আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৫
মেঘালয়ের দু’হাতের মাঝে দেয়াল ঠেসে দাঁড়িয়ে তিয়ানা। বুকের ভিতর কেমন ধুকপুক করছে মেঘালয় এত কাছে আসাতে। তবে দূরত্ব আছে মাঝে। শ্বাস আটকে যাচ্ছে তার। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। মেঘালয় সন্দেহ চোখে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে তিয়ানাকে। তিয়ানার লজ্জা লাগছে। মেঘালয়ের দিকে তাকাচ্ছে না। আশে পাশে চোরা চোখে দেখছে। তা দেখে ভ্রু কুচকায় মেঘালয়। এক হাত দেয়ালে রেখে আর এক হাত প্যান্টের পকেটে রেখে ক্রুর দৃষ্টিতে তিয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করছে। কলজে শুকিয়ে যাচ্ছে তিয়ানার। এমনিতেই কেমন অনুভুতি হচ্ছে মেঘালয়কে নিয়ে তারপর আবার মেঘালয়ের তুখর দৃষ্টি নিতে পারছে না সে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে তিয়ানা। কেঁদে দেয়ার মতো অবস্থা। সে মানতে পারছে না। কি করে সে মেঘালয় কে ভালবেসে ফেলল? কেমন একটা লজ্জাকর ব্যাপার। সবাই জানলে কি ভাববে?
তিয়ানার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে তার কপালে দুই আংগুল দিয়ে টোকা দেয়। কপালে হাত দিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে নেয় তিয়ানা। তবে কাঁদার আগেই মেঘালয় ধমকে উঠে। না কেঁদে ফুপাতে ফুপাতে থাকে তিয়ানা। রাগ হয় মেঘালয়ের। কপালে দুই আংগুল দিয়ে স্লাট করে রাগ শান্ত করে। তিয়ানার দু’ কাঁধে হাত দিয়ে কিছুটা কাছে টেনে এনে হিসহিসিয়ে বলল,,
__তোকে ওয়ার্ন করছিলাম না, আমার সামনে কাঁদবি না ফুপাবিও না।
ভয়ে কেঁপে উঠে তিয়ানা। মিয়িয়ে যায় সে। কাঁদো কাঁদো আদুরে স্বরে বলে,
__আপনি আমায় আটকে রেখেছেন কেন? বাড়ি যাবো আমি।
তিয়ানার মুখের দিকে তাকায় মেঘালয়। কাঁদার আগেই গাল দুটো হালকা লাল হয়ে গেছে। শুকনো ঢোক গিলে ছেড়ে দেয় তাকে। শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে,,,
__তোর এই অদ্ভুত ব্যাবহারের মানে কি?
ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় তিয়ানা,,
__ক্ককি অদ্ভুত ব্যাবহার ভাইয়া?
হঠাৎ রাগ উঠে যায় মেঘালয়ের। আগুন চোখে দেখে তিয়ানাকে। মেঘালয় কে হঠাৎ রাগতে দেখে কনফিউজড হয়ে যায় তিয়ানা। রাগার মতো তো কিছু বলেনি সে। তাহলে, রাগলো কেন?
তাকে কনফিউজড করে রেগে গিয়ে সামনে থাকা কাউচে লাথি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মেঘালয়। তিয়ানা হতভম্ব হয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। পরিচিত ঘ্রান আকে এসে লাগে। বালিসে নাক ডুবায় সে। নাক টেনে স্মল নেয়। হাসে তিয়ানার। অকারণেই হাসি আসছে। সে কি প্রেমে পরে পাগল হয়ে গেল?
অভীকের পছন্দের খাবার রান্না করে মৌমিতা। প্রায় ২০ দিন পর অভীক দেশে ফিরছে। তাই অভীকের পছন্দের খাবার রান্না করে টিফিনবাক্সে নিয়ে নেয়। অভীক এয়ারপোর্টে থেকে হস্পিটালে যাবে তাই খাবার সাথে নিয়ে যাচ্ছে। সব গুছিয়ে ব্যাগ হাতে নেয় মৌমিতা। ধপধপ পায়ের শব্দ ফেলে মেঘালয় সিরি বেয়ে নিচে আসে। ডাইনিং গিয়ে খাবার খেতে বসে। চোখে মুখে রাগের আভা স্পষ্ট। অবাক হয় মৌমিতা। তার ছেলের আবার কি হলো? কাউচে ব্যাগ রেখে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায় মৌমিতা। চেয়ার টেনে ছেলে পাশে বসে তাকে লক্ষ করে। খাবার মুখে দিয়ে ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকায় মেঘালয়। ছেলের ভ্রু কুচকানো দেখে হেসে ফেলে মৌমিতা। নিজেও মেঘালয়ের মতো এক ভ্রু কুচকানোর চেষ্টা করে। হাসে মেঘালয়, ছেলেকে হাসতে দেখে মৌমিতাও হাসে। মেঘালয়ের নাক ধরে টান দিয়ে বলল,,
__তোরা বাপ-বেটা এক ভ্রু কি করে কুচকাস?
আমি এত বছরেও পারলাম না। (মন খারাপের ভান ধরে বলে মৌমিতা)
হাসে মেঘালয়, বলল,,
__এটা শুধু আমাদের স্টাইল সবাই পারে না।
বলে ভাব নিয়ে শার্টের কলার ঠিক করে মেঘালয়। হেসে দেয় মৌমিতা বলল,
__হ্যা তোমরা তো এক পিস ই আছো।
দুজনেই হাসে। উপরের দিকে তাকিয়ে বলল মৌমিতা,,
__তিনু কই? তোর সাথে তো ছিল।
ডোনট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে মেঘালয়,,
__দেখো কি আকাম করছে আমার ঘরের। ওর কথা ছাড়ো, আব্বুর আসার কথা তো আজ।
__হ্যা এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হস্পিটালে যাবে তারপর বাড়িতে আসবে।
__অহ আচ্ছা। তুমি কখন যাচ্ছো?
__এই তো এখন। তোর সাথে কথা ছিল।
খাওয়া থামিয়ে দেয় মেঘালয়। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,
__বলো?
__হস্পিটালে জয়েন করছিস কবে।
টিসু দিয়ে হাত মুচতে মুচতে উত্তর দেয় মেঘালয়,,
__কিছুদিন পর যাবো।
কিছু ভেবে টেনশন নিয়ে বলে মেঘালয়,,
__ড্রাইভার আছে? নাকি আমি আসবো?
কাউচ থেকে ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল মৌমিতা,,
__হ্যা ড্রাইভার আছে তোকে যেতে হবে না। তিনুর সাথে থাক ‘ও’ একা আছে। আর হ্যা দেখ কি করছে? ঘুমিয়ে গেল না তো। সকালের খাবার খায়নি এখনো।
সবজি কাটাকুটি করছে তুলিকা। সপ্তাহে ছুটির দিন’ই তিনি বাড়িতে থাকতে পারেন। তাই দিনটাকে স্পেশাল করার জন্য সবার পছন্দের খাবার রান্না করে। ছেলে মেয়ে দুটোর পছন্দ অনুযায়ী রান্না করে। সাদিদ তের পছন্দেও রান্না করে তবে কখনো বলেনি খাবার ভাল হয়েছে আসে খায় চলে যায়। তাচ্ছিল্য হাসে তুলিকা। নিজের প্রতি তাচ্ছিল্য হয় তার। ছেলে মেয়ে তার হলেও স্বামীকে সে পায়নি আজও পেলো না। এত বছর হয়ে গেল তবে সাদিদের কাছ থেকে ক্ষমা টা সে পায়নি। একটা ভুলের শাস্তি বিশ বছর ধরে পেয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু তারও কি করার ছিল। মায়ের কথা মনে পরে যায় তুলিকার। বড্ড মনে পরছে। শেষে মায়ের ভাগ্যই পেলো সে। আজ বুঝতে পারছে। মা কত কষ্টে কত যন্ত্রনা নিয়ে তাদের মানুষ করেছে। বাবার সংসারে দেখেছে এটা জেনেও যে তার স্বামী পরনারীতে আসক্ত। তাকে কখনো ভালিবাসেনি। তবে এ দিক দিয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে তুলিকা তার স্বামী নিজ স্ত্রী কে ভালবাসে। অন্য নারীকে না। এটুকু ভেবে মনে শান্তি পায় সে। তার মা তো স্বামীর ভালবাসাও পায়নি কোনোদিন কিন্তু সে যে একে বারে পায়না এমন তো না। তার স্বামী সকল কর্তব্য পালন করে তার প্রতি। রাতে কাছেও আসে। ছোয়ায় ভালোবাসাও পায় তুলিকা। তবে প্রকাশ নেই। তাতে কি হয়েছে? শরীর খোরাক তো মিটছে মনের না মিটুক। যাদের জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে এখানে এসেছিল তারা তো তার’ই আছে এটাও বা কম কিসে?
একের পর এক কল করে যাচ্ছে রিনি। তবে তিলাত ফোন ধরছে না। ছ্যাছড়া মেয়ে দেখেছে সে তবে রিনির মতো না। যখন সে কল ধরছে না। তারপরও কল দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা পিছু যে কবে ছাড়বে। হতাশ ভাবে কোল বালিস জড়িয়ে শুয়ে থাকে তিলাত। ছুটির দিন ঘুমোনোর চেষ্টার করছে কিন্তু এই মেয়ে ঘুমতে দিলে তো। কল মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। না পেরে ফোন অফ করে রাখে তিলাত। যদি রিনি তাকে ভালবেসে এভাবে কল মেসেজ সারাদিন দিতো তাহলে তার মতো খুশি কেউ হতো না কিন্তু মেয়েটা সব ছেলেকেই জ্বলায়। নিজের প্রতি দুঃখ হয় তিলাতের শেষে কিনা একটা প্লে গার্ল মেয়ের সাথে রিলিশনে জড়ালো। ভাবতেই বমি আসে তার। একটুও লজ্জা নেই মেয়েটার। এমন নির্লজ্জ কোনো মেয়ে হয়। নিজেরেও হয়তো হিসেব নেই ওই মেয়ের মোট কতজন ছেলের সাথে শুয়েছে এই অব্দি। ঘেন্না লাগে তিলাতের শরীর গিত গিত করে উঠে ঘৃনায়।
ঠোঁটে নরম কিছুর স্পর্শে নড়ে উঠে তিয়ানা। মৃদু হাসে মেঘালয়। কপালে ঠোঁট ছোয়ায় তিয়ানার। কেঁপে উঠে তিয়ানা। হাসে মেঘালয়। চুলে হাত বুলিয়ে দেয় তিয়ানার। নড়াচড়ায় পেট থেকে জামা সরে যায় তিয়ানার। ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নেই মেঘালয়। ব্ল্যাঙ্কেট টেনে গায়ে জড়িয়ে তিয়ানা কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে মেঘালয়,,
__তোকে পবিত্র ভাবে চাই আমি। তোকে স্পর্শও করবো পবিত্রতার সাথে। না আমি নিজে কখনো তোকে অপবিত্র করবো আর না কখনো তুই নিজে অপবিত্র হতে পারবি।
চলবে?
(দুই বার লিখছি 😐 একবার ওয়াইফাইচলে গেছে দেখনি। তাই সেইভ হয়নি দ্বিতীয় বার ফোনে চার্স ছিল না বন্ধ হয়ে গেছে। তাই হয়তো খাপছাড়া হইছে। আর রিচেক করিনি বানানে ভুল থাকতে পারে। এখন আর রিচেক করার মতো এনার্জি নাই আমার 😐😐😐। আর হ্যা মন্তব্য আশা করছি। অবশ্যই অবশ্যই দুই এক লাইনের)