আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই💖 পর্ব-৩

0
5403

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব -৩ |

তীব্রগতির বৃষ্টির মাঝে নিরব হয়ে ছাদে দাড়িয়ে আছে জুহি।আকাশের মেঘের মতো মনটাতেও হাজারো কালো মেঘ জমেছে তার যেনো আরেকটু হলেই কালো মেঘ থেকে টুপ টুপ করে অশ্রুবিন্দু গুলো বর্ষন হবে।
জুহি চোখ বন্ধ করে নিরবে ছাদের বাউন্ডারি ঘেষে দাড়িয়ে আছে।
জুহি মন থেকে বৃষ্টির প্রতিটা স্পর্শ,ফোঁটাকে অনুভব করছে।
শীত কাল বিধায় অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজায় জুহি থরথর করে কাপঁতে লাগলো।
শরীর জমে বরফ হয়ে যেতে লা্গলো তার তবুও।নিস্প্রাণ হয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে জুহি।

জুহির বোধগম্য হচ্ছেনা এই মৌসুমে বৃষ্টিতে ভেজাটা কতোটা রিস্কের।শুধু মাত্র মনের তৃপ্তি মেটানোর জন্য
কস্টগুলোকে পানিতে পরিণত করার জন্য বৃষ্টিকে আপন করে নিচ্ছে,বৃষ্টির প্রতিটা ছোঁয়ার সাথে গভীর ভাবে মিশে যাচ্ছে জুহি।

জুহির নাক-মুখ থেকে শুধু গরম ধোঁয়াই বের হচ্ছে।মাথা ঝিম-ঝিম করছে তার।তবুও জুহি নিস্প্রাণ হয়ে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে রইলো।

চলুন জুহি-ফাহয়াজের পরিচয় সম্পর্কে জানা যাক।

[জুহি ইফরাত,বয়স ২২ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে।দেখতে লাল-ফর্সা।ছিপ-ছিপে শরীর,মুখশ্রীর গড়ণ।দেখতে মাশাআল্লাহ্ একদম পরীর মতো না হলেও সব দিক দিয়ে ঠিক ঠাক।জুহি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান।জুহির একটা ভাই আছে নাম ইশফান বয়স ১৯।
জুহির বাবা মি.ইবাদাত হোসাইন তিনি সরকারী অফিসের মেনেজার পদে কাজ করেন।দেখতে গেলে জুহিদের আর্থিক দিক দিয়ে বেশ স্বচ্ছল।আর জুহির মা মিসেস জিনাত হোসাইন তিনি গৃহণী।ঘর-বাড়ি সব সামলানোই ওনার কাজ]

[ফাহয়াজ খান,বয়স ২৯ পেশায় বিজনেস ম্যান।দেখতে মাশাআল্লাহ্,সিক্স প্যাগ জিম করা বডি,কিলার লুক যা খুব সহজেই সবাইকে ঘায়েল করতে সক্ষম।ফাহয়াজের ঠোঁটের কিনারার বাকাঁ হাসি যা কিনা সব মেয়েকেই কাবু করতে সক্ষম।
ফাহয়াজের এক বোন নীলা খান।নীলাও দেখতে মাশাআল্লাহ্ জুহির ক্লাসমেট।সাথে সময়বয়সীও।
ফাহয়াজের বাবা,মা দুজনেই প্রবাসী।কয়েকদিন পর তারাও বিডিতে ব্যাক করবেন।ফাহয়াজের বাবাও বিজনেস ম্যান প্রবাসে তাদের বিজনেসটা ফাহয়াজের বাবাই সামলায়।আপাতত এইটুকুই ফাহয়াজের পরিচয়]
.
জুহি নিস্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে।পুরোনো সম্মৃতিগুলো জুহি আরেকবার মনে মনে চারণ করে নিলো।
জুহির মনে পড়লো এইরকম একদিনই সে ফাহয়াজ খান নামক সাইকো লোকটার সাথে নিজের নাম জুড়িয়ে ছিলো।

__________________🌸_________________

ডুলুডুলু পায়ে হোসাইন বাড়ির ভেতরে যাচ্ছে ফাহয়াজ।হাতে ওয়াইনের বোতল ফাহয়াজের পিছু তার দুজন গার্ড হাতে রিভেলবার নিয়ে ফাহয়াজের পিছু পিছু বেশ শক্ত,কঠিন,সুঠান হয়ে হেটেঁ চলছে।
ফাহায়াজের মুখে বাকাঁ হাসি হাতে ওয়াইনের বোতল নিয়ে ক্রমশ ডুলুডুলু পায়ে ভেতরে যাচ্ছে।
ফাহায়াজ ড্রয়িংরুমে পৌঁছাতেই দেখলো।
মি. ইবাদাত এবং মিসেস জিনাত সহ আরও লোকজন ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে।
মিসেস জিনাতের পাশেই একহাত ঘোমটা দিয়ে বসে আছে জুহি।
এদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা এখানে জুহিকে দেখতে আসছিলো।
ফাহয়াজ ঠোঁটে বাকাঁ হাসি গভীর করে বর মানে পাত্রের কাছ ঘেষেঁ সোফায় বসে পড়লো।
এটা দেখে পাত্রের বাবা মি.আজমীন ভ্রুযুগল কুচঁকে বলে উঠলো।

– এই ছেলে এই তুমি কে হ্যাঁ এখানে এইভাবে অভদ্রের মতো ডুকেছো কেনো!দেখছোনা এখানে জুহিমা আর নাঈমের বিয়ের কথা হচ্ছে!
(ভ্রু যুগল কুচঁকে)
মি‌‌,আজমীনের কথা শুনে ফাহয়াজ এক গাল হেসে ঠোঁটে পুনরায় বাকাঁ হেসে বলল।

– আমার বউয়ের আবার দ্বিতীয় বিয়ে হবে!ব্যাপারটা কেমন অদভুত তাইনা শ্বশুড়ড্যাড!(বাকাঁ হেসে)
মি. ইবাদাত হোসাইন ভয়ার্ত চোখে ফাহয়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে একবার পরখ করে নিলো
এরপর চোখ নামিয়ে একটা ঢোক গিলে বলে উঠলো।

– এই ছেলে ত তুমি এইসব কি বলছো!আমার মেয়ে ত তোমার ব বউ কিভাবে!বের হও বের হও এখানে থ থ থেকে!(ভয়ার্ত গলায়)
মিসেস জিনাত,জুহি আগেই ফাহয়াজকে দেখে হয়বাক হয়ে ছিলো।

জুহিতো ফাহয়াজের শেষের বলা কথা বউ শব্দটা শুনে অজানা ভয়ে কেপেঁ উঠলো।
আর জুহি কখনো কল্পনাও করতে পারেনি ফাহয়াজ এভাবে তার বাড়িতে এসে এভাবে মাতাল হয়ে এইসব কান্ডা ঘটাবে।
জুহি হা করে ফাহায়াজের চেহারার দিকে চেয়ে আছে।
এই লোকটা যে আস্ত লুচু,অসভ্য সে আগ থেকেই জানতো কিন্তু এইরকম লেভেলের অসভ্য হবে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি জুহি।
লোকটার সাথে দেখা মাত্র এই নিয়ে চারবার।আর আজকে পাত্রপক্ষের সামনে তাকে বউ হিসাবে দাবি করছে।
জুহি হতবাক দৃষ্টিতে হা হয়ে ফাহয়াজের দিকে চেয়ে আছে।
সবার দৃষ্টির আড়ালে ফাহয়াজ জুহিকে চোখ টিপ দিয়ে দিলো।
এতে জুহি হা য়ের সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে ফাহয়াজের মুখশ্রীর দিকে নির্বাক চেয়ে রইলো।

ফাহয়াজের কথা শুনে মি.আজমীন সহ পাত্রপক্ষের সকলেই উঠে দাড়ালো।
মিসেস দিশা ওরফে মি. আজমীনের ওয়াইফ সাথে নাঈমের মা উঠে কড়া গলায় বলে উঠলেন।

– ছিঃ ছিঃ মেয়ের জামাই থাকতেও আপনারা আপনার মেয়েক আমার ছেলের গলায় জুলানোর পরিকল্পনা করেছেন!মি.ইবাদাত হোসাইন আপনাকে ভদ্র ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি যে আমাদেরকে ডেকে এইভাবে অপমান করবেন কখনো ভাবতে পারিনী!ছিঃ কেমন ছ্যাচড়া ছেলে!
নাঈম উঠ তোর সাথে এই মেয়ের আমি কিছুতেই বিয়ে দিবো নাহ্(বলেই মিসেস দিশা নাঈমের হাত শক্ত করে ধরলো)

নাঈম করুন চোখে মি. ইবাদাত হোসাইন সাথে জুহির দিকে তাকালো।
এদিকে ইশফান সেই কখন থেকে ঘরের এক কোণায় দাড়িয়ে ফাহয়াজের পর্যবেক্ষণ করছে।
কারন ফাহয়াজকে সে কোথায় দেখেছে কিন্তু মনে করতে পারছে না।ফাহয়াজের চেহারা কিছুটা সেই লোকটার সাথে মিলছে।
ইশফান মাথায় নজর দিতেই মাথা ব্যাথা শুরু হলো তার।
এদিকে ইশফানের ফাহয়াজের উপর রাগও হচ্ছে চেনা-নেই জানা-নেই একটা ছেলে এসে তার বোনকে নিজের বউ বলে দাবি করছে।
ইশফান মিসেস দিশার কথা প্রত্তুরে বলে উঠলো।

– আন্টি ভদ্র ভাবে কথা বলুন।এই ছেলেটাকে আমরাও চিনি না আর এই না যে যার তার কথায় আপনি আমার বাবা,বোন,মাকে অপমান করবেন!এই ছেলেটা কে সত্যিই আমরা জানি নাহ্!(হালকা রাগী কন্ঠে)

ইশফানের কথা শুনে মিসেস দিশা মুখ বেকিয়ে বলে উঠলেন।

– থাক শাঁক দিয়ে আর মাছ ডাকতে হবেনা!মেয়ের যে চরিত্র খারাপ বুঝতে পেরেছি!মেয়ের এক বিয়ে হয়েছে তার স্বামি আছে তবুও ওর দ্বিতীয় বিয়ে দিতে যান হ্যাঁ!ভালোই হয়েছে সত্যটা প্রমানিত হয়ে গেছে
এই নাঈম চল দেখি এইখানে এই মেয়ের সাথে তোর আমরা কিছুতেই বিয়ে দিবো নাহ্।
আর আপনাদের জামাইয়ের দশা তো দেখতেই পারছি ছি ছি কথার কি ছিড়ি!অসভ্য(বলেই পাত্রপক্ষের সকলের হনহন করতে করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে লাগলেন)

জুহি অশ্রুশিক্ত নজরে নিরবে চেয়ে আছে।মি.ইবাদাত ধুপ করে সোফায় বসে পড়লেন এবং কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন ফাহয়াজের দিকে।
এদিকে ফাহয়াজ শিষ বাজাতে বাজাতে এমন একটা ভাব ধরে আছে যে সে ভাজা মাছও উল্টে খেতে পারে নাহ্।
ওয়াইনের বোতল হাতে থেকে টেবিলে রেখে ফাহয়াজ বলে উঠল।

– কি শ্বশুড়ড্যাড কেমন দিলাম!আফটারঅল বুঝছে পেরেছেন ফাহয়াজ খান কি জিনিস!ফাহয়াজ খান কখনো তার জিনিসকে ছাড়তে শিখেনি!সামনের জনকে আঘাত করেও হলেও সে তার ন্যায্য জিনিস নিবেই নিবেই সো,,(বলেই ফাহয়াজ ঠোঁটে হাসির রেখার গভীরতা ফুটিয়ে তুললো এবং জুহির দিকে তাকালো)
জুহি নির্বোধ,ইশফান রাগে ফোস ফোস করছে।
কখনো তার বাবা,মা,বোনের এইরকম অপমাম আশা করেনি সে।
ইশফান রাগে কিছু বলতে নিলেই মি.ইবাদাত হোসাইন ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিলেন।

মি.ইবাদাতের রিয়্যাক্টশন দেখে ফাহয়াজ ঠোঁটে বাকাঁ হাসি বজা রেখে উঠে গিয়ে জুহিকে একটান দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
এরপর নেশাক্ত গলায় বলে উঠলো।

– নিজের জিনিসকে নিয়ে যাচ্ছি শ্বশুড় ড্যাড!আশাকরি আপনার কোন সমস্যা হবেনা কারন বিয়ে তো আমাদের করাই আছে
প্রমান সহ!(বলেই জুহিকে কোলে তুলে নিলো এরপর উল্টো ফিরে হাটাঁ শুরু করলো)

হঠাৎ ফাহয়াজের এমন রিয়্যাক্ট এবং এভাবে তার বাবা,মা ভাইয়ের সামনে কোলে তুলে নেওয়াতে বিপাকে পড়লো জুহি।
ছটফট করতে করতে বলে উঠলো।

– অসভ্য লোক আমায় নিচে নামান!নীলা ঠিকই বলছিলো আপনার মতো বেয়াদব ছেলে আজ পর্যন্ত আমি কখনোই দেখিনি!ছিঃ আপনার জন্য আজ আমার বাবা,মাকে পাত্রপক্ষের সামনে থেকে ওইভাবে কটু কথা শুনতে হয়েছে!আপনি,আপনি আমায় নিচে নামান অসভ্য লোক!(ছটফট করতে করতে)

ফাহয়াজ ধীর নেশাক্ত গলায় জুহিকে বলে উঠলো।
– জুহিপাখি!ছটফট করে লাভ নেই ফাহয়াজ খান কখনো তার জিনিসকে কোথাও ফেলে রাখে না সর্বদা তার জিনিস তারই থাকে!সেখানে তুমি তো আমার পাখি!
আমার পাখি আমার খাচাঁ ছেড়ে অন্য কারো খাচাঁয় বাসা বাধঁবে এইটা হয় কখনো(নেশাক্ত গলায়)

চলবে,,
[পরবর্তী পর্বটা রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here