আমি কাউকে বলিনি সে নাম তামান্না জেনিফার পর্ব পাঁচ

আমি কাউকে বলিনি সে নাম
তামান্না জেনিফার
পর্ব পাঁচ
————————————————

পাত্রপক্ষের নিপাকে খুব পছন্দ হয়েছে ৷ আজাদ সরাসরিই নিপার বাবা গাজী মিয়াকে বললো “অনেকদিন থেকেই মেয়ে দেখছি ৷ আমি অনাথ জন্য অনেকে মেয়ে দেয় না আর অনেকে কমবয়সী মেয়েকে পাত্রী হিসেবে বসিয়ে দেয় ৷ আমি লেখাপড়া শিখেছি অনেক কষ্টে ৷ এতকষ্টে পড়ালেখা শিখে শিক্ষিত হয়ে আমি যদি নাবালিকা বিয়ে করি তাহলে সেই শিক্ষার দাম কী ! এখন আপনাদের বিবেচনা ৷ আমার বাবা মা নাই , নিজের বাড়িও নাই ৷ তবে সরকারী চাকরি করি , সাথে দুটা টিউশনিও করি ৷ আমার নিজের খরচ চালায়েও আমি বেশ ভালোই সঞ্চয় করি ৷ আল্লাহ চাইলে আপনার মেয়ে আমার কাছে অসুখী থাকবে না , যদি আপনারা রাজী থাকেন ৷ ”

গাজী মিয়া কী বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না ৷ তার মেয়ে শ্বশুর শাশুড়ির আদর সোহাগ পাবে না , ছেলের নিজের কোন বাড়িও নাই থাকা লাগবে ভাড়া বাড়িতে …. আসলে কী করা উচিত তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না ৷ আবার সুফিয়া বেগমের বিষয়টাও এখনও গোপন আছে , এটা কী গোপনই রাখবেন না কী বলবেন এটাও বুঝতেছেন না তিনি ৷ এমন দ্বিধা দ্বন্দ্ব যখন তার মাথায় খেলছে তখন নিপা মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে যদি ছেলেটা তার মায়ের সম্পর্কে জানার পরও রাজি থাকে তাহলে সে এই ছেলেকেই বিয়ে করবে ৷ পরিবারের সবাইকে চমকে দিয়ে সে বলে উঠে “আমার সম্পর্কে একখান কতা আপনের জানোন দরকার কুনো সিদ্ধান্ত নেওনের আগে ৷ আমার মায়ে পাগল , বছরের বারো মাস তারে শিকল দিয়া বাইন্ধা রাখোন লাগে ৷ এইবার আপনে ভাবেন , পাগলের মাইয়্যা বিয়া করবেন না কী করবেন না …. যদি আপনের আপত্তি না থাকে আমারও কুনো আপত্তি নাই ! ”

গাজী মিয়া অপলক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছেন ৷ তার ইচ্ছে করছে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিতে মেয়ের গালে ৷ এত বেহায়া কবে হলো তার মেয়েটা ! বিয়ের জন্য এতই উতলা হয়ে গেছে যে ময়মুরুব্বি আর নিজের বাপ চাচার সামনে বসে নিজের বিয়ের আলাপ করছে !

আজাদ উঠে একটা মিষ্টি নিপার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে “আমার কোন আপত্তি নাই ৷ মা পাগল হোক আর যাই হোক , তোমার তবুও মা আছে ৷ আমি হতভাগা , আমার একটা পাগল মা ও নাই ..”

গাজী মিয়ার আর সহ্য হচ্ছিলো না ছেলে মেয়ের এই বেহায়াপনা ৷ তিনি গম্ভীর কিন্তু শান্ত গলায় বললেন “আইচ্ছা , পোলা মাইয়্যা যহন দুইজনই রাজি , তাইলে আমরা খোঁজখবর নেই ৷ সব ঠিক থাকলে তাইলে বিয়ার তারিখ ঠিক করা যাইবো ৷ ”

রাতের বেলা অতিথিদের খুব আদর যত্ন করে খাওয়ালো আলেয়া বেগম নিজ হাতে ৷ আজাদের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে গিয়ে আলেয়া বেগম বললো “বাবাজী , আমরার মাইয়্যাডা বড় অভাগী … জীবনে মায়ের আদর ভালোবাসা পায় নাই ৷ তুমি ওরে অনেক আদর যত্নে রাইখো বাবাজী …”

অতিথি বিদায় করে বাড়ি ফিরে আলেয়া বেগম দেখলেন ঘরের দরজার সামনে মাথার নিচে পিড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে রূপা ৷ আর একটু দূরেই বারান্দায় বসে আছে নয়ন …. দুজনকে একসাথে দেখে আলেয়া বেগমের বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো ৷ নিজের উপর ভীষণ রাগ হতে লাগলো তার , কেন তিনি রূপাকে এভাবে একা ফেলে গেলেন ! পুরুষের জাত হলো শকুনের জাত , সে পুরুষ তার নিজের ছেলে হলেও সে শকুন …..

আলেয়া বেগম রূপাকে ধাক্কা দিয়ে জাগালেন , রূপা জেগে উঠতেই নয়ন বারান্দা থেকে তার নিজের ঘরে চলে গেলো ৷

আলেয়া বেগম রূপার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন “তোর শইল্যে কেউ হাত দেয় নাই তো ! ” রূপা হঠাৎই ঘুম থেকে উঠে চাচীর ফিসফিসানির কোন মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলো না … সে কথার উত্তর না দিয়ে সে বললো “পুলাও কী খানিক বাঁচছে চাচী ? এট্টু পুলাও দিও আমারে বাঁচলে …”

আলেয়া বেগম নিশ্চিন্ত হলেন ৷ নয়ন রূপার শরীরে অযাচিতভাবে হাত দিলে সে নিশ্চয় পোলাও খেতে চাইতো না এভাবে … দীর্ঘশ্বাস হজম করে তিনি বললেন ” হ , নবাবজাদী পুলাও খাইবো … বাপ খাইছে মাও থুইয়া পলাইছে কিন্তু নবাবজাদীর পুলাও খাওয়ার শখ ঠিক আছে … আনছি , যা চোখে পানি দিয়া আয় , দিতাছি …”

রূপা তার প্রয়োজনের চেয়েও বেশি পোলাও আর মাংস পাতে নেয় ৷ তার চোখের ক্ষিধেটা কমতেই চায় না ৷ মাংসের ঝোল দিয়ে পোলাও মেখে মেখে তৃপ্তির সাথে মুখে দেয় সে ৷ চাচী যতই গালমন্দ করুক তাতে কী ! চাচীর গালের জন্য তো আর পোলাও মাংসের স্বাদ কমে না ….

অর্ধেক না খেতেই পেট ভরে যায় তার ৷ আলেয়া বেগম বুঝতে পেরে আবার মুখঝামটা দিতে শুরু করেন …. “এতবার করে কইছি ওরে বান্দীর ঘরের বান্দী , যেইটুক খাইতে পারবি ঐটুক নে , লাগলে আরো নিস … না বেসাইস্তা কুনহানকার নিবো এক গামলা ! এই পুলাও যদি নষ্ট করছোস তাইলে তোর আইজকা দুঃখ আছে ৷ সব খাবি তুই ৷ ”

মায়ের চিৎকার শুনে রান্নাঘরে চলে আসে নয়ন ৷ তরপর বলে “ওর লগে এইরাম কুত্তার লাহান খেউ খেউ করো ক্যান ! এই বাড়িত কিন্তু ওর বাপেরও ভাগ আছে ৷ মাইঝা কাকার সব জমিন কিন্তু আমরার মইধ্যেই ৷ অয় তুমার বাড়িত মাগনা খায় না মা ! সারাদিন চিল্লাইতেই থাকে … ঐ রূপা , খাইতে না পারলে হাত ধুইয়া উইঠা যা !” আলেয়া বেগম অবাক বিষ্ময়ে তার ছেলেকে দেখতে থাকে ৷ এই ছেলেটা এতগুলো কথা তাকে বললো , তাও এই রূপার জন্য ! যে ছেলের সাত চড়েও মুখ ফুঁটে শব্দ বের হয় না , সে আজ তার মা কে শাষালো ! হঠাৎ তার ছেলের হলো কী !

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here