#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-২ |
জুহি ফাহয়াজের ছোঁয়ায় লজ্জা পাচ্ছে ঠিকিই তবে মনের ভেতরে ফাহয়াজের জন্য একরাশ ঘৃনার জন্ম জন্মাচ্ছে জুহি।
ফাহয়াজ জুহির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠলো।
– আজকের জন্য সরি জুহিপাখি!আমি জানি আমি জঘন্যতম একটা আচরণ করেছি তবে তখন ওইসব দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা তাই রাগের বশে তোমার সাথে এইরকম আচরণ করে ফেলেছি!তার জন্য আমি সরি!(মিহি কন্ঠে বলল ফাহয়াজ)
কথাটা বলেই চোখ নামিয়ে নিলো ফাহয়াজ।ফাহয়াজ জুহির চোখের দিকে তাকাতে পারছে না সে জানে জুহি ঘৃনার চোখে তার দিকে তাকাবে। ফাহয়াজ জুহির চোখে তার জন্য ঘৃনা দেখতে পারবে না কিছুতেই না।
সেতো জুহিকে ভালোবাসে।
নিজের ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে ফাহয়াজ কখনোই ঘৃনা আশা করতে পারবেনা।
তবে ফাহয়াজ জুহির সাথে আজকে যা করেছে ফাহয়াজ জানে সে ক্ষমার যোগ্য না।
রাগের বশে এতটা খারাপ থেকেও জঘন্য আচরণ করে ফেলেছে ফাহয়াজ।
নিজের ভালোবাসার পাগলামীর জন্য জুহিকে আজ এতটা কস্ট দিয়েছে ফাহয়াজ।
জুহি তার নিজ বুঝের মতো ঘৃনার দৃষ্টি ফাহয়াজের দিকে নিক্ষেপ করলো।
ফাহয়াজ জুহিকে ছেড়ে হন হন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
জুহি এতটা নিরবতা দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না।
ফুপিঁয়ে কেদেঁ উঠলো।
– নিয়তি কেনো সবসময় আমার সাথেই এমন করে!ছোট বেলা থেকে সবার কাছ থেকে এতটা অবহেলা এতটা কস্ট পেয়ে আসছি এখনও কি আমার নিয়তিতে সুখ জুটবে না!
কেনো ফাহয়াজ খান নামের লোকটার সাথে নিয়তি আমাকেই জড়িয়ে ফেলল!(ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কান্না করতে করতে বলল জুহি)
পরমুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো ফাহয়াজ খানের সাথে তার প্রথম দেখা হবার বিষয়টা।
জুহি সেদিনের কথা ভাবতে লাগলো
_______💖______________________
নীলার বার্থডে উপলক্ষ্যে পুরো খান বাড়ি ঝাঁকঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে।
চারদিকে মরিচ বাড়ি আর ফেইরি লাইটে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে।
জুহি খুব সিম্পল ভাবে বার্থডেতে এসেছে।
মেরুন কালার একটা শাড়ি আর মুখে হালকা সাজঁ।
চারদিকে মিউজিক বাজছে জোরে জোরে।নীলা আর জুহি বাড়ির এক সাইডে করা সুন্দর ব্রাইট ডেকোরেশনের স্টেজে দাড়িয়ে আছে।
সবাই জুহিকে বার্থডের উইস করছে আর গিফট নীলার হাতে দিচ্ছে।নীলার পাশেই দাড়িয়ে আছে জুহি।
একেতো পাশেই এত জোরে জোরে মিউজিক বাজছে দ্বিতীয়ত সবাই জুহির দিকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে।
জুহি পড়েছে মহা ফ্যাসাদে এত লোকের চাহনী তাকে বারবার খুব অস্বস্তি ফিল করাচ্ছে।
জুহি নীলার কানে কানে ফিস ফিস করে বলে উঠলো।
– নীলু আমার নাম খুব অস্বস্তি ফিল হচ্ছে আমি একটু বাগান থেকে ঘুড়ে আসছি।কেক কাটতে কাটতে আমি চলে আসবো!
(ফিস ফিস করে বলে)
কথাটা বলেই আর নীলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে যেতে লাগলো জুহি।এত লোকের ভিড়ে থেকে খুব অস্বস্তি হচ্ছে জুহি।
জুহি স্টেজ থেকে নেমে বাগানের উদ্দেশ্যে হাটঁতে লাগলো।
বাগানে এসে জুহি চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো বাগানটাও বেশি ঝাঁকঝমক,উজ্জল ভাবে সাজানো হয়েছে।
বলতে গেলে এক কথায় ডেকোরেশনটা টা অসাধারণ হয়েছে।
জুহি ক্লান্ত মন নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে হাটঁতে লাগলো।
বেখেয়ালি ভাবে হাটঁতে গিয়ে হঠাৎ কোন শক্তাআকারের বিশাল দেহের অধিকারে একটা ছেলের সাথে ধুম করে ধাক্কা খেয়ে বসে জুহি।
ফাহয়াজ উল্টো ঘুড়ে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে ছিলো
হঠাৎ কেউ তার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় বিষন্ন মনে পিছু ঘুড়লো ফাহয়াজ।
এদিকে জুহিও উপসস একটা চেহারা নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো।
ফাহয়াজ তাকাতেই জুহি জিভ কেটে অনুনয়ের স্বরে বলে উঠলো।
– দুঃখিত আসলে আমি দেখতে পাইনি!তার জন্য আমি অনেক দুঃখিত ক্ষমা করবেন আমায়!(অনুনয়ের স্বরে বলল জুহি)
ফাহয়াজ অবাক চোখে নিরলা জুহির চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।
সেই চোখ,সেই ঠোঁট ফাহয়াজ জেনো কল্পনায় আছে।
এদিকে ফাহয়াজকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রুযুগল কুচঁকে ফাহয়াজের দিকে তাকালো জুহি।
জুহির এমন চাহনী মুহুর্তেই ফাহয়াজের মনকে গ্রাস করে নিলো।
ফাহয়াজ অবিশ্বাসী চেহারায় ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে জুহির ঠোঁট স্পর্শ করলো।
ফাহয়াজের আচমকা ঠোঁট স্পর্শ করাতে চমকে দুপা পিছিয়ে গেলো জুহি।
চোখ দুটো বড় বড় করে ফাহয়াজের দিকে তাকালো জুহি।
কি অসভ্য লোক।
জুহি আর এক মুহুর্তেও ওখানে দাড়ালো নাহ্ দ্রুত পায়ে জায়গা,স্থান ত্যাগ করলো জুহি।
এদিকে স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে ফাহয়াজ।
অগোছালো চুল,শার্ট।চোখের নিচে হালকা কালচে দাগ জমেছে তার যেনো কত রাত সে ঘুমায় না।
ফাহয়াজের ভাবনার মাঝেই তার ঠোঁটে এক চিলতে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।
যেনো সে তার জীবনের লক্ষ্যে ফিরে পেয়েছে।
এদিকে বিরবির করতে করতে নীলার কাছে চলে গেলো জুহি।
_________💖___________________
ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো জুহি।চোখে মুখে একরাশ অস্তিরতা ফুটেঁ উঠেছে তার।
চোখ গুলো ভিষণ ক্লান্ত জেনো তার আর জেগে থাকতে পারছে না।
জুহি মনে মনে ঠিক করেছে ফাহয়াজের করা এই কাজটার জন্য তাকে কখনোই ক্ষমা করবেনা জুহি।
জুহি পরম আবেশে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো।
অন্যদিক,,🌸🌸
অনাথ আশ্রমের সামনে দাড়িয়ে আছে ফাহয়াজ।জুহির সাথে করা কাজের জন্য খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে ফাহয়াজের।
সে অত্যান্ত অনুতপ্ত।
ফাহয়াজের নিজের রাগের উপর খুব রাগ লাগছে।রাগ উঠলে কেনো সে রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনা।
ফাহয়াজ বিষন্ন মন নিয়ে অনাথ আশ্রমে প্রবেশ করলো।
মুহুর্তেই ওখানে আশে পাশে থাকা সকল বাচ্চারা তাকে দেখে খুশি হয়ে ‘ভাইয়া’ বলে দৌড়ে ফাহয়াজকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
মুহুর্তেই ফাহয়াজের মুখে স্নান হাসি ফুটে উঠলো।
তার মন খারাপের একটাই স্থান হলো এই অনাথ আশ্রম।
ফাহয়াজ স্নান হেসে বলে উঠলো।
– কেমন আছে আমার মাম্মাম,বাবাইরা!(স্নান হেসে)
মুহুর্তেই ওখানে থাকা সকল বাচ্চাগুলো খিলখিলিয়ে হেসে বলে উঠলো।
– ভালো আছি ভাইয়া;তুমি এতদিন এখানে আসোনি কেনো ভাইয়া।
প্রত্তুরে ফাহয়াজ মৃদু হাসলো।
এরপর বলে উঠলো।
– আসলে কি জানো মাম্মাম,বাবাই আমি এতদিন বিজি ছিলাম তাই তোমাদের সাথে দেখা করা হ্য়নি।চলো ভেতরে চলো।
ফাহয়াজ বাচ্চাদের সাথে অনাথ আশ্রমের ভেতরে চলে গেলো।আজকে আর বাড়িতে যাওয়ার প্ল্যান নেই ফাহয়াজের
আজকে সারারাত এখানেই কাটাবে ফাহয়াজ।ফাহয়াজের বারবার তার প্রতি জুহির ঘৃনার্থ দৃষ্টি গুলো মনে পড়ছে।
তবুও মুখে স্নান হাসি রেখে বাচ্চাগুলোর সাথে খেলছে ফাহয়াজ।
🍃
ভোরের আলো ফুটেছে সবেমাত্র।মুখের মধ্যে সকালের শীতকালীন মিষ্টি রোদ এসে পড়তেই মুখ হাত দিয়ে ঢেকে নিলো জুহি।
বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।রুমের চারিদিকে একবার পর্যবেক্ষণ করর নিলো জুহি।
পরক্ষনণেই মনে পড়লো কাল রাতে তো ফাহয়াজ বাড়িতে আসেনি।
ফাহয়াজের কথা মন থেকে মুছে ফেলল জুহি।এই লোকটার কথা ভাবতেও ঘৃনা লাগে।
জুহি বিছানা ছেড়ে উঠে কার্বাড থেকে একটা থ্রীপিস বের করলো।
অতঃপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
__
নীলার রুমে বসে আছে জুহি।নীলা আর জুহি দুজনেরই মাঝে পিনপনতা নিরবতা।
নীলা জুহিকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
জুহি বাকহীন হয়ে নীলার দিকে চেয়ে আছে।
নীলা পিনপনতা নিরবতা কাটিয়ে জুহির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
– আ আব জুহি আমি কি তোমাকে আগের মতো তুই করে ডাকতে পারি!না মানে তুমিতো আমার বর্তমানে সম্পর্কে ভাবী হও!
জুহি ফ্যাকসে মুখে বলে উঠলো।
– যেখানে আমি এই সম্পর্কটাকে প্রশ্রয়ই দেয়নি সেখানে তোর আমাকে ভাবী ডাকার কোন মানেই নেই নীলু!আমি এই সম্পর্কটাকে মানি না!
যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে এই বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে পালিয়ে যাব নীলু।বিশ্বাস কর আমি এই সাইকো,পাগল লোকটার সাথে থাকবো না নীলু!
(বলতে বলতে ফুপিঁয়ে কেদেঁ উঠলো জুহি)
নীলা স্পিচলেসদের মতো জুহির চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।নীলারও রাগ হচ্ছে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
আজ শুধু ফাহয়াজের জন্য জুহি এতটা কস্ট পাচ্ছে।
চলবে,,
[পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)