আমার প্রিয় তুমি পর্ব-৫

0
1732

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-৫

৯.

হাওলাদার বাড়ির খাবার টেবিল আজ জমজমাট।হরেক রকম খাবারে টেবিলের শোভা যেনো বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুনে। একে একে সবাই চলে আসে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য । হাওলাদার সাহেবের দুই ছেলের বউ হাতে হাতে টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিচ্ছেন । দুই ছেলেও নিজ নিজ স্ত্রীর হাতের খাবার খেতে পছন্দ করে । তাই রাতে খাবারে আয়োজনও তারাই করেছে।
সবাই সবার আসন গ্ৰহন করে যার যার পছন্দ অনুযায়ী খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । তখনই বড় ছেলের বউ শিউলি বেগম ইশারায় কিছু বলতে বললো নিজের স্বামীকে।তারপর ছেলের দিকে তাকালেন ছেলের মতিগতি বুঝার জন্য । ছেলে যে তার ভীষণ রাগী , কি আর করার বংশের ধারা পেয়েছে।

দেশে আসার পরই খুব কৌশলে ছেলের কাছে বিয়ের কথা তুলেছেন। কিন্তু আশানুরূপ কোনো সাড়া পায় নি । বয়স তো আর কম হলো না । বিয়ে করিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায় তাছারা ছোট ভাই-বোন ও আছে ওদেরও তো বিয়ে করাতে হবে। তাই কথাটা শশুরের সামনে তুলতে বলছে। শিউলি বেগম ভালো করে জানেন আর যাই হোক ছেলে দাদার কথা ফেলতে পারবে না কখনো। এর জন্য বার বার স্বামীকে ইশারায় বলছেন কথাটা শশুরকে বলতে।

তারেক হাওলাদার গলা ঝেড়ে শ্রদ্ধেও বাবার উদ্দেশ্যে বলেন “”আব্বা তানভি তো দেশে আসছে বেশ কদিন হলো আমার ব্যবসাটাও ভালো বুঝে গেছে আবার বলছে নিজেও নতুন ব্যবসা খুলবে তাই বলছি কি সবার যদি অনুমতি থাকে তাহলে তানভির জন্য মেয়ে দেখি? কথাটা বলেই ছেলের দিকে তাকালেন ।
ছেলেকে দেখে কিছু বুঝলেন না তিনি । সে খাওয়ায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে রেখেছে । যেন তার বেপারে কোনো কথাই হয় নাই।
কথাটা শুনে সবার চোখ তানভির দিকে । সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনাও বিরাজ করছে ।
রিমি তো উত্তেজনায় মুখ ফসকে বলেই দিল ওয়াও সত্যি ভাইয়ার বিয়ে। আমাদের বাসার প্রথম বিয়ে ,খুব মজা হবে।
কিন্তু তার খুশি বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারলো না ।শিউলি বেগম তাকে ধমকে উঠলো।

আহ্ বউমা ওরে ধমকাও কেন । ও তো খারাপ কিছু বলে নাই । আর বিয়ের বয়স যেহেতু হয়েছে বিয়ে তো করতেই হবে । তাছাড়া আমারও বয়স হয়েছে কখন কি হয়ে যায় আমিও চাই বড়দাদু এবার বিয়েটা করুক আমার কিছু হওয়ার আগে নাতবউয়ের মুখ দেখে যাই।
তা দাদু ভাই তুমি কি বলো পছন্দ-টছন্দ আছে নাকি তোমার থাকলে বলতে পারো।

এতোক্ষণে তানভি সবার দিকে তাকালো ।তার মা যে খুব চালাকির সাথে কাজটা করলো তার বুঝতে বাকি রইলো না । কিন্তু সে খুব শান্ত ভাবে তার দাদাকে বললো “আমার কিছুদিন সময় লাগবে নিজের বিজনেসটা আগে দার করাই তারপর না হয় ভাবা যাবে ।”বলেই উঠে গেলো টেবিল থেকে।
পেছন থেকে চেয়ে রইলো কতো গুলো হতাশাপূর্ন চোখ।

১০.

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আলমারি খুলে বসে আছে তাহরিমা। কারণ সে তার সাদা রঙের উরনা খুঁজে পাচ্ছে না। আজ স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য মিলাদ ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।আর এই অনুষ্ঠানের ড্রেস কোডের রং হলো সাদা।
একে একে আলমারির সব বের করে ফেলছে তবু সেই উরনার কোনো চিহ্ন নেই।
গলা ফাটিয়ে মা বলে দিলো এক চিৎকার কিন্তু পিছন ফিরতেই দেখে তার মা দরজায় অগ্নিশর্মা হয়ে দাঁড়িয়ে।
মাকে দেখেই দিলো একটা ইনোসেন্ট মার্কা হাসি। কিন্তু তার এই হাসি কোনো কাজেই আসলো না।

বলি কি মাইক এনে দেই এখন তো মাএ আশেপাশের মানুষ শুনছে তখন না হয় পুরো গ্ৰাম শুনবে । তোর গলা আমি একদিন কেটে দিব দেখিস। সর সামনে থেকে। বলেই আলমারির কাছে চলে গেলো।

কি হইছে আন্টি ? তাহুর চিৎকার সেই গেট থেকে শুনলাম । বলতে বলতে রুমে ঢুকলো শিলা আর মেহু।

এই হইছে আরেক জালা এই দুটা সব সময় রং টাইমে এন্ট্রি নিবে। কি দরকার ছিল চিৎকারের কথাটা বলার।ফালতু পোলাপান গুলি । এই রকম বান্ধবী থাকলে শত্রুর দরকার পরে না।

কি আর হবে বাড়িতে একটা মাইক পিলতেছি তাই যখন তখন মাইক বেজে উঠে। এলাকা কারো মাইক লাগলে বলিস তো মা আমি ভারা দিবো ।কোনো কাজ তো হয় না এই মাইক দিয়ে । ভারা দিয়ে যদি কিছু টাকা ঘরে আসে ।কথাটা বলে আমার হাতে উরনা দিয়ে চলে গেলো মা।
মার কথা শুনে ওরা হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে।

তোরা সবাই আমার শত্রু। কেউ আমাকে দেখতে পারোস না ।আর তোদেরও বলি সব সময় কি রং টাইমে রং কথা বলতে হবে তোদের ।

যাক বাবা আমরা আবার কি করলাম । তোর চিৎকার শুনলাম দেখে না বললাম তখন । আচ্ছা বাদ দে দেখ কি আনছি আমরা আজ শারি পরে যাবো স্কুলে ।দেখ সাদার মধ্যে তিন জনের তিনটা শারি আনছি তোর কোনটা ভালো লাগে বল।

দেখলাম তিনোটা শারিই খুব সুন্দর ।আমি নিলাম সাদার মধ্যে গোল্ডেন ও হালকা নীল কাজের শারি। শারিটা কেন যেনো অদ্ভুত সুন্দর লাগলো । তাই খুব excited হয়ে আম্মুর সাহায্য শারিটা পরে নিলাম।
হাতে নীল ও গোল্ডেন মিলিয়ে রেশমী চুরি , কানে গোল্ডেনের মধ্যে দুল আর চুল গুলো ছেরে দিলাম।বেছ আমার সাজ complete.
তিন বান্ধবীকে ভালোই লাগছে । তৈরি হয়ে রওনা দিলাম স্কুলের পথে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here