ছেলেদের শরীর দেখানোর জন্য রাতের বেলা একা একা এমন রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ালে ছেলেদের তো লোভ লাগবেই।
লোকটার কথা শুনে ফিরে তাকালো অভনী। চোখ মুখ শক্ত করে বলতে লাগলো,,,
—আমি টিউশনি তে গিয়েছিলাম।
—মেয়ে মানুষ রাতের বেলা টিউশনি করেন কেন দিনের বেলা করতে পারেন না?
—দিনের বেলা একটা জব করি,,।ওইখান থেকে আসতে আসতে ৬ টা বাজে। ফ্রেশ হয়ে বাজারে যেতে হয়,, বাজার থেকে এসেই টিউশনি তে আসি তাই রাত হয়ে যায়।
—বাব্বাহ জব করে আবার টিউশনি ও করেন?তো রাতের বেলা কাউকে সাথে নিয়ে আসতে পারেন না?একা একা আসেন তাও আবার এমন রাস্তা দিয়ে কেনো?আজকে আমি না থাকলে কি হতো বুঝতে পারছেন?
লোকটার কথায় এবার বিরক্ত লাগছে অভনীর,,।বাচিঁয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি ধন্যবাদ তো বলেছে,,অভনী বিরক্ত মাখা মুখ করে বললো,,,
—জব টা ছেড়ে দিব তাই টিউশনি করছি সাথে যেন পরে পথে বসতে না হয়। আমি এই এলাকায় এসেছি ২০ দিনের মতো তাই কোন রাস্তা ভালো আর কোন রাস্তা ভালোনা তাই জানি না।
—আপনি জব ছেরে দিলেই পথে বসতে হবে কেন?আপনি একজন মেয়ে মানুষ,, আপনার বাবা কোথায়?
—বাবা মারা গেছে ২ মাস হবে,,।তখন থেকে পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর তাই আমাকেই সামলাতে হবে।
বাবা মারা গেছে কথাটা শুনে লোকটার মুখটা মলিন হয়ে গেলো,,,হয়তো এখন করুনা করে কিছু বলবে বা কিছু টাকা হাতে দঁড়িয়ে দিয়ে করুনা করে বলবে নাও এই টাক দিয়ে কিছু খেয়ো,,,
কিন্তু কারো করুনা বা দয়ার পাএি হতে চায়না অভনী তাই আর কিছু না বলে সোজা হাটা শুরু করলো,,,হাঁটতে হাঁটতে যখন কিছুটা সামনে চলে গেলো তখন লোকটা দৌঁড়ে এসে অভনীর সামনে দাঁড়িয়ে হাপাতে লাগলো,,,অভনী চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে কি চায় লোকটা পিছু ছাড়ছে না কেনো?লোকটা বলে উঠলো,,
—চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
—নাহ আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আমি আপনার সাথে যাবোনা।
—কিন্তু আমি এমন গলি তে আপনাকে একা রেখে যেতে পারবো না,,,।এই গলি টা শেষ পর্যন্ত রাতের বেলা ছেলে দিয়ে ভরা থাকে আপনি নতুন আসছেন তাই হয়তো জানেন না। কিন্তু একটা মেয়েকে এমন যায়গায় একা রেখে চলে যাওয়ার শিক্ষা আমার মামুনি আমায় দেয়নি মিস।
অভনী বুঝতে পারছে লোকটার কথা না শুনলে পিছু ছাড়বে না,,,কিন্তু তার তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে মায়ের ঔষুধ আছে কিনা দেখতে হবে,,,না থাকলে আবার আনতে যেতে হবে,,,তাই আর কোনো কথা না বলে আবারো পিছন ফিরে হাঁটতে লাগলো,,,
লোকটার গাড়ির সামনে গিয়ে পিছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো সে কিন্তু লোকটা এসে বললো,,
—আমি আপনার ড্রাইভার নই তাই সামনে এসে বসুন
অভনী গাড়ি থেকে নামলো সামনে বসার জন্য,,, লোকটা গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,অভনী চুপচাপ গিয়ে সামনের সিটে বসে পড়লো।লোকটা দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো,,,
—কোন দিক দিয়ে বাসা?
—এইতো সামনের গলির পরের গলি তেই
—আমি আপনাকে আজ অন্য রাস্তা চিনিয়ে দিব ওইরাস্তা দিয়ে আসবেন কোনো প্রবলেম হবে না।
—-নাহহ আমি অন্য রাস্তা দিয়ে এখন যাবো না (চিল্লিয়ে)
— বিশ্বাস করতে পারেন তখন যখন কোনো ক্ষতি করিনি এখনো করবো না মিস,,,
btw নাম কি আপনার বার বার শুধু মিস টুকুই বলতেছি,,,
— স্মৃতি নুর অভনী,,, আপনার?
—ফারহান আহম্মেদ নীল,,, ওকে মিস অভনী সরি!!
—হুয়াই?
—তখন আপনাকে ওইভাবে বলা ঠিক হয়নি তাই,,,btw জব ছেরে দিবেন কেনো?
—মেয়েদের সব ছেলেরাই একটা বস্তু মনে করে,,, যাদের ভোগ করতে পারলেই নিজেদের আসল পুরুষ মনে করেন,,,হায়নার মতো ঝাপিয়ে পড়তে চায় সব সময় কিন্তু তারা জানেনা মেয়েদের যারা সম্মান করতে পারে তারাই আসল পুরুষ,,,,তারাই তার মায়ের উত্তম সন্তান,,,মেয়েদের দেবার সব থেকে বেশি পছন্দের উপহার হচ্ছে সম্মান।
যখন নিজের বাবার বয়সী MD নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকায় তখন সেই কাজ করা টা কি উচিৎ?
আমার বাব আমাকে বলতো সব কিছুর আগে নিজের সম্মান,,,তোমার সম্মান হানি হয় এমন কিছু কখনো করো না তাই এই জব টাও আমি করবো না।
কথা বলতে বলতে অভনীদের বাসার সামনে চলে আসলো ওরা,অভনী গাড়ি থেকে নেমে বললো,,,
—বাসার নিচে পর্যন্ত আসলেন আর বাসায় যাবেন না তা কি করে হয়,,,গরীবের বাসা থেকে না হয় এককাপ চা ই খেয়ে যান,,,তাছারা মা কে সব কথা বলার পর মা অবশ্যই আপনাকে দেখতে চাইবে। মা কে সেই সুযোগ টা না দেই কিভাবে বলেন (হালকা মুচকি হেসে)
—sure.why not?
—ভিতরে চলুন
অভনী গিয়ে বাসার কলিংবেল বাজালে অভনীর মা মিসেস শাহেরা দরজা খুলে দেন,,,,নিজের মেয়ে কে দেখে বলতে লাগলেন,,
—এতোক্ষনে আসলি তুই মা,,,আমার তোর জন্য চিন্তা হয় জানিস না তুই,,,আরিহা এখনো না খেয়ে বসে আছে তোর জন্য
ওদের কথার মাঝেই নীল এসে সালাম দিল অভনীর মা কে,,,অভনীর মা সালামের উত্তর দিয়ে বললো,,,
—তুমি কে বাবা? অভনী তুই চিনিস নাকি?
—হ্যা মা ভিতরে চলো আমি তোমায় সব বলছি,,,আসুন আপনি ভিতরে আসুন,,বসুন (অভনী)
নীল সোফায় বসলো,,,অভনী নিজের হ্যান্ড ব্যাগ টা রেখে রান্নাঘরে চলে গেলো চা বানানোর জন্য,,,তার পিছন পিছন তার মা ও গেলো রান্না ঘরে,,,আর বললো,,
—কিরে অভনী কে ছেলেটা,,, ওর বন্ধু হলে আগে তো কখনো দেখিনি আর দেখতে ও তো বড় তোর বন্ধু হবার তো কথা না (শাহেরা)
—মা আমাকে বলতে তো দাও? আসলে আমি যখন টিউশনি শেষ করে ওই সামনের দুইটা গলির পরের গলি টা দিয়ে আসতে নিলাম তখন কয়েকটা ছেলে পরে।আমি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলাম কিন্তু ছেলেগুলো আমার পথ আটকে দাঁড়ালো আর বাজে বাজে কথা বলতে লাগলো,,,
আমি একলা একটা মেয়ে কি করতাম বলো তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছিল,,,হঠাৎ একটা ছেলে আমার হাত ধরে ফেলে আর আমি কোনো কিছু না ভেবে ছেলেটা কে থাপ্পড় মেরে দেই।তখন সব গুলো ছেলে আমার প্রতি আরো রেগে গিয়ে আমাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো আমি চিল্লাচ্ছিলাম অনেকে দেখলো ও কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলো না।
তারপর একটা গাড়ি এসে থামে আমাদের সামনে গাড়ি থেকে এই লোকটা বেড়িয়ে আসে,,,।
আর ছেলোগুলো ওনাকে দেখেই আমাকে ছেড়ে গেলো মনে হয় আগে থেকেই ওনাকে চেনে।
তারপর আমাকে বাসার সামনে ড্রভ করে দিল তাই ভাবলাম বাসায় এনে এক কাপ চা তো খাইয়ো দিতেই পারি তাইনা (অভনী)
—ভালো করেছিস মা নিয়ে এসেছিস। এখন দেশে ওই খারাপ ছেলো গুলোর মতো ছেলের অভাব নেই কিন্তু এই ছেলেটার মতো ছেলের খুব অভাব।কতো বড় বিপদ থেকে বাচাঁলো আল্লাহ আজ তোকে (চোখের পানি মুছে)
আচ্ছা তুই চা বানিয়ে নিয়ে আয় আমি যাই একটু ছেলে টার কাছে কখন থেক একা একা বসে আছে (শাহেরা)
অভনী চা বানিয়ে সাথে বিস্কুট নিয়ে গেলো,,,, ওইখানে গিয়ে দেখলো লোকটা ওর মায়ের সাথে একদম মিশে গেছে,,, খুব হাসাহাসি করেই কথা বলছে ওরা,,,অভনী টি টেবিলে চা আর বিস্কুট টা রেখে বললো,,,
—নিন চা খেয়ে নিন পরে কথা বলুন নয়তো চা ঠান্ডা হয়ে যাবে (হেসে)
নীল চায়ের কাপ আর হাতে একটা বিস্কুট নিয়ে খেতে লাগলো,,, আর অভনী চলে গেলো আরিহার কাছে,,,তখন অভনীর মা বললো,,,
— মেয়েটা কে নিয়ে খুব চিন্তা হয় বাবা।কিন্তু কি করবো বলো আর তো কোনো উপায় ও নেই মেয়েটা কে কাজে না পাঠিয়ে,,,ওর বাবা মারা যাবার পর ১ মায় ছিলাম ওর নানুর বাসায় আমার ভাইয়ের কাছে।কিন্তু কতদিন ই বা অন্যের বাসায় থাকা যায় বলো,,ভাবি আমাদের সামনে ভালো ব্যাবহার করলেও আড়ালে ভাইয়ের সাথে রাগারাগি করতো তাই মেয়েদেরকে নিয়ে পাড়ি জমালাম ঢাকা শহরে,,,ইচ্ছা ছিল আমিই মানুষের বাসায় কাজ করবো কিন্তু মেয়ে আমার মানতে নারাজ বলে ও বেঁচে থাকতে নাকি কখনো ওর মা কে অন্যের বাসায় কাজ করতে দিবে না।
কিন্তু ও মেয়ে মানুষ দিন রাত কাজ করে কখন কি বিপদ হয়ে যায় বলা তো যায়না,,এই যেমন ধরো আজকেই তুমি না এলে হয়তো কাল সকালে বড় বড় অক্ষরে হেড লাইন হতো ওর মৃত্যুর খবরে অনেকে আফসোস করতো কিন্তু আমি আর ফিরে পেতাম না আমার কলিজার মেয়ে টাকে,,,শাস্তিও হতো না ওর খুনিদের,,কারন টাকা দিয়ে এখন খুনিদের ও সাধু বানানো যায়,,,দর্শক দের ফাসি রায় হয়েও ফাঁসি হয়না (কাঁদতে কাঁদতে),,,তোমাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা আমার জানা নেই বাবা (শাহেরা)
—আন্টি আমি যদি আপনার ছেলে হতাম তাহলে কি আপনি এভাবে ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট করতে পারতেন বলোন?
তখনি সেখানে অভনী আসলো,,,,অভনী বললো,,
— কি কথা হচ্ছে মা তোমাদের এতো?(হেসে)
—তেমন কিছুইনা,,,আজ উঠি তাহলে,,,কাজ আছে আমার,,, ভাগ্য থাকলে আবার দেখা হবে (নীল)
—আবার এসো বাবা কেমন? (শাহের)
—অবশ্যই কেন নয় (হেসে নীল)
—ভালো থাকবেন। (অভনী)
—হাম আমার এই কার্ট টা রাখোন হয়তো দরকার পড়লেও পরতে পারে। (হেসে)
বায়। (নীল)
নীল চলে গেলে অভনী ওর মা আর আরিহা একসাথে খেতে বসে পরে,,,অভনী বলে,,,
—মা তোমার ঔষুধ আছে?
—হুম আছে ২ দিন পরে আনলেও হবে এখন আর যেতে হবে না (শাহেরা)
(অভনী আর আরিহা দুই বোন ওদের কোনো ভাই নেই,,মা আর বোন কে নিয়েই অভনীর সংসার,,,আরিহা ক্লাস ৮ এ পরে আর অভনী এইচএসসি দিয়েছে,,,বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডক্টর বানাবে কিন্তু সেই স্বপ্ন বাবা নিজেই সাথে নিয়ে চলে গেলো,,,, তবুও অভনী হাল ছারে নি জব টিউশনির পাশাপাশি অনেক রাত পর্যন্ত নিজের পড়াশোনা করে সে,,,
বাবার স্বপ্ন যে তাকেও রাতে ঘুমাতে দেয়না,,,)
খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরলো,,একটা রুম ভাড়া নিয়েছে ওরা।মা আর বোনের ডিস্টার্ব হবে বলে বেশিরভাগ সময় ডায়নিং রুমে গিয়ে পড়ে সে তবে ওর মা ও অনেক সময় ওর পাশে বসে থাকে।আজ আর অভনী পড়তে বসে নি খুব টায়ার্ট সে আর নীল কে নিয়ে আজ না চাইতেও খুব ভাবাচ্ছে তাকে।
সত্যিই পৃথীবিতে সব ছেলে এক হয়না আবার সব মেয়েও এক হয়না।
ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো অভনী,,,,
পরদিন সকালে,,,,,
চলবে,,,,
#আমার রাজ্যের রানী
#part:1
#Writter:Sriti nur avni
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,,,রেসপন্স পেলে নেক্সট দিব)