আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৩ #Arshi_Ayat

0
29

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

আদ্রির কথা শুনে ইনান হাসতে হাসতে বলল

“তুই ভাবলি কি করে ফারা আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?”

“তার মানে ফারা না।তো কে সে?”(আয়াশ)

” যাকে ভালোবাসি সে।”

ইনানের কথা শুনে দুজনেরই চোখ কপালে উঠে গেলো।আদ্রি অবাক হয়ে বলল

“ইনশু!!! কেমনে কি?ওর তো বিয়ে।”

“হবে না বিয়েটা।ও আজকে রাতে আমাদের সাথে সিলেট যাচ্ছে।”

“ওকে কি কিডন্যাপ করবি?”

“হুম।”

“এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।”

“তুই ওকে একবার ও জানালি না।ওর মতামতও নিলি না।ও কিন্তু অনেক রাগ করবে।”

“রাগ করলে রাগ ভাঙাবো।আর তুই কি ভাবছিস যে ওরে বলে দিলে ও আমার সাথে যেতো?কখনও না।ওরে বললে ও আরো ফ্রেন্ডশিপটাই ভেঙে দিতো।আর আমার দূর থেকে দাড়িয়ে ওর বিয়ে দেখতে হতো।এতো ভালোবাসার পরও আমি পেতাম না ওকে।আমাকে ভুল বুঝতো।তারচেয়ে ভালো এই রিস্কটা নেই আর এই পনেরো দিনে ওকে আমি আমার ভালোবাসাটা বুঝিয়ে দেবো।আমার বিশ্বাস ও আমাকে ভালোবাসবে।আমি জীবিত থাকতে ওকে আমি অন্য কারো পাশে সহ্য করতে পারবো না।ও বউ সাজবে শুধু আমার জন্য। ওর সব কিছু আমাকে ঘিরে হবে।আমি চাইলেই রায়ানকে সরিয়ে দিতে পারি কিন্তু এটা করলে ইনশু আমাকে কখনো মাফ করবে না।ভালোবাসাতো দূরে থাক।তাছাড়াও রায়ান কোনো দোষ করে নি।ও তো এসব জানে না শুধু শুধু একটা ওকে মেরে আমার কি লাভ।তাই ওর কিছু করবো না ইনশুকে নিয়ে যাবো।”

“ভাই তোর হাতে ফিফটি চান্স আছে।এই পনেরোদিনে হয়তো ইনশু তোকে ভালোবাসবে নয়তো তোকে সারাজীবনের মতো ঘৃণা করবে।বুঝে শুনে কাজ করিস।”(আয়াশ)

” এই দুইদিন অনেক ভাবছি।আর এই সিদ্ধান্ত নিছি কারণ এটা না করলে ইনশুকে আমার সারাজীবনের মতো হারাতে হবে।আর আমি এটা পারবো না।”

তারপর আদ্রি বলল

“যাবি কখন?”

“এইতো বাগানের পিছনের সাইডটা ফাকা হলে তারপর পিছনের গেট দিয়ে বের হবো।রাত ২/৩ টার দিকে ফাকা হতে পারে।”

আদ্রি বিরক্ত স্বরে বলল

” এতক্ষণ জেগে থাকতে হবে।আমাদের আগে বলতি সারাদিন ঘুমিয়ে নিতাম।”

ইনান হেসে বলল

“ফ্রেন্ডের জন্য একটু কষ্টতো করতেই হবে তাই না বল!”

“হুম সেটাই।কিন্তু ওকে বের করবি কিভাবে?”

“সেটা যখন বের করবো তখন দেখিস।এখন এখান সোজা দুজনে বাসায় যাবি এবং ব্যাগপ্যাক করে নিবি আর গাড়িতে রেখে আসবি পিছনের গেটের সামনে গাড়ি পার্ক করা আছে।”

ইনানের কথামতো দুজনই বাসায় চলে গেলো।তারপর দুজনই ব্যাগপ্যাক করে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিলো।আর ইনানকে বুঝিয়ে দিলো সব কম্পলিট।এদিকে ইনশিরাকে কিছুতেই ওর বোনেরা ছাড়াছে না।ইনশিরা পুরোটা সন্ধ্যাসহ এখন পর্যন্ত হলুদ লাগানোর সময় ছাড়া একটাবারও ওদের তিনজনের সাথে কথা বলতে পারে নি কিন্তু ইনান যাই করুক না কেনো ওর চোখ সবসময় ইনশিরার দিকে।

রাত ৩.০০ টা…..

বাগানের পিছনের দিকটা পুরো ফাকা।তিনজন সেখানেই দাড়িয়ে আছে।আদ্রি বলল

“তুই কি এখন মুভির নায়কদের মতো দড়ি বেয়ে উঠে ইনশুকে নিয়ে আসবি?”

“এমন করলে গণধোলাই দিবে সবাই মিলে।” (আয়াশ)

“উফফ!! এতো বকবক না করে কোনো বুদ্ধি বের কর ওকে বের করার।” (ইনান)

আদ্রি হাই তুলে আয়াশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“খালি পেট মেরা দিমাগ কি বাত্তি নেহি জ্বালতা হে পাতলু তুম হি কুচ সোচো।”

আয়াশ হেসে বলল

“অবশেষে তুই স্বীকার করলি তুই মটু।”(আয়াশ)

“তুই মটু তোর চৌদ্দগোষ্ঠী মটু।” (আদ্রি)

ওদের কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ ইনান বলল

“আয়াশ তুই ইনশুকে ফোন করে বল বাগানের পিছনে আসতে ওর জন্য সারপ্রাইজ আছে।আমি নিশ্চিত ও আসবে।”

আয়াশ ফোন বের করে ইনশুকে ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করতেই আয়াশ বলল

“দোস্ত বাগানের পিছনে আয়।তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।”

“কি সারপ্রাইজ রে?”

“বলদের মতো কথা বলিস কেন?সারপ্রাইজ কি বলে নাকি কেউ?”

“আচ্ছা আচ্ছা আসছি।”

“ওকে আয়।”

আয়াশ ফোন রেখে ইনানকে বলল

“হুম আসছে।”

“ওকে।এখন তুই রুমালে বেহুঁশের ওষুধটা দে।”

“ওইটা এখন কই পাবো।”

ইনান ওর বাম পকেট থেকে বোতলটা আয়াশকে দিলো।আয়াশ ওষুধ মাখাতে মাখাতে বলল

“দোস্ত এটা তুই পকেটে নিয়ে ঘুরিস?”

ইনান বলল

“হুম কখন কারে বেহুশ করা লাগে তার ঠিক নাই তো।”

এর মধ্যেই ইনশিরা চলে এসেছে।ইনশিরাকে আসতে দেখে ওদের তিনজনের কথাই থেমে গেলো।ইনশিরা এসেই বলল

“কি সারপ্রাইজ গিফট দেখি?”

ইনান হেসে বলল

“আচ্ছা তাহলে চোখ বন্ধ কর।”

ইনশিরা ঠোঁট উল্টে বলল

“আচ্ছা বন্ধ করছি।”

ইনশিরা চোখ বন্ধ করার পর ইনান রুমালটা ওর নাকে মুখে চেপে ধরে।আর পাঁচ সেকেন্ড নড়েচড়ে ইনশিরা বেহুঁশ হয়ে গেলো।তারপর ইনান আয়াশকে বলল

“গিয়ে পিছনের গেট টা খোল আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

ওরা যেতেই ইনান ইনশিরাকে কোলে নিয়ে নিলো।এই প্রথম ইনশিরাকে ও কোলে নিলো।কেমন যেনো একটা অনুভুতি হচ্ছে।এটা মনে হয় ভালোবাসার অনুভুতি!!!

ইনান হাটতে হাটতে গাড়ির সামনে এসে ইনশিরাকে পিছনের সিটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে যায়।আয়াশ আর আদ্রি বসে সামনে।আয়াশ ড্রাইভ করবে।ইনান ইনশিরার মাথাটা নিজের বুকের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলো।প্রশান্তি যেনো ওর চোখ মুখ বেয়ে পড়ছে।হারানোর ভয়টা এখন নেই কিন্তু ভয় হচ্ছে জ্ঞান ফেরার পর ইনশিরা কি করবে?হঠাৎ আদ্রি ইনানকে বলল

“দোস্ত আমিতো ভাবছি তুই অপরাধী গান গাবি।কিন্তু এখনতো দেখি ছাম্মাকছালো গাইছিস।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আমি এমন কিছুই আন্দাজ করেছিলাম।কারণ ইনান এতো সহজে হাল ছাড়বে না।কিন্তু দোস্ত তুই এই দুইদিন মদ খাইলি কেন?”

ইনান হাসতে হাসতে বলল

“দেবদাস হওয়ার চেষ্টা করতেছিলাম কিন্তু আফসোস হতে পারি নাই।”

আদ্রি চিন্তিত স্বরে বলল

“কিন্তু ইনশু জ্ঞান ফেরার পর কি করবে আল্লাহ জানে।”

“হুম আমারও টেনশন হচ্ছে।” (আয়াশ)

“দেখি কি করে।” (ইনান)

গাড়ি চলছে সিলেটের দিকে।দুইঘন্টা পার হয়ে গেছে এরমধ্যে ইনশিরা একবারও জেগে উঠে নি।কিন্তু তিনজনের মধ্য অনেক কথা হলো।

সাড়ে পাঁচটার সময় ইনশিরা চোখ কচলাতে কচলাতে ইনানের বুক থেকে উঠে বসলো।কিন্তু সে কোথায় আছে বা যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে এতটুকু নিশ্চিত যে সে তার বাড়িতে নেই অনেকদূর চলে এসেছে।ইনশিরাকে উঠতে দেখে ইনান ওর দিকে পানি এগিয়ে দিলো।ইনশিরা পানি না নিয়ে বলল

“আমি এখানে কেনো?আর কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“তুই সিলেট যাচ্ছিস।”

ইনশিরা চোখ কপালে তুলে বলল

“কেনো?আজতো আমার বিয়ে তাহলে কেনো?”

“তোর বিয়ে হচ্ছে না।”

“এটা কেমম কথা ইনান?বিয়ে হবে না কেনো?”

“আমি তোকে ভালোবাসি আর তোকে আমি কাল রাতে কিডন্যাপ করেছি।”

ইনানের কথাটা শোনার সাথে সাথেই
ইনশিরা জোরে একটা থাপ্পড় মারলো ইনানের গালে।তারপর দুইহাতে মুখ ঢেকে কাদতে লাগলো।আয়াশ, আদ্রি কিছুই বলছে না।ইনান নত মুখে বসে আছে।ইনশিরা কোনেমতে কান্না থামিয়ে ইনানের কলার টেনে বলল

“কেনো এমন করলি ইনান?কেনো?কেনো?আমি কি এমন ক্ষতি করেছি তোর?আমি তোকে সবসময় বেষ্ট ফ্রেন্ডের নজরে দেখেছি আর তুই!!ছিঃ ইনান ছিঃ।আসলে সবাই আমাকে ধোকা দেয় কেনে বলতো?প্রথমে তিয়াস এরপর তুই!!!যাকে সত্যিকারের বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম সেই আমার শর্বনাশ করলো।তবে ইনান তুই শুনে রাখ তুই যেটা চাইছিস সেটা কখনো হবে না।আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না ভালোবাসাতো দূরের কথা।”

ইনান ইনশিরা দিকে অপরাধীর মতো তাকিয়ে বলল

“ইনশু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ।আমি তোকে ভালোবাসি আমি মরে গেলেও তোকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবো না।”

“এতোই যখন ভালোবাসতি তাহলে ভালোবাসার মানুষের শর্বনাশ করলি কেনো?বিয়েটা হতে দিলি না কেনো?”

“কারণ আমি তেমন প্রেমিক না যে ভালোবাসার মানুষকে এভাবে দিয়ে দেবো।ভালো যেহেতু বেসেছি তোকেই বিয়ে করবো।আর তুইও আমাকে ভালোবাসবি।”

“সেটা হবে না মিস্টার ইনান চৌধুরী।আরে আমার কষ্টের কথা বাদই দিলাম। আমার বাবা মা ওদের কষ্টের কথা কি বলবো।আজ ওরা একঘর মানুষের সামনে অপমানিত হবে আমার জন্য।আমার নামে কলঙ্ক দিবে।বাবা মাকে সবাই চোখে আঙুল দিয়ে কথা বলবে।আমি আর কখনো নিজের বাড়িতে যেতে পারবো না।বাবা মা কখনোই আমাকে ক্ষমা করবে না।একটা মেয়ের জীবনে তার সম্মানটা সবচেয়ে দামি আজকের পর থেকে সবাই আমার সম্মানে আঙুল তুলে কথা বলবে।তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করাটাই আমার চরম ভুল।আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি তুই এমন করবি।আর আয়াশ আদ্রি তোরা কিভাবে এতো নিষ্ঠুর হলি।কিভাবে তোরা ওর সাথে সায় দিলি?কিভাব?ওহ!!তোরা তো ওর বন্ধু আমার না তাই এমন করেছিস!!ভালো খুব ভালো।বন্ধুত্বের প্রতিদান এভাবে দিলি।আর আদ্রি তুইও তো মেয়ে তোর সাথে এমন হলে তুই মেনে নিতে পারতি?কখনও না তাহলে আমার বেলায় এমন করলি কেনো?আমার বাবা মার কি হবে?ওরা নিশ্চিই আমার বাবা মা কে অনেক অপমান করবে।আল্লাহ কিসের শাস্তি দিচ্ছে।”

এটা বলেই আবার মুখ ঢেকে কাদতে বসলো।তিনজনই নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে।কেউ কিছু বলছে না।হঠাৎ করেই ইনশিরা…..

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।গাইস!!এখন কেমন লাগছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here