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবে। কিন্তু তুমি মানতেই চাও না।
~ সরি। কিন্তু কি করবো বলো ওগো- হ্যাঁ গো, শুনছো বলে তো ডাকতে পারবো না আর ভাইয়া বলতেও পারবোনা তাই নাম ধরেই ডাকি। কিন্তু তুমি চাইলে ওগো- হ্যাঁ গো, শুনছো সব ডাকতে পারবো। ( দাত কেলিয়ে)
~ ইউ আর জাস্ট ইমপসিবল!! এই তোমার ক্লাস নেই? এখানে কি করছো?
~ তোমাকে দেখতে এসেছি। খুব মিস করছিলাম। ( হেলে দুলে জবাব দিলো )
~ আচ্ছা? এই রেহান!!
নিধি চমকে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলো।
~ কি হয়েছে? নিধি!! তুই এখানে কি করছিস?
~আব আমি এখানে আমিতো!! ( তুতলিয়ে )
~ কি হয়েছে বল!
~ আমি বলছি ও আসলে তোকে নাকি খুব মিস করছিলো তাই দেখা করতে এসেছে। ( বাকা হেসে বলল)
~ লাইক রিয়েলি!!! নিধি আম সারপ্রাইজড! এমন দিন আমার জীবনেও আসবে আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি। (নাটকীয় ভঙ্গিমায় কথাটা বলল রেহান)
নিধি মনে মনে অভ্রর চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করছে।।।
~ এই তুই চুপ করতো!! আমি মোটেও তোর সাথে দেখা করতে আসিনি আমি তো এই দিক দিয়ে…. উম লাইব্রেরী যাচ্ছিলাম। পথে অভ.. অভ্র ভাইয়ার সাথে দেখা হলো।
~ ওহ তাই বল নাহলে আমিতো ভাবলাম আমাদের নিধি কোথাও হারিয়ে গেছে কিছুক্ষন পর মাইকিং করে খোঁজ চালাবো। অভ্র আর রেহান অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আর নিধি দুটোকে গালি দিতে দিতে নিজের ক্লাসে গেলো।
~হ্যালো! এক্সকিউজ মি নটি, আজ তোমার হটি ফ্রেন্ড আসে নি?
আজ আরশি আসেনি তাই মিহির ক্লাস করতে ইচ্ছে করছিল না বলে ক্যান্টিনে বসে বসে চিপস খাচ্ছিলো। এমন সময় কারো কথার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো,, কিন্তু মানুষটি কে তা দেখতেই মিহির গায়ে জ্বালা ধরে গেল।
~ মুখ সামলে কথা বলো আদিব!! আমার সামনে এসব বাজে শব্দ একদম ব্যবহার করবে না।।
~উপস!!! সরি! তা আমার প্রিয়তমা কোথায় আজ আসে নি কেনো?
~ তা জেনে তোমার কি কাজ? আর ও তোমার প্রিয়তমা নয়। সো বাজে কথা বন্ধ করো আর যাও এখান থেকে।
~ আরে রাগছো কেন আধিঘরওয়ালি!!! প্রিয়তমা নেই তো কি হয়েছে? প্রিয়তমার প্রিয় বান্ধবী তো রয়েছে!!( শয়তানি হাসি দিয়ে )
মিহি রাগে ফুঁসছে।। রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই…
~ কি হয়েছে আদিব ? হসপিটালের কথা কি খুব মনে পড়ছে? ( শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে প্রশ্ন করলো রেহান )
~ না ভাই তবে তোকে খুব মিস করছিলাম। তুই তো আমার শালা হতে হয়েও হলিনা। তাই শালা শালা ভাব টা বড্ড মিস করছি। তা তোর সুন্দরী বোন কোথায়? আমি এখনো ফ্রী আছি চাইলে তোর বোন কে আমায় দিয়ে, আমার হতে হতে হওয়া শালা থেকে একেবারে শালা হয়ে যা।।( বিশ্রী ভাবে হেসে )
অভ্র হঠাৎ রেগে আদিবের নাক বরাবর ঘুষি মারলো। আদিব নাক ধরে নিচে বসে পড়েছে।
~ কিরে ভাই বললাম রেহানের বোনকে কিন্তু তোর এতো জ্বলছে কেনো। তোদের আবার কোনো সিন চলছে নাকি ? রেহান আদিবের পায়ে জোরে লাথি মারলো।
~ এর আগেও তুই আমার বোনের দিকে খারাপ নজর দিয়েছিলি যার শাস্তি ও তোকে পেতে হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শাস্তি টা কম হয়ে গেছে এবার একেবারে ছয় মাসের জন্য হসপিটালে পাঠাবো তোকে।। আদিব কে ঘুষি মারতে গেলে অভ্র আটকে ফেলে।
~ ছেড়ে দে রেহান! ও তোকে রাগানোর চেষ্টা করছে। ঠাণ্ডা হ! নাহিদ যা ওকে ওর গ্যাং এর কাছে দিয়ে আয়। নাহিদ আদিবকে তুলে নিয়ে গেলো।
~ রাস্কেল একটা!! (চেয়ারে লাথি মেরে) মিহি ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। এতক্ষন এখানে কি নিয়ে মারপিট হলো তা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে। কিন্তু কাহিনি টা কি? মিহির হুশ ফিরলো তীব্র ঝাকুনিতে।।
~ আহ! কি করছেন? লাগছে আমার
~ লাগুক। কি দরকার ছিলো ওই লোফার টার সাথে কথা বলার?? ওর বাজে কথা শুনতে খুব ভাল লাগে তোমার তাই না ?( মিহির বাহু আরো জোরে চেপে ধরে)
~রেহান কি করছিস ছাড় ওকে। রেহান থেকে মিহিকে ছাড়িয়ে নিল।। মিহি ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল রক্ত জমে আছে।
~আমি রেহানের হয়ে সরি বলছি মিহি। ও আসলে এখন প্রচন্ড রেগে আছে। তুমি বসো তোমার হাতে বরফ ডলে দিচ্ছি বেশ খানিকটা লাল হয়ে গেছে।
~ (চোখ মুছে )তার দরকার নেই ভাইয়া আমি ঠিক আছি!! আর আদিব এখানে আরশির খোঁজ করতে এসেছিলো আমার সাথে কথা বলতে নয়। কথাটা বলে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
~কেন এমন করলি তুই? ওর তো কোনো দোষ ছিলনা। আর তুই তো জানিস বদমাইশ টা কেমন!! তাও শুধু শুধু মেয়েটা কে কষ্ট দিলি। রেহান চেয়ারের হাতলে ঘুষি মেরে চলে গেলো।
সুজানা!! সূর্য্য কি বললো? আজও নিচে নামবে না!!
সুজানা মাথা নিচু করে ফেললো। অহনা কেঁদে দিলো।
আরিয়া অহনা কে সামলাচ্ছে। সুরাজ আর আফিফ হাসান হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আরশি একটু দূরে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছে। ন্যান্সি, রিক আর রোজ ও চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে। ওরা জানেনা কি হচ্ছে। কিন্তু বুঝতে পারছে ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস।
~ আমাকে ক্ষমা করে দিও দিম্মা কিন্তু আমি কি করবো আমি চাইলেও যে সবটা মেনে নিতে পারছিনা। কেনো করলে আমার সাথে এমনটা? আমাকে এক অদৃশ্য শিকলে বেধে রেখে চলে গেলে? বড্ড অভিমান জমেছে তোমার উপর। তাইতো আজ নিচে তোমার মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হচ্ছে জেনেও আমি সেখানে বরাবরের মতো অনুপস্থিত।। কেনো যাবো আমি বলোতো? আমার সাথে তো অন্যায় হয়েছে। তুমি করেছো অন্যায়। প্রথমে আমাকে ভাসিয়ে নিজেও সমুদ্রের অতলে ডুবে গেলে।।। কথাগুলো বলে দুর আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো।
আরশি এক মনে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। আর নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
~কেনো সব এমন হয়ে গেলো ভালো নানুই?
সব তো ঠিক ছিলো কেনো সেদিন তুমি ওমন করলে? যদি ঐ ঘটনা আমাদের জীবনে না ঘটতো তাহলেই বোধয় ভালো হতো। আজকের দিনটায় হয়তো সবাই একসাথে থাকতো।। পুরনো কিছু স্মৃতি মনে হতেই মনটা বিষিয়ে উঠলো।
পার্কে আনমনে হাঁটছে মিহি। রেহানের আজকের করা ব্যাবহার টা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। কেনো ওর সাথে এভাবে কথা বললো? ওর অন্যায় টা কি ছিলো? রাগের থেকে বেশী কষ্ট হচ্ছে তার।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদাস হয়ে দূরে তাকিয়ে রইলো তাকিয়ে রইলো।
নিস্তব্ধ পরিবেশে একা রাস্তায় হেঁটে চলেছে রেহান।
~ আজ আমি এমন কেনো করলাম? কি হয়ে গেছিলো হঠাৎ আমার? কেনো ওকে আবিদের সাথে কথা বলতে দেখে রেগে গিয়েছিলাম। আর কেনোই বা আদিবের ওকে ঐসব কথা বলার জন্য ওকে কষ্ট দিলাম। ( চোখ বন্ধ করে মিহির কান্নারত মুখ ও লাল হয়ে যাওয়া হাত টার কথা মনে করলো। ) তারপর রাস্তার ওপর পাশে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে
আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব:১০
সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে এক ধ্যানে চিন্তায় মগ্ন রিক আর রোজ। তাদের চিন্তার মূল বিষয় আরশি আর সূর্যের মধ্যে কাজিন ব্যাতিতো আর্ কি সম্পর্ক রয়েছে। কাল সূর্যের দিম্মা যাকে সূর্য সব থেকে বেশি ভালোবাসতো তার মৃত্যুবার্ষিকী গেলো কিন্তু সূর্য একবারের জন্যেও নিচে নামলো না!! উল্টো সারাদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো। বাড়ির সকলে বেশ অদ্ভুত আচরন করছিলো। এর পিছনে কারন টা কি?? আর আরশি ঐ বা কেনো কাদছিলো এভাবে? সুজানা আপু ওইদিন কি বললো? আরশির বর সূর্য? কিন্তু কি করে? সূর্য তো এমন কিছু কখনো বলেনি। আর এতোদিন আপুরাও কেউ কিছু বলে নি কেনো?
এসব চিন্তায় দুজনে বিভোর হয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষন পর এতো প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে রিক আর রোজ দুজনেই দুজনের দিকে অসহায় ভঙ্গিমায় তাকালো।
~~এই রিকি, রোজি কি ভাবছিস তোরা? আমার নতুন প্রোফাইল পিকটা কেমন হয়েছে বলনা???
রিক আর রোজ ন্যান্সিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিজেদের ভাবনায় মশগুল। ন্যান্সি কোন উত্তর না পেয়ে এবার ওদের জোরে জোরে ঝাঁকাতে শুরু করলো। রিক আর রোজ এবার চরম বিরক্ত হলো ন্যান্সির প্রতি।
~ এই তোর সমস্যা কি? দেখছিস না কিছু একটা ভাবছি বারবার ডিস্টার্ব করছিস কেনো? ( রিক )
~ তুই দিনে কতবার তো প্রোফাইল চেঞ্জ করিস? আমরা যদি বলি খারাপ হয়েছে তুই কি তা শুনবি? শুনবি না তো!! তো খামোখা জিজ্ঞেস করে আমাদের ডিস্টার্ব কেন করছিস? শান্তিতে একটু ভাবতে দে। ( রোজ )
~ এমন বকছিস কেনো? কি এমন খারাপ কথাটা বললাম আমি? আর এতো কি ভাবছিস ? মনে হচ্ছে যেনো নিউটনের চতুর্থ সূত্র আবিষ্কার করার চিন্তায় আছিস।
রিক আর রোজ ন্যান্সির দিকে কটমট করে তাকালো।
~ ওকে ওকে সরি!! ইউ গাইস ক্যারি অন। আমি আমার পিক সূর্যকে দেখাচ্ছি ও বলবে কেমন হয়েছে ( মুখ ভেংচি দিয়ে )।
ওদের কথার মাঝে আরশি তাড়াহুড়া করে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পরে যাচ্ছিলো। ভয়ের কারনে আরশি এক চিৎকার দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে ফেলেছে। কিন্তু ঠিক সময়ে ওর বাহু কেউ আকড়ে ধরে যার ফলে আরশি পরা থেকে বেঁচে যায়। নিজের বাহুতে কারো ছোঁয়া পেয়ে আরশি পিট পিট করে চোখ খুললো। কিন্তু চোখ খুলে দেখলো সূর্য ওর এক বাহু ধরে রেখেছে। আরশির তো চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা। ও ভাবছে ও কি স্বপ্ন দেখছে নাকি এটা বাস্তব? নিজেকে কেমন ঘোরের মধ্যে মনে হচ্ছে! কিন্তু কারো বাজখাই ধমকে নিমিষেই ঘোরটা কেটে গেলো।
~এই মেয়ে দেখে চলতে পারোনা? আর তুমি কি ক্যাঙ্গারু নাকি? এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছিলে কেন? হাত-পা ভেঙ্গে বিছানায় বসে থাকার ইচ্ছা হয়েছে নাকি? যদি হয়ে থাকে তাহলে কষ্ট করে সিঁড়ি থেকে পড়তে হবে না আমাকে জানিও আমি নিজেই তোমার হাড়গোড় ভেঙে দেবো। ইডিয়ট একটা।
আরশি এতটাই অবাক হয়েছে যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তার নজর সূর্যের ধরে থাকা ওর বাহুর দিকে।
~ কি হলো কিছু বলছোনা কেনো? আর সকাল সকাল সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছো?
আরশি এদিক সেদিক তাকাচ্ছে । আসলে ওর ভয় এবং অস্বস্তি দুটোই হচ্ছে। যার সাথে এতটা বছর কোনো প্রকার কথা বলেনি হঠাৎ করে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। ভীষণ জড়তা কাজ করেছে।
~ কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি। আনসার মি ড্যাম ইট!! ( দাঁতে দাঁত চেপে আরশির বাহু একটু শক্ত করে ধরে ।।
~ ঐ আ.আসলে আজকে কলেজের আসন্ন ফাংশন এর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে যেতে হবে। অভ্র ভাইয়া অনেকক্ষণ যাবৎ নিচে অপেক্ষা করছে । আমার দেরি হয়ে যাওয়ায় এভাবে মানে তাড়াহুড়ো করে নামছিলাম। ( ভয়ে কাচুমাচু হয়ে কথাটা বললো )
~ কে? অভ্র ? ঐদিন ঘুড়তে গেছিলো যে আমাদের সাথে?
~ (আড় চোখে তাঁকিয়ে) মাথা দুলালো।
সূর্যর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
~ শপিং করবে তাইতো? চলো আমিও মলেই যাচ্ছিলাম তোমাকেও নিয়ে যাবো। আর ওকে চলে যেতে বোলো।
আরশি হতবাক হয়ে গেলো। কি বলছে টা কি উনি? উনি আমাকে শপিং করাতে নিয়ে যাবেন? আমাকে!! এও সম্ভব?
~ কি হলো কথা কানে যায় নি চলো।
~ কিন্তু ভাইয়া অনেকক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছিলেন এখন কি করে না করি?
সূর্য চোখ গরম করে আরশির দিকে তাকালো। আরশি নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এমন কেনো করছে লোকটা। আজ একসাথে কয়টা ঝটকা খাবো আমি?😑
এদিকে ওদের দুজনের দিকে ছয় জোড়া চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে সেদিকে ওদের কোনো খেয়াল নেই।
আরশির চিৎকারে অহনা, আরিয়া আর সুজানা ছুটে এসেছিলো। এসে রিককে জিজ্ঞেস করেছে– কি হয়েছে আরশি চিৎকার করলো কেনো?দেখলো রিক, রোজ আর ন্যান্সি ড্যাব ড্যাব করে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে ওরাও তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। আর কিচ্ছু বলতে পারলোনা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ওরা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
~ এই আরিয়া আমি কি ঠিক দেখছি ? সূর্য আরশিকে ওভাবে ধরে রেখেছে?😳
~ হ্যাঁ আবার বলছে ওকে শপিং করাতে ও নাকি নিয়ে যাবে।😵 আমাকে কেউ চিমটি দে রে আমার যে বিশ্বাস হচ্ছে না।
~ আমার ও না।
সুজানা দুজনকেই জোড়ে চিমটি দিলো।
~আহ! কি করছিস টা কি চিমটি দিলি কেন?
~ উফফ জ্বালিয়ে ফেললো।
~ তোমরাই তো বললে তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না তাই চিমটি কাটতে।। আমি তো তাই করলাম।
~ চুপ কর বদমাইশ!! দেখতে দে ওখানে কি হচ্ছে।
সুজানা চুপ করে আবার ওদের দিকে তাকালো।ওর আজ বেশ আনন্দ হচ্ছে। ফাইনালি ওরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে।
সূর্য আরশির বাহু ছেড়ে আগে আগে সিড়ি দিয়ে নেমে এলো। দেখলো সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
~ হোয়াট?? এভাবে কি দেখছো?
~ বাবা আমার তুই ঠিক আছিস তো? শরীর খারাপ করে নি তো? ( সূর্যের কপালে হাত দিয়ে চেক করে )
~ উফফ! মা কি শুরু করলে তুমি? কী হবে আমার? আমি একদম ঠিক আছি।
আরশিকে এখনও দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবার এক ধমক দিলো। সূর্যের ধমকে আরশি সুর সুর করে নিচে নেমে এলো।
~ চলো এবার। দেরি হচ্ছে। মা, খালামনি আসছি।
সূর্য আগে আগে আর আরশি সবার দিকে একবার অসহায় ভাবে তাকিয়ে ওর পিছন পিছন প্রায় দৌঁড়ে বেড়িয়ে গেলো।
ওরা তিনজনই বেশ খুশি হলো। অহনা আর আরিয়ার তো চোখে পানি চলে এসেছে। ওরা আজ সূর্যের মাঝে আরশির জন্য অধিকারবোধ দেখতে পাচ্ছে। দু বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। আর সুজানা ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
রিক আর রোজ ওদের যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওরা সিওর কিছুতো একটা আছে ওদের মধ্যে। ওদের সম্পর্ক কাজিন সিস্টার ব্রাদার এর মতো নয়। তাহলে ওদিন সুজানা আপু যা বলছিল তা কি ঠিক??
আর এদিকে ন্যান্সি,,, আরশির প্রতি সূর্যের এমন অধিকারবোধ দেখে রাগে ফুসছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবছে এতে রাগ করার কী আছে? ওরা তো ভাই বোন। আর বোনের প্রতি ভাইয়ের অধিকার দেখানো টা স্বাভাবিক। কিন্তু কেনো যেনো সব স্বাভাবিক মনে হলেও কোথাও একটা অস্বাভাবিকতা রয়ে গেছে। আর সূর্যের ফ্যামিলির সবার এমন রিয়্যাকশন দেখে ওর আরো খটকা লাগছে।
#চলবে