আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪৩

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪৩

অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সূর্য আরশি কে ছেড়ে দিলো। আরশি মাথা নামিয়ে রেখেছে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে গাল দুটো। ঠোঁটে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। সূর্য আলতো করে আরশির ঠোটেঁ আঙুল ছুঁয়ে দিলো। তারপর একটু সরে এলো।

~ আরে তোরা এখানে! আর আমরা তোদের পুরো কটেজে খুঁজে ফেলেছি। ( রিক )
~ আপু কই?
~ রুমেই আছে। বের হয় নি আর। ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো মাহির )
রিক মাহিরের কাধেঁ হাত রেখে বললো,”ইটস ওকে এভরিথিং উইল বি ফাইন। ”
মাহির হালকা হাসার চেষ্টা করলো।
~ ওকে সো আমরা যেটা নিয়ে কথা বলবো বলে এখানে একত্রিত হয়েছি সেটা আগে বলি। ( নাহিদ )
~ ইয়াহ কাম বসে কথা বলি।

রেহান কয়েকটা চেয়ার নিয়ে এলো। সূর্য গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়লো সাথে আরশি কে টেনে নিয়ে এসে নিজের পাশে বসালো। আরশি এখন ও মাথা নামিয়ে রেখেছে।
মিহি আরশির পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,,
~ কি হয়েছে আরশি? চুপ করে মাথা নামিয়ে রেখেছিস যে? সবাই আরশির দিকে তাকালো।
আরশি মাথা নুইয়েই বললো,,
~ কিছু হয় নি। আমি ঠিক আছি। তোরা ডিসকাশন চালু কর।
নিধি এক হাত দিয়ে আরশির মুখ উচুঁ করলো।
~ তোমার ফেস এতো লাল হয়ে আছে কেনো! শরীর খারাপ লাগছে?
~ একি ঠোঁটে এমন রক্ত জমাট বেঁধে আছে কেনো?
আরশির একটু আগের কথা মাথায় আসতেই আরো লজ্জা পেলো। হাত দিয়ে ঠোঁট ঢেকে ফেললো। আমতা আমতা করে বললো,,,
~ ক-কিছু হয় নি।
সূর্য মুখ টিপে হাসছে আরশির লজ্জা পাওয়া দেখে।
রেহান একবার আরশি কে দেখলো তারপর সূর্যের দিকে তাকিয়ে ওর হাসি দেখে যা বুঝার তা বুঝে গেলো। নিজেও মিট মিট করে হাসতে লাগলো। অভ্র রেহানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। এক ভ্রু উচুঁ করে জানতে চাইলো ওর এই হাসির কারণ কি। রেহান অভ্র কে ইশারায় বুঝাতেই অভ্র ওদের দুজনের দিকে একাবার মলিন মুখে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে রাখলো।
মিহি আরশির ঠোট থেকে হাত সরিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান ওকে থামিয়ে দিলো।
~ এতো কথা বলো কেনো তুমি? ওর কি হয়েছে না হয়েছে তা বুঝার মতো বয়স তোমার হয় নি। তাই চুপ করে থাকো।
~ আজব তো! আমি কখন বেশি কথা বললাম? এমন করেন কেনো আমার সাথে? আর বয়স হয় নি মানে কি? আমি কি বাচ্চা নাকি!
~ হাতে পায়ে বড়ো হলেই তাকে বড়ো বলে না। এর জন্য ঘটে বুদ্ধি থাকা লাগে। যা তোমার নেই।

রিক ফিক করে হেসে দিলো। অভ্র ও মাথা নামিয়ে নিঃশব্দে হাসছে।

~ ( দাঁতে দাঁত চেপে ) আপনি কি আমাকে বোকা বলতে চাইছেন?
~ এটা বুঝতে ও তোমার এতক্ষন লাগলো! তোমাকে যতটা বোকা ভেবেছিলাম তুমি তো তার ও উর্ধ্বে!
মাহির হাসতে হাসতে রেহানের কাধ চাপড়ে দিলো।
~ ভাইয়াআআআ!!! ( চিৎকার করে )
~ আহ মিহি! সামনেই তো আছি এমন চেচাচ্ছিস কেনো?( কানে হাত দিয়ে )
~ তুমি আমার চেঁচানো টা শুনলে আর এই ধলা বান্দর যে আমাকে বোকা বললো সেটা শুনতে পাও নি?
~ হ্যাঁ শুনলাম তো। ভূল কি বললো?
~ মানে! তুমিও আমাকে এভাবে বলছো? আমি বুঝলাম না আমি ভূল টা কি বললাম! এই আরশি বল না প্লিজ। ( কাদো কাদো হয়ে)
আরশি নিজের লজ্জা পাওয়া এক সাইডে রেখে মিহি আর রেহানের ঝগড়া দেখছিলো। কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে এরা। মিহির ডাকে ওর দিকে তাকালো। মেকি হাসি দিয়ে বললো,,,
~ মিহি বাদ দে না। রেহান ভাই! আমরা বরং আপ্পি আর মাহির ভাইয়া কে নিয়ে আলোচনা করি। ঐটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
~ হ্যাঁ সেই ভালো আমি এমনিতেও এখানে কি হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। ( রোজ )
~ আমিও না। ( ন্যান্সি )
~ এজ এক্সপেকটেড ! বুদ্ধির পরীক্ষায় তোরা আর কম কিসে!!! ( রিক )
~ রিকের বাচ্চা চুপ থাক নাহলে তোর বুদ্ধির ভান্ডার এই মাথাটা আর তোর ঘাড়ে থাকবে না। ( দাতে দাত চেপে )
~ ওকে অনেক হয়েছে। সবাই মিলে আমাকে একটা আইডিয়া দাও কীভাবে কি করবো! ( মাহির )
~ মাহির ভাই আমি বলছি। ( রিক )

~ তোমরা সিওর !! হিতে বিপরীত হবে না তো আবার?
~ ডোন্ট ওয়ারি। কিচ্ছু হবে না। আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল হবেই।
~ আচ্ছা তাহলে এই প্ল্যান অনুযায়ী সবটা করবো।
~ দ্যাটস বেটার( সূর্য )

সুজানা এখনো মাহিরের বলা কথাগুলো ভেবে চলেছে। ও মাহির কে পছন্দ করে বাট এজ আ ফ্রেন্ড।
প্রথম যখন মাহিরের মুখে বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেছিলো তখন এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো যেনো খুব প্রিয় কিছু ওর থেকে হারিয়ে যাবে। অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। এই কষ্টটা কেনো হচ্ছিলো? ও কি তবে মাহিরের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। মাহির যখন নিজের মনের কথা ওকে বললো, যখন জানতে পারলো মাহির তার পুরো জীবন ওর সাথে কাটাতে চায় তখন মনের মধ্যে এতো ভালো লাগা কেনো কাজ করছিলো। কিন্তু ও তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কখনো তো এর বাইরে আর কিছু ভাবি নি। তাহলে হঠাৎ এসব কি হচ্ছে আমার সাথে!!

~ আপু?
~ কে? ওহ ন্যান্সি! এসো। বাকিরা কোথায়?
ন্যান্সি সুজানার পাশে এসে বসলো।
~ ওরা বাইরে আছে।
~ ওহ
~ তুমি বাইরে যাবে না?
~ ইচ্ছে করছে না।
ন্যান্সি কিছুক্ষন চুপ করে নীচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আনমনেই বলে উঠলো,,,
~এ বেস্ট ফ্রেন্ড কেন বি এ বেস্ট লাইফ পার্টনার… আর নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
সুজানা ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে আছে। ন্যান্সি সুজানার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
~ আমি জানি আজকে মাহির ভাইয়া তোমাকে ইন্ডিরেক্টলি প্রোপোজ করেছে।
সুজানা কিছুটা অবাক হলো। তাও জিজ্ঞেস করলো,,
~ কে বললো তোমাকে?
~ ইউ নো। তোমাদের মধ্যকার ব্যাপার তোমরা ছাড়া আর কারো জানার কথা নয়।
সুজানা মাথা নামিয়ে ফেললো। ন্যান্সি সুজানার হাত ধরে বললো,,,
~ তোমাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তুমি অনেক কনফিউজড। এই কনফিউশন ততক্ষণ পর্যন্ত ক্লিয়ার হবে না যতক্ষণ না তুমি তা কারো সাথে শেয়ার করো।
~ এমন কিছু না ন্যান্সি।
~ আমার কাছে সময় আছে তোমার কথা শোনার।
সুজানা ন্যান্সির এমন কথায় আর কিছু বলতে পারলো না।
~ আমি জানিনা কি হচ্ছে আমার সাথে। আমিতো ওকে সবসময় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে এসছি। ও ছাড়া আমার কোনো ফ্রেণ্ড ও নেই। আমার মনের যত কথা আছে সবটা আমি ওর সাথে খোলাখুলি শেয়ার করতে পারি। কখনো কোনো দ্বিধাবোধ করিনি। কিন্তু আজ করছি। ওর চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। ও যখন বললো আমাকে সময় দিবে সবটা ভাবার তখন মুখ ফুটে বলতে পারিনি যে আমি এসবের জন্য রেডি নই।
~ রেডি ? কিসের জন্যে রেডি নও?
~ লাইফ পার্টনার, ভালোবাসা এসব নিয়ে আমি আগে কখনো ভাবি নি। নিজের অসুস্থতার জন্য কখনো বিয়ে, ভালোবাসা এইসব নিয়ে ভাবতে পারিনি। বলতে পারো ভাবতে ইচ্ছে করেনি। তাই হঠাৎ করে মাহিরের বলা কথাগুলো হজম করতে পারছি না। তার উপর ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। এছাড়া আর কিছু কখনো ভাবি নি।
~ আমি তোমার অবস্থাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু তুমি বললে না যে তুমি এসব নিয়ে আগে কখনো ভাবোনি কারণ আগে তোমার সাথে এরকম কিছু হয়নি আজকে হয়েছে। তো তোমার উচিত এখন থেকে এসব নিয়ে ভাবা।
~ কি বলছো? হঠাৎ করে কিভাবে?
~ দেখো আমাদের জীবনে যা ঘটে তা কিন্তু সব সময় প্রিপ্ল্যান্ড হিসেবে ঘটে না। অধিকাংশ জিনিসই আচমকা হয়ে যায়। তোমাকে কেউ এখনি বিয়ে করতে বলছে না আর না মাহির ভাইয়াকে নিজের লাইফ পার্টনার ভাবতে বলছে। তুমি ভূলে যাও যে আজ মাহির ভাইয়া তোমাকে কিছু বলেছে। তুমি জাস্ট আর পাঁচটা মেয়ের মতো নিজের বিয়ে নিয়ে ভাবো। তুমি নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে কেমন ছেলে চাও সেটা ভাবো। এরপর যদি তোমার লাইফ পার্টনার হিসেবে যেমন ছেলে চাও তার গুনাগুন গুলো মাহির ভাইয়ার মধ্যে থাকে তবে তাকে নিজের লাইফ পার্টনার এর জায়গায় বসিয়ে দেখবে আর যদি না থাকে তাহলে সরাসরি তাকে জানিয়ে দিবে।
~ ধরো যদি ওকে আমার লাইফ পার্টনার এর জায়গায় বসাই ও কিন্তু ভালোবাসা? সেটা কি আমাদের মধ্যে থাকবে?
~ এটা তোমাদের ওপর ডিপেন্ড করে। তুমি মাহির ভাইয়া কে জাস্ট ফ্রেণ্ড ভাবো কিন্তু ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে তাইতো নিজের জীবন সঙ্গী করতে চাইছে। আর তুমিতো বললেই যে তুমি আগে কখনো এসব নিয়ে ভাবোনি তাই জানোনা। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তুমি মাহির ভাইকে ভালোবাসো।

সুজানা অবাক হয়ে ন্যান্সির দিকে তাকালো। ন্যান্সি মুচকি হেসে বললো,,,
~ হ্যাঁ এখন শুধু তোমার সেটা অনুভব করতে হবে। হোক না সে বন্ধু তাতে কি! ভালোবাসা কি আর এতো কিছু ভেবে হয় নাকি? আর না সময় মেনে কাওকে ভালবাসা যায়। এটা তো হুট করেই হয়ে যায়। আর একবার কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে তার থেকে মুখ ফেরানো দায় হয়ে পড়ে। ( নিরস গলায় )
সুজানা ন্যান্সির কাঁধে হাত রেখে বললো,,
~ তুমি ভাইকে খুব ভালোবাসো তাইনা?
~ আরশির থেকে বেশি না। তাই তো আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি। কিন্তু আমি চাইনা তোমাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থাকুক। মানুষের জীবন খুবই সীমিত আপু। এই সীমিত সময়ের মধ্যেই আমাদের জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। সবসময় সবটা মন মতো হয় না। তবুও তা মেনে নিতে হয়। যেমন আমি মেনে নিয়েছি। সূর্য আমার হবে না কখনো। ও শুধু মাত্র আরশির। ওর সবটা জুড়ে আরশি রয়েছে। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে তো এমন কিছু নয়। মাহির ভাই শুধুই তোমার। তার সবটা জুড়ে শুধু তুমি। তাই বলছি একবার, একবার মাহির ভাইয়াকে নিয়ে ভেবে দেখো। নিজের অন্তরালে লুকায়িত অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসো। সব কিছু সহজ হয়ে যাবে তখন।
সুজানা কিছু বললো না। শুধু ন্যান্সির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একসময় এই মেয়েটাকে নিয়ে কতো বাজে কথাই না বলেছে । দু চোখে সহ্য করতে পারতো না ওকে। কিন্তু আজ এই মেয়েটাই তার ভালোর কথা ভাবছে। আসলেই মানুষ চেনা খুব মুশকিল। দু একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কখনো কোনো মানুষকে জাজ করা যায় না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here