আমার_গল্পে_তুমি বোনাস_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি বোনাস_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
রোজা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো আর্দ্র অনিক আকাশ আর্দ্রর বাবা মা সহ অন্তরার বাবা মাও দাঁড়িয়ে আছে পরশ ও মুখটা ছোট করে বসে আছে ,, আর্দ্র আসার পথেই সবাইকে বলে দিয়েছে, কিন্তু এদের মাঝে কোথাও ইয়ানা নেই রোজা ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,, আর আপনারা সবাই চলে এসেছেন যাক ভালোই হয়েছে৷ কিন্তু ইয়ানা কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না ওকি কোথাও গিয়েছে??

তুমি এখনো ওর কথা বলছো? ওকে বাদ দাও তোমাকে অনেক ধন্যবাদ রোজা সত্যি আজকে তুমি না থাকলে ভাবির যে কি হতো।

কিন্তু আর্দ্র ভাইয়া আমি তো,,,, রোজা কিছু বলার আগেই নার্স একটা টাওয়ালে জরিয়ে বেবিকে আনলো,, এই যে বেবি,, আর মা এবং বেবি দুজনেই ভালো আছে,,আর মেয়ে বেবি হয়েছে।

অনিক বেবিকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে চুমো খেলো সবাই বেবিকে পেয়ে অনেক খুশি তখনি নার্স বলল,, আর হ্যাঁ ওনি কোথায়? যিনি রক্ত দিলো ওনার অবস্থা ও তো ভালো না দেখলাম, অনেকটা দুর্বল ওনার তো এখন রেস্ট এর প্রয়োজন, আপনারা বরং ওনাকে এখানেই ভর্তি করে দেন।

সরি,,বুঝলাম না আপনি ঠিক কার কথা বলছেন??

ওনি ইয়ানার কথা বলছে ভাইয়া।

মানে??

মানেটা না হয় অন্তরা আপুর থেকেই শুনে নিয়েন তবে আমি চিন্তিত আপনি যা করেছেন সেটা যদি অন্তরা আপু শোনে তিনিও আপনার সাথে কথা বলবে কি না সন্দেহ,, আপনিই ইয়ানাকে হয়ত খারাপ কিছু বলেছেন তাই জন্য ও এই শরীল নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।

হ্যাঁ আমিই ওকে চলে যেতে বলেছি ওর এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই, কিন্তু তুমি বার বার এই শরীল এই শরীল করছো কেনো, কি হয়েছে ওর??

বললাম তো সেটা নাহয় অন্তরা আপুই বলবেন কেননা ওনি আমার থেকে ভালো জানেন আসলে কি হয়েছে।

অন্তরাকে কেবিনে দেওয়া হলে সবাই অন্তরাকে দেখতে কেবিনে গেলো অন্তরা পিঠের পিছে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে, এখন ও অনেকটাই সুস্থ,, অনিক বেবি নিয়ে গিয়ে অন্তরার পাশে বসল,, পরশ লাফাতে লাফাতে এসে বলল, মাম্মাম দাখো বুনু হয়েছে অনেক সুন্দর দেখতে ছোট্ট পরি।

দ্যাখো অন্তরা আমাদের মেয়ে কেমন পিটপিট করে সারা রুম দেখছে, চোখে একটুও ঘুম নেই,।

বেবি পরে দেখবো অনিক আগে বলো ইয়ানা কোথায়,, আচ্ছা ওকে কি তোমরা এই হসপিটালেই ভর্তি করেছো?? আর আর্দ্র তুমি এখানে কেনো ইয়ানার কাছে যাও, ও নিশ্চয়ই পাশের কেবিনে একা আছে৷ তোমরাও না সত্যি বেবি তো পরেও দেখতে পারতে এভাবে মেয়েটাকে একা রেখে চলে আসলে?? চলো আমাকে নিয়ে যাও ওর কাছে ও নিজের হাতে বেবি আমার কোলে দিবে তারপর আমি বেবিকে কোলে নেবো তার আগে নেবো নাহ, আজকে আল্লাহ ওর মাধ্যমে আমার বেবি আর আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, ও না থাকলে যে কি হতে। চলো চলো ওর কাছে যাই, ও বেবিকে দেখলে অনেক খুশি হবে।

ওয়েট ভাবি তুমি এসব কি বলছো?? আর ইয়ানা কেবিনে থাকবে কেনো? ওকে হসপিটালে ভর্তিই বা করবো কেনো কি হয়েছে ওর? আর আজকে ওর জন্যই তোমার এই অবস্থা তাই আমি ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলছি।

কিহ?? এটা তুমি কি করেছো আর্দ্র, এটা তুমি মোটেও ঠিক করেনি, মেয়েটাকে তুমি তাড়িয়ে দিলে, এটা তুমি কীভাবে করতে পারলে।

ভাইয়া এটাই করেছে আপু, তুমি জানো না ওর অবস্থাও বেশি ভালো না কত্ত টা রক্ত বেরিয়ে গেছে তার উপর আবার এই শরীল নিয়েই তেমায় রক্ত দিছে।

কিহ?? এটা তুমি কি বলছো রোজা।

ইয়ানা রক্ত দিছে মানে, আসলে হয়েছে টা কি কেউ আমায় বলবে প্লিজ? ।

আমি বলছি ইয়ানা কি করেছে, শোনো তাহলে, তারপর অন্তরা পুরোটা বলল আর্দ্র কে,, সত্যি মেয়েটা ভুল করেছে, নিজের কথা না ভেবে আমার আর বেবির কথা ভেবে সত্যি অনেক বড় ভুল করেছে তাই জন্যই তো ওর এরকম একটা ব্যবহার পাওনা হলো, তুমি সত্যি অনেক বড় ভুল করেছো আর্দ্র আমি এখন ইয়ানার সামনে যাবো কি করে, নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছে আজকে আমার জন্যই মেয়েটা এতোটা কষ্ট সয্য করছে না জানি মেয়েটা এখন কোথায় কি অবস্থায় আছে,,,, রোজা তো ইতিমধ্যে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে ।

অন্তরার কথা শুনে আর্দ্রর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো, আর্দ্র কয়েক পা পিছিয়ে গেলে তারপর কিছু একটা ভেবে দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলে,,, আরে আর্দ্র শোন কোথায় যাচ্ছিস??

ওকে যেতে দাও অনিক ও যে ভুল করেছে সেটা ওকেই শুধরাতে হবে,, তবে আমি জানিনা ইয়ানা আদেও ওকে ক্ষমা করবে কি না,।

আর্দ্র কেবিন থেকে বেরিয়েই নিজের ফোন বার করে ইয়ানাকে কল দিতে গেলো তখন দেখল ওর ফোনে মিসকল উঠে আছে,, তারমানে ইয়ানা আমায় কল করেছিলো,, শিট, আমি কি করে এতোবড় একটা ভুল করলাম, ভাবিতো বলল ওর শরীলের অবস্থা ভালো না, কোথায় গেলে ইয়ানা প্লিজ ফিরে আসো একটা বার আমার ভুলটা শুধরে নেওয়ার সুযোগ দাও,, আর্দ্র ইয়ানার মাকে কল দিয়ে জিগাস করল ইয়ানা ওখানে গিয়েছে কি না,, ইয়ানার মা বলল যায়নি, আর্দ্র বলল যদি ইয়ানা ওখানে যায় তাহলে যেনো আর্দ্র কে বলে,, ইয়ানার মা আর্দ্র কে জিগাস করল যে কি হয়েছে, আর্দ্র কোনো রকমে একটা মিথ্যা বলে ফোনটা কেটে দিলো।

ইয়ানা ওবাড়ি যায়নি তাহলে কি ইয়ানা বাড়িতে গিয়েছে,, আর্দ্র হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত বাড়ি চলে গেলো, বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো ডয়িং রুমে রক্ত তাও আবার পায়ের ছাপ,, এটা নিশ্চয়ই ইয়ানার রক্ত ইস কতটা কষ্ট হচ্ছে আমার ইয়ানার আর আমি কীভাবে পারলাম ওকে আরো কষ্ট দিতে, আর্দ্র ইয়ানার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে উপরে চলে গেলো সবগুলো রুমে দেখল কিন্তু কোথাও ইয়ানাকে পেলো না তারপর অন্তারর রুমের সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে রুমের দরজাটা খুলেই দেখল পুরো ফ্লোর জুড়ে শুধু রক্ত লেগে আছে,, কিন্তু রুমের কোথাও ইয়ানা নেই, তারমানে ইয়ানা এখানে আসিনি তাহলে গেলো কোথায় ও,,, আর্দ্র দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ল, যেই হাত দিয়ে ইয়ানাকে চড় মেড়েছিলো সেই হাতটা জোরে দেওয়ালের সাথে ঘুষি মারলো তারপর ফ্লোর থেকে একটা ভাঙা কাঁচের টুকরো উঠিয়ে হাতে জোরে চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলল,,, আর্দ্র এই নাকি তুই ইয়ানাকে ভালোবাসিস তাহলে নিজের ভালোবাসার উপর একটুও বিশ্বাস রাখলি না কেনো,, কেনো ওকে জিগাস করলি না যে কি হয়েছিলো তুই অনেক বড় ভুল করেছিস তোর তো শাস্তি পাওয়া উচিত,, আর্দ্র একা একাই কথা গুলো বলছিলো আর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে, এদিকে কাঁচের টুকরোতে ওর হাত কেটে রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
,,,,,,,
ইয়ানা আস্তে আস্তে নিজের চোখটা খুললো মাথাটা ভীষণ বেথ্যা করছে পাটা নড়াতে গিয়েই পায়ে অনেক বেথ্যা পেলো, পেটের মধ্যে মনে হচ্ছে যেনো কেউ বেথ্যার পাহার বসিয়ে দিয়েছে,, ইয়ানা ভেবেছিলো ও চোখ খুলে আর্দ্র কে দেখবে কিন্তু না ওর সামনে সুহাগ দাঁড়িয়ে আছে,, তখন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো তখনি মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল তারপর আর কিছু মনে নেই।

কিরে এখন কেমন লাগছে?? কোথাও বেথ্যা করছে?? ডাক্তারকে ডাকবো??

না সুহাগ ভাইয়া আমি ঠিক আছি।

আচ্ছা তাহলে এখন বলতো তুই ওভাবে রাস্তায় পরে ছিলি কেনো? আর তোর এই অবস্থায় বা হলো কি করে??

চলবে,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here