আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩৩
ঘুমের মধ্যে অনুভব হলো তিয়ানার। কেউ তাকে সাপের মতো পেঁচিয়ে তার সাথে শুয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে কপাল কুচকায় সে। নেড়েচেড়ে উঠতে নিলেও শক্ত হাতের বাঁধনে ওঠতে চেয়ে উঠতে পারে না সে। বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাঁকায় তিয়ানা। তাকে আষ্টেপৃষ্টে সাপের মতো জড়িয়ে ধরা মানুষটাকে দেখে বেশ অবাক হয় সে। স্বপ্ন দেখছে নাকি! দু’হাতের তালু দিয়ে চোখ ডলে আবার তাঁকায় সে না স্বপ্ন না। সত্যি! মেঘালয় তার’ই ঘরে তার বিছানায় তাকে’ই জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। এটা কি করে সম্ভব? বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিয়ানা। বিস্মিত ভাব কাটয়েমেঘালয়কে ধাক্কিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে তিয়ানা। এক প্রকার চেচিয়ে বলে উঠে,,
__‘আপনি এখানে কি করছেন?’
তিয়ানার চিৎকারে ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। চোখ চারপাশে ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে। তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে তাকে একবার দেখে চোখ বন্ধ করে দ্বিতীয় বার ঘুমের প্রস্তুতি নেয় মেঘালয়। মেঘালয়ের এহনো কান্ডে মাথা বিগড়ে যায় তিয়ানার। রাগে ফোস ফোস করতে করতে চেচিয়ে প্রশ্ন করে,
__‘আপনি আমার ঘরে কি করছেন?’
তিয়ানার চিৎকারে মেঘালয় কানে হাত দিয়ে ধমকে ওঠে,
—_‘আস্তে কথা বল বেয়াদপ!’
ফোস করে ওঠে তিয়ানা,
__‘কে বেয়াদপ? আপনি আমাকে কোন এংগেলে বেয়াদপ বলছেন?’
মেঘালয় কাল থেকে আংগুল নামিয়ে। ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল চাপড়ে বিরক্তি নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,
__‘বেশ রাত করে এসেছি তিনু। ঘুম পুরু হয়নি। চেচাস না ঘুমোতে দে।’
__‘ঘুমাবেন তো এখানে কী? নিজের বাড়িতে গিয়ে ঘুমান। আমার বাড়তে আমার ঘরে আমার বিছানায় কেন আপনি?’
মেঘালয় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,
__‘বউ যেখানে বর তো সেখানে’ই থাকবে।’
ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে তিয়ানা,,
__‘কে? কার বউ?’
মেঘালয় আচমকা তিয়ানার হায়ে টান দিয়ে তাকে বিছানায় শোয়ায়। হঠাৎ এমন হয় হতভম্ব হয়ে যায় তিয়ানা। মেঘালয়কে ধাক্কা দিয়ে উঠে চায় সে। তবে মেঘালয় তার দু’হাত নিজের হাত দিয়ে চেলে ধরে তিয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বাঁকা কন্ঠে বলে,,
__‘বউয়ের দেখি তেজ বেড়ে গেছে।’
মেঘালয়ের এহনো কথা কানে যাওয়া মাত্র তিয়ানার মগজ বিগড়ে যায়। রাগে ফোস ফোস করে উঠে সে,
__‘আপনার এখানে কি দরকার?’
__‘আমার’ই তো দরকার।’
তিয়ানার পেটের উপর হাত দিয়ে বলল,,
__‘এখানে আমার বউ আমার বাঁচ্চা। আমি’ই তো থাকবো।’
মেঘালয়ের হেয়ালি পানা কথায়। তরতর করে রাগ উঠে তিয়ানার। মেঘালয়ের হাতে বাঁধন থেকে মোচড়ামুচড়ি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সে।
__‘আপনি এটা ঠিক করছেন না। ছাড়ুন আমাকে নাহলে, আমি চিৎকার করবো।’
__‘ওকে করো চিৎকার। তুমি না পারলে আমি সাহায্য করছি।’
নিরাশ হয় তিয়ানা। মোচড়ামুচড়ি থানিয়ে ছল ছল চোখে চেয়ে মেঘালয়কে প্রশ্ন করে সে,,
__‘কি চাচ্ছেন আপনি?’
তিয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘বউকে চাচ্ছি।’
মেঘালয়ের এমন আচরণে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। গলা শুকিয়ে আসে তার। শুকনো ঢোক গিলে কিছুড়া অভিমান নিয়ে বলে,
__‘আমি আপনার বউ না। আপনি আপনার ‘আদরিনী’ নামক প্রেমিকা বৃষ্টির কাছে যান।’
মৃদু হাসে মেঘালয়। তিয়ানার কানের লতিতে ছোটো কামড় দিয়ে বলল,,
__‘বউ কি আমার রেগে আছে?’
মেঘালয়ের হঠাৎ কাছে আসায়। অসস্তিকর অনুভূতি হয় তিয়ানার। সাথে মেঘালয়ের এসব ন্যাকামোও সহ্য হচ্ছিলো না তার। আচমকা মেঘালয়ের নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বেড সাইড থেকে ওড়না হাতরে গায়ে ওড়না জড়িয়ে খাট থেকে নেমে ফ্লোরে দাঁড়ায়। রাগী স্বরে প্রশ্ন করে তিয়ানা,,
__’এসবের মানে কী মেঘ ভাইয়া? কি চাচ্ছেন আপনি? যখন ইচ্ছে কাছে টেনে নিবেন আবার যখন আপনার ইচ্ছে হবে তখন আমাকে ছুড়ে ফেকে দিবেন? কি ভাবছেন কি আমাকে? আমি আপনার খেলার পুতুল? আপনার প্রেমিকা আছে মেনে নিয়েছি। প্রেমিকাকে ছাড়তে পারবেন না তাও মেনে নিয়েছি। আমাকে ডিভোর্স দিবেন সেটাও মেনে নিয়েছে। সব শেষে এই আদিখ্যেতা কেন?’
বলতে বলতে কেঁদে দেয় তিয়ানা। তিয়ানার কাঁন্না দেখে বুকের ভিতর যন্ত্রণা শুরু হয় মেঘালয়ের। তিয়ানাকে সে এত কষ্ট পেতে কখনো দেখেনি। এভাবে কাঁদতেও দেখেনি। এর আগে কাঁন্না করলেও সেটা আদুরে কাঁন্না ছিল। কিন্তু আজকের তিয়ানার কাঁন্নাটা ভিন্ন। ওর চোখে মুখে হাজারো ব্যাথার ছাপ দেখতে পায় মেঘালয়। ভাবে সে, সব সত্যিটা সামনে আনতে গিয়ে কি! তিয়ানাকে বড্ড বেশি আঘাত করে ফেললো সে?
খাট থেকে নেমে হেটে তিয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মেঘালয়। হাত বাড়িয়ে তিয়ানার চোখের জল মুছতে নেয় সে। তবে তিয়ানা তাকে সে সুযোগ দেয় না। পিছিয়ে যা সে। মেঘালয় অবাক হয়ে চেয়ে রয়। তিয়ানা এক রাশ ঘৃনা নিয়ে তার তাকে দেখে। তিয়ানার চোখের নিজের জন্য এত এত ঘৃনা দেখে বুক কেঁপে ওঠে মেঘালয়ের। হতবাক চোখের তিয়ানার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। গত দিন গুলোতে এই দৃষ্টিতে নিজের জন্য ‘ভালোবাসা’ নামক কিছু অনুভব করলেও সেখানে আজ সে ভালোবাসার বদলে নিজের জন্য এক প্রকার ঘৃনা দেখতে পাচ্ছে। গলা ধরে আসে মেঘালয়ের। মনে মনে বার বার প্রাথনা করছে সে। তিয়ানার চোখে নিজের জন্য যে ঘৃনাটা দেখছে সেটা যেন ভুল প্রমানিত হয়। গলা ধরে আসে মেঘালয়ের ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে উপরের ঠোঁট ভিজিয়ে বলল সে,,
__‘তিনু আমার কথাটা শোন?’
তাচ্ছিল্য হাসে তিয়ানা। বলে,
__‘কি শুনবো? এটা তো! আমার কাছে আসা আমার সাথে এত এত ভালো কথার একটা’ই কারণ, আমার পেটের আপনার বাঁচ্চা এটাই তো কারণ?’
তিয়ানার কথায় হতবিহ্বল হয়ে যায় মেঘালয়।
__‘তুই শোন আমার ক্ককত,,,,,
মেঘালয়কে থামিয়ে দেয় তিয়ানা,
__‘এসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আপনি আমার বাঁচ্চাকে আমার থেকে দূরে সরাতে পারবেন না। আমিও বলছি, আমি আমার মা নকি যে নিজ সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেব। আপনি যত’ই আমার বাঁচ্চার বাবা হন না কেন!’ আমি ‘ওর’ মা গর্ভে ধারণও করছি আমি। তাই একদম অধিকার ফলাতে আসবেন না।’
তিয়ানা মেঘালয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। হেটে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে ডিভোর্স পেপারটা বের করে। মেঘালয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ডিভোর্স পেপারের দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকায় মেঘালয়। প্রশ্ন করে সে,
__‘এটা কি?’
নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর দেয় তিয়ানা,
__‘ডিভোর্স পেপার।’
তিয়ানার উত্তরে মেজাজ বিগড়ে যায় মেঘালয়ের। তবে কোনো ঝামেলা না করে হাত বাড়িয়ে ডিভোর্স পেপারটা নেয় সে। পেইজ উলটে দেখে তিয়ানার সাইন করা। ডিভোর্স পেপার নিজ হাতের মুঠোয় দুমরে মুচড়ে ফেলে মেঘালয়। সাথে রক্তচক্ষু নিয়ে তিয়ানার পাণে তাঁকায় সে। মেঘালয়ের রাগী চোখ দেখে বুকের ভিতর ভয়ে ধড়ফড় করে ওঠে তিয়ানার। তবে নিজেকে সাহসি প্রমান করতে মেঘালয়ের রাগী চোখের দিকে’ই চেয়ে থাকে সে। মেঘালয় হাতে থাকা ডিভোর্স পেপারকে মুচড়ে ফেলেও শান্তি পায় না সেটা কুটি কুটি করে ছিড়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। তিয়ানা, মেঘালয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ডিভোর্স পেপারের টুকরো গুলোর দিকে দেখে৷ মেঘালয়ের এমন কান্ডে রেগে যায় সে। রেগে বলে ওঠে,,
__‘এসব কি? আপনি ডিভোর্স চেয়েছেন আমি ডিভোর্স পেপারে রেডি করে সাইন করে দিয়েছি। আর কী চাই? তারপরও এসব কেমন আচরণ ?’
চলবে?
(আজ কেমন হইছে জানি না। আশা করছি ভালো হইছে। বর্তমানে কিছু টা ঝামেলায় আছি আমি আর তার প্রভাব আমার লেখালেখি তেও পড়েছে। কিছুটা পারসোনাল প্রবলেমে আছি তাই এমন হচ্ছে। যাক রিচেক করা হয়নি। বানানে ভুল থাকতে পারে)