#আমি_শুধু_তোমার
#লেখনিতেঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি
#পঞ্চম_পর্ব
✘কপি করা সম্পূর্ণ নি/ষিদ্ধ✘
বিশাল দীঘিতে ছোট্ট একটা নৌকা। নৌকার দু’পাশে দু’জন মানব-মানবী বসে আছে। যাদের ঠিক মাথার উপর থালার মতো মস্ত এক চাঁদ! যে কিনা ফকফকে আলো ছড়াচ্ছে। তার আলোতে আলোকিত চারপাশ। আলোকিত সেই মানব-মানবী। দু’জনেই মিষ্টি এই জ্যোৎস্না স্নানে গা ভেজাচ্ছে। সেই মানব-মানবী আর কেউ নয়। আমরা! আমি আর আমার আ/সামি মহাশয়। চাঁদের আলোতে ওনার ফর্সা মুখটা চিকচিক করছে। সাথে কালো পাঞ্জাবিও। নৌকার এক কোনে বসে দীঘির জলে পা ভেজাচ্ছি আমি। ঠোঁটে আমার হাসি। খিলখিলে হাসি। হাতে ৩টা পদ্ম। ২টা বড়। ও ১টা ছোট পদ্ম। পদ্মগুলো একদম টসটসে। যেন সদ্য ফুটেছে। কি আদুরে! দীঘির ঠান্ডা জলে পা ভেজাতে ভেজাতে মাঝেমধ্যে আঁড়চোখে চাইছি তার দিকে। সে আমাকে দেখছে। একদৃষ্টিতে। চোখে তার মুগ্ধতা! আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
আমাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে আরেকটি নৌকা আছে। সেখানে এখানকারই ২ জন লোক আছে। আমার আ/সামি মহাশয় আমাদের সেফটির জন্য রেখেছে।
আমার পূর্বাচলের একটা রিসোর্টে উঠেছি। বসুন্ধরা থেকে পূর্বাচল বেশি একটা দূরে নয়। তার উপর রাত হওয়ায় জ্যাম কম ছিল। যার ফলে অল্প সময়ের মাঝেই আমরা এখানে এসে পৌঁছিয়েছি। রিসোর্টে ঢুকতেই একটা ছেলে আমার স্বাগতম জানিয়ে রিসোর্টের ভেতরে নিয়ে গিয়েছে। আমার হাতে দিয়েছিল গোলাপের তোরা! টকটকে লাল গোলাপ। ছেলেটা ওনার সাথে এমনভাবে কথা বলছিল যেন, ওনাকে আগে থেকেই চেনে৷
ফ্লাশব্যাক…
গাড়ি থেকে নেমে রিসোর্টে ঢুকতেই একটা ২৪ কি ২৫ বছর বয়সী ছেলে এগিয়ে এলো। আমার হাতে টকটকে এক তোরা গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
“ওয়েলকাম, ম্যাম।”
তারপর, ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনার কথা অনুযায়ী সব রেডি আছে, স্যার।”
ছেলেটির কথা শুনে আমার ভ্রু কুঁচকে এলো। আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকাতেই উনি মুচকি হাসলেন। বললেন,
“কিছুক্ষণের মাঝেই উত্তর পাবে।”
তারপর, ছেলেটিকে অনুসরণ করে প্রথম আমরা আমাদের জন্য বরাদ্দ করা রুমটিতে গেলাম। তারপর, উনি আমাকে সেখানে বসিয়ে রেখে ছেলেটির সাথে কোথায় যেন চলে গেলেন। প্রথমে আমার একটু বিরক্ত লাগলো। এরপর, রাগ বাড়লো। কারণ, অচেনা একটা জায়গায় এভাবে একা বসিয়ে রাখার মানে কী? আচমকা আমার ছেলেটির কথা মনে পড়লো। সে বলেছিল, ‘আপনার কথা অনুযায়ী সব রেডি আছে।’ সব রেডি আছে মানে কী? উনি কি আমাকে মে/রে ফেলার প্লান করছেন? তবে, অভ্র ঠিক বলেছে? না, এমনটা কীভাবে হয়? উনি এতটাও জঘন্য মানুষ নন। মে/রে ফেলার হলে কি কষ্ট করে এত দূর আনতেন? আনতেই পারেন! যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করেন। না, না। এগুলা কী ভাবছি আমি? উনি এমনটা করতেই পারেন না। কিছুক্ষণ পর আবার মস্তিষ্কের মধ্যে ঘুরপাক খেল একটা কথা। ‘আচ্ছা, উনি আমাকে বেঁচে দিবেন না তো? ওইযে, ছবিতে, নাটকে দেখায় স্বামীরা টাকার বিনিময়ে ভালো ভালো কথা বলে নিয়ে স্ত্রীদের খা/রাপ জায়গায় বেঁচে দেয়?’ পরক্ষণেই মনে হয়, না! ওনার তো অনেক টাকা। উনি টাকার জন্য আমাকে কেন বেঁচে দিবে? ধ্যাত ভাল্লাগে না! কে বলেছিল এর সাথে আসতে? এখন সত্যি সত্যি এই দুইটার একটা যদি এ আমার সাথে করে? আমার কী হবে? অভ্র’র কী হবে? আম্মু, বাবা, রিজু’র কী হবে? ওরা আমার জন্য কাঁদবে? কষ্ট পাবে? পাওয়া-ই উচিত। বলছিল না, ইব্রাহীম ভালো। সোনার টুকরা। হ্যানত্যান! আরও বলুক। ভালো হইছে। এই সোনার টুকরাই এখন কাচ বাইর হইছে। কাচ! একদম উচিত শিক্ষা হইব। কিন্তু, মাঝে দিয়ে আমার নিষ্পাপ জীবনটা! আচ্ছা? আমার সাথে এই ২টার একটা যদি উনি করেন? তো ওনার খারাপ লাগবে না? শতহোক, বউ তো। উনার দিকে তানহা, প্রীতি তাকানোতেই আমার রাগ লাগছে। সেখানে আমাকে মে/রে ফেলতে ওনার হাত কাঁপবে না?
আমার আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝেই দরজা খুলে গেল। সাথে সাথে আমি চমকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে তাকালাম দরজার দিকে। তখনই দেখতে পেলাম আমার আ/সামি মহাশয়কে। উনি এগিয়ে এলেন। আমাকে টাচ না করেই আমার চোখে বেঁধে দিলেন ছোট্ট একটা পট্টি। আমার ভয়টা আরেকটু বেড়ে গেলো। আমি শুকনা ঢোক গিললাম। মনে মনে আল্লাহ্কে স্মরণ করলাম। তাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও সাহস পেলাম না। তখনই উনি বললেন,
“এই নাও, আমার হাত। আঁকড়ে ধরো। তারপর, আমার সাথে চলো।”
আমি ভ/য়ে ভ/য়ে শুধালাম,
“কোথায় যাব?”
উনি এবার ধমকের স্বরে বললেন,
“এখন একদম কথা নয়। যা বলছি, তাই করো। এদিক ওদিকে করলে, ঠাঁটিয়ে এক চড় লাগাবো।”
আমি দমে গেলাম। বিরবির করে বললাম,
“এমনিতেই ভ/য় পাচ্ছি। তার উপর আরও ভ/য় দেখাচ্ছে। অসভ্য একটা!”
আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি আবার বললেন,
“স/মস্যা কী? হাত ধরতে বললাম, শুনোনি? কথা না শুনলে, ডিরেক্ট কোলে তুলে নিব।”
ওনার হুমকি শুনে আমার শুকনো গলাটা আরও শুকিয়ে গেল। আমি জলদি তার হাত ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। মনে মনে বললাম,
“খাটাইশ একটা! বউ পাবি না, দেখিস। আমারে মা/রার লাইগা এত আয়োজন করছোস না? দেখিস, ম/রার পর তোর পিছু ছারমু না। ভুত হয়ে তোর ঘাড়ে চাপমু। হুহ্!”
আমার বিরবিরের মাঝেই ওনার স্পর্শ অনুভব করলাম। উনি আমার হাত স্পর্শ করতেই অন্যরকম এক অনুভূতি হলো! এই অনুভূতি ঠিক কীভাবে ভাষায় প্রকাশ করে আমার জানা নেই। এই অনুভূতির ঠিক কি নাম, আমার জানা নেই। তবে, অনুভূতিটা ভীষণ অদ্ভুত! শীতল!
~~~~~~~~~~
বেশ খানিকটা হাঁটার পর কোথাও একটা এসে উনি থেমে গেলেন। থেমে গেলাম আমিও। তারপর, আচমকা আমার চোখ থেকে পট্টিটা সরে গেল। আমি বুঝলাম, পট্টিটা উনিই খুলে নিয়েছেন। তাই, কিছু বললাম না। তবে, পট্টিটা খুলতেই আমি চোখ মেলে যা দেখলাম, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার সামনে বিশাল এক দিঘী। তার বুকে ঘাটের সাথে বাঁধা ছোট্ট একটা ডিঙি নৌকা! আমার চোখে রাজ্যের বিস্ময়! মন জুড়ে আনন্দ! আমি বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকালাম। উত্তরে উনি চমৎকার হাসলেন। ইশশ্, এই মানুষটাকে নিয়ে এতক্ষণ কি না ভাবলাম!
আমার ভাবনার মাঝেই উনি বললেন,
“কী, ম্যাম? শুধুই তাকিয়ে দেখবেন, নাকি নদীবিলাস করবেন?”
কথাটা শেষ করে আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে আমার হাত ধরে ঢাল বেয়ে এগিয়ে গেল ঘাটে বাঁধা নৌকার দিকে। তারপর, আমায় নিয়েই উঠলেন নৌকায়। নৌকার দুই মাথায় দু’জন বসলাম। নৌকা চলতে লাগলো। আমাদের পেছন পেছন আরেকটা নৌকাও চলতে শুরু করলো। ঘাট থেকে বেশ খানিকটা দূরে যেতেই উনি আমায় বললেন,
“তোমার বা পাশের বেঞ্চের নিচে একটা বক্স আছে দেখো। ওটা বের করো।”
প্রতিবারের মতো এবার আমি এত এত প্রশ্ন করলাম না। কেন যেন ইচ্ছে হলো না। নীরবে ওনার কথামতো আমি একটু হাত বাড়াতেই একটা বক্স পেলাম। কার্টুনের বক্স! বক্সটা বের করে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,
“খোলো।”
এবারও আমি নীরবে বক্সটা খুললাম। বক্সটা খুলতেই তার ভেতর একটা বোয়াম পেলাম। বোয়ামটা বেশ বড়। সেই বোয়াম ভর্তি পানি। আর তার ভেতর ৩টা পদ্ম। ২টা বড় পদ্ম। আর একটা ছোট পদ্ম। আমি বিস্মিত চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হাসলেন। বললেন,
“জানিনা, তোমার এই স্বপ্ন-টা অভ্র কখনো পূরণ করতো কিনা! হয়তো, করতো। কিংবা, করতো না। হয়তো-বা এর ব্যাপারে জানতেই পারতো না। তবে, আমি জেনেছি। তাই, স্বপ্নটা পূরণ করে দিলাম। কারণ, সুন্দর স্বপ্নদের অপূর্ণ থাকতে নেই।”
ওনার কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে৷ উনি কীভাবে জানলো, এটা আমার স্বপ্ন ছিল? পূর্ণিমার রাতে নদীবিলাস। সেটাও লাল শাড়িতে, হাতে সাদা পদ্ম নিয়ে? আমার মনে জাগা প্রশ্নটা দমিয়ে রাখতে না পেরে ওনাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। শুধালাম,
“আপনি এতকিছু কীভাবে জানলেন?”
উনি জবাব না দিয়ে রহস্যময় হাসলেন।
ওনার ডাকে আমার ভাবনা ছেঁদ হলো। উনি বললেন,
“একটা কথা বলব?”
আমি ‘হ্যাঁ-সূচক’ মাথা নাড়লাম। উনি বললেন,
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। লাল রঙে সবাইকে ভালো লাগলেও, আমার কাছে এই প্রথম কাউকে সবার থেকে আলাদা লাগছে। একদম অন্যরকম সুন্দর।”
কথাটা বলে উনি মৃদু হাসলেন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। এটা মুগ্ধতার দৃষ্টি! আমি বেশ লজ্জা পেলাম। লজ্জা পেয়ে চোখ নামালাম। ওনার ঠোঁটের হাসি প্রসারিত হলো। বললেন,
“পানি ছেঁটাবে না?”
ওনার কথায় আমি ফিরে তাকাতেই উনি আবার হাসলেন। আমি অবাক হয়ে শুধালাম,
“আপনি এতকিছু কীভাবে জানেন? হুবহু মিলে যাচ্ছে সব।”
উনি হাসলেন। বললেন,
“সবকিছু জানতে নেই। কিছু জিনিস অজানা থাকাই ভালো।”
আমি জবাব দিলাম না। আরও বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে আমরা ফিরে এলাম। আসার আগে এই রাতের বেলায় ওনাকে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে এসেছি। উনি কিচ্ছু বলেননি! বরং, সেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেছেন আমায়। দেখেছেন আমার খিলখিল হাসি। একটুর জন্যও সরেনি তার সেই মুগ্ধ দৃষ্টি!
~চলবে…?
(শুরুতেই দুঃখিত পর্বটা ছোট হয়েছে। আসলে, কাল সারাদিনে লিখার সময় হয়নি। বাসায় মেহমান আসছেন। সবকিছু সামলে লিখার সময় করতে পারিনি। তার ওপর নেট ছিল না সারাদিন৷ নেট এসেছে রাতে। সবদিকের ঝা/মেলা সামলে লিখতে রাত প্রায় দু’টো বেজে গিয়েছে। তাই, আর দেইনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে লিখেছি। ছন্নছাড়া হয়েছে পর্বটা। হয়তো, এডিট করব পরের পর্ব লিখার আগে। এডিট করলে জানিয়ে দিব। ধন্যবাদ 💙)