আমার_আদরিনী পর্ব-১
#আশুথিনী_হাওলাদার
__‘ভাইয়া তোর বন্ধুকে বলেদিস আমি তার বন্ধুর বোন হই তার নিজের বউ না। আমার সাথে যেন লাগতে না আসে”
কথা শেষ করে দরজায় লাথি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ‘তিয়ানা’। তিয়ানার যাওয়ার দিকে হতবম্ব হয়ে তাঁকিয়ে থাকে “তিলাত”। কি হলো ব্যাপারটা? ফোন কল আসে তিলাতের তুলে কানে নিতেই আবার ঝাঁড়ি।
__‘তোর বোনকে বলে দিস ভাইয়ের বন্ধু হই আমি তার বিয়ে করা জামাই না। এরপর কিছু করতে আসলে ভুলে যাবো ‘ও’ তোর বোন। আঁছড়ে কোমড় ভেংগে দেব।”
ধমকে কল কেটে দেয় “মেঘালয়”। তিলাত মাথায় হাত দিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে ফোনের দিকে চেয়ে থাকে। বোন আর বন্ধুর চিপায় পরে তার জান শেষ। একদিকে বোনের শাসানো অন্যদিকে বন্ধুর ধমক। দু’জনের চিপায় পরে চ্যাপটে গেছে সে। সাথে তো আছে গার্লফ্রেন্ড নামক প্যারা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয় তিলাত। এখন গার্লফ্রেন্ড নামক প্যারা “রিনির” সাথে দেখা করতে হবে। কোন কুক্ষনে যে সে এমন একটা প্যারাময় মেয়েকে প্রপোজ করেছিল। প্রতিরাতে ঘুমোনোর সময় আর ঘুম থেকে জেগে সেই কুক্ষন কে গালিগালাজ করা তার প্রধান কাজ। গার্লফ্রেন্ড নামক প্যারার মতো আর কোনো প্যারা নেই। না আছে তো, বন্ধুনার বোনের প্যারা। কিছু হলেই তাকে চিপকে ধরে। না বোন কে কিছু বলতে পারছে আর না বন্ধু কে। গন্তব্যে পৌঁছে দেখে রিনি আগে’ই সেখানে বসে আছে। তিলাতের মাথায় হাত। এই মেয়ে এখন দেরী হওয়া নিয়ে ক্যাচাল শুরু করবে। ঠোঁটে মেকি হাসির রেখা টেনে এগিয়ে যায় তিলাত। রিনি ফোসফোস করছে রাগে। ঢোক গিলে সে। ভাবে, এই মেয়ের ফোসফোস সাপের ফেলার চেয়েও ভয়ংকর৷ তিলাত গা ঘেঁষে বসে পরে রিনির। আহ্লাদী গলায় বলে,,
__‘তুমি এসে গেছো? এবারও আমার আগে আসলে ব্যাপারটা দারুন না। সুন্দর মনোরম হেহেহে।
চোখে আগুন নিয়ে তাঁকায় রিমি। তিলাত ভয়ংকর মুখ দেখেও জোর করে ঠোঁটে হাসি রাখে মনে মনে অবশ্য রিনি হাজার টা গালিও দিচ্ছে। ভেবেও নিয়েছে এই মেয়ের সংগে যে করে হোক ব্রেকাপ সে করবেই। না হলে জীবন তেজ পাতা। রঙ হীন। কান্না আসে তিলাতের কাঁদো কাঁদো মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখা যে কত কঠিন কাজ আজ সে বুঝতে পারছে। কিন্তু ফাইসা গেছে। কি আর করার।
পাঞ্চিং ব্যাগে পর পর কয়েকটা পাঞ্চ মারে মেঘালয়। রাগে কাঁপছে সে। এতটুকু মেয়ের সাহস দেখে অবাক হচ্ছে সে। “মেঘালয় চৌধুরির” চোখে চোখ রেখে মুখে মুখে তর্ক করছে। সামনে থাকলে ওই মেয়ে সে পাঞ্চিং ব্যাগের মতো ঝুকিয়ে ইচ্ছে মতো প্যাঞ্চ মেরে বুঝিয়ে দিতো মেঘালয়ের সাথে তর্ক করার ফল। রাগ হয় তার জোরে পাঞ্চ মারে পাঞ্চিং ব্যাগে। তিয়ানার কথা ভাবলেই তার মাথায় তরতর করে রাগ উঠে যায়। এই একটা মেয়ে যে তাকে। বিন্দু মাত্র কেয়ার করে না। নিজেকে যা ইচ্ছে তাই মনে করে। ডানা গজিয়েছে। ডাকা কীভাবে কাটতে তা মেঘালয় চৌধুরি খুব ভাল জানে। ক্রুর হাসে মেঘালয়। গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে ওয়াশ্রুমে যায় সে। এখন মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে। কিচ্ছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভাবতেই মাথায় রাগ তিরতির করে উঠে তার।
“কিছুক্ষন আগে”
__‘তাহলে বাজি। আমি যদি ওই ছেলেটাকে হাগ করে কিস করতে পারি। তাহলে তোরা সব কটায় ক্যাম্পাসের রাস্তায় নাকে খড় দিবি? (তিয়ানার প্রশ্ন)
বাঁকা চোখে তাঁকায় অবন্তী। বাকা হেসে অযান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,
__‘পাক্কা। দেব নাকে খড় কথা দিচ্ছি। তবে তোকে ওই ছেলেটাকেই হাগ করে কিস করতে হবে।
তিয়ানা কনফিডেন্স নিয়ে বলে,,
__‘এটা আবার কি এমন কাজ। সিউর থাক আজ তোদের এখানে নাকে খর দিতে হবে।
অবন্তি একবার তার সাথের ফ্রেন্ডদের দিকে তাঁকিয়ে বলে।
__‘ডান’
ভাব নিয়ে এগিয়ে যায় ‘তিয়ানা’ ।
মেঘালয় বাইকে স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করছে। তখন পিছন থেকে কেউ তার পিঠে হাত রাখায়। পিছনে তাঁকায়। তিয়ানাকে দেখে ভ্রু কুচকায় সে। গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করে,,
__হোয়াট?
“মেঘালয় কে দেখে বেকুপ বনে যায় তিয়ানা। কিছুটা রাগি চোখ নিয়ে অবন্তীদের দিকে তাঁকায়। বাঁকা হাসে অভন্তি। রাগ হয় তিয়ানার। ছেলেটা কে না দেখেই ‘হ্যা’ বলে দিলো। এখন পরছে মাইনকা চিপায়।
“মেঘালয় ভ্ভ্রু কুচকে ‘তিয়ানার’ ভাব গতি বোঝার চেষ্টা করে। দূরে দাঁড়িয়ে অভন্তীকে দেখে কিছুটা আন্দাজ করে রাগী কন্ঠে ধমকে তিয়ানাকে প্রশ্ন ছুরে,
__‘আজ আবার কীসের বাজি ধরেছিস?
লাফিয়ে কেঁপে উঠে তিয়ানা। ছোটো ছোটো ঢোক গিলে হাসি মুখ করে বলে,,
__‘কোনো বাজি না। আমি আবার কিসের বাজি ধরবো আজব তো।
মেঘালয় ভ্রু কুচকে ফেলে। কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে।
তিয়ামা বড় হাসি দিয়ে বলে,,
__‘আমি যাই।
‘তিয়ানা যেতে নিয়ে পরে যাওয়ার ভান করে মেঘালয়ের উপর পরে যায়। আলতো হাগ করে। তার ঠোঁট গিয়ে মেঘালয়ের গাল ছোঁয়। শিউরে ওঠে মেঘালয়। ব্যালেন্স রাখতে এক হাতে তিয়ানার কোমড় শক্ত করে ধরে। কি ঘটলো ভাবতেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। একটানে নিজের থেকে সরিয়ে নেয় তিয়ানাকে।
কঠর কন্ঠে ধমকে বলে,,
__‘তোকে বলেছি না আমার গা ঘেষবি না। ‘
আশেপাশে তাঁকায় তিয়ানা। অবন্তীর আর তার গ্যাং বাদে আরও কয়েক জন আছে । তাই সাহস নিয়ে বলে চোরা কন্ঠে বলে ,,
__‘আমারও না ইচ্ছে নেই আপনার গা ঘেষার। পরে যাচ্ছিলাম আমি তাই ব্যালেন্স রাখতে আপনাকে ধরতে হয়েছে।
হিংস্র চোখে তিয়ানার দিকে এগিয়ে যায় মেঘালয়। কয়েক পা পিছিয়ে যায় তিয়ানা।
মেঘালয় তিয়ানার হাত শক্ত করে ধরে বলে,,,
__‘মুখে মুখে তর্ক করছিস? এতো সাহস হয়ে গেছে। কিছুদিন শহরের বাইরে ছিলাম তাই ডানা গজিয়ে গেছে?
চোখ বন্ধ করে নেয় তিয়ানা। উরাধুরা ভাবে বলা শুরু করে,,
__‘আপনি কে যে আপনাকে দেখলে সাহস দেখাবো বা ভয় পাবো? ডানা গজালে আপনার কি? আপনি শুধু ভাইয়ার বন্ধু৷। আমার অবিভাবক না। আর হ্যা বাজি ধরেছি। ওই অবন্তী বোজ্জাত মেয়ে একটা ছেলে কে দেখিয়ে বলল যদি ছেলেটাকে জরিয়ে ধরে কিস করতে পারি তাহলে ”ওও” আর ওর চ্যালা গুলোক নাকে খড় দেবে। কিন্তু সেই ছেলে যে আপনি হবেন তা জানতো কে। আপনি জানলে আমি মরে গেলেও এই বাজি ধরতাম না। আপনাকে হাগ,কিস করার ইচ্ছে আমার নেই। নিজেকে এতটা ইম্পর্টেন্টস মনে করবেন না। ”
“কথা শেষ করে তিয়ানা বুঝতে পারে কোথায় কি বলে ফেলেছে। ভিতু চোখে তাঁকায় মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয় রাগ নিয়ে তার দিকেই চেয়ে আছে। এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয় তাকে। বাইক নিয়ে চলে যায়। এখন নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে তিয়ানার। তবে অবন্তীকে ছাড়েনি নাকে খড় দিয়িয়ে বাড়ি ফেরে ভাইয়ের উপর ভাইয়ের বন্ধুর রাগ ঝাড়ে।
“ঘরে সাউন্ড বক্সে লুংগি ড্যান্স গান ছেড়ে নাচতে থাকে তিয়ানা। আজ সে খুব খুশি। ফাইনাল্লি খারুশ টাকে একটু টাইট দিতে পেরেছে। মনের মধ্যে খোব কিছুটা হলেও ঝাড়তে পেরেছে। সেটা ভেবেই মনে আনন্দ হচ্ছে তার। তার জীবনটা পুরু তেজ পাতা করে দিয়েছে ভাইয়ার বন্ধু নামক ‘মেঘালয়’ প্যারাটা। এবার একটু হলেও মন শান্তি সে পেয়েছে।
চলবে?
(নতুন গল্প নিয়ে এলাম এটা আপনাদের ঠিক কতটা পছন্দ হবে বলতে পারছিনা 😴😴😴 কমন প্লটে শুরু করলেও অবশ্যই ভিন্নতা থাকবে বা রাখার চেষ্টা করবো।
আর মেঘালয়, তিয়ানা, তিলাত চরিত্র গুলো কেমন লাগছে জানাবেন)