আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪০

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪০

~ সুজি ইয়ার! এরকম মলিন মুখে বসে আছিস কেনো? এবার দেখতে পারিস নি তো কি হয়েছে, আবার আসলে দেখে নিস।
~ আমি কি কিছু বলেছি?
~ বলা লাগবে কেনো? তোর মন যে এই কারনেই খারাপ হয়ে আছে আমি তা জানি। এখন বল কি করলে তোর মন ভালো হবে?
~ কিচ্ছু করতে হবেনা। আমি ঠিক আছি।
~ আচ্ছা?? ওয়েট
মাহির সুজানা কে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো। প্রথমে বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও এক সময় হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। সুজানার হাসি দেখে মাহিরের মুখে ও হাসি ফুটলো। সুজানা মাহির কে থামতে বলছে। মাহির থামতেই নিজের পাশের জায়গা দেখিয়ে ইশারা করে শুতে বললো। মাহির সুজানার পাশে শুয়ে পড়লো।
~ এভাবেই হাসতে থাক। তোর হাসি মুখ দেখে আমি অভ্যস্ত।
~ তুই থাকতে আমার মন কি কখনো খারাপ হতে পারে!!
~ না একদম না। আমি কখনো তোকে কষ্ট পেতে দেবো না।
সুজানা মিষ্টি করে হাসলো। মাহির ওকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। সুজানা সেটা বুঝতে পেরে বললো,,,,
~ তুই কি আমাকে কিছু বলতে চাস?
~ হ. হ্যাঁ। কিন্তু তুই কি করে বুঝলি?
~ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে!! এবার বল কি বলতে চাস।
মাহির উঠে বসলো। সুজানা ও উঠে বসলো। মাহির সুজানার এক হাত ধরে বললো,,,
~ বাবা আমার বিয়ে দিতে চাইছেন তার ফ্রেন্ডের মেয়ের সাথে।
সুজানা থমকে গেলো। নিজের হাত মাহিরের হাত থেকে ছুটিয়ে নিতে চাইলে মাহির আরো শক্ত করে ওর হাত আকড়ে ধরলো।
~ সুজি আগে আমার কথাটা পুরো শোন। দেখ বাবা যে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি ভাবতেই পারিনি। বাবাতো মেয়ের বাড়ির লোকের সাথে কথা বলে সবটা পাকা করে রেখেছিলেন। আমি এই ব্যাপারে আরো পরে জানতে পারি। তখন আমি বাবার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে গেছিলাম। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি। বাবাকে আর্জেন্টলি সুইজারল্যান্ড যেতে হয়েছে ইম্পর্টেন্ট কাজের জন্য কবে আসবেন সেটা ঠিক করে বলতে পারছেন না। কিন্তু আমি ঠিক করেছি যে বাবা আসলে বাবাকে এই বিয়ের ব্যাপারে বলবো।
~ আঙ্কেলের মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। এর চেয়ে বিয়েটা করে নিলেই তো পারিস। বয়স তো কম হয় নি।
~ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে সুজি? তুই আমাকে অন্য একজনকে বিয়ে করতে বলছিস!!
~ হ্যাঁ বলছি। আর এখানে সমস্যাটা কোথায় আমি বুঝলাম না। ( মুখ অন্যপাশে ফিরিয়ে নিয়ে)
মাহির সুজানাকে নিজের দিকে ফিরালো।
~ আমি অন্য একজনকে বিয়ে করলে তোর সত্যি কোনো সমস্যা হবে না? (সুজানা মাথা নামিয়ে রেখেছে। ) আমার দিকে তাকা সুজি।
সুজানা তাকাচ্ছে না তাই মাহির জোর করে নিজের দিকে তাকাতে বাধ্য করলো।
~ এবার বল! আমি এই বিয়েটাতে মত দিবো। করবো অন্য একজনকে বিয়ে। আমার পুরো জীবন তার নামে করে দিবো। এতে তোর কোনো সমস্যা নেই তো?
সুজানার কিচ্ছু বলছে না। ওর চোখ ছলছল করছে। ঠোঁট দুটো কাঁপছে। মাহির হালকা হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। সুজানা চুপচাপ মাহিরের বুকের সাথে মিশে রইলো।
~ আমি জানি তোর কষ্ট হবে। আমাকে তুই অন্য করো সাথে কখনো সহ্য করতে পারবি না। আর না আমার পক্ষে অন্য কাওকে বিয়ে করা সম্ভব। তাই আমি বাবাকে জানিয়ে দিবো যে আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।
বেশ কিছু সময় দুজনেই চুপচাপ বসে রইলো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। সুজানা মাহিরের শার্টের বোতাম ঘুরাতে ঘুরাতে জিজ্ঞেস করলো,,,
~ আঙ্কেল যদি জিজ্ঞেস করে কেন এই বিয়েটা করবি না তখন কি বলবি?
~ যা সত্যি তাই বলবো।
সুজানা মাহিরের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,,
~ কোন সত্যি?
~ আমার পাত্রী তাদের ঠিক করতে হবে না। আমি নিজেই নিজের জন্য পাত্রী ঠিক করে রেখেছি। সুজানা বাকা চোখে মাহিরের দিকে তাকালো। মাহিরের মুখে দুষ্টু হাসি।
~ পাত্রী? কে সে?
~ দেখবি?
সুজানা মাথা দুলালো। মাহির ওর পাশ থেকে উঠে একেবারে রুমের বাইরে চলে গেলো। সুজানা হা হয়ে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
~ ব্যাপারটা কি হলো? কোথায় গেলো ও? ওর কি এখানের কাওকে পছন্দ হয়েছে, আর তাকেই আনতে গেছে? ( সুজানা মন খারাপ করে বসে রইলো )

অভ্র আর রেহান ভ্রূ কুচকে মিহি আর নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের এভাবে তাকানোর কারণ মিহি আর নিধি ফেরার পথে ও রিক আর নাহিদের সাথে চিপকে আছে। যা ওদের কাছে ভীষণ অসহ্য লাগছে। অনেকক্ষণ ধরে ওদের হাসি ঠাট্টা, হাত ধরাধরি ওরা পিছন থেকে দেখে যাচ্ছে। এক সময় মিহি রিকের নাক টেনে দিলো। এটা দেখে রেহানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। ও সোজা গিয়ে রিক আর মিহির মাঝে দাড়িয়ে গেলো। মিহি আর রিক অবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
~ রেহান তুমি হঠাৎ এভাবে এলে কেনো?
~ আসলে আমার এই লালমরিচের সাথে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার আছে। আলাদা ভাবে।
মিহি রেহানের দিকে ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে বললো,,
~ আপনার আবার আমার সাথে কিসের ইম্পর্ট্যান্ট কথা!!
রেহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
~ সেটা ইম্পর্টেন্ট কথা বলার পরেই বুঝতে পারবে।
আবার রিকের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,,
~ ইম্পর্ট্যান্ট কথা,, আলাদাভাবে।
রিক ওকে বলে ওদের পিছনে হাঁটতে লাগলো।

অভ্র রেহানের কাজ দেখে হেসে দিলো। ও বেশ বুঝতে পারছে ও মিহি কে কিসের ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে। হাসি মুখ করে নিধির দিকে তাকাতেই ওর মুখের হাসি কুতুব মিনার পালালো। নিধি নাহিদের এক হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে হাঁটছে। হয়তো টায়ার্ড হয়ে গেছে তাই। কিন্তু ওর এই কাজ অভ্রর মোটেও ভালো লাগলো না। ও ঝড়ের গতিতে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। নিধিকে নাহিদের থেকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো। নিধি চোখ বড় বড় করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। আর নাহিদ অভ্রর হঠাৎ আগমনে চমকে গেলো।
~ কি হয়েছে অভ্র ভাইয়া?
এতক্ষন যা ও অভ্রর মাথা ঠিক ছিলো কিন্তু নিধির মুখে ভাইয়া শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। দাঁত কটমট করে বললো ,,,,
~ আমি তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি? এতো আবেগ নিয়ে ভাই ডাকছো কেনো? তোমার ভাই ঐদিকে আমি তোমার ভাই নই। আরেকবার ভাই ডাকতে শুনলে খবর আছে তোমার। নিধি হা করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। এক সময় তোকে ভাই না ডাকার জন্য বকা দিতো। আর আজ যখন ভাই ডাকলো তখন ও বকা দিলো।
~ অভ্র কি হয়েছে, চটে আছিস কেনো?
~ নিধির সাথে আমার দরকারি কথা আছে। তুই একটু প্লিজ এখনের জন্য রিকেকে সঙ্গ দে।
নাহিদ আর কি বলবে হেলতে দুলতে রিকের পাশে চলে গেলো।

রিক নাহিদকে ওর পাশে দেখে জিজ্ঞেস করলো,,
~ তুমি এখানে এলে যে!
~ হুম। অভ্র বললো ওর নাকি নিধির সাথে দরকারি কথা আছে। তাই।
~ স্ট্রেঞ্জ! রেহান ও একি কথা বললো । ওর নাকি মিহির সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। আলাদা ভাবে।
~ অ্যা! ব্যাপারটা কি হলো বলোতো। এই দুই ফ্রেণ্ড কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে ওদের সাথে।
~ আই ডোন্ট নো।

মাহির গেছে তো গেছেই আর আসার নাম নেই। সুজানা এবার আস্তে আস্তে খাট থেকে উঠে রুম থেকে বের হতে নিলেই মাহিরের সাথে ধাক্কা খেলো।
~ আরে কোথায় যাচ্ছিস!
~ তোকে খুঁজতে বের হচ্ছিলাম। তুই তো সেই গেলি আর আসার নাম নেই।
~ আমি তো তোকে আমার পাত্রী দেখানোর ব্যবস্থা করতে গেছিলাম।
~ আচ্ছা! তো কোথায় তোর পাত্রী দেখা।
~ দেখাচ্ছি, দেখাচ্ছি। আগে তুই এদিকে আয়।
মাহির সুজানার চোখ রুমাল দিয়ে বেঁধে দিলো।
~ আরে কি করছিস! চোখ বাধলি কেনো?
~ আমার পাত্রী অনেক স্পেশাল তো তাকে দেখার জন্য একটু কষ্ট তো করতেই হবে। চল।
~ কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস বলবি তো!!
~ তুই চলতে থাক !!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here