#বোনু
#সিজন_০২
#Part_03
#Writer_NOVA
ফাহিম মির্জা ও লুবনা মির্জার একমাত্র মেয়ে মেহরুন মির্জা।ফাহিম মির্জা পেশায় একজন বিজনেসম্যান।M2 গ্রুপ অব কোম্পানির ওনার তিনি।লুননা মির্জা গৃহিণী। মিহুর বড় ভাই মেহারাব মির্জা।মেহরাব বাবার সাথে বিজনেস সামলায়।বাবা-মা ও ভাইয়ের অনেক আদরের মিহু।মিহু খুব দুষ্টু ও ফাজিল মেয়ে। সবসময় দুষ্টমীতে মাতিয়ে রাখে সবাইকে। গায়ের রং গোলাপি ফর্সা,ডাগর ডাগর চোখ, নাকটা খাঁড়া। চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত। ওর মুখের হাসিটা খুব সুন্দর। যে কাউকে পাগল করতে ওর হাসিটাই যথেষ্ট। গালের মধ্যে একটা মাঝারি সাইজের তিল।ঐ তিলটার কারণে ওকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।বয়স ২০। উচ্চতা ৫.৪ ইঞ্চি।
মেহরাব ওর থেকে ৬ বছরের বড়। মেহরাব দেখতে, উঁচা, লম্বা সবদিক থেকে মাশাল্লাহ। চেহারার গঠনটা বড্ড মায়াবী। গায়ের রং মিহুর থেকে কিছুটা চাপা।হাইট ৬ ফুটের কাছাকাছি। দুই ভাই-বোনের সবসময় ঝগড়া করে।কারো সাথে কারোর মিলে না।কিন্তু ওদের দুজনের ভালোবাসাটা ঝগড়া, মারামারি ও খুনসুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ওদের দুজনকে দেখে মনেই হয় না ওদের মাঝে ৬ বছরের ডিস্টেন্স। ঠিক যেনো পিঠাপিঠি দুই ভাই-বোন। মিহুর আরো দুই ভাই আছে।তারা ওর আপন ভাই নয়।তবে আপনের থেকেও কোন অংশ কম নয়।মিহু তো সবসময় বলে ওর তিন ভাই। বাবার আদরের প্রিন্সেস মিহু।ওর বাবা ওকে মেহরাবের থেকে অনেক গুণ বেশি ভালোবাসে।কিন্তু ওর মা ওকে দুষ্টুমীর জন্য সারাক্ষণ বকাঝকা করে।
মিহু এবার HSC পরীক্ষার্থী।ঢাকার এক বেসরকারি কলেজে পড়াশোনা করছে। পড়ালেখায় মিহু মোটেও ভালো নয়।ভালো হবে কি করে?সারাক্ষণতো ওর বাঁদড় বাহিনী নিয়ে ক্লাশের বাইরে ঘোরাঘুরি করে।বর্তমানে ওর HSC পরীক্ষা চলছে।কিন্তু তাতে তার কোন রিয়েকশন নেই। টেনেটুনে কোনরকম ৩৩ পেলেই সে খুশি।গত দুই বছরে ঠিকমতো ৭/৮ ক্লাশ করেছে কিনা সন্দেহ। মিহুর মাথার ব্রেণ খুব ভালো। পরীক্ষার আগের রাতে যদি ও ভালো করে পড়ে তাহলেই এনাফ।কিন্তু সে পড়তে বসতেই চায় না।মেহরাব কান ধরে পড়ার টেবিলে বসায়।
এই হলো আমাদের গল্পের নায়িকার পরিচয়। একটু বেশি বলে ফেললাম।আসলে পরবর্তীতে এগুলো লাগবে বলেই জানিয়ে দেওয়া।এবার চলুন তার বাঁদড় বাহিনীর পরিচয় জানি।
আফরা,সায়েম,আভা,রুশান,কিরন,রিম,মিহু সাতজন বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রত্যকে প্রত্যেকের কলিজার টুকরো। সবসময় নিজেদের মধ্যে অপমান, পচানো,দুষ্টুমী করা নিয়ে মেতে থাকে।কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে ওরা।ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে কফি হাউসে আড্ডা দেওয়া, বন্ধুদের মধ্যে থেকে কারো পকেট খালি করা,ক্লাশের মধ্যে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে হামলা করা। এগুলো ওদের নিত্যদিনের কাজ।ক্লাশ নাইনের থেকে ওদের বন্ধুত্ব।ওদের ৭ জনের টিমের একটা নাম আছে।”The tim of rainbow.”৭ জন সদস্য হওয়ার কারণে ওদের টিমের এই অদ্ভুদ নাম রেখেছে।
☘️☘️☘️
নিউ ইয়র্ক……..
স্ট্যাচু অব লিবার্টির নাম শুনে নি বা চিনে না এমন কোন মানুষ নেই। এই স্ট্যাচু অব লিবার্টির কারণে নিউইয়র্ক শহরটা পুরো পৃথিবীর কাছে বিখ্যাত। কেউ নিউইয়র্ক শহরে গিয়েছে আর স্ট্যাচু না দেখে ফিরেছে সেটা একেবারে অসম্ভব। স্ট্যাচুটাকে দিনের বেলা বেলা যতটা ভালো লাগে রাতে যেনো রঙিন বাতিতে তার পুরো অন্যরকম লাগে।
স্ট্যাচু দেখতে মাঝে মাঝে আসা হয় নিবরাজের।গত ৩ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের এই নিউইয়র্ক শহরে পড়াশোনা করছে। সাথে ওর চাচাতো ভাই আইজান।৩ বছরে এতবার স্ট্যাচু দেখেছে যে এখন আর এটার প্রতি কোন মোহ নেই। দিনের থেকে রাতের স্ট্যাচুটা নিবরাজের ভীষণ পছন্দ। দুই হাত পকেটে গুঁজে রাতের আকাশে নানা রঙের জ্বলজ্বল করা স্ট্যাচুর দিকে তাকিয়ে আছে স্ট্যাচু হয়ে।প্রিয়জনের ওপর অভিমান করে সব ছেড়ে ৩ টা বছর এখানে কাটাতে তার কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা ওর ভাই আইজান ও বন্ধু অর্কই জানে।
স্ট্যাচু থেকে কিছু সময়ের রাস্তার পর পূর্ব পাশের আবাসিক ভবনে থাকে ওরা তিনজন।অসম্ভব সুন্দর এই নিউইয়র্ক শহরটা। কিন্তু নিবরাজ বা আইজানের কারোই এখানে ভালো লাগে না। নিজের ছোট্ট বাংলাদেশটাকে বড্ড মিস করে তারা।খুব বেশি ভালোবাসে নিজের দেশটাকে।কত বছর ধরে দেখা হয় না নিজের বাবা-মা, চাচা-চাচী,বন্ধু, নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে। রাতের এই ব্যস্তময় পরিবেশে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছারলো নিবরাজ।ততক্ষণে পাশের রেস্তরাঁ থেকে কোল্ড ড্রিংকস হাতে ফিরছে আইজান ও অর্ক।অর্ক ওদের দুজনেরি ফ্রেন্ড।
অর্কঃ নে ধর,বাপ-রে কি ভিড়?তিনটা কোল্ড ড্রিংকস আনতে ৩০ মিনিট লেগে গেল।
নিবরাজ চুপচাপ অর্কর হাত থেকে কোল্ড ড্রিংকসটা নিলো।মুখে তার একরাশ বিষন্নতা।
আইজানঃ ভাই,তোর মন খারাপ??
নিবরাজঃ না।
অর্কঃ তুই কি হাসতে পারিস না।সবসময় মুখটাকে গম্ভীর করে রাখিস।
নিবরাজঃ আমি এরকমি।
কোল্ড ড্রিংকসে চুমুক দিতে দিতে ছোট করে উত্তর দিচ্ছে নিবরাজ।
আইজানঃ কি রে বাসায় ফিরবি না।রাত তো অনেক হলো।ভালো লাগছে না আর।
নিবরাজঃ হ্যাঁ,চল।
অর্কঃ কি চলবো?সবে মাত্র ১ ঘন্টা ধরে এসেছি। এখনোই চলে যাবো।সচারাচর আমাদের এখানে আসা হয় না।আরেকটু সময় থাকবো তারপর যাবো।
নিবরাজঃ কিন্তু —-
অর্কঃ কোন কিন্তু নয়।ও তোদের তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি। কোল্ড ড্রিংকস আনতে গিয়ে আমি একটা ফরাসী মেয়ের ওপর ক্রাশ খেয়েছি। আহ্!! দেখতে সেই সুন্দরী।
আইজানঃ তুই তো মিনিটে মিনিটে ক্রাশ খাস।সেটা আর নতুন কিছু নয়।
নিবরাজঃ খবরদার, তোর এই কথা যদি ঐ মেয়েটা জানে তাহলে গণধোলাই খাওয়াবে।এটা তোদের কলকাতা শহর না।
অর্কঃ ধূর,সেই একটা রোমান্টিক মুডে ছিলাম।দিলিতো মুডের বারোটা বাজিয়ে।
আইজানঃ যা সত্যি তাই বলেছে ভাই।
অর্কঃ হয়েছে তোকে আর ভাইয়ের সাফাই গাইতে হবে না।চল ঐ দিকটা গিয়ে একটু বসি।দাঁড়িয়ে থাকতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে।
☘️☘️☘️
তিনজন মিলে কিছু দূরে থাকা একটা বেঞ্চিতে বসলো।চারিদিকটা অনেকটা পিনপিনে নিরবতা। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে অর্ক জিজ্ঞেস করলো।
অর্কঃ রাজ,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।যদি তুই কিছু মনে না করিস।
নিবরাজঃ হুম কর।
অর্কঃ তুই তো বলেছিলি তুই নিউইয়র্ক শহরে পড়াশোনা করতে আসতে চাসনি।তারপর হঠাৎ করে কেন চলে এলি।
নিবরাজঃ কারো ওপর অভিমান করে। ভেবেছিলাম তাকে ছাড়া দূরে ভালো থাকবো।কিন্তু দেখ, আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভালো থাকিনি।কি করে থাকবো বল?সে যে আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। আমি চোখ বন্ধ করলে তাকে অনুভব করি,স্বপ্নে তাকে দেখি।অভিমান করে চলে এসে মনে করেছিলাম তাকে কষ্ট দিবো। কিন্তু সে দিব্যি ভালো আছে।আর আমি কষ্টগুলোকে জমিয়ে রাখতে রাখতে পাহাড় বানিয়ে ফেলেছি।
আইজানঃ ভাই, তুই আবার ঐ এনাকোন্ডার কথা ভেবে মন খারাপ করছিস।
নিবরাজঃ আমার মন ভালো ছিলো কবে?এই তিনটা বছর ওর জন্য আমার মনটা সবসময় খারাপ থাকতো।ও না হয় আমাকে অবহেলা করেছে। কিন্তু আমিতো ওকে সত্যি ভালোবেসেছি।অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত তিন কালেই ও আমার ছিলো, আছে এবং থাকবে।তবে আমি ওকে কখনো জোর করবো না।জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না।
অর্কঃ নিউইয়র্কে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে তুই ওকে নিয়ে পরে আছিস।ভুলে যা ওকে।
অর্কর কথা শুনে নিবরাজ চোখ, মুখ লাল করে ওর কলার চেপে ধরলো।
নিবরাজঃ অসম্ভব, যতদিন আমার দেহে প্রাণ আছে আমি আর কাউকে ওর জায়গায় বসবো না।কারণ ও আমার First and Last Love.
অর্কঃ ঠিক আছে সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে। কলারটা ছাড়।বলতে হবে তোর ভালোবাসার পাওয়ার আছে। যার কারণে এই শহরের এত মেয়ে ঘুরেও তোর কাছ থেকে কোন পাত্তা পায়নি।তোকে কখনো আমি কোন মেয়ের কথা বলতে দেখিনি।সত্যি তুই যে মেয়েকে ভালোবাসিস সে অনেক লাকি।
আইজানঃ আমার ভাই কথা তো দূরেই থাক।কোন মেয়ের দিকে তাকায়ওনি।হাজারটা মেয়ে শর্ট ড্রেস পরেও নিবরাজ খানকে গলাতে পারিনি।ওর জায়গায় আমি থাকলে এতদিনে ২০০ টা প্রেম করে ফেলতাম।
আইজানের কথা শুনে নিবরাজ অর্কর কলার ছেড়ে ওর দিকে রাগী চোখে তাকালো।আইজান ওর চাহনিতে ভয় পেয়ে বড়সড় একটা ঢোক গিললো।
আইজানঃ না মানে ভাই, আমি আসলে এমনি বললাম কথাটা।তুই মাইন্ড করিস না।ইহা একটা কথার কথা।
(ভয়ে ভয়ে)
নিবরাজঃ মন একটা,শত শত নয় যে সেটা শত শত মানুষকে দেওয়া যাবে।ভালোবাসলে এতজনকেই মনে-প্রাণে ভালবাসবি।কারো সাথে অভিনয় করিস না।
আইজানঃ সরি ভাই। আমি বোধ হয় তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।আমায় মাফ করে দিস।
আইজান মুখটাকে একটুখানি করে ফেললো।রাজ ওর ভাইকে জরিয়ে ধরলো। রাজকে পৃথিবীতে যদি একটা মানুষ বুঝতে পারে সে হলো আইজান।হাজার কথা কাটাকাটি, মারামারি, রাগ,অভিমান হলেও আইজান সবসময় ওর সাথেই থাকবে।দোষ না করেও সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিবে।ওদেরকে এভাবে দেখে অর্ক বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে প্রশান্তির হাসি দিলো।
অর্কঃ আমি দুই ভাইয়ের অনেক কম্বিনেশন দেখেছি। কিন্তু তোদের মতো এতো ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও কম্বিনেশন কখনো দেখিনি।আজকাল এরকম ভাইয়ের সম্পর্ক দেখাই যায় না।আমি প্রার্থনা করি সারাজীবন তোরা যাতে এভাবেই থাকিস।
নিবরাজঃ ধন্যবাদ তোকে ভাই।তোর এই প্রার্থনা যেনো আল্লাহ কবুল করে।(আইজানকে ছেড়ে দিয়ে)
অর্কঃ তোদের দুজনের এতো ভালো সম্পর্কের ব্যাপারটা আমায় বলবি?
আইজানঃ সিক্ররেট,তোকে বলা যাবে না।(ভ্রু নাঁচিয়ে)
নিবরাজঃ না রে কোন সিক্রেট নেই। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব,ভাই-বোনের সম্পর্ক যাই হোক না কেন, আমি মনে করি সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা দরকার তা হলো “বিশ্বাস”। বিশ্বাস ছাড়া পৃথিবীর কোন জায়গায় চলা যায় না।আমাদের বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তোর তো জানার কথা।
অর্কঃ হ্যাঁ,আমি জানি।ভিন্ন দেশের হতে পারি। কিন্তু বুক ফুলিয়ে বলবো আমি র্গবিত কারণ আমি বাঙালি।
আইজানঃ হয়েছে এত বড় বড় ডায়লগ দিতে হবে না।বাসায় চল।ক্ষুধায় আমার পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।
অর্কঃ ঠিক আছে চল।
তিনজন উঠে বাসার দিকে রওনা দিলো।
☘️☘️☘️
নিবিড় খান ও রোজনী বেগমের একমাত্র ছেলে নিবরাজ খান।দেখতে, শুনতে, আচার-ব্যবহারের দিক দিয়ে খুবই নম্র,ভদ্র ও শান্ত বৈশিষ্ট্য ছেলে।তবে একটা দোষ আছে। সেটা হলো খুব রাগী ও জিদ্দি। খুব সহজে রাগে না।আবার রাগ উঠলে কাউকে ছাড়েও না।তবে ওর রাগ সম্পর্কে সবার ধারণা থাকলেও সে শুধু নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে রাগ দেখায়।গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের।উচ্চতা ৬ ফুট।চেহারার গঠনটা মাশাল্লাহ। বয়স ২৬।খুব বেশি হাসে না।হাসলে দুই গালে মৃদু করে টোল পরে। দাড়িতে সবসময় স্টাইল করে কার্ট দেয়া থাকে।চাহনিটা খুব শান্ত। দেখে মনেই হয় না এত রাগী ও জিদ্দি। ওর এডুকেশন কমপ্লিট হয়েছে ১ বছর আগে। আইজানের আরো কয়েকমাস বাকি।রাজ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিখ্যাত কোম্পানির ফিলান্সার হিসেবে কাজ করছে।যদিও ওর টাকা-পয়সার কোন কমতি নেই। তারপরেও বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না বলে চাকরিতে জয়েন করেছে। ওর বাবা ও চাচা দুই ভাই।
চাচা জীবন খান ও চাচী আইরিন আহমেদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে আইজান খান ও মেয়ে আইভি খান।নিবরাজের দুই বছরের ছোট আইজান।আইভি, আইজানের ২ বছরের ছোট। আইভির বিয়ে হয়ে গেছে।স্বামী নিয়ে বাইরে থাকে।আইজানের গায়ের রংটা রাজের থেকে বেশি ফর্সা।আইজান খুব খুব সহজ সরল ছেলে।ওর ভাই যেখানে আছে, সেখানে ও আছে।খান বাড়ির ছেলেদের রক্তেই মিশে আছে রাগ।ওর মাঝে যে রাগ নেই সেটা কিন্তু নয়।আছে, তবে ও কখনো দেখায় না।যদি কারো সাথে বাই চান্স দেখায় তাহলে তার কপালে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত আছে। উচ্চতা নিবরাজের মতোই। ওর চেহারার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ওর সিল্কি চুলগুলো। কয়েকমাস পর এডুকেশন কমপ্লিট হবে।পড়াশোনা শেষ হলেই দৌড়াবে নিজের দেশে।
ওদের দুজনের বাবা-চাচার একটি কোম্পানি ও বেসরকারি কলেজ আছে।খান গ্রুপ অব কোম্পানি এবং খান কলেজ ঢাকার খুব নামকরা কলেজের মধ্যে অন্যতম।নিউইয়র্ক থেকে থেকে ফিরে এইগুলোকেই সামলাতে হবে দুই ভাইয়ের।
অর্কের সাথে পরিচয় নিউইয়র্ক শহরে এসে।ভারতের কলকাতা শহর থেকে পড়াশোনা করতে নিউইয়র্ক আসা অর্কর।অর্ক হিন্দু সম্প্রদায়ের। প্রথমে পরিচয় তারপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব।৩ বছর ধরে একসাথে থাকছে।ধর্ম কোনদিন ওদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
☘️☘️☘️
পরের দিন রাতে……
মির্জা কুঠির……
মেহরাব আজ সন্ধ্যা থেকে মিহুকে পড়াতে বসিয়েছে। মিহু টেবিলে চুপচাপ হিসাববিজ্ঞানের অঙ্ক করছে।দেখে মনে হচ্ছে মনটা অনেক খারাপ। অন্যদিন হলে বকবক, মারামারি করতে করতেই ওদের সময় যেত।ওদের মাঝে যতকিছু হোক মেহরাব ওর বোনকে এরকম মনমরা দেখতে পারে না।
মেহরাবঃ কি হয়েছে তোর?
মিহুঃ কিছু না।(মুখ গোমড়া করে)
মেহরাবঃ কিছু তো একটা হয়েছে। গতকাল মেলার থেকে আসার পর থেকে দেখছি তুই কিছু একটা নিয়ে অনেক আপসেট।
মিহুঃ বললামতো কিছু হয়নি।
মেহরাবঃ কে কি বলেছে বল একবার?তার জিহ্বা কেটে আমি কুকুরকে খাওয়াবো।কার এতবড় সাহস মেহরাব মির্জার বোনের দিকে তাকায়।
মেহরাবের কথা শুনে মিহু ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।মেহরাব ওর বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখে খুব অবাক হয়ে যায়।সাধারণত মিহু কখনও এরকম করে কাঁদে না। মেহরাবকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় ওর বোনের চোখের পানি। মেহরাব ওর বোনকে ভীষণ ভালোবাসে।যদিও সেটা সামনাসামনি কখনো প্রকাশ করে না।মিহুর চোখের পানি ও একদম সহ্য করতে পারে না।মেহরাব সামনে গিয়ে মিহুর দুই গালে আলতো করে হাত রাখলো।
মেহরাবঃ বিচ্ছু,কি হয়েছে তোর?এভাবে কাঁদছিস কেন?বল কেউ তোকে কিছু বলেছে।কথা বলছিস না কেন?তুই কান্না বন্ধ কর।তুই জানিস না তোর চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না।
মিহু কথা না বলে মেহরাবকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে কাদতে লাগলো।
মেহরাবঃ বলবিতো কি হয়েছে? না বললে আমি বুঝবো কি করে?
মিহু হেচকি তুলতে তুলতে তার ভাইকে বললো
মিহুঃ গতকাল বৈশাখী মেলায় একটা ছেলে আমার সাথে অসভ্যতামী করেছে।আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছিলো।আমি তার প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাকে সবার সামনে বাজে মেয়ে হিসেবে প্রমাণ করার জন্য উঠে পরে লেগে যায়।আমি রেগে মেলার থেকে চলে এসেছিলাম। পাবলিক প্লেস বলে আমি বেশি কিছু বলতে পারি নি।ঐ ব্যাপারটা আমার খুব খারাপ লাগছে।
সব কথা শুনে মেহরাবের চোখ দুটো রাগে দপ করে জ্বলে উঠলো।
মেহরাবঃ এত বড় সাহস ঐ ছেলেটার।আমার বোনের কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার বোনুকেই খারাপ মেয়ে হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছে।এর সাজা ওকে পেতে হবে।খুব খারাপভাবে তার খেসারত দিতে হবে।
(মনে মনে)
মেহরাব ওর বোনকে শান্ত করে বাইরে এসে কাউকে কল করলো।
মেহরাবঃ তুই থাকতে গতকাল আমাদের বোনুর সাথে এরকম ঘটনা কি করে ঘটলো?(রেগে)
—-কি হয়েছে বলবিতো?
মেহরাব পুরো ঘটনা শুনে মোবাইলের অপর প্রান্তের মানুষটার শরীরেরও রাগে আগুন জ্বলে উঠলো।
মেহরাবঃ বল কি করে ঘটলো?বড় ভাইয়া জানতে পারলে তোর অবস্থা কি করবে তুই জানিস?
—- আমি কিছুই জানি না।মাত্র তোর কাছ থেকে সব জানলাম।গতকাল একটা জরুরি কাজ ছিলো।তাই বোনুকে দেখে রাখতে পারিনি।
মেহরাবঃ আমি জানি না,এখন আমি কিছু শুনতে চাইছি না।কালকে মধ্যে যেভাবে হোক ঐ ছেলেটাকে আমি আমাদের গোডাউনে দেখতে চাই। কিভাবে ঐ ছেলেকে আনবি,কোথায় পাবি সেটা সম্পূর্ণ তোর ব্যাপার।আমি শুধু ঐ ছেলেকে কালকের মধ্যে গোডাউনে দেখতে চাই।
—- তুই কোন চিন্তা করিস না। সব হয়ে যাবে।
#চলবে
রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।