আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার
পর্ব-৩
কানে হাত দিয়ে এক পায়ে দাড়িয়ে আছে তিয়ানা। মেঘালয় তার সামনে কাউচে আয়েস করে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে। তিয়ানা কটমট করে তাকিয়ে আছে। মেঘালয় তাকালে চোখে মুখে দুঃখি দুঃখি ভাব তৈরি করছে। না কিছু বলতে পারছে আর না সহ্য করতে পারছে। খারুস একটা৷ কি করে পারছ তাকে এভাবে দাড় করিয়ে রেখে। বিরিয়ানি গুলো গিলতে। মনে দয়া মায়া নাই। বিরিয়ানির ঘ্রান নাকে এসে লাগছে তার। জীহ্বায় জল চলে আসছে। আড় চোখে তাকিয়ে বলে মেঘালয়,,
__‘আজকের বিরিয়ানী রান্না সবচেয়ে মজার হইছে আহা। জীহ্বায় লেগে আছে।
তিয়ানার কষ্ট হয়। দুঃখ হয়। সবাই তার সাথে এমন করে। মা-বাবা সবাই তার চেয়ে এই খারুস টাকে ইম্পর্ট্যান্টস দিচ্ছে। কীভাবে নিষ্ঠুরের মতো তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে গিলে যাচ্ছে। অভিশাপ দেয় তিয়ানা। ডাইরিয়া, পেট খারাপ হবে এর। বাথ্রুমেই সারাক্ষন বসে থাকতে হবে। অভিশাপ দিয়েও মনের কষ্ট যায় না তার। ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় তিয়ানা। কান্নার শব্দে মেঘালয় খাওয়া ছেড়ে তার দিকে ফিরে ভ্রু কুচকে ফেলে। কাউচ থেকে উঠে দাঁড়ায়। এটিটিউড নিয়ে তিয়ানার দিকে এগিয়ে আসে। মেঘালয় কে এভাবে আসতে দেখে তিয়ানা কান্না থামিয়ে ফুপাতে থাকে। নিচের দিকে মুখ করে আড় চোখে মেঘালয়ের দিকে তাকায় সে। মেঘলয় তাকেই দেখছে। তবে নাকটা কেমন টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। ছোটো ছোটো ঢোক গিলে তিয়ানা। মেঘালয়কে দেখে মনে হচ্ছে সে রেগে আছে। নিজে নিজে বির বির করে তিয়ানা,
__অভিশাপ দিলাম সেটা শুনে নিলো না তো। এবার কি হবে?
মুখে দুঃখি দুঃখি ভাব আনে তিয়ানা। চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় মেঘালয়ের। তিয়ানা ভয়ে কান থেকে হাত নামিয়ে দৌড়ে চলে যেতে নেয়। মেঘালয় হাত ধরে আটকে দিয়ে তাকে কিছুটা কাছে টেনে আনে তার। তবে দূরত্ব বোঝায় রেখে। নিশ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় তিয়ানার। চোখে খিচে বন্ধ করে নেয় ভয়ে।
কিছুক্ষন তিয়ানার ভয় মাখা মুখ দেখে। তাকে ছেড়ে দিয়ে বেলকনির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকায় মেঘালয়। নিজের মন কে শান্ত করে সে। অবাক হয় তিয়ানা। সাথে খুশিও। চলে যেতে নেয় মেঘালয়ের কন্ঠ শুনে থেমে যায়। দূরে গাছের উপর থাকা টিয়া পাখির দিকে চেয়ে মেঘালয় বলে,
__‘তোকে ওয়ার্ন করছি। আমার সামনে কাঁদবি না ফুপাবিও না।
তিয়ানার সামনাসামনি এসে দাঁড়িয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলে,,
__দ্বিতীয় বার এই ভুল করলে। কিছু একটা হয়ে যাবে। তখন আমার দোষ দিবি না।
বাঁকা চোখে তাকে আপাদমস্তক দেখে বেলকনি থেকে চলে যায় মেঘালয় । তিয়ানা আহমক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কি বলল? খারুস টা। কি হবে?
খা খা করা রোদে ফুটপাতে বসে আছে তিলাত। রিনির সাথে এক প্রকার বড়সড় ঝগড়া হয়েছে তার। এখন প্রার্থনা করছে। এই ঝগড়াতেই যেন রিনি নামক আপদ বিদায় হয়। তবে কতটা যে হবে তা নিয়ে সন্দেহে সে। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের ঝড়ের মতো লণ্ডভণ্ড মার্কা ঝগড়া তাদের হয়েছে। কিন্তু আপদ তার গলা থেকে নামেনি। রিনি কে তার ভালো লাগছে না। প্রথমে রিনির সুন্দর চেহারা দেখে ক্রাশ খেলেও এখন সেটা বাশে পরিনত হইছে। পাশে ফুটপাতের দোকান থেকে সিগারেট কিনে সিগারেট ধরায় তিলাত। প্রেম যে কাঠালের আঠা সেটা সে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে৷ সিগারেট শেষ করে পালস চকলেট কিনে মুখে দেয়। পকেট থেখে ছোট খাটো পারফিউমের বোতলটা বের করে সারা গায়ে মেখে নেয়। তিয়ানাকে বিশ্বাস নেই। জানতে পারলে আম্মু -আব্বুর কাছে ফাসিয়ে দেবে। সকল ভাইদের জন্য দোয়া করে তিলাত এমন বোজ্জাত বোন যেন কারো না হয়। হাড়ে বোজ্জাত। মাঝে মাঝে মনে হয়। পূর্বজন্ম বলে কিছু থাকলে, রিনি আর তিয়ানা এই দুটোতে বোন ছিল হয়তো। সে দুটো এই জন্মে এসে তার বোন আর প্রেমিকা হয়ে জীবন ছারখার করে দিয়েছে তার। দুঃখ হয় তিলাতের। এমন বজ্জাত মার্কা বোন হলো ক্যান তার? দুঃখ কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না আসছে না। দুঃখি মনে উঠে দাঁড়ায় তিলাত আজ সে শহর হাটবে খালি পায়ে হিমুর মতো। গায়ে একটা হলুদ পাঞ্জাবি থাকলে হয়তো ভাল হতো।
অভীক আর তার বিয়ের ফটো তে হাত বুলায় মৌমিতা। তাদের বিয়ের ৩০ বছর হয়ে গেল। মেঘালয়ের বয়সও ২৮ হতে চলল। কিছুদিন পর তারা শশুর শাশুড়ীও হয়ে যাবে। সমউ কত তাড়াতাড়ি চলে যায়। এই তো মনে হচ্ছে, কিছু দিন আগে অভীক তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ভিনদেশে পারি জমিয়ে ছিল। তমতবে ফিরে এসেছে অভীক তাকে বউও করেছে। তাদের একটা সুখের সংসারও হয়েছে সেই সংসারে একটা রাজপুত্রও এসেছে। এখন শুধু রাজপুত্রের রানীকে খুজে আনার পালা। শুধু অভীক আসার অপেক্ষা কিছুদিন হলো কাজের সুত্রে কানাডা গিয়েছে অভীক। দেশে আসতে আরও কয়েক দিন লাগবে। তারপর সে তার রাজপুত্রের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে। ফোন বেজে ওঠে তার। অভীক কল দিয়েছে। মৃদু হাসে মৌমিতা। সে যখন অভীককে খুব মিস করে তখন কোনো একটা ভাবে অভীক তার মনের কথা বুঝতে পারে। আর তখন ই সে হয় হাজির হয় তার সামনে নয়তো কল করে।
বাড়িতে এসে নিজের ঘরে চলে যায় তিয়ানা। খাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে পরে। চোখ বন্ধ করা মাত্র। মেঘালয়ে রাগে লাল টমেটো হয়ে যাওয়া নাকটা চোখের সামনে ভেসে উঠে তার। বিরক্ত হয় তিয়ানা। উঠে বসে আসন পেতে বসে। বিছানায় থাকা বালিসটা তুলে তার কোলে রেখে বালিসে মাথা রাখে৷ মানুষ কত কিছু তে ক্রাশ খায় আর সে কিনা খারুসটার লাল টমেটো হওয়া নাকের উপর ক্রাশ খেল। ঘুমোনোর চেষ্টা করে সে। তবে ঘুমতে পারছে না। বারবার চোখের সামনে মেঘালয়ের মুখ ভেসে ওঠে তার। এটা আবার কেমন রোগ হলো। এমন রোগের উপর বিরক্ত সে। খুব বাজে ভাবে বিরক্ত। এমন রোগ তার চাই না। ডায়েরি নিয়ে বসে তিয়ানা। লিখতে শুরু করে,,
‘যাকে সহ্য করতে পারি না শেষমেশ তার লাল টমেটো হওয়া নাকে ক্রাশ খেলাম। এই মেঘালয় তো আমাকে মেরেই দেবে। এতদিন নিজে উপস্তিত থেকে জ্বালাতো এখন কল্পনায় এসেও জ্বালাচ্ছে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমার জীবন তেজ পাতা করে ছাড়ল ভাইয়ের বন্ধু নামক খারুচটা। এ কেমন অনুভুতি? আচ্চা! এটাও ওনার আমাকে জ্বালানোর নতুন ফন্দি না তো? ”
ডায়েরি বন্ধ করে টেবিলের উপর রাখে তিয়ানা। মন খারাপ হয়ে গেছে তার। ডায়েরিও লিখতে ইচ্ছে করছে। মেঘালয়ের মুখ তার চোখের ভাসছে। লোকটা বড্ড খারাপ। তাকে একটুও শান্তি দিচ্ছে না। বুকের মধ্যে কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। ভাবে, মেঘালয়কে ভালোবেসে ফেলল না তো সে। ভাবতেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় তিয়ানা। এমনটা হঅলে তার কি হবে? মেঘালয় জানলে তো তাকে মেরে পুতে দেবে। এবার কি করবে সে? পৃথিবীতে কি আর ছেলে ছিল না। এত সুন্দর সুন্দর কিউয়ি কিউটি ছেলে থাকতে কিনা শেষে কিনা জাত শত্রু কে ভালোবেসে ফেলল। মন কে ধমাকায় তিয়ানা। আর কাউকে পেলো না। শেষে কিনা মেঘালয়। কেঁদে নাকের চোখের পানি এক করে ফেলে তিয়ানার। যে করেই হোক মন কে সামলাতে হবে। নইলে তার কপালে বড়সড় দুঃখ আছে। এটা মেঘালয়ের কানে গেলে মেঘালয় তাকে চিবিয়ে চিবিয়ে কাচা খাবে।
চলবে?
(মৌমিতা আর অভীকের অণুগল্প টা যে যে পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন তাদের চরিত্র সম্পর্কে। যারা পড়েননি তারাও পড়ে নিবেন। মেঘালয়ের বাবা মা হিসেবে, অভীক আর মৌমিতা চরিত্র কে আনা হয়েছে)
আর হ্যা নাইচ নেক্সট না বললে খুশি হবো আর দুই এক লাইন মন্তব্য আশা করছি। আজকের পর্বটা মেবি ততোটা ভাল হয়নি তবুও কেমন হইছে জানাবেন।