– ফাহয়াজ খানের ভালোবাসা হয়ে অন্য কারো স্পর্শে আসার স্পর্ধা তোমাকে কে দিয়েছে জুহিপাখি?(শীতল কন্ঠে)
জুহির গলা চেপে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে ফাহয়াজ।জুহির নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার থেকে বেশি ভয় করছে ফাহয়াজের এই শীতল কন্ঠ শুনে।
জুহি বেশ বুঝতে পারছে আজ ফাহয়াজ তার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু না কিছু করবেই।
জোড়ে গলা চেপে ধরার জুহির খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখ থেকে অনবরত জল চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়তে লাগলো তার।
ফাহয়াজ জুহির গলা ছেড়ে দিলো।
জুহির থেকে দূরে গিয়ে বাকাঁ হেসে বলে উঠলো।
– জুহিপাখি আজকে তোমাকে এমন এক যন্ত্রণা দিবো না!কখনো আমার স্পর্শ ছাড়া কারো স্পর্শে আসার কথাটাও জেনো না ভাবতে পারো!
(বলেই ফাহয়াজ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
এদিকে জুহি গলায় হাত দিয়ে কাশঁতে কাশঁতে দেয়ালের সাথে ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো।
নিয়তি তার সাথে এতই নিষ্ঠুর আচরণ ঠিক করে রেখেছে যে যার কারণে ফাহয়াজ খান নামক
সাইকো ব্যাক্তিটা তার লাইফে এসেছে।জুহি কিভাবে ফাহয়াজকে বোঝাবে যে সে কারো হাত ধরেনি,সেতো কোন ভুলও করেনি।
জুহি নিশ্চুপে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদঁতে লাগলো।ফাহয়াজ যে আজ ভয়ংকর কান্ড ঘটাবে তা জুহির জানা হয়ে গেছে।
জুহির কিছুক্ষণ আগে ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনে পড়লো।
কিছুক্ষণ আগে ভার্সিটিতে,,
ক্লাস শেষ করে বেষ্টফ্রেন্ড সাথে ননদিনী নীলার সাথে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো জুহি।মাথা নিচু করে হাটাঁর দরুন তাদের সিনিয়র তানভীরের সাথে ধাক্কা খায় জুহি।
যার কারনে সে পড়ে যেতে নেয়।তানভীর দ্রুত জুহির হাত এবং কোমড় আকঁড়ে ধরে জুহিকে টান দেয়।
এতে জুহি তানভীরের বুকের মাঝে গিয়ে পড়ে।
জুহি ভয়ে দ্রুত তানভীরের কাছ থেকে দূরে সরে আসে।
এতে তানভীর কিছুটা ভ্রু কুচকায়।জুহিকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।ধাক্কা লাগার ফলে জুহির হাতে থাকা বই্গুলো মাটিতে পড়ে যায়।তানভীর বই গুলো উঠিয়ে জুহির দিকে এগিয়ে দেয়।
জুহি হাত বাড়িয়ে বই দুটো নেওয়ার সময় তানভীর ইচ্ছা করে জুহির হাত স্পর্শ করে।
জুহির সেফটির জন্য ফাহয়াজ তার দুটো লোক ভার্সিটিতে জুহির জন্য পাঠিয়েছিলো।সেই দুজনের মধ্যেই একজন এইসব ভিডিও করে ফাহয়াজকে পাঠিয়ে দেয়।
ফাহয়াজ এসব দেখে রাগে দ্রুত ভার্সিটিতে এসে কিছু না বলেই জুহিকে টেনে হিচঁড়ে ভার্সিটি থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
.
হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতেই হুশে ফিরলো জুহি।সামনে তাকিয়ে দেখলো ফাহয়াজের হাতে একটা ধারালো ব্লেড যা দিয়ে ফাহয়াজ জুহির হাতে সমান করে একটা টান দেয়।
মুহুর্তেই ফিনকি দিয়ে জুহির হাত থেকে রক্ত বের হতে থাকে।এটা দেখে জুহি মাথা ঘুড়তে লাগলো।চিৎকার করতে পারছে না বিধায় জুহি কাদঁতে লাগলো।জুহির কান্নাতে যেনো ফাহয়াজ মজা পাচ্ছে অনেক মজা পাচ্ছে ঠোঁটে বাকাঁ হাসি জুলিয়ে গুড়ো মরিচের বক্স থেকে এক চিমটি গুড়ো মরিচ হাতে নিলো আর নেশাক্ত গলায় জুহিকে বলে উঠলো।
– ফাহয়াজ খানের যন্ত্রণা অনেক কস্টদায়ক কারন সে হৃদয়হীনা বুঝেছো জুহিপাখি!তোমার ভালোবাসার জন্য সে হৃদয়হীনা!এটাতো সবে শুরু জুহিপাখি আমার আগুনে তো তোমাকে পোড়ানো এখনো বাকি আছে!(বলেই মুচকি হেসে গুড়ো মরিচ জুহির কাটাঁ স্থানে ছিটিয়ে দিতে লাগলো ফাহয়াজ)
জুহির চারপাশ অন্ধকার হাতে লাগলো।প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে জুহি।এই মুহুর্তে নিয়তিকে তার খুব খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে।কেনো ফাহয়াজ খান তার জীবনে আসলো,কেনো সে এভাবে সকলের সামনে অপমানিত হয়ে ফাহয়াজ খানের সাথে নিজের নামটা জুঁড়ে নিলো।
জুহি আর কিছু ভাবতে পারছে না চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে তার।একপর্যায়ে জুহি ব্যাথা সহ্য না করতে পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
.
.
জুহিকে নিস্তেজ হতে দেখে ফাহয়াজ জুহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
এক দৃষ্টিতে জুহির দিকে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে,নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
– আমার শহরের ভালোবাসা খুব কঠিন জুহিপাখি!কস্ট হচ্ছে তোমার,,জানো তোমার এই কস্টের চেয়ে আমি আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছি!
আমিটা আর আমার মধ্যে নেই জুহিপাখি আমিটা তোমার মাঝে বিলীন হয়েছি সেই ২ বছর আগ থেকে।
আমার ভালোবাসার আগুনের যন্ত্রণা এখন থেকে তুমি অনুভব করবে জুহিপাখি।এক্টু এক্টু করে আমার ভালোবাসার আগুনে পোড়াবো তোমায়(বলেই ফাহয়াজ জুহির গালে একটা চুমু দিয়ে হন হন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
.
.
ফাহয়াজ রুম থেকে বেরুতেই নীলার সম্মুখীন হলো।নীলা করুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
– ভাইয়া তুই জুহির সাথে এইরকম আচরণ না করলেও পারতি!এতে ওর কোন দোষ ছিলো না সব দোষ ওই তানভীরেছিলো!আমি দেখেছি ওই তানভীর ইচ্ছে করে জুহির হাতের সাথে হাত স্পর্শ করিয়েছে!আর জুহির দিকে বাজে নজরেও তাকিয়েছে(করুন স্বরে)
ফাহয়াজ নীলার কথা শুনে বাকাঁ হেসে বলে উঠলো।
– এটা তো সবে শুরু আমার আগুনে তোহ্ জুহিকে আরও পোড়াতে হবে!ওর জন্য গত দু বছর আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারিনী এক নরক যন্ত্রণা অনুভব করেছি যেই যন্ত্রণাটা ভালোবাসার যন্ত্রণা!
আর সেই তানভীরের ব্যবস্থা করতেই যাচ্ছি তাকে বোঝাবো ফাহয়াজ খানের জিনিসের দিকে নজর দিলে কি পরিণাম হয়।(বাকাঁ হেসে কথাটা বলেই ফাহয়াজ হন হন করতে করতে চলে গেলো)
ফাহয়াজ যেতেই নীলা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।জুহির রুমের সামনে গিয়ে জুহির ঘুমন্ত মুখটা দেখে মনে মনে বলে উঠলো।
– জুহি তুমি খুব লাকি আমার ভাইয়াকে পেয়ে!জানো আমার ভাইয়াটা না তোমাকে খুব ভালোবাসে তাই তো তোমার জন্য এত পাগলামী করে!(নীলা পুনরায় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে জুহির রুম ত্যাগ করলো)
💖_____________💖_____________💖
হাতের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করায় চোখ মেলে তাকালো জুহি।কোন মতে উঠে বেড সাইডের সাথে হেলান দিয়ে বসলো সে।হাতে প্রচন্ডরকম ভাবে ব্যাথা করছে পাশাপাশি জ্বলছেও।
হাতের দিকে তাকালো জুহি দেখলো হাত ব্যান্ডেজ করা।
এই লোকটা প্রথমে কস্ট দিবে দ্বিতীয়তে ভালোবাসবে।
তবে আপাতত ফাহয়াজের জন্য জুহির কাছে হাজারো অভিমান আর ঘৃনা জন্মিয়েছে।
জুহিকে একটা কথা ভিষণ ভাবাচ্ছে ফাহয়াজ কেনো তাকে সবার সামনে খারাপ প্রমাণ করে বিয়ে করলো! দ্বিতীয়ত ফাহয়াজ কেনো তাকে এত কস্ট দিচ্ছে।
দরজা খোলার শব্দে সেদিকে দৃষ্টি দিলো জুহি।দেখলো ওয়াশরুম থেকে শুধু একটা টাওয়াল পেচিঁয়ে সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে ফাহয়াজ।
চুল থেকে টপটপ করে পানি গড়িতে মুখশ্রী বেয়ে শরীরে পড়ছে।
জুহি ফাহয়াজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ফাহয়াজ আরেকটা টাওয়াল নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথা মুছছে।
হঠাৎ আয়নাতে ফাহয়াজের চোখে জুহির চোখ পড়লো।জুহি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো আর মাথা নিচু করে ফেলল।
আজকে ফাহয়াজ যা করেছে তার জন্য তো ওকে কখনোই ক্ষমা করবেনা জুহি।
মনে মনে এটা ভেবেই অভিমানে গাল ফুলিয়ে নিলো জুহি।
-“এভাবে লজ্জাবতীর মতো চোখ নামানোর কি আছে তোমারই তো জিনিস আফটারঅল আই এম ইউর হাসবেন্ড তাকাতেই পারো!এতে এভাবে লজ্জা পেয়ে লজ্জাবতীর মতো মুখ করার কি আছে!চাইলে চোখ দিয়ে আমায় গিলেও খেতে পারো?(বাকাঁ হেসে বলল ফাহয়াজ)
ফাহয়াজের এহন কথা শুনে লজ্জায় কান থেকে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো জুহির।জুহি আর গভীর মাথা ভাবে নুঁইয়ে নিলো।
লোকটা এত বেহায়া কেন?
মুখে কিছুই আটকায় না নির্লোজ্জ কোথাকারের।
এদিকে জুহিকে লজ্জায় লাল,নীল হতে দেখে বাঁকা হাসলো ফাহয়াজ।মেয়েটা লজ্জা পেলে না একদম তার হৃদমাঝারের লজ্জাবতীর মতো লাগে।
ফাহয়াজ মুচকি হেসে জুহির দিকে থেকে নজর সরিয়ে রেডি হতে লাগলো।
ফাহয়াজ রেডি হয়ে জুহির দিকে ফিরে তার দিকে এগিয়ে গেলো।এদিকে ফাহয়াজকে নিজের কাছে আসতে দেখে জুহির বুকের হৃদপিন্ড তরিৎগতিতে ছুটতে লাগলো।
ভয়ে জুহি মাথা নুইয়ে নিলো।ফাহয়াজ জুহির কাছে এসে জুহির গাল থেকে মুখ উচিঁয়ে চোখের পাতায় শব্দ করে একটা চুমু খেলো।
জুহি পুনরায় লজ্জায় পড়ে গেলো।
চলবে,,
[পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]
[ রেসপন্স পেলে পরবর্তী পর্ব দ্রুত দিবো নয়তো কয়েক পর্বেই সমাপ্তি ঘটবে।আশাকরি গল্পটা আপনাদের ভালো লাগবে]
#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-১ |
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)