আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-১২

#আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১২
__‘বিশ বছর পরও তোর এই রাগ এই জেদ মানা যাচ্ছে না সাদিদ। এখন ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে। এবার অন্তত সব ভুলে যা।’
‘ছুটির দিনে দুই পরিবার মিলে গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে সে সুবাদে সবাই ‘চৌধুরী’ (মেঘালয়দের বাড়ি) বাড়িতে এসেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে সাদিদ এবং অভীক ছাদে আসে। সাদিদ রাতের আকাশ দেখছিল। এই রাতের আকাশের মতো নিজের জীবনটাও অন্ধকারে ঢাকা তার। অভীককের বলা কথায়, আকাশের দিক থেকে ফিরে অভীকের দিকে তাঁকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে একপ্রকার রাগ নিয়ে বলল সাদিদ ,,,
__‘‘তোর মনে হয় আমি বেশি বেশি করছি? আমার রাগ জেদ কি জায়েজ না? সে কেন ফিরে এসেছে? আমি বলেছি? আমি কি তার হাতে পায়ে ধরেছি?
সাদিদের হঠাৎ রেগে যাওয়ায় হতবাক হয়ে যায় অভীক। ছাদের দরজার কাছে গিয়ে দেখে কেউ আসছে কিনা। দরজা চাপিয়ে সাদিদের কাছে এসে তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,,
__‘আস্তে বল। কেউ শুনে ফেলবে। ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে ওরা জেনে যাবে।’
__‘জেনে গেলে জেনে যাবে। তিলাত, মেঘালয় তো জানেই বাকি তিয়ানা সেও জানুক। আমিও চাই সে জানুক। এত নাটক আমিও চাচ্ছি না। আমিও চাই এবার তিয়ানা জানুক ‘ও’ যাকে মা বলে জানে সে তার মা নয় মায়ের বোন। যে তার বাবা কে ঠকিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।’
অভীক কঠর কন্ঠে বলল,,
__‘কি বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর? তিনু এটা জানলে, তুলি কতটা কষ্ট পাবে জানিস না? তিলাত তুলির জন্য তুলি নিজে কখনো বাচ্চা নেয়নি।
তাচ্ছিল্য হাসে সাদিদ। বলল,,
__‘তুই তুলির কষ্ট দেখলি। কিন্তু আমি!
থেমে যায় সাদিদ। গলা আতটকে যাচ্ছিল। নিজেকে সামলে বলল,
__ ‘তুলি তো আমার জন্য ফিরে আসেনি। ওর বোনের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে এসেছে। আমার সন্তান বলে তিলাত, তিয়ানাকে নিজের টেনে নেয়নি। বোনের সন্তানদের নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। আজ যদি তুলি আমাকে না ঠকাতো তিলাত, তিয়ানা আমার আর তুলির সন্তান হতো। তিয়াসা আর আমার নয়।’
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে হাপিয়ে যায় সাদিদ। পাশে থাকা বেঞ্চিতে বসে পরে। কষ্ট হয় তার। কিন্তু কাকে বুঝাবে? ভেবেছিল অভীক হয়ত বুঝবে কিন্তু অভিকও তুলির হয়ে কথা বলছে। কেউ এটা বুঝছে না যে তার কতটা কষ্ট হচ্ছে। যখন ভাবে তুলিকে কষ্ট দেবে না। সব ভুলে মেনে নেবে। ঠিক তখন তার মনে পরে, তুলি তার জন্য ফিরে আসেনি তিয়াসাকে দেয়া কথা রাখতে তার কাছে আছে। তার সন্তানদের মা হয়েছে। তিয়াসা যদি কখনো মারা না যেতো। তখন কি তুলি কখনো ফিরে আসতো? আসতো না। যে একবার বিশ্বাস ভাংগে সে বারবার ভাংগে। তাই সে তুলিকাকে বিশ্বাস ভাংগার দ্বিতীয় কোনো সুযোগ দেবে না।
‘সাদিদ শানন্ত তবে কঠোর স্বরে বলল,
_ ‘যার কাছে আমার মূল্য নেই। আমার ভালোবাসার মূল্য নেই তাকে ক্ষমা করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয় অভীক।’
নিজের কথা শেষ করে ছাদের দরজা খুলে ছাদ থেকে চলে যায় সাদিদ। অভীক সাদিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাদিদ নিজের দিক থেকে ঠিক। ভুল তো কিছু বলেনি সে। ‘
ড্রইংরুমে বসে সবাই গল্প করছিল। সাদিদ ছাদ থেকে নেমে একনজর সোফায় বসে থাকা তুলিকাকে দেখে তিলাতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
__‘আমার কাজ পরে গেছে যেতে হবে। তুমি তোমার মা’কে নিয়ে ফিরো। আসছি’
কথা শেষ করে দাঁড়ায় না সাদিদ। তিয়ানা ডাইনিং টেবিলের উপর বসে আপেল খাচ্ছিল৷ সাদিদের হঠাৎ এভাবে যাওয়া দেখে মায়ের দিকে তাকায় সে। তুলিকা মেয়েকে ইশারায় বলল, বাবার পিছু পিছু যেতে। ‘ মায়ের ইশারা বুঝে তিয়ানা মুচকি হেসে চলে যায়।’
মেয়ের যাওয়ার দিকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা। মৌমিতা তার দিকে সন্দেহ নিয়ে দেখে। তুলিকার হাসার চেষ্টা করে বলল,,
__‘মেঘ কোথায় তাকে দেখছিনা?’
তুলিকা কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। আবার হয়ত কিছু একটা ঘটছে। বুঝেও না বোঝার ভান করে মৌমিতা। বুঝেও বা কি করবে? পরিস্থিতি তো চেইঞ্জ হবে নাহ। মৃদু হাসে মৌমিতা বলল,
__‘হস্পিটালে গিয়েছে। কল আসলো ইমারজেন্সি পেসেন্ট এসেছে৷’
তিলাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
__‘তোমরা কথা বলো। আমি আংকেলের কাছে যাচ্ছি। আর আম্মু যাওয়ার সময় হলে আমাকে ডাকবে। ‘
উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে শায় দেয় তুলিকা।

সাদিদ ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়। তিয়ানা এসে ফ্রন্ট সীটে বসে সীট বেল্ট বাধঁতে বাধতে বলল,,
__‘হাই পাপা।’
মেয়েকে দেখে চোখ মুখের কঠোরভাব সরিয়ে নেয় সাদিদ। মুচকি হেসে বলল,,
__‘হ্যালো প্রিন্সেস’
__‘আমরা কই যাচ্ছি পাপা।’
__‘কোথায় যেতে চাচ্ছো?’
দুষ্ট হেসে বলল তিয়ানা,,
__ ‘লং ড্রাইভে গেলে মন্দ হয় না। অনেক দিন যাই না। ‘
সাদিদ ড্রাইভহ করতে করতে বলল,
__‘ওকে! মাই প্রিন্সেস।’
__‘একটা গল্প বলবে পাপা?
হাসে সাদিদ মেয়েকে একবার দেখে প্রফুল্ল হেসে বলল,,
__‘কী গল্প শুনতে চাও প্রিন্সেস?’
__‘তোমার আর মমের লাভস্টোরি,
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় সাদিদের। হাসার চেষটা করে বলল,,
__‘আমাদের তো,,
কথা কেরে নিয়ে বলল তিয়ানা,,
__‘আমি জানি তোমাদের রিলেশনশিপ ছিল পাপা’
__‘তুমি কি করে জানলে?
__”তোমাকে একটা সিক্রেট বলব পাপা? মম কে বলবে না।
হাসে সাদিদ। বলল,,
__‘বলব না।
চোখ ছোটো ছোটো করে হাত বাড়িয়ে প্রশ্ন করল তিয়ানা,
__‘পাক্কা’
সাদিদ হেসে মেয়ের হাইফাই করে বলল,,
__‘পাক্কা’
__‘মমের ডায়েরি পরে জেনেছি পাপা।’
__‘মমের ডায়েরি?’
উৎফুল্ল হয়ে বলল তিয়ানা,
__‘ইয়েস। ওখানে তোমার আর মমের ফার্স্ট মিট। ফার্স্ট ডেট সব লেখা আছে। ‘
মৃদু হাসে সাদিদ। তুলিকার ছোটো থেকেই স্বভাব ছিল স্পেশাল মুহূর্ত গুলো ডায়রিতে লিখে রাখার।

সাদিদ গাড়ি থামায়। দু’জনে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে গিয়ে বসে।
মজনু মিয়া তাদের দেখে হাসে পান খাওয়া লাল দাত দৃশ্যমান হয় তার। হেসে বলল,,
__‘স্যার যে অনেক দিন পর আসলেন। বয়েন বয়েন । তিয়ানা আম্মা ভালা আছো? ‘
দোকান লাগাওয়া কাঠের বেঞ্চিতে বসে তারা। তিয়ানা বসে এক গাল হেসে বলল,,
__‘ভালো চাচা আপনি ভালো আছেন?’
__‘ভালা আম্মা। অনেক দিন পর আইলা তোমরা।
সাদিদ বলল,
__‘কাজের চাপ। প্রিন্সেসের পড়া শুনার জন্য আসা হয়নি। অনেক পর লং ড্রাইভে বের হলাম। আমরা বাপ বেটি।
বলে শব্দ করে হাসলো সাদিদ। সাথে যোগ দিলো দোকানদার।
প্রায় রাতেই ভালো না লাগলে সাদিদ তিয়ানাকে নিয়ে লং ড্রাইভে বের এবং তা তাদের দু’জনের সিক্রেট। তাদের দলে এ সময় অন্য কাউকে নেয়া হয়না। শুধু দু’জনে। তিয়ানা এই সময় তার পাপ্পাকে মনের সব কথা বলে।
মজনু মিয়ার সাথে অনেক্ষন গল্প করে তারা। মজনু মিয়া খুব মজার মানুষ তাকে তিয়ানা খুব পছিন্দের। গল্প শেষে চা খেয়ে গাড়িতে যায় তারা। তিয়ানা বলল,
__‘পাপা তোমাকে একটা সিক্রেট বলার ছিল।’
সাদিদ হেসে বলল,,
__‘এখনো বলোনি? নতুন সিক্রেট নাকি?
তিয়ানা মন খারাপ করে বলল,,
__‘হ্যা’
__‘কি?’
__‚পাপ্পা! ‘আই অ্যাম ইন লাভহ’
গাড়ি থামিয়ে ফেলে সাদিদ। হতবাক হয়ে যায় সে। বাবার থমথমে মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায় তিয়ানা। শুকনোক ঢোক গিলে সে। সাদিদ মেয়েকে ভয় পেতে দেখে হাসে। হেসে বলল,,
__‘আমাকে কি হিটলার বাবা মনে হয়?’
তিয়ানার কথার মানে বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
সাদিদ হেসে হেসে বলল,
__‘তাহলে? মুখ কাঁদো কাঁদো বানিয়েছো কেন?
তিয়ানা কিছু বলে বাবার দিকে তাঁকিয়ে থাকে।
সাদিদ বলল,
__‘কার প্রেমে পরেছো?’
গলা শুকিয়ে যায় তিয়ানার এবার কি বলবে? সে মেঘালয় কে ভালোবাসে এটা জানলে পাপ্পা কেমন রিয়াক্ট করবে।
ছোটো ছোটো স্বরে বলল,,
__‘মেঘ ভাইয়া’ পাপা।
সাদিদের মুখের হাসি স্বরে গিয়ে থমথমে ভাব চলে আসে তার।

চলবে?
(আমি গল্পটায় সব চাচ্ছি। ফেমিলি ড্রামা বাবা মেয়ের বন্ধুত্ব , মা ছেলের ববন্ধুত্ব । বেস্ট ফ্রেন্ডের গল্প। একজন সত্যিকারের বেস্ট ফ্রেনন্ডের গল্প। যেখানে রাগ দুঃ খ জেদ থাকলেও ছেড়ে যাওয়া নেই। নতুন প্রেম, নতুন অনুভূতি অনুভবের গল্প। দুই মেরুর দু’জনের এক হওয়ার গল্প। স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার তিক্ততা সরিয়ে ভালো ভাবে বাঁচার গল্প। থার্ড পারসনের কারনে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ভালবাসাকে ফেলে যাওয়ার গল্প। সব শেষে স্বামি স্ত্রীর মধ্য কার মধুর সম্পর্কের গল্প৷ এখানে ফেমিলিড্রামা, ফ্রেন্ডস লাভ, দুঃখ কষ্ট সব থাকবে। এমন ভাবেই চাচ্ছি গল্পটা সাজাতে কতটুকু পারবো জানিনা। এখানে প্রত্যেক টা চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজেদের লাইফের লিড। আর হ্যা মন্তব্য চাচ্ছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here