#বোনু
#সিজন_০২
#Part_02
#Writer_NOVA
ফ্লাসব্যাক……..
আজ পহেলা বৈশাখ। মেহরুন ও তার বাকি ৬ ফ্রেন্ড মিলে আজ বৈশাখী মেলায় ঘুরতে এসেছিলো। মেহরুন,রিম,আফরা,আভা চারজন মেয়ে।রুশান,কিরন,সায়েম তিনজন ছেলে।ওরা ৭ জন এবার H.S.C পরীক্ষার্থী। পড়া রেখে তারা আজ এসেছে মেলা ঘুরতে। মেলায় একটু ঝামেলা হয়েছে। যার জন্য রেগে মিহু তার ফ্রেন্ডদের সাথে মেলা থেকে চলে এসেছে। রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে সবাই। ওরা সবসময় নিজেদের মধ্যে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।তার একটা কারণ আছে। সেটা আমরা পরে জানবো।
কিরনঃ পরীক্ষাতো প্রায় শেষ পর্যায়ে।এবার কোথায় ভর্তি হবি তোরা?
রিমঃ আগে রেজাল্ট আসুক, তারপর ডিসিশন।
কিরনঃ আমি A+ পেলে ঢা.বি. জন্য চেষ্টা করবো।
মিহুঃ আমার স্টীক দেখছোত।একটা বারি দিলে মাথা দুই ভাগ হইয়া যাইবো।
কিরনঃ কেন আমি আবার কি করলাম?
সায়েমঃ তুমি জানো না মাম্মা, তুমি কি করছো?
আফরাঃ আমরা যেই কলেজে ভর্তি হমু তুইও সেই কলেজে ভর্তি হবি।
কিরনঃ আমার অনেক ইচ্ছা ঢা.বি. পড়ার।আমি এই কলেজে আর পড়মু না।অনেক কষ্টে দুই বছর সহ্য করছি।এই কলেজ রাজনীতি দিয়ে ভরা।
আভাঃ আমরা কেউই এই কলেজে পড়মু না।
রুশানঃ তাহলে কোথায় ভর্তি হমু?
মিহুঃ খানদের কলেজে।আমার বাপির বন্ধুর কলেজ ঐটা।এডমিশনের জন্য কোন চিন্তা নাই। শুধু A- আসলেই চলবো।তাছাড়া ধইরা-বাইন্ধা পড়ালেখা করতে হইবো না।মন চায়তো ক্লাস করো না চাইলে বের হয়ে যাও।
রিমঃ আমরা গেলেতো কলেজের বদনাম হইবো।
মিহুঃ ধূর, কিছু হইবো না।ঘুরমু,খামু,আড্ডা দিমু আর বাড়ি আসমু।নো প্যারা,যাস্ট চিল।
কিরনঃ আমি কলেজে ভর্তি হমু না।ভার্সিটিতে ভর্তি হমু। তোরা ভর্তি হলে হতে পারিস।
মিহুঃ তুই A+ পাইলে আমরা তোরে ভার্সিটিতে ভর্তি হইতে কোন বাঁধা দিমু না।কিন্তু যদি না পাস তাহলে আমাদের সাথেই তোর ভর্তি হইতে হইবো।
কিরনঃ আমি রাজি আছি।
সায়েমঃ হির, যদি ও A+ পাইয়া যায়।তখনতো ওরে আটকায় রাখতে পারমু না।তুই এরকম শর্ত কেন দিলি?(ফিসফিস করে)
মিহুঃ চিন্তা করিস না।আজকে মেলায় আসার কারণে ওর হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা ভালো হইবো না।যার কারণে A+ নাও আাসতে পারে।
আভাঃ কী রে তোরা, কি বিরবির করিস?
সায়েমঃ কিছু না।
আফরাঃ আমরা কিন্তু অনার্স নিমু।
রুশানঃ আগে রেজাল্ট দেখ ছেমরি।এতো লাফালাফি করার দরকার নেই।
ওরা ৭ জন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।কিছু সময় পর ৪/৫ টা ছেলে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।ওদের পাশের টেবিলে বসলো।ছেলেগুলো ওদের মেয়ে চারজনকে মিন করে অনেক আজে বাজে কথা বলছিলো।মিহু নিশ্চুপ হয়ে ওদের কথা শুনছে।একটা ছেলে মিহুকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো—
দেখ ঐ যে রেড কালার ড্রেস পরা মেয়েটা কিন্তু দেখতে হেব্বি হট।ইচ্ছে করছে গিয়ে জড়িয়ে ধরি।চেহারাটাও কিন্তু সেই।
পাশে থাকা আরেকটা ছেলে ১ম ছেলেটাকে বারবার চুপ করতে বলছে।কারণ সে মিহুকে ভালোভাবেই চেনে।
২য় ছেলেটাঃ চুপ কর ভাই। শুনতে পেলে আস্ত রাখবে না।ভীষণ ডেঞ্জারাস মেয়ে।
১ম ছেলেটাঃ কি চুপ করবো?আমার তো ওকে খুব ভালো লাগছে।
২য় ছেলেটাঃ মরার শখ না থাকলে আর একটা কথাও বলিস না।
তারপরেও ছেলেটা বাজে কথা বলেই যাচ্ছে। মিহু একবার পেছনে তাকাতেই ১ম ছেলেটি হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস দেখালো। এবার মিহু টেবিলে জোড়ে থাপ্পড় মেরে উঠে দাঁড়ালো। থাপ্পড়ের শব্দে বাকি ছয়টা চমকে উঠলো।মিহু ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। জিন্সের পকেট থেকে ছোট মোটা স্কেল বের করলো।স্কেল মনে হলেও এটা একটা হকি স্টীক।এটার মধ্যে একটা বাটনে চাপ দিলে স্কেল থেকে হকি স্টিকে পরিণত হয়।
মিহুঃ আমাকে ফ্লাইং কিস কে দেখালো?(মধুর সুরে)
১ম ছেলেটাঃ বাবু আমি দেখিয়েছি।
মিহুঃ কোন হাত দিয়ে দেখিয়েছো বাবু?(কলা করে)
১ম ছেলেটাঃ এই তো এই হাত দিয়ে
ছেলেটা হাতটাকে সামনে মেলে ধরতেই মিহু রেগে খপ করে হাত ধরে জোরে মোচড় দিলো।তারপর হাতে থাকা স্কেলে লাল বাটন চাপলো।সাথে সাথে স্কেল থেকে স্টীকে পরিণত হয়ে গেলো।স্টীক দেখে সবগুলো ভয় পেয়ে গেল।মিহু ছেলেটার হাতে জোরে স্টীক দিয়ে বারি মারলো।বাকিগুলো এই সুযোগে পড়িমরি করে ছুট।ছেলেটার হাত ছাড়তেই এক হাত দিয়ে আরেক হাত ধরে সেও ছুটে পালালো।মিহুও পেছন পেছন ছুটতে লাগলো।
ফ্লাসব্যাক এন্ড…….
☘️☘️☘️
মির্জা কুঠির…….
মিহু নিজের বাইকে করে বাড়ি ফিরে এসেছে। সে একজব লেডি বাইকার।ভীষণ যুদ্ধ করে এই বাইকটা কিনেছে সে।পরিবারের কেউ তাকে বাইক কিনে দিতে চাইনি।কিন্তু মিহু একবার যা বলবে তাই করবে।সে বাইক কিনেই তবে ছেড়েছে।বাড়ির ভেতর ঢুকে সিঁড়ির কাছে চলে এলো।তখনি মিহুর মা লুবনা মির্জা চেঁচিয়ে উঠলেন।পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মিহুর বাবা ফাহিম মির্জা ও তার ভাই মেহরাব মির্জা বাসায় আছে। তারা দুজন সোফায় বসে অফিসের ফাইল কমপ্লিট করছে।
লুবনাঃ ঐ যে এসেছেন মহারাণী। গোসল নেই, খাওয়া নেই পড়ালেখা নেই। সারাদিন টো টো কোম্পানির ম্যানেজার হয়ে ঘুরে বেড়ানো।পরশু যে হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা সে খেয়াল আছে। সারাদিন শুধু বাঁদড় বাহিনী নিয়ে ঘুরাফেরা করা।H.S.C পরীক্ষা দিচ্ছিস। এখন তো অন্ততপক্ষে পরীক্ষার কয়েকদিন পড়াশোনা করবে।তা না করে সে গিয়েছিলো মেলা ঘুরতে।
ফাহিমঃ আহ!! মেহরাবের মা কি শুরু করলে?মেয়েটা ফিরতে না ফিরতেই বকাতে আরম্ভ করলে।
লুবনাঃ তুমি আর কথা বলো না।তোমার আদরে মেয়েটা আজ মাথায় উঠেছে।
মেহরাবঃ মাম্মি চুপ করো।ফাইল কমপ্লিট করতে সমস্যা হচ্ছে।
লুবনাঃ আমি তো চুপ করেই থাকবো।দেখো মেলায় গিয়ে কার সাথে আবার ঝামেলা করে এসেছে। প্রতিদিন ঝামেলা না বাঁধিয়ে তো বাসায় ফিরতে পারে না।হয় কোন ছেলের হাত-পা ভাংবে,নয়তো ঘুষি দিয়ে নাক ফাটাবে,স্টিকের বারি মেরে মাথা ফাটাবে।এগুলো ছাড়াতো কিছু পারে না।
ফাহিমঃ মেহরাবের মা,অনেক হয়েছে। এবার থামো।তুমি আমার ছোট প্রিন্সেসকে অনেকক্ষণ ধরে আমার সামনে বকে যাচ্ছো।এটা কিন্তু ঠিক নয়।
ফাহিম মির্জার কথা শুনে মিহু দৌড়ে এসে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করলো।
মিহুঃ বাপি ই-ই ই-ই 😭।সত্যি করে বলো তো এই মহিলাটা আমার মাম্মি তো।নাকি তোমার ২য় স্ত্রী।
(নাক টানতে টানতে)
মিহুর কথা শুনে লুবনা মির্জা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগে গজগজ করতে করতে বললো।
লুবনাঃ শুরু হয়ে গেছে বাপ-বেটির অভিনয়। তাদের আর থামায় কে?নাও তুমি তোমার মেয়েকে আশকারা দিতে দিতে গাছে উঠাও।যখন বিপদে পরবে তখন বুঝবে।প্রতিদিন নালিশ শুনতে শুনতে আমার কান পচে গেল।আর তোমরা বাপ-বেটা মিলে যে অন্যের ক্ষতিপূরণ দিতে দিতে ব্যাংক খালি করছো।সেটার দিকে নজর কে দিবে?
ফাহিমঃ আমার টাকা-পয়সা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।যা আছে তা দিয়ে আমার নাতি-নাতনীরাও পায়ের ওপর পা তুলে খেতে পারবে।
লুবনাঃ তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু প্রতিদিনই তোমার মেয়ে যে কারো হাত-পা, নাক,মাথা ফাটিয়ে ছেলেদের হসপিটালে ভর্তি করে রেখে আসে। সেগুলোর বিল যে দাও সেখানে কি টাকা খরচ হয় না?
ফাহিমঃ আমার টাকা আমি বুঝবো।তুমি নাক গোলাতে এসো না।আমার মেয়ের পেছনে আমি কোটি কোটি টাকা খরচ করবো। তাতে তোমার কি?আমি জানি আমার মেয়ে কাউকে শুধু শুধু মারে না।ওর সাথে কেউ অন্যায় করলেই ও তার প্রতিবাদ করে।আমার লিটল প্রিন্সেস কখনো কোন নির্দোষ মানুষকে মারতেই পারে না।আমি ঠিক বলেছি মাই প্রিন্সেস?
মিহুঃ কারেক্ট বলেছো বাপি।
লুবনাঃ তোমার মেয়ে তো দুধের ধোয়া তুলসী পাতা।তোমার কাছে কি কোনদিন ও ভুল কাজ করতে পারে।বরংচ তুমি কয়েক বছর আগে ওকে সুইডেন থেকে হকি স্টিক এনে দিলে।যত দোষ ঐ হকি স্টিকের। সেটা ভুল মানুষের হাতে পরেছে।সবাই হকি স্টিক দিয়ে হকি খেলে।আর আমার মেয়ে ঐটা দিয়ে মানুষের মাথা ফাটাতে কাজে লাগায়।
মিহুঃ মাম্মি, আমাকে যা খুশি বলো।কিন্তু আমার হকি স্টিককে নিয়ে একটা কথাও বলবা না।ও আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বর্তমান দেশের যা পরিস্থিতি তাতে আমার সেফটির জন্য স্টিকটা অনেক কাজে লাগে।
মেহেরাবঃ কি কাজে লাগে তাতো দেখতেই পাচ্ছি। হয়েছে হয়েছে তোকে আর জ্ঞান বিতরণ করতে হবে না বিচ্ছু।
মিহুঃ তুই আবার আমাকে বিচ্ছু বললি হুলো বিড়াল।
মেহরাবঃ কি বললি তুই?
মেহরাবঃ তোকে হুলো বিড়াল বললাম রে হুলো বিড়াল।
মেহরাবঃ দাঁড়া তুই আজকে।তোকে হুলো বিড়াল বলার মজা বুঝাচ্ছি।
মিহু তার আগেই সিঁড়ি বেয়ে ছুটে পালালো।ওর পেছন পেছন মেহরাব।
লুবনাঃ শুরু হয়ে গেছে টম এন্ড জেরী মারামারি। আমার হয়েছে যত জ্বালা।এই বাড়ির মানুষগুলোকে নিয়ে আমি আর পারি না।এতগুলো কথা বললাম মেয়েটার কানে পৌঁছালো।এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে ঝেড়ে ফেলেছে।
ফাহিমঃ জানো যখন তাহলে এত বকা দেও কেন মেয়েটাকে?যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন বুঝবে মেয়েটা তোমার কি ছিলো।
লুবনাঃ হয়েছে তোমাকে মেয়ের গুণগান আর গাইতে হবে না।তুমি তোমার মেয়ের ভুল জীবনেও দেখবে না।
লুবনা মির্জা বিরবির করতে করতে কিচেনে চলে গেল।ফাহিম মির্জা মুচকি হেসে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
☘️☘️☘️
মেহরুনের জিন্সের পকেটে সবসময় একটা ছোট স্কেল থাকে।সাধারণত জ্যামিতি বক্সে যে সাইজের স্কেল থাকে সেই সাইজ।তবে অনেক মোটা।আসলে এটা দেখতে স্কেল মনে হলেও সেটা একটা হকি স্টিক। ঐ স্কেলটার মধ্যে লাল ও সবুজ দুইটা বাটন আছে। লাল বাটনটি চাপলে সেটা স্কেল থেকে একটা বড় মোটা হকি স্টিকে পরিণত হবে। আবার সবুজ বাটনটি চাপলে পূর্বের মতো স্কেল হয়ে যাবে। এটা মিহুর সুরক্ষা থাকার অস্ত্র। মিহু ওর স্টিকটাকে হির নামে ডাকে।ওর নাম ও হকি স্টিকের নাম হির হওয়ার কারণটা একটা ইতিহাস। সেটা না হয় আমরা পরে জানবো।
ওর স্কেলটাকে দেখে কারো সাধ্যি নেই বোঝার এটা একটা হকি স্টিক। বাটন দুটোও কেউ খুঁজে পাবে না।স্টিকের গায়ে অনেকগুলো লোগো আছে। সেই লোগোর মাঝে দুটি হলো বাটন।স্টিকের গায়ে ইংরেজী বড় অক্ষরে বড় করে লেখা HIR। ৩ বছর আগে সুইডেনে গিয়েছিলেন ফাহিম মির্জা।সেখানে অনেক বাহারি প্রযেক্টের প্রদর্শনী হচ্ছিলো।সেই প্রদর্শনীর মধ্যে অন্যতম ছিলো এই স্কেল স্টিক।ফাহিম মির্জার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল এটি।তাই তিনি তার মেয়ের জন্য এটা কিনে আনেন।মিহু এখন এটাকে ছাড়া একদমি বের হয় না।
#চলবে