#বোনু
#সিজন_০২
#Part_04
#Writer_NOVA
Scotland…….
বিশাল বড় একটা অফিস রুমের কেবিনের চেয়ারে বসে এক ধ্যানে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে একটা ছেলে। মূলত তাকিয়ে থাকার কারণটা হলো, সামনের ল্যাপটপের স্ক্রিনে মিহুর ছবি ওয়ালপেপার হিসেবে সেট করা।এক দৃষ্টিতে মিহুর ছবি দেখছে।ছেলেটার গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। চোখ দুটো ও চুলগুলো ধূসর রঙের। দেখে মনে হয় কালার করেছে।চুলগুলো সোজা করে সেট করা।হাইট ৫.৮ ইঞ্চি হবে।বয়স ২৫/২৬ এর কাছাকাছি। এক কথায় দেখতে ইংরেজ বাচ্চা। বাবা বাঙালি মা ইংরেজ। ছেলেটি হুবহু ওর মায়ের মতো দেখতে।দেখে কেউ বলতে পারবে না যে সে বাঙালি বা বাংলায় কথা বলতে পারে। মিহুর ছবির দিকে তাকিয়ে একা একা বকবক করছে।
—- জানি না তোমার মাঝে কি জাদু আছে?যতবার তোমাকে দেখি ততবারই প্রেমে পরে যাই। আমার মেয়েদের মধ্যে কোন নেশা নেই। আমি একমাত্র শ্যাম্পেইন ও রেড ওয়াইনের মধ্যে নেশা খুঁজে পেতাম।কিন্তু তোমায় দেখার পর সেটার মধ্যেও কোন নোশা হয় না।আমার আজও মনে পরে যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।বেহায়া মনটা কিছুতেই মানছিলো না।তোমার সেদিন কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিলো।সব মেয়েরা ভারী ভারী শাড়ি, গহনা, মেকআপ নিয়ে এলেও,তুমি ছিলো সাধারণ। হাঁটু পর্যন্ত টপস,জিন্স ও গলায় প্যাচানো ওড়না।তোমার মুখে কোন সাজসজ্জা ছিলো না।এত সুন্দর সাজগোজ করা মেয়ে থাকতেও আমার মনটা তুমিই কেড়ে নিয়েছিলে।
দুই ধারে দুই ঝুঁটি, কাঁধে ডল ব্যাগ ও দুই কানে ইয়ারফোন গুঁজে তুমি যখন কলেজ গেইটে গাড়ি থেকে নামলে তখনি আমার তোমাকে ভালো লেগে গিয়েছিলো।কোন মেয়ের জন্য কখনি ফিলিংস হয়নি।কিন্তু দুই বছর আগে তোমাকে যখন দেখলাম তখনি ভালোবেসে ফেলেছিলাম।চেয়েছিলাম পরের দিনই তোমার সাথে দেখা করবো।কিন্তু বিধি বাম!! জরুরি মিটিং থাকার কারণে পরেরদিন সকালেই স্কটল্যান্ডে ফেরত আসতে হলো।তোমাকে ছাড়া যে দুইটা বছর কিভাবে কাটিয়েছি সেটা আমি জানি।কারণ তুমি আমার First & Last Love.সেদিন থেকে আমি তোমায় নজরে নজরে রেখেছি।আমি যেটা পছন্দ করি সেটা জোর করে হলেও আদায় করে নেই। খুব শীঘ্রই তোমাকেও হাসিল করে নিবো।আরেকটু সবুর করো হির মাই কুইন। তুমি শুধু আমার।
হঠাৎ দরজা খুলে একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা মেয়ে প্রবেশ করলো।মেয়েটি নাম এলিনি।সে ঐ ছেলেটার পি.এ।স্কটল্যান্ডের অন্যতম বিজনেস ম্যান ছেলেটি।লিনা গটগট করে ইংরেজিতে বললো—–
(বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় বলা হলো)
এলিনিঃ মে আই কাম ইন স্যার?
—- ইয়েস কাম।
এলিনিঃ স্যার মিস্টার পিটার আগামীকাল দুপুর ১টায় জরুরি মিটিং রেখেছে। নতুন প্রযেক্টের ডিল করতে চাইছে।আমরা কি ডিলটাকে একসেপ্ট করে নিবো?
—-এমাউন্ট কত?
এলিনিঃ ৫০০ হাজার ডলার।
—- তুমি মিস্টার পিটারকে বলে দেও আমি তার ডিল একসেপ্ট করে নিয়েছি।সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আগামীকালের মিটিংয়ের এরেঞ্জমেন্ট করতে।
এলিনিঃ ওকে স্যার।আমি আসছি।
এলিনি চলে যেতেই ছেলেটি আবার মিহুর ছবি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।অবসর সময়গুলো তার মিহুকে দেখেই কেটে যায়।
☘️☘️☘️
দুই দিন পর……..
হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা শেষ। দুই দিন পর ২য় পত্র পরীক্ষা। যার জন্য The tim of rainbow -এর সদস্যরা আজ কোচিং করতে এসেছে। বাইরে দাঁড়িয়ে মিহুর জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। এই মেয়েটা সবসময় দেরী করে আসবে।
আভাঃ হির,এখনো আসছে না কেন?
রিমঃ ঐ রুশান, তুই এডা কি প্যান্ট পইরা আইছত?
রুশানঃ নতুন স্টাইল।
সায়েমঃ এইডারে স্টাইল কয়?পাগলা কুত্তায় ধাওয়ানি দিছিলো নাকি তোরে?
কিরনঃ আমারো তাই মনে হয়।ভাগ্যিস বড় প্যান্ট পরা আছিলি।নয়তো সর্বনাশ হয়ে যেতো।
আফরাঃ দুই হাঁটুতে কি কামড় দিছিলো রুশান?মনে হইতাসে কামড় দিয়া প্যান্ট ছিড়া নিয়া গেছে।
রুশানঃ হারামীগুলা,এইডা প্যান্টের নতুন স্টাইল।
সায়েমঃ থাক ভাই আর কইতে হইবো না।তোর টাকা-পয়সার টান পরছে আমাদের কইতে পারতি।আমরা নতুন প্যান্ট কিনে দিতাম।কিন্তু তুই এই ছিঁড়া-ফারা প্যান্ট পইরা আলি কে?
ওদের কথার মাঝখানে মিহু বাইক থেকে নেমে ওদের কাছে এলো।
মিহুঃ কি হইছে?তোরা এরকম গোল মিটিং করতাছত কে? কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতাছিস?
আভাঃ দেখ হির,এই ছেমরার বাপের টাকা-পয়সা বোধহয় কম হইয়া গেছে।তাই কোন জন্মের ছিঁড়া প্যান্ট পইরা আইছে।
রিমঃ শালা কিপ্টা জানি কোনহানকার?
মিহুঃ মনে হইতাসে গুলিস্তানের ১২০ টাকা প্যান্ট।
(ভ্রু কুঁচকে)
রুশানঃ ঐ তোগে কে কইছে?আমি বসুন্ধরা শপিং মল থেকে ২৭০০ টাকা দিয়া প্যান্টটা কিনছি।
মিহুঃ আজকে গিয়া এইডার দোনো হাঁটুতে তালি লাগাবি।
রুশানঃ নতুন কিনলাম। আজকে ১ম পরছি।এমন করিস না হির।🥺
মিহুঃ যদি ফের কোনদিন এইডারে পইরা এসেছিস। তাহলে হাফ প্যান্ট পইরা বাড়িতে যাইতে হবে তোর।
রুশানঃ ঠিক আছে। (মুখ গোমড়া করে)
কিরনঃ চল ভেতরে যাই।স্যারতো পড়া শুরু করায় দিবো।
৭ জন কোচিং সেন্টারের ভেতরে চলে গেল। ওদের টিমের লিডার মেহরুন। মিহু যা বলবে তাই হবে।মিহুর কথাই শেষ কথা।ওর মুখের ওপর আর কেউ কথা বলতে পারবে না। ওরা ৭ জন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।সবাইকে মিহুর মতো আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে হবে।এটা মিহুর অর্ডার।১ম ১ম বাকি ছয়জন না পারলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। একসাথে থাকলেই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।তবে সব জায়গায় সবার সাথে নয়।
মেহরাব ও মেহরুনের জন্ম এক ছায়াঢাকা, কোলাহলমুক্ত, শান্ত এক গ্রামে।মিহু JSC পাস করেছে ওদের স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।ক্লাশ নাইনে সপরিবার ঢাকায় চলে আসে।সেখানেই পরিচয় ওর বাকি ফ্রেন্ডের সাথে। মিহু আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেতে খুব পছন্দ করে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে যেনো নিজের ছোট গ্রামটাকেই স্মরণ করে।
☘️☘️☘️
১২ দিন পর…….
মির্জা কুঠির…..
একে একে মিহুর সবকয়টি পরীক্ষা শেষ। মিহু পরীক্ষা শেষের দিন বিকালে মোটু-পাতলু কার্টুন দেখতে দেখতে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছে।মিহু কার্টুন অনেক পছন্দ করে। মিহু ঘুমিয়ে পরতেই মেহরাব ওর পায়ের কাছে বসে পপ্পন খাচ্ছে। আর টিভিতে খেলা দেখছে।হঠাৎ মিহু ঘুমের ঘোরে মেহরাবকে জোরে একটা লাথি মারলো।মেহরাব কিছু বোঝে উঠার আগে ঠাস করে সোফা থেকে মেঝেতে পরে গেল।সাথে পপ্পনগুলো।মেহরাব মিহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ও ঘুমের মধ্যে বিরবির করছে।মেহরাব ওর মুখের সামনে কান রাখলো।
মিহুঃ হু হা হা হা।জন তুই আবার আমার সাথে লাগতে এসেছিস।তোকে আমি জেলে ভরবো।মাই নেম ইজ চিংগাম,ইন্সপেক্টর চিংগাম।চিংগাম কি চাংগুসে বাচনা ইম্পসিবল। বলে দে তো ইম্পসিবল। এ লে জন।
কথাগুলো বলে মিহু ঘুমের মধ্যেই মেহরাবকে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।যেহেতু মেহরাব কান খাড়া করে ওর মুখের সামনেই ছিলো।ঘুষিটা ওর কানের মধ্যে লাগলো।
মেহরাবঃ বাবাহো আমার কানটা বোধহয় গেলো রে।এই বিচ্ছুটা ঘুমের মধ্যেও আমাকে মারছে।
মেহরাব কান ধরে মিহুকে টেনে উঠালো।
মিহুঃ আহ্ ভাইয়া ছাড় লাগছে তো কি করছিস?ব্যাথা পাচ্ছিতো।আমাকে কি শান্তিমতো ঘুমাতে দিবি না হুলো বিড়াল।
মেহরাবঃ একটু হলেই তো আমার নাক ফাটাতি।ভাগ্যিস সরে গিয়েছিলাম।তাই ঘুষিটা কানে লেগেছে। তোর হাত নাকি লোহা। এখন বুঝেছি ছেলেগুলোর নাক এমনি এমনি ফাটে না।
মিহুঃ আমার কানটাতো ছাড়।আমি তোকে কখন মারলাম। স্বপ্নে আমিতো মোটু-পাতলুর ফুরফুরি নগরে চলে গিয়েছিলাম।তারপর দেখলাম জন আমাকে আক্রমণ করতে এসেছে। আর তাকে আমি জোরে একটা লাথি ও ঘুষি মেরেছি।
মেহরাবঃ জনকে লাথি ঘুষি মেরেছিস না আমাকে।দেখতো লাথি মেরে আমায়তো মেঝেতে ফেলেছিস সাথে পপ্পনগুলোও ফেলে দিয়েছিস।এবার এগুলো তুই পরিষ্কার করবি।(কান ছেড়ে দিয়ে)
মিহুঃ তোর পপ্পন তুই ফেলেছিস তুই পরিষ্কার করবি।আমি পারবো না। আমার কত সুন্দর স্বপ্নটার বারোটা বাজিয়ে দিলি তুই। হুলো বিড়াল একটা।
মেহরাবঃ তুই করবি নাকি মাম্মিকে ডাকবো।মাম্মি মাম্মি—–
মিহুঃ মাম্মিকে ডাকিস না। মাম্মি আমাকে অনেক বকা দিবে🥺।আমার মতো একটা ছোট বাচ্চার সাথে এমনটা করতে পারিস না।
মেহরাবঃ তুই ছোট বাচ্চা।(চোখ বড় বড় করে)
মিহুঃ হুম ☺️।
মেহরাবঃ নিজেকে ছোট বাচ্চা দাবী করে ছোট বাচ্চাকে অপমান করিস না।
মিহুঃ এমন করিস না।(কান্নার ভান করে)
মেহরাবঃ তাহলে কাজ কর।
মিহুঃ করছি তো।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
মিহু ঝাড়ু দিয়ে পপ্পন পরিষ্কার করছে।মেহরাব সোফার ওপর পা তুলে শয়তানি হাসি দিয়ে আপেল খাচ্ছে। মেহরুন মনে মনে দাঁত চেপে বললো।
মিহুঃ আমিও শোধটা তুলে রাখলাম।দেখিস তোর সাথে যদি তোর গার্লফ্রেন্ড নীলার সাথে যদি ব্রেকআপ না করাই আমার বাম মিহু নয়।হু হু হু।
মিহু ড্রয়িং রুম পরিষ্কার করে রুমে চলে গেলো।মোবাইলটা হাতে নিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।মোবাইলে মেহরাবের ছবি এডিট করতে লাগলো।অন্য একটা মেয়ের সাথে অনেকগুলো ছবি এডিট করলো।কোনটাতে মেহরাব একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরে রেখেছে।, আরেকটাতে মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। মিহুর আলাদা একটা ফেইক ফেসবুক একাউন্ট ছিলো।ঐ একাউন্ট দিয়ে ছবিগুলো নীলার আইডিতে পাঠিয়ে দিলো।
মিহুঃ আমাকে দিয়ে পপ্পন পরিষ্কার করেছিস।এবার তোর গার্লফ্রেন্ড সামলা।এমনভাবে ছবি এডিট করেছি কারো বোঝার সাধ্যি নেই এটা এডিট করা।হুলো বিড়াল তোর ১ বছরের ভালোবাসা তো গেলো।আমার সাথে লাগতে আসার মজা তোকে হারে হারে বুঝিয়ে দিবো।নীলা আপু নিশ্চয়ই ছবিগুলোকে বিশ্বাস করবে।আর তোর সাথে ব্রেকআপ। আমার যে কি খুশি লাগছে। ডিংকা চিকা,ডিংকা চিকা।
রুমের মধ্যে হাই ভলিউমে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে উড়াধুরা ডান্স শুরু করলো মিহু।সে তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছে। তার খুশি আর দেখে কে!!!
#চলবে