#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৮
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ কি হলো নিশ্চুপ কেনো? কথা বলবেন না?
ফোনের ওপর পাশের রমণীর কথা শুনে মুচকি হাসলো রাফি। মুহূর্তে মুখটাকে আবার গম্ভীর করে শুধায়-
-” কি কথা বলবো?
ফোনের ওপাশে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো রমনী যা রাফি বুঝতে পারলো।
-“ কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেছিলাম,উত্তর পাই নি।
-” কেমন থাকার কথা আমার?
-“ সেটা জানলে জিজ্ঞেস করতাম না।
রাফি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বেলকনিতে থাকা দরজাটা লাগিয়ে দিলো বাতাস আসছে খুব।
-“ এতো রাতে একটা ছেলেকে ফোন দিতে তোমার ভয় করলো না?
গড়গড় করে ভেসে আসলো -“ না।
রাফি তার চাপ দাড়িতে হাত বুলায়।
-“ সত্যি ভয় করছে না? এখন যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে বসি তখন?
-“ কেমন আছেন?
তপ্ত শ্বাস ফেললো রাফি।
-“ ভালো আর থাকতে দিলে কখন যে জিজ্ঞেস করছো কেমন আছেন। শোনো মেয়ে নেক্সট টাইম মধ্য রাতে ফোন দিবে না আর। মনে থাকবে?
-“ হু।
-“ আবার হু বলে ফাজিল মেয়ে। এতো রাত হয়েছে ঘুমাও নি কেনো?
-“ এমনি।
রাফি সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ এমনি নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত জেগে চ্যাট করছিলে?
-“ এসব নাউজুবিল্লাহ জিনিস আমার নেই।
-“ ভদ্র সাজা হচ্ছে?
-“ না সত্যি নেই।
-“ তাহলে ঘুমাও নি কেনো?
-“ আপনাকে ফোন দিবো, একটু কথা বলবো সেজন্য।
-“ আমি যদি ফোন না ধরতাম?
-“ না ধরলে না ধরতেন।
-“ তোমার করা অপমান টা এখনও ভুলি নি।
-“ কোন অপমান ভাইয়া?
-“ সক্কাল সক্কাল তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম বলে কথা শুনিয়েছিলে।
-“ আমি সেভাবে বলতে চাই নি,আসলে অতো সকালে এসেছিলেন বাহিরে ঠান্ডা বাতাস সেজন্য বলেছিলাম। আসতে তো অনেক কষ্ট হয়েছে।
-“ আমার জন্য এতো ভাবো তুমি?
-“ একটু একটু ভাবি যতোই হোক মামুর ছেলে ভাইয়া বলে কথা।
-“ জাস্ট শাট-আপ ওকে?
-“ ভুল কিছু বলেছি কি?
-“ না।
-“ তাহলে শাট-আপ কেনো বললেন?
-“ এমনি বলেছি ভালো লেগেছে তাই। তা তোমার খবর কি?
তৃষ্ণা গায়ের চাদর টা আরো ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলে-
-“ এতোক্ষণ পর মনে হলো আমার খবর নেওয়ার কথা? সবার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বললেন আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি।
-“ ওহ মনে ছিলো না তোমার সাথে কথা বলতে।
-“ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি।
-“ ভালোই বুঝতে শিখেছো আজকাল।
-“ হ্যাঁ বড় হচ্ছি যে।
-“ হ্যাঁ খুব বড় হয়েছো,ফুপি কে বলে ছেলে খুঁজতে হবে দেখছি।
-“ ছেলে কেনো খুঁজবেন?
-“ বাহ রে আমার ফুপির মেয়ে বোনটার বিয়ে দিতে হবে না?
-“ আমার বিয়ে দেবার জন্য আমার নিজের ভাই আছে।
-“ আমিও তো তোমার ভাই,আপন না হলাম মামাতো ভাই তো।
-“ আপনি বিয়ে করেন।
-“ কাকে?
-“ আমি জানি নাকি কাকে? বয়সে তো আপনি বড় সে হিসেবে তো আপনার বিয়ে হবে আমার আগে।
-“ ভুলে গেলে তুষার ব্রোর বিয়ে হলো না সেখানে আমার বিয়ে বিলাসিতা মাত্র।
-“ আপনার পছন্দের কেউ আছে?
-“ তোমাকে কেনো বলবো?
তৃষ্ণা মন খারাপ করে শুধায়-
-“ না এমনি, থাকলে বলেন ভাইয়ার আগেই আপনার বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিবো।
রাফি হেঁসে বলে-
-“ পিচ্চি মেয়ে আগে পড়াশোনা করো ঠিকমতো। এতো বড় দায়িত্ব নিতে পারবা না।
-“ এতো বড় দায়িত্ব হলো কিভাবে। আপনি বলেই দেখুন তুড়ি মেরে আপনার বিয়ে দিয়ে দিব।
-“ আচ্ছা তাই বুঝি।
-“ হু।
-“ ঘুমাও বাই।
কথাটা বলে রাফি ফোন কেটে দেয়। তৃষ্ণা ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নেয়। লোকটা কি বিদেশে গিয়ে কাউকে পছন্দ করে ফেলছে? নাকি কারো সাথে রিলেশনে আছে।
———————-
গতকালের মতই আজকের দিনেও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সোফায় বসে আছে রাতুল আর তার বাবা মা। রিয়া অনেক দিন পর বাবা মা কে পেয়ে খুশিতে জড়িয়ে ধরে। সোফার ওপর প্রান্তে বসে আছে রাসেল আহমেদ, সাহেল আহমেদ, রায়ান, রাফি,রিক্তা বেগম আর চয়নিকা বেগম। রাতুলের চোখ এদিক ওদিক শুধু চিত্রা কে খুঁজছে। রিয়া জানতো না আজ তার ভাই আর মা বাবা আসবে। রাতুলের বাবা রফিক সাহেল আর রাসেল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বেয়াই সাহেব আজ একটা আর্জি নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে।
রাসল আহমেদ ভ্রু কুঁচকে বলে
-“ কিসের আর্জি?
-“ আসলে আপনাদের মেয়ে চিত্রা ওকে আমার ছেলে রাতুলের বউ করে নিতে চাইছি,আপনাদের কি কোনো অমত আছে এতে?
রাসেল আহমেদ একবার সাহেলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ মেয়েটা তো সাহেলের,সাহেল তোর কি অমত এতে?
সাহেল আহমেদ স্ত্রীর পানে তাকালো। চয়নিকা ইশারায় জানালো যেটা ভালো হয় সেটা করতে। সাহেল আহমেদের জানা মতে রাতুল শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলে। এখনও তার কানে কোনে খারাপ কথা আসে নি। ছেলে যেহেতু ভালোই তাহলে না করার কি আছে। পরমুহূর্তে আবার মনে হলো মেয়ের মতামত জরুরি। কিন্তু মেয়ে তার বাসায় নেই, কোচিং-এ গেছে তুষারের সাথে সক্কাল সক্কাল সামনে এডমিশন পরীক্ষা সেজন্য। গলা ঝেড়ে নিয়ে বললেন-
-“ অমত নেই তবে মেয়ের মতামত ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। মেয়ে আমার বড্ড আদরের,তাকে আগে জানিয়ে দেখি সে কি বলে তারপর কিছু বলতে পারবো আপনাদের।
রফিক স্মিত হেসে বলে-
-“ তা অবশ্যই, মেয়ের মতামত জরুরি। কিন্তু চিত্রা কোথায়?
-“ বাবা ও তো কোচিং এ গেছে সামনে ওর এডমিশন পরীক্ষা তো তাই।
রিয়ার কথা শুনে রাতুল রিয়ার কানে কানে বলে-
-“ চিত্রা যে কাল বললো ও ফ্রী আছে কোথাও যাবে না তাহলে?
-“ তুষার ভাইয়া নিয়ে গেছে।
-“ তোর ফুপি শ্বাশুড়ির গম্ভীর ছেলেটা?
-” হ্যাঁ।
-“ উনি কেনো নিয়ে গেলো?
-“ ভাইয়াই তো কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিবে সেজন্য।
-“ ওহ্।
রাতুল ভেবেছিল চিত্রা কে প্রপোজাল দিবে কিন্তু পরে মনে হলো চিত্রা কে দেওয়ার থেকে ফ্যামিলি নিয়ে গিয়ে বলাটা বেটার। এখানে না করার স্কুপ কম।
দুপুরের দিকে চিত্রা বাসায় আসে। ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসতেই রিয়া জাপ্টে ধরে। হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় ভরকে যায় চিত্রা।
-“ কি হয়েছে এভাবে জড়িয়ে ধরছিস কেনো?
-“ গুড নিউজ আছে তাই।
চিত্রা ভালো করে তাকালো রিয়ার দিকে। ভ্রু কুঁচকে বললো-
-“ আবার মা হতে যাচ্ছিস?
-“ আরে ধূর না।
-“ তাহলে?
-“ একটু পরই জানতে পারবি।
চিত্রা রিয়ার এমন হেয়ালি কথা শুনে বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসতেই দেখে চিত্রার মা চয়নিকা বেগম দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে। চিত্রা মাকে দেখে স্মিত হাসে। চয়নিকা বেগম চিত্রার পাশে বসে। এরপর সাহেল আহমেদ ও মেয়ের রুমে ঢুকে। বাবা কে নিজের রুমে দেখে অবাক হয় চিত্রা, সচারাচর তার দুজন এক সাথে তার রুমে আসে না। সাহেল আহমেদ মেয়ের ওপর পাশে বসে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কিছু বলবে তোমরা?
চয়নিকা বেগম হ্যাঁ জানায়।
-“ তাহলে বলো।
-“ রাতুল কে তোর কেমন লাগে?
মায়ের কথা শুনে চিত্রা মায়ের পানে তাকায়।
-“ রাতুল ভাইয়া কে কেমন লাগে মানে?
-“ রাতুলের বাবা মা এসেছিল আজ।
-“ তো?
-“ রাতুলের সাথে তোর বিয়ের কথা বললো।
চিত্রা পা দিয়ে ফ্লোরে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে-
-“ তোমরা কি বললে?
-“ তোর বাবা কিছু বলে নি। তোর মতামত নিয়ে জানাবে তাদের।
-“ আমি এই বিয়ে করতে চাই না।
-“ কেনো বিয়ে করবে না?
-“ রাতুল ভাইয়া কে আমি সে নজরে কখনও দেখি নি। আর তাছাড়া আমি তাকে ভাইয়ার নজরে দেখি। সেখানে স্বামী হিসেবে মানা ইম্পসিবল।
-“ আচ্ছা তাহলে না করে দিবো?
-“ হ্যাঁ।
সাহেল ইশারায় চয়নিকা বেগম কে আর কিছু বলতে না করলেন। স্বামীর ইশারা পেয়ে চুপ হয়ে গেলো তিনি।সাহেল আহমেদের চুপচাপ মেয়ের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। যেখানে মেয়ে না করছে সেখানে তার কিছু বলার থাকে না। সাহেল আর চয়নিকা চলে যাওয়ার পর চিত্রার ফোনে কল আসে। চিত্রা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রাতুলের ফোন। তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোন টা রিসিভ করে চিত্রা।
-“ কেমন আছো?
থমথমে গলায় জবাব দেয় চিত্রা।
– “ভালো আছি।
– “বাসায় তুমি?
– “ হ্যাঁ।
– “ কেউ কিছু বলেছে?
– ” হ্যাঁ বলেছে।
– “ তুমি কি বললে?
চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
-“ আমি না করে দিয়েছি।
মুহূর্তে রাতুলের হাস্যজ্বল মুখ চুপসে গেলো।
-“ কেনো?
-“ কারন আমি আপনাকে কখনও ওসব নজরে দেখি নি। আপনাকে আমি একজন বড় ভাইয়ের নজরে দেখে এসেছি। আমার পক্ষে আপনাকে স্বামী হিসেবে মানা ইম্পসিবল।
-“ আমি তো কখনও তোমাকে বোনের নজরে দেখি নি।
-“ সেটা আপনার ব্যাপার কিন্তু আমার পক্ষে রাজি হওয়া সম্ভব নয়। ভালো থাকবেন।
কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় চিত্রা। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেয় যত্তসব।
তুষার অফিসে বসে আছে সামনের চেয়ারে বসে আছে রাফি। এসে থেকেই রাফি বকবক করেই চলছে।
-“ ব্রো জানো আজকাল সাধাসিধে দেখতে মেয়েগুলো অনেক পাঁজি হয়। কাল একটা কাজে গিয়েছিলাম জমি কিনতে। মেয়েটা জানে কি বললো?
-“ আমি কিভাবে জানবো কি বললো।
-“ দশ শতাংশ জমি কিনবো আমরা। মহিলা টা প্রতি শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ করে মোট ১ কোটি চেয়ে বসলো। যখন রাজি হয়ে তাকে ফোন করে বললাম ১ কোটি টাকায় জমি কিনতে রাজি তখন মেয়েটা বলে উঠলো ৩ কোটি। মানে ভাবো সুযোগ পেয়ে লাফ মেরে ৩ কোটি তে চলে গেলো।
তুষার ক্যালকুলেটর টা রাফির দিকে এগিয়ে দিলো। রাফি ক্যালকুলেটর টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বলে-
-“ এটা কেনো দিলে?
-“ ৩০ লাখ গুন ১০ দে, দেখ তো কত আসে?
রাফি হিসেব করে বলে-
-“ এই যে দেখো ৩ কোটি আসে।
-“ তাহলে তো ঠিক ই আছে বেশি কোথায় চাইলো। দাম তো তিন কোটিই আসে।
-“ হ্যাঁ সেটাই তো তাহলে ১ কোটি চাইলো কেনো?
-“ হয়তো কানে কম শুনেছিস বা বোঝায় ভুল হয়েছে।
-“ নে ব্রো আমি স্পষ্ট শুনেছি সে ১ কোটি বলেছিল।
-“ হয়েছে থাম।
-“ ব্রো একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি।
-“ এসে থেকে তো অনেক কথা বলে ফেললি এর মধ্যে আবার কি বলতে ভুল করলি।
-“ আরে ব্রো আমাদের চিতাবাঘের তো বিয়ে সামনে।
তুষার সবেই চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলো কিন্তু রাফির কথা শুনে অর্ধেক উঠে গিয়ে ফের বসে পড়লো। অবাক হয়ে বললো-
-“ চিত্রার সামনে বিয়ে মানে!
-“ হ্যাঁ আজ রাতুল আর ওর বাবা মা আসছিলো চিত্রার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে।
-“ পরে কি হলো?
-“ কি আর হবে সবাই রাজি।
মুহুর্তে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো তুষার। টেবিলে থাকা গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে বলল-
-“ চিত্রা ও রাজি?
-“ সেটা তো জানি না। চাচা বললো চিত্রার মত থাকলে বিয়ে হয়ে যাবে।
তুষার পকেট থেকে ফোন বের করে চিত্রার নম্বরে ফোন লাগায়। কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলে। তুষার দিকশূন্য হয়ে পড়ে। চিত্রা কি রাজি হয়ে গেছে? না চিত্রা কেবল তুষারেরই। তুষার দ্বিতীয় বার আর চিত্রা কে হারাতে দিবে না। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হলে এবার তাই করবে তুষার। তবুও চিত্রাকে নিজের করে নিবে।
(ছোট পর্ব হওয়ার জন্য দুঃখিত)
#চলবে?