#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-১১ |
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে জুহি।ক্ষণে ক্ষণে ফাহয়াজের কথা গুলো মনে পড়ছে তার।
ফাহয়াজ তার আগের চেনা,তারা বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ।
জুহি বিশ্বাস করতে পারছেনা যে ফাহয়াজ খারাপ কাজে লিপ্ত আছে।
আর যাই হোক ফাহয়াজকে সে আগে যতই ভুলে যাক এ কয়েকদিন ভালোই বুঝেছে।
আর যাই হোক ফাহয়াজ এইসব খারাপ কাজে লিপ্ত না।
জুহি মন দিয়ে ভাবছে কেউ তো আছে যে ফাহয়াজকে সবার সামনে খারাপ প্রমান করতে চায়,তার বাবাকে ওইসব কথাও ফোনে বলেছিলো।
আবার ফাহয়াজের আকস্মিক মৃত্যু।জুহি নিতে পারছেনা এইসব অদ্ভুত এক্টা কস্ট তাকে ঘিরে ধরেছে।
জুহি আর কিছু না ভেবে চোখ বন্ধ করে নিলো মাথা টা তার ঝিমঝিম করছে।
অন্যদিকে।
রিয়ান বাকাঁ হাসি দিয়ে হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে বসে আছে সব কিছু প্ল্যান মাফিকই হচ্ছে।
এখন শুধু সবার সামনে নিজেকে প্রমানে করা বাকি আছে।
রিয়ান মন দিয়ে ভাবছে একসময় কতোটা ভালোবাসতো জুহিকর তবে ভালোবাসাটা আর এক নজর দেখাটা বহু দূরে ছিলো সবসময় এক্টা ছবিতেই দৃষ্টি দুটোর তৃষ্ণার্থ চাহনি মেটাতো।
রিয়ান ভাবছে পথের কাটা হিসেবে কেউ নেই এখন জুহি তার হবে শুধু তার।
ভাবতেই রিয়ান বার বার বাকাঁ হাসছে।
রিয়ানে হঠাৎ মনে পড়লো রুবার কথা।রিয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে তার ফার্মহাউসের দেখভাল কারি মি.আশিফ অর্থাৎ যিনি ফার্মহাউসটা দেখাশোনা করেন তাকে ফোন দিলো।
– মেয়েটা কি বেরিয়ে গেছে!(গম্ভীর গলায় বলল রিয়ান)
ওপাশ থেকে আশিফ কাঠভেজা গলায় বলে উঠলো।
– হ্যাঁ স্যার দু,এক ঘন্টা হলো মেয়েটা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে!(কাঠভেজা গলায় বলল আশিফ)
রিয়ান গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।
– ঠিক আছে!(গম্ভীর গলায় বলল রিয়ান)
গম্ভীর স্বরে কথাটা বলেই ফোন কেটেঁ দিলো রিয়ান।আশেপাশে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আজকের মধ্যেই সে জু্হির কাছে যাবে ওর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে।
_
রুবা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে নদীর সামনে বসে আছে।বাড়িতে আসার পর থেকে তার মা,বাবা তাকে অনেক বকাবকি করেছে নদীকে একা পার্কে রেখে আসার জন্য।
কিন্তু রুমে রুবা নদীকে সব খুলে বলেছে।
সব শুনে নদীও গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
রুবাকে কত বকাযকা শুনতে হলো আজকে।এটার জন্য নদীরও খারাপ লাগছে।
রুবার মুড ভালো করার জন্য নদী বলে উঠলো।
– লেবু চল কালকে আমরা কোথাও ঘুড়তে যাবো আমার না খুব ঘুড়তে ইচ্ছে করছে!(মুচকি হেসে)
রুবা মুখ ভার করে মাথা জাকালো মানে যাবে সে।
____________
রাতে ১০ টা।
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে জুহি।শরীর চলছেনা একদম নিস্তেজ।জুহির অবস্থা তেমন ভালো নেই বলে ডক্টর তাকে এখানে থেকে যেতে বলেছে।
জুহির সাথে শুধু নীলাই থেকে গেছে।
নীলা সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে সবে মাত্র জুহির কেবিনে এসে বসলো।
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে জুহি চোখ খুলে তাকালো।দেখলো নীলা টুল পেতে তার পাশেই বসেছে।
নীলা নির্লিপ্ত গলায় বলে উঠলো।
– আংকেল তোকে সব বলেছে আজকে!
জুহি চমকে নীলার মুখের দিকে তাকালো।
– হুম! আমি কখনো এমনটা ভাবতে পারিনী নীলা! তোরা আমার পূর্বপরিচিত।
– হুহ! জানিস আমার ভাইয়াটা এমন নারে! এই সব কিছুর পিছনে অন্য কারো হাত আছে!
(গম্ভীর গলায়)
জুহি উৎসুক চোখে নীলার দিকর তাকিয়ে বলে উঠলো।
– কে সে তুই জানিস!(উৎসুক গলায়)
নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
– হুম রিয়ান!
জুহি বিস্মিত হয়ে বলে উঠল।
– রিয়ান কে!
নীলা জুহির দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করল। পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো।
– ফাহয়াজ ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো রিয়ান ভাইয়া!ওনার পুরো নাম রিয়ান আহমেদ!ফাহয়াজ ভাইয়া আর রিয়ান ভাইয়া দুজনে ই সবসময় একে অন্যের বিপদে পাশে থাকতো!কিন্তু হঠাৎ একদিন রিয়ান ভাইয়া দেশ ছেড়ে চলে যান!ফাহয়াজ ভাইয়া এতে কোনো প্রতিক্রিয়া করেন নি অথচ এরাই একে অপরের প্রাণ ছিলো।
এরই মধ্যে প্রায় পাচঁ ছয় মাস কেটে যায় রিয়ান ভাইয়া আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেননি কে তা জানিনা ভাইয়াও চুপ ছিলো।তখন আমার মনে হয়ে কোন এক্টা জিনিস নিয়ে তাদের মধ্যে ভিষণ ঝগড়া হয়েছে!
এমন একদিন সকালে ফাহয়াজ ভাইয়ার রুমে ব্রেকফার্ষ্ট দিতে গিয়েছিলাম তখন ভাইয়া রুমে ছিলোনা ভাইয়ার ফোন অনবরত বাজছিলো তাই আমি রিসিভ করেছিলাম।রিয়ান ভাইয়া ফোন করেছিলো আমি কিছু বলার আগেই ভাইয়া অত্যান্ত রাগী গলায় বলে উঠলো
সে ভাইয়াকে ছাড়বে না ভাইয়া নাকি তার জিনিস ছিনিয়ে নিচ্ছে!ভাইয়াকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা!
বিশ্বাস কর জুহি ওই সময়ে আমি বাকহীন ছিলাম!
কি এমন হয়েছে যে রিয়ান ভাইয়া ফাহয়াজ ভাইয়ার উপর এত ক্রুদ্ধ হয়েছে!এরপর আর রিয়ান ভাইয়া কখনোই কল করেননি!(পুরো একদমে বলে আটকালো নীলা)
জুহি চুপ করে নীলার কথা শুনছে।ফাহয়াজ রিয়ানের থেকে কি এমন কেড়ে নিয়েছিলো যে সে আর ফাহয়াজ দুজনে দুজনের উপর রাগ করলো।
সব মিলাচ্ছে জুহি।যদি সত্যিই রিয়ান ফাহয়াজের ক্ষতি করতে চায় তাহলে।ফাহয়াজের এই এক্সিডেন্টে রিয়ানের হাত থাকবেই থাকবে।
জুহি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নীলাকে বলে উঠলো।
– নীলা তুই যা কিছু খেয়ে আয় সারাদিন কিছুই খাসনি!পরে তোর শরীর খারাপ করবে যা ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে আয়!
(দীর্ঘশ্বাস নিয়ে)
নীলারও খুব ক্ষিদে পেয়েছে বিধায় সে চলে গেলো ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে আসার জন্য।
নীলা চলে যাওয়ার সাথে জুহি চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো সব কিছু।ফাহয়াজের কথা বেশি করে তার মনে পড়ছে।
হঠাৎ মুখের উপর ঠান্ডা তরল জাতীয় কিছু পড়ার জন্য চোখ মেলে তাকালো জুহি।
পাশে তাকালো দেখলো হুডি পড়া কেউ মুখে মার্ক্স লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে।
এটা দেখে জুহি কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে বেড থেকে উঠে হেলান দিয়ে বসলো।
ভ্রু কুচঁকে সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে বলে উঠলো।
– আপনি কে!এখানে কি করছেন!(ভ্রু কুচঁকে)
সামনে থাকা ব্যাক্তিটা কিছুক্ষণ জুহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
– আমাকে ভুলে গেছো জুহুরানী ! অবশ্য ভুলে যাবারই কথা আমাদের শেষ দেখা হয়েছিলো তিন বছর আগে।ভুলে গেছো আমায় জানো আমি কে রিয়ান!তোমার সাথে প্রতিদিন আমার দেখা হতো এভাবেই দেখা হতে হতে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু তোমাকে আমি আমার মনের কথা গুলো বলতে পারলাম না তার আগেই তুমি অন্য কারো নজরে পড়ে গিয়েছো!জানো তখন রাগ হয়েছিলো প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো সেই তোমার উপর নজর দেওয়ার মানুষটার উপর!আমি এতোটা ই হৃদয়হীন হয়ে গেছি যে তাকে মারতেও দুবার ভাবিনী!(ভ্রমহীন গলায়)
জুহি র ভয়ে,বিস্মিতে খিচেঁ বেডের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
জুহির মনে হচ্ছে নীলা এক্টু আগে যেই রিয়ানের কথা বলেছিলো সেটা আর কেউ না তার সামনে থাকা ব্যাক্তিটি ।
জুহি এবার ভয় না পেয়ে জড়তা কাটিয়ে বলে উঠলো।
– তারমানে আপনি ফাহয়াজের বেস্টফ্রেন্ড রিয়ান আহমেদ!আর ফাহয়াজের এই এক্সিডেন্ট নিখোঁজ হওয়া সব আপনারই জন্য হওয়া!
রিয়ান উচ্চস্বরে হেসে উঠলো মুখে থেকে মার্ক্স সরিয়ে বলে উঠলো।
– ফাহয়াজকে আমিই এক্সিডেন্ট করিয়েছি!কারন আমার ভালোবাসার দিকে সে নজর দিয়েছে!এমনকি তাকে বিয়েও করেছে তাহলে বলো আমার কি করা উচিৎ ছিলো সরিয়ে দিয়েছি তাই তাকে!এখন তুমি শুধু আমার না চাইলেও!
ফাহয়াজে র আশা ছেড়ে দাও ও আর আসবে না কখনো না কারন ওকে এমন এক্টা জায়গায় পাঠিয়েছি যেখানে গেলে আর ফেরা যায় না ! (বলেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো রিয়ান)
জুহি অবাক হচ্ছে বেস্টফ্রেন্ড হয়ে বেস্টফ্রেন্ডের সাথে কেউ এমনটা কিভাবে করতে পারে।
চলবে,,,
(এতো দেরির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। গ্রুপে পোস্ট ব্লকে ছিলাম তাই দিতে দেরি হয়েছে।)
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)