#আমি_তোমাকে_ভালোবাসি
#লেখনীতে_সুরঞ্জীতা_সুর
#দশম_পর্ব
কিছুক্ষণ পর চন্দ্রা রাশেদকে বললো, রাশেদ?
বলো।
আপনাকে কয়েকটা কথা বলবো। অনেকদিন ধরে বলবো ভাবছি বলা হয় না।
কী বলবে? বলো।
আমার মনে হয় হাসপাতালের ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো আমাদের মধ্যে এই কমিউনিকেশনটা কখনোই হতো না। এটা আমাদের মধ্যে কিছুটা বাটারফ্লাই ইফেক্টের মতো কাজ করেছে। মানে অতীতের ঘটনায় ক্ষুদ্র পরিবর্তনের কারনে আমাদের ভবিষ্যৎতে বিরাট একটা পরিবর্তন চলে এসেছে। আমি আস্তে করে সবকিছু মেনে নিচ্ছি। এতে অনেকটাই সফল আমি। কিছু মেনেও নিয়েছি।
পরিবর্তনটাতে কী তুমি খুশি না?
হ্যাঁ খুশি। বলতে গেলে খুবই খুশি ছোট্ট একটা ঘটনা আপনার সাথে আমার সম্পর্কটায় কতটা পরিবর্তন এনে দিলো বলুন? যা আমি আগে চেয়েও আনতে পারিনি। ভাগ্যিস সেদিন রাগ করেছিলেন।
রাশেদ হাসলো।
চন্দ্রা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো, রাশেদ?
কী?
কাল আপনি জানতে চাইছিলেন না আমি কেন আর পড়াশোনা করবো না?
হ্যাঁ।
এতক্ষণ যে কথা গুলো বললাম তার সাথে এইটার একটা সুক্ষ্ম সম্পর্ক আছে।
সেটা কী?
আমার ধারনা, না ধারনা না আমি বিশ্বাস করি আবার কলেজে যেতে শুরু করলে আমার আগের সবকিছু মনে পড়ে যাবে। আপনার সাথে আমার এখনের সম্পর্কটা তখন হয়তো কিছুটা ফিকে হয়ে যাবে। আমি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছি আবার এলেমেলো হয়ে গেলে হয়তো আর ঠিক হতে পারবো না।
চন্দ্রা তুমি ছেলেমানুষের মতো কথা বলছো। তুমি যথেষ্ট ম্যাচুউর। এখন যখন এতোটা বুঝতে পারছো এরপরও পারবে। তুমি নিজেই নিজের রোগটা ধরে ফেললে। যা খুব কম মানুষ পারে। এটা জানো? যদি কোন ব্যাক্তি নিজের রোগ নিজের ধরে ফেলতে পারে তার অর্ধেক রোগ সেড়ে যায়। তাছাড়া আমার মনে হয় এই ছোট্ট একটা কারণে তোমার পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত না। যদি তোমার ইচ্ছে না থাকতো সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু তোমার ইচ্ছে আছে শুধু ভয়ের কারণে সেটা করতে পারছো না। তুমি কী আমার কথা বুঝতে পারছো?
জি।
সম্পর্ক মেনে নিতে চেষ্টা করছো সেটা খুব ভালো কথা কিন্তু তার জন্য ঘরে বসে থাকতে হবে এমন তো না। যদি ঘরে বসে থেকে সম্পর্ক ঠিক হতো তাহলে আমাদের মধ্যে আরো আগেই সবকিছু ঠিক হতো। বুঝেছো? তাহলে তোমার কী করা উচিত?
কী করা?
ভয়টাকে জয় করা। নিজে নিজে যতটুকু পারো সামলিয়ে নাও। বাকি কিছু না পারলে সেটার জন্য তো আমি আছি। তাই না?
হ্যাঁ।
তাহলে তুমি কালকে খোঁজ নাও কারো কাছ থেকে। নাহলে আমি হাসপাতালে যাওয়ার সময় খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাবো। কোনটা করবে বলো?
আপনিই জেনে আসুন।
আচ্ছা জেনে আসবো। এখন উঠা যাক সন্ধ্যে হয়ে গেছে।
রিকশা দিয়ে আসার সময় রাশেদ কসমেটিকসের শো-রুমে রিকশা থামালো। চন্দ্রা ভাবলো হয়তো এখানে রাশেদের কোন কাজ আছে। কিন্তু রাশেদ চন্দ্রাকে নিয়ে নেমে গেল। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে চন্দ্রাকে নিয়ে শো-রুমে গিয়ে ঢুকলো। তারপর চন্দ্রাকে অবাক করে দিয়ে বললো, তোমার কী কী লাগবে কিনে নাও?
চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো, এগুলো কিনবো কেন?
সাজার জন্য। আজ তো সাজলে না বিয়ের সময় মা, নীলা কী কিনে দিয়েছে জানি না? এখন কিছু লাগলে কিনে নাও। নাকি অন্য জায়গা থেকে কিনো? তাহলে সেখানে যাই চলো।
না, আসলে আমি সাজি না।
কেন? সাজতে পারো না নাকি? না পারলে নীলাকে বলো ও প্রচুর সাজতে পারে। এই শো-রুম থেকেই ও শপিং করে এখানে ওকে চোখ বন্ধ করে ছেড়ে দিলে ও হাঁটতে হাঁটতে বলে দিতে পারবে কোথায় আছে?
তাই নাকি? তাহলে ওকে নিয়ে আসার দরকার ছিলো।
ওকে তো নিয়ে আসা হয় প্রায়ই। এখন যেহেতু তোমাকে নিয়ে এলাম কিনে নাও ঝটপট।
রাশেদ আমি সাজি না। আমার চোখে সমস্যা। মারাত্মক সমস্যা। দেখেন না প্রায়ই গ্লাস পড়ি। এসব কিছু আমাকে স্যুট করে না।
তাই নাকি?দেখ কেমন হাসবেন্ড আমি ওয়াইফের মেডিকেল হিষ্ট্রি জানি না। রাশেদ অবাক হয়ে বললো।
কোন ব্যাপার না।
কিন্তু বিয়ের সময় তো ঠিকই সেজেছো।
তখন তো সাজতেই হতো। বিয়ে বলে কথা। তাই সেজেছিলাম। তারপর ভুগতেও হয়েছিলো। ফিরাযাত্রায় গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।
কিছুই কী দাও না? কাজল, লিপস্টিক?
লিপস্টিক দেই।
তাহলে ওটাই কিনো।
আচ্ছা।
শো-রুম থেকে বেছে হালকা কালার কয়েকটা লিপস্টিক কিনলো চন্দ্রা। তারপর আবার রিকশায় উঠলো। উদ্দেশ্য বাসা। রিকশায় যেতে যেতে রাশেদ বললো, চন্দ্রা অনেকদিন বাবা, মা, নীলাকে দেখি না। কালকে ওদের বলি বাসায় আসতে?
আচ্ছা।
তুমি রান্না করতে পারবে সবার জন্য নাকি বাইরে থেকে আনাবো?
এসব কী ধরনের কথা আমি থাকতে বাইরে থেকে আনাতে হবে কেন? আমার রান্না কী এতো বাজে নাকি?
না না সেটা বলি নি। আচ্ছা ঠিক আছে তুমিই রান্না করো।
রাত পৌনে আটটায় চন্দ্রারা বাড়ি ফিরলো। রাশেদের আজকের দিনটা চমৎকার কেটেছে।
১৬.
আজ চন্দ্রা সকাল থেকে খুবই ব্যস্ত। তার শ্বশুরবাড়ির সবাই আজ আসবে। তাই আয়োজন প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি। টুকু পাশ থেকে গভীর আগ্রহে দেখছে। তার আপামনি যখন কাজ করে তখন দেখতে খুবই ভালো লাগে। আজকে ভাইজানের বাবার বাসা থেকে লোকজন আসবে। তাই আপামনি খুবই ব্যস্ত। চন্দ্রা চা বানিয়ে টুকুকে দিয়ে বললো, টুকু তোর ভাইয়াকে দিয়ে আয় চা টা।
জ্বে আইচ্ছা।
টুকু চা নিয়ে রাশেদের কাছে গেল। রাশেদ একটু রাগ করলো। সবসময় চন্দ্রা চা নিয়ে আসে আজ টুকু কেন? একটা চায়ের কাপ নিয়ে আসতে কত সময় লাগে?
ভাইজান আফনের ছা।
এটা চা হবে। তোর আপা কোথায়?
পাকের ঘরে।
কী করছে?
খাবার বানাইন।
ও। তাহলে তুই বস তোর সাথে গল্প করি।
আমার ভাইজান এতো টাইম নাই। কত কাম জানেন পাকের ঘরে?
তাই নাকি?
জ্বে।
আচ্ছা যা।
কাপ দেন লইয়া যাই না ওইলে আফামনি আবার নিয়া যাইতে কইবো।
চা এখনো মুখেই তুলি নি আমি। তোকে কাপ দিবো কীভাবে? তুই যা আমি নিয়ে দিয়ে আসবো।
আইচ্ছা।
টুকু হেলেদুলে রান্নাঘরে চলে গেল। চন্দ্রা বললো, দিয়েছিস চা?
জ্বে।
তাহলে এবার আমাকে হেল্প কর। সবজি গুলো ধুয়ে দে।
আইচ্ছা।
টুকু?
জ্বে।
কতবার বলেছি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে?
আফামনি আমি পারি না কইতে।
পারতে হবে। এখন বই পড়া শিখছিস। কয়দিন পর স্কুলে দিব। স্কুলে কী কেউ এভাবে কথা বলে?
আমি যখন আগে স্কুলে পড়তাম তহন তো এমনেই কথা কইতাম।
এখানে এভাবে কেউ বলে না। এখন থেকে চেষ্টা কর।
আইচ্ছা।
আইচ্ছা না বল আচ্ছা।
আইচ্ছা।
চন্দ্রা হেসে ফেললো তারপর বললো, ঠিক আছে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঝটপট কাজ করে ফেল।
রাশেদ গোসল করে একবারে তৈরি হয়ে ঘর থেকে বের হলো। হাতে খালি চায়ের কাপ। সে টেবিলে খালি কাপ রাখতে না রাখতেই চন্দ্রা চট করে কাপ নিয়ে ধুয়ে রাখলো।
চন্দ্রা তুমি এতো ঝামেলা করছো কেন? উনারা তো অতিথি না যে এতো কিছু করতে হবে।
মা ওই বাড়িতে আমাকে কিছুই করতে দেয়নি। উনারা আমার রান্না কখনো খান নি তাই।
তাই বলে এভাবে।
তেমন কিছুই না এগুলো।
আচ্ছা চলো খেয়ে নিবে। টুকু তুইও আয়।
ভাইজান আমি খাইয়া নিছি।
খুব ভালো। চন্দ্রা তুমি আসো।
আমি এখন খাবো না কষ্ট করে একা খেয়ে নিন। প্লিজ না খেয়ে যাবেন না আর টুকু তুই একটু ফার্নিচার গুলো মুছে আয়।
আইচ্ছা আফা।
বলেই টুকু চলে গেল। চন্দ্রা রাশেদের দিকে তাকিয়ে বললো, কী হলো আপনি দাঁড়িয়ে কেন?
কিছু না। এমনি।
আসুন আমি খাবার দিয়ে দিচ্ছি।
না আমি নিয়ে খেতে পারবো।
সেটা আমিও জানি। তারপরও আসুন আমি দিচ্ছি।
চন্দ্রা টেবিলে গিয়ে রাশেদের খাবার বেড়ে দিলো। রাশেদ বসে পড়লো। চন্দ্র খাবার দিয়ে চলে যেতেই রাশেদ পেছন থেকে হাত টেনে ধরলো চন্দ্রার।
কিছু লাগবে আর?
হ্যাঁ।
কী লাগবে?
এই মুহূর্তে টেবিলে বসবে আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
রাশেদ আমি………
চুপচাপ বসো।
রাশেদ চন্দ্রাকে টেবিলে বসিয়ে দিলো। তারপর খাবার বেড়ে চন্দ্রাকে ইশারায় বললো খেতে। চন্দ্রা বিরস বদনে খেতে লাগলো। তারমুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এতো বিস্বাদ খাবার কখনো খায় নি। একমিনিট পর চন্দ্রা চেঁচিয়ে উঠলো,
আমার তরকারি পুড়ে গেছে। গন্ধ বের হচ্ছে। সব দোষ আপনার।
বলেই ঝড়ের বেগে চলে গেল রান্নাঘরে। চন্দ্রা তরকারি নাড়ছে। এমন সময় একটা বলিষ্ঠ হাত তার মুখের সামনে খাবার ধরে আছে। সে পাশে তাকিয়ে দেখলো, রাশেদ হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাশেদ বললো, সব দোষ যখন আমার, সেটা শুধরে না হয় দিই।
মানে?
মানে হচ্ছে আমি তোমাকে খেতে জোর করেছি তাই তরকারি পুড়ে গেছে। তাই তরকারি তো ঠিক করতে পারবো না সেজন্য তোমাকে খাইয়ে দিতে এলাম। তোমার তরকারিও পুড়লো না আবার খাওয়াও হলো। নাও মুখে নাও। সকাল থেকে বোধহয় এগুলোই করছো খালিপেটে। আমি জানি আমি চলে গেলেও এসবই করবে। খাওয়ার সময় পাবে না।
চন্দ্রা কথা না বাড়িয়ে খাবার মুখে নিল। কথায় বললেই বাড়বে। তাছাড়া ক্ষিধেও পেয়েছিলো। রাশেদ একই প্লেট থেকে আবার খবার নিয়ে তার মুখে পুড়লো।
চন্দ্রা তরকারি কী বেশি পুড়ে গেছে?
না নিচে হালকা ধরে গিয়েছিলো। পুড়ে যায়নি।
যাক ভালোই হলো। অবশ্য আমারই লাভ হয়েছে।
কীসের লাভ? চন্দ্রা ভ্রু কুঁচকে বললো।
এইযে বউয়ের সাথে এক পাতে খাওয়ার সৌভাগ্য হলো।
এইকথায় চন্দ্রা লজ্জা পেল। রাশোদ তা খেয়াল করে বললো, যাক বাবা লজ্জার কী বললাম?
আর খাব না?
কেন কেন?
টুকু ঘরে আছে ও দেখলে কী বলবে?
এতক্ষণ তো মনে পড়েনি এখন মনে পড়লো।
হ্যাঁ। আপনি এখন যান। আমার কাজ আছে।
অসম্ভব। না খাইয়ে যাচ্ছি না।
আর খাব না তো বললাম।
খাবে। চুপ করে হা করো।
অগত্যা চন্দ্রাকে খেতে হলো। রাশেদ খুবই নাছোড়বান্দা ছেলে। সে চন্দ্রাকে খাইয়ে চলে গেল। সাথে করে লাঞ্চ নিয় গেল। একবারে রাতে আসবে। এরই মাঝে চন্দ্রা নিজের ঘরে গেল রাশেদ যাওয়ার পর। বিছানা ঠিক করতে হবে। ঘরে গিয়ে সে অবাক। রাশেদ সবকিছু পরিপাটি করে রেখেছে। চন্দ্রা মনে মনে খুবই খুশি হলো। কিছু সময় অন্তত বাঁচলো।
এগারোটায় কলিং বেল বাজলো। চন্দ্রার মাথায় ছোটখাটো বাজ পড়লো এতো তাড়াতাড়ি চলে এলো উনারা। সে তারাহুরো করে দরজা খুললো। চন্দ্রা দরজা খুলতেই নীলা ঝাপিয়ে পড়লো চন্দ্রার উপর। চন্দ্রা টাল সামলাতে না পেরে দেয়াল ধরলো।
ভাবী ও ভাবী। কেমন আছো গো তুমি?
চন্দ্রা হাসলো। নীলা ছোট হওয়ায় খুবই আদরের। আহ্লাদীস্বরে কথা বলে সবার সাথে। চন্দ্রার সাথেও এর ব্যাতিক্রম নয়।
ভালো আছি নীলা। তুমি কেমন আছো?
খুবই ভালো আছি। তোমাকে দেখে আরো ভালো লাগছে।
আচ্ছা এখন একটু ছাড়ো আমি আম্মু, আব্বুকে একটু সালাম করি।
আচ্ছা।
চন্দ্রা তাদের কাছে গিয়ে দুইজনকে সালাম করলো। রিমা আহমেদ চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে বললো, কেমন আছে আমার মা?
খুব ভালো আম্মু। আপনি কেমন আছেন?
এইতো ভালো।
আব্বু কেমন আছেন আপনি?
ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?
ভালো আছি আব্বু।
রিমা আহমেদ বললো, রাশেদ কী হাসপাতালে?
হ্যাঁ আম্মু।
নীলা পাশ থেকে বললো, ভাবী এই পিচ্ছি কে?
চন্দ্রা টুকুর দিকে তাকিয়ে দেখলো টুকু কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলে চন্দ্রা আর রাশেদ ছাড়া অন্য সবার সামনে গুটিয়ে থাকে। চন্দ্রা টুকুকে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলো।
নীলা তোমার ভাই তোমাকে বলে নি ওর কথা?
না তো।
ও টুকু। আমাদের সাথে থাকে। টুকু সালাম দাও সবাইকে।
টুকু সালাম দিলো। চন্দ্রা শশব্যস্ত হয়ে সবার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো। রাশেদের মা ঘুরে ঘুরে ছেলের পরিপাটি সংসার দেখছে। মনে হলো চন্দ্রা আগের থেকে আজকে নরমাল হয়ে কথা বলছে। একটু ফ্রি হয়েছে। রিমা আহমেদ খুবই খুশি হলেন। নাস্তা দিয়ে চন্দ্রা আবার রান্নাঘরে যেতে নিলেই রাশেদের মা হাত টেনে ধরলো।
কোথায় যাচ্ছো?
রান্নাঘরে।
এতো কী রান্না করছো?
তেমন কিছু না।
আপনারা নাস্তা করুন আমি যাই। কিছু লাগলে বলবেন।
না কোথাও যেতে হবে না। বসো তো গল্প করি।
আচ্ছা।
ভাবী তুমি জানো ভাইয়ার জন্মদিন আর পাঁচদিন পর।
তাই? জানতাম না।
এখন তো জানলে। তাহলেই হবে। আমরা একসাথে থাকলে কত ভালো হতো তাই না মা?
হ্যাঁ। কিন্তু তোমার ভাইয়া হাসপাতাল তো দূরে হয়ে যায়। তাইতে এখানে ওদের বাসা নেওয়া আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়া আসা করলে ওর কষ্ট হয়ে যেত প্রতিদিন।
এক কাজ করি। ভাবীকে নিয়ে যাই। ভাইয়া থাকুক।
তোর ভাবী রাজি হলে নিয়ে যাবো না হয়।
ভাবী যাবে আমাদের সাথে।
আচ্ছা যাবো।
দুপুরের বাকি রান্না রিমা আহমেদ করলো। চন্দ্রাকে হাতও লাগাতে দেয়নি। চন্দ্রা পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। অন্যদিকে নীলার সাথে টুকুর খুবই ভাব হলো। রাশেদ বাড়ি ফিরলো বেশ রাত করে। ঘরে ঢুকে দেখলো তাকে ছাড়াই আসর জমে গেছে। চন্দ্রাকে সবার সাথে মিশতে দেখে তার ভালো লাগলো। রাশেদ ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেল।
নীলা রাশেদকে দেখে বললো, ভাইয়া তুমি জানো?
কী জানবো?
পরশু ভাবী আমাদের সাথে বাড়ি যাচ্ছে।
রাশেদের মুখ শুকিয়ে গেছে। চন্দ্রা আড়চোখে রাশেদকে দেখলো।
রাশেদ মিনমিন করে বললো, তোর ভাবী রাজি থাকলে নিয়ে যা।
ভাবী যাবে বলেছে।
তাহলে যাবে। চন্দ্রা আমাকে চা দাও।
দিচ্ছি।
ভাবী তুমি বিরক্ত হও না?
কেন?
এইযে সারাদিন চা চা করে।
সারাদিন থাকে কোথায়? ওই তো সকালে আর রাতে খায়। লিকার চা। এটা করতে আর এমন কী?
আচ্ছা যাও।
চন্দ্রা রাশেদের খোঁজে বারান্দায় গেল। রাশেদ বাইরে তাকিয়ে আছে। চন্দ্রা পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলার কথা শোনার পর থেকে থম মেরে আছে তা বেশ বুঝতে পারলো।
চা টা নিন।
রাশেদ হাত বাড়িয়ে কাপ নিলো।
চন্দ্রা যেতে নিলেই রাশেদ বললো, এখানে দাঁড়াও কথা আছে।
কী কথা?
তুমি কী পরশু যাচ্ছো আমাদের বাড়ি?
নীলা, মা, বাবা বললে তো যেতেই হবে। উনাদের না করবো কীভাবে?
উনারা বলবে তাই যাবে? তোমার ইচ্ছে নেই?
চন্দ্রা চুপ করে রইলো। আসলে সে নিজেও বুঝতে পারছে না তার ইচ্ছে আছে কিনা? তবে আজকে সারাদিন ওর খুব ভালো কেটেছে নীলার মতো ওর ও মনে হয়েছে ওরা একসাথে থাকলে কতই না ভালো হতো! তবে এটাও চিন্তা হচ্ছে ও চলে গেলে রাশেদের খাওয়ার কী ব্যবস্থা হবে? রাশেদের বাড়ি থেকে তো এতো দূরে খাবার পাঠানো সম্ভব না। তাও আবার তিন বেলা।
কী হলো কথা বলো?
আপনি বললে যাবো না।
তাহলে যেও না।
মানে?
মানে হচ্ছে কালকে নীলা বললে তুমি বলবে কয়দিন পর যাবে। কারন এই কয়দিন মাস্টার্সে ভর্তি নিয়ে একটু বিজি থাকবে। কয়েকদিন পর আমার সাথে যাবে। বলতে পারবে না?
আপনিই বলে দিয়েন। আমি পারবো না।
আচ্ছা আমি বলে দিবো।
এখন আমি যাই।
আচ্ছা যাও।
চন্দ্রা চলে গেল। রাশেদের একটু হালকা লাগছে। চন্দ্রার যাওয়াটা আটকানো যাবে তাহলে। এটা ছাড়া অন্য কোন কথা তো আসছে না। মা, বাবা, বোনের সামনে নিশ্চয় এটা বলা যায় যে, চন্দ্রাকে ছাড়া সে একা বাসায় থাকতে পারবে না। খালি বাসায় আসলে মিস করবে চন্দ্রাকে।
চলবে………..